Inqilab Logo

বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ০৫ বৈশাখ ১৪৩১, ০৮ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

সংবিধান সংশোধনের উদ্যোগ নিচ্ছেন সু চি

ইনকিলাব ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ২৯ জানুয়ারি, ২০১৯, ৪:২৪ পিএম

মিয়ানমারের ডি ফ্যাক্টো নেত্রী অং সান সু চি’র নেতৃত্বাধীন ক্ষমতাসীন দল দেশটির সেনাবাহিনী প্রণীত সংবিধান সংশোধনের উদ্যোগ নিতে যাচ্ছে। মঙ্গলবার এই সংশোধনী প্রস্তাব আনা হতে পারে। দেশটির পার্লামেন্টের একজন সদস্য ও সু চি’র দলের একটি সূত্র বিষয়টি নিশ্চিত করেছে। এর ফলে সরকার পরিচালনায় বেসামরিক সরকারের ওপর কর্তৃত্ব ধরে রাখার ক্ষেত্রে গত তিন বছরের মধ্যে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে পারে মিয়ানমার সেনাবাহিনী। খবর রয়টার্স।
২০১৭ সালে রাখাইনে সেনা অভিযানের মুখে বাংলাদেশে সাত লাখ ত্রিশ হাজার রোহিঙ্গা পালিয়ে আসার ঘটনায় মিয়ানমারের বেসামরিক ও সামরিক নেতারা আন্তর্জাতিক চাপে মুখে থাকা অবস্থার সময় সংবিধান সংশোধনের এই আকস্মিক উদ্যোগ নেওয়া হলো।
কথিত গণতান্ত্রিক উত্তোরণের নামে মিয়ানমারে আদতে জারি রয়েছে সেনাশাসন। ২০০৮ সালে সামরিক শাসনামলে প্রণীত সংবিধান অনুযায়ী দেশটির পার্লামেন্টের এক চতুর্থাংশ আসন সেনাবাহিনীর নিয়ন্ত্রণে রাখা হয়েছে। স্বরাষ্ট্র, প্রতিরক্ষা এবং সীমান্তসহ গুরুত্বপূর্ণ তিনটি মন্ত্রণালয়ের নিয়ন্ত্রণ সেনাবাহিনীর হাতে। শক্তিশালী জাতীয় প্রতিরক্ষা ও নিরাপত্তা পরিষদের ১১টি আসনের মধ্যে ছয়টি আসনেও রয়েছেন সেনাবাহিনী মনোনীত ব্যক্তিরা। গণতান্ত্রিক সরকার বাতিলের ক্ষমতা রয়েছে সেনা সংখ্যাগরিষ্ঠ এই পরিষদের। রয়টার্সের খবরে বলা হয়েছে, সংবিধান সংশোধনের প্রস্তাব আনার ফলে মিয়ানমার সেনাবাহিনী ও ক্ষমতাসীন ন্যাশনাল লিগ ফর ডেমোক্র্যাসির (এনএলডি) মধ্যে উত্তেজনা বাড়বে। ২০১৫ সালের নির্বাচনে এনএলডি ঐতিহাসিক নিরঙ্কুশ জয় পাওয়ার পর থেকেই এই সংবিধান নিয়ে সেনাবাহিনীর সঙ্গে এনএলডি’র বিরোধ চলছে।
মিয়ানমারের পার্লামেন্টের উচ্চ কক্ষের এক সদস্য ইয়ে হতুত বলেন, মঙ্গলবার দল প্রস্তাবটি উত্থাপন করবে। এটা নির্বাচনি প্রতিশ্রুতি।
রয়টার্সের খবরে বলা হয়েছে, এনএলডি সংবিধানের কোন ধারা সংশোধনের প্রস্তাব আনতে যাচ্ছে তা জানা যায়নি। এটাও জানা যায়নি যে এ ধরনের কোনও প্রস্তাব পাস করার জন্য সেনাবাহিনীর প্রয়োজনীয় সমর্থন দলটি পেয়েছে কিনা। অতীতে সু চি’র দলের নেতারা সংবিধানের ৫৩৬ ধারা নিয়ে অসন্তুষ্টি প্রকাশ করেছেন। এই ধারাতে সংবিধান সংশোধনের বিষয়ে সেনাবাহিনীর কার্যকর ভেটো ক্ষমতা রয়েছে।
