Inqilab Logo

শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

ভারতের পানি প্রত্যাহারে রংপুর বিভাগে বিপর্যয়

ধ্বংস হচ্ছে জীববৈচিত্র্য ৫০ প্রজাতির মাছ বিলুপ্ত প্রতিবাদ এখন সময়ের দাবি

মহসিন রাজু | প্রকাশের সময় : ৩০ জানুয়ারি, ২০১৯, ১২:০২ এএম

ব্যারেজ ও স্পার নির্মাণ করে উজানের ভারতীয় অংশে পানি প্রত্যাহার করে নেওয়ায় ব্রহ্মপুত্র, তিস্তা, ধরলা, ঘাঘট, পুনর্ভবাসহ শতাধিক নদী বিধৌত রংপুর বিভাগের ৮ জেলার সবগুলো নদ/নদী মাঘের মাঝামাঝি সময়ে এসে পানিশূন্য হয়ে পড়েছে। আলু-সরিষার পর বোরো আবাদের জন্য হাজার হাজার শ্যালো ও ডিপ টিউবওয়েল বসিয়ে ভূ-গর্ভস্ত পানি উত্তোলন করায় প্রতিনিয়ত কমে যাচ্ছে পানির স্তর। নদনদী খালবিল শুকিয়ে বিপর্যয়ের দিকে ধাবমান হচ্ছে পরিবেশ ও প্রকৃতি। ধ্বংস হচ্ছে জীববৈচিত্র্য।
রাজশাহীর প্রবেশমুখ পশ্চিমবঙ্গের মুর্শিদাবাদ জেলার ফারাক্কায় বিশাল বাঁধ নির্মাণ করে গঙ্গার পানি এবং রংপুর বিভাগের নীলফামারী, লালমনিরহাট ও কুড়িগ্রাম জেলার উজানে ভারতীয় অংশের জলপাইগুড়ি জেলার মালবাজার মহকুমার গজলডোয় বিরাট ব্যারেজ নির্মাণ করে তিস্তার পানিপ্রবাহ আটকে দেয়ায় এই অঞ্চলের নদ/নদী স্বাভাবিক প্রবাহ হারিয়ে শুকনো মৌসুমে এক একটি মরা খালে পরিণত হয়। সরেজমিনে খোঁজ নিয়ে দেখা যায়, গজলডোয় চলতি শীত মৌসুমেই তিস্তার পানিপ্রবাহ আটকে দেওয়ায় মাঘ মাসের মাঝামাঝি সময়ে এসে ৪ হাজার কিউসেকের নীচে এসে ঠেকেছে। পানির অভাবে তিস্তা ব্যারেজের কার্যকারিতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।
রোববার লালমনিরহাট পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, শুষ্ক মৌসুমে ব্যারেজ সন্নিহিত এলাকার ২৯ হাজার ৫শ’ হেক্টর জমিতে গত ১৫ জানুয়ারী থেকে সেচ দেয়া হচ্ছে। তবে স্থানীয় লোকজন জানান, এর ৫ গুণ বেশি এলাকায় নীলফামারী, কুড়িগ্রাম ও লালমনিরহাট জেলার বিশেষ বিশেষ অঞ্চলের জমিতে শুষ্ক মৌসুমে সেচ কাজ পরিচালনার জন্যই তিস্