সোমবার একটি সংক্ষিপ্ত বৈঠকে দলের কেন্দ্রীয় নির্বাহী প্যানেলকে মঙ্গলবারের ভোট দিয়ে অবহিত করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন সভায় অংশগ্রহণ করা ইয়ে হতুত। দলের আরেকটি সূত্রও মঙ্গলবার প্রস্তাবটি উত্থাপনের বিষয়টি নিশ্চিত করেছে রয়টার্সকে।
তবে আনুষ্ঠানিকভাবে দলের মুখপাত্র মিয়ো নয়ুন্ট এই বিষয়ে মন্তব্য করতে অস্বীকৃতি জানিয়েছেন। মন্তব্যের জন্য পার্লামেন্টারি কার্যালয়ে যোগাযোগ করতে পারেনি রয়টার্স। বার্তা সংস্থাটি পার্লামেন্টের এজেন্ডা পর্যালোচনা করতে পেরেছে। তাতে প্রস্তাবটি তালিকাভুক্ত করা হয়নি। তবে রাজনৈতিক বিশ্লেষক ইয়া মিয়ো থেইন জানান, স্পিকারের অনুমতি সাপেক্ষে অধিবেশনের শেষ দিকে নতুন এজেন্ডা অন্তর্ভুক্ত করার সুযোগ রয়েছে। অথবা প্রস্তাবটি উত্থাপনের জন্য দুপুরে একটি অধিবেশন আহ্বান করা হতে পারে।
এই সংবিধানের ফলেই সু চি প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব নিতে পারেননি। সেনাবাহিনী প্রণীত সংবিধান অনুসারে, বিদেশির স্ত্রী বা সন্তান থাকলে প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থী হওয়া যাবে না। সু চির দুই ছেলে সন্তান রয়েছে এবং তার প্রয়াত স্বামী একজন ব্রিটিশ শিক্ষাবিদ। নতুন পদ রাষ্ট্রীয় উপদেষ্টা সৃষ্টি করে প্রায় তিন বছর ধরে সু চি দেশ পরিচালনা করছেন।
শান্তিতে নোবেল জয়ী সু চি দীর্ঘ দিন ধরেই সংবিধানটি সংশোধনের কথা বলে আসছেন। ৫০ বছরের কঠোর সামরিক শাসনের অবসান ঘটিয়ে গণতন্ত্রে রূপান্তরের ধারাবাহিক প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবেই এই সংস্কার চান তিনি। গত বছর আগস্টে সিঙ্গাপুরে দেওয়া এক ভাষণে সু চি বলেছেন, আমাদের সরকারের একটি লক্ষ্য ছিল সংবিধানের সংশোধন। আমাদের গণতন্ত্রের উত্তোরণের জন্য অবশ্যই সত্যিকার অর্থে গণতান্ত্রিক সংবিধান প্রণয়ন প্রয়োজন।
মিয়ানমারের সেনাবাহিনী কয়েক দশক ধরেই একাধিক জাতির দেশটির অখণ্ডতা রক্ষায় একমাত্র সামর্থ্যবান হিসেবে নিজেদের মনে করে। রাজনৈতিক ব্যবস্থায় সেনাবাহিনীর হস্তক্ষেপ ও ভূমিকাকে প্রয়োজনীয় মনে করে। দুই বছর আগে সংবিধান সংশোধন করে সেনাবাহিনীর ক্ষমতা সংকুচিত করার পক্ষে আহ্বান জানানো সু চি’র এক উপদেষ্টাকে ইয়াঙ্গুন আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে প্রকাশ্যে গুলি করে হত্যা করা হয়। যদিও সংবিধান সংশোধনের আহ্বান জানানোর কারণেই তাকে হত্যা করা হয়েছে বলে কোনও নিশ্চিত প্রমাণ পাওয়া যায়নি। কিন্তু তার মৃত্যুর ফলে সংস্কার প্রক্রিয়া কালো ছায়ায় ঢেকে যায়।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: সু চি

১১ জানুয়ারি, ২০২২

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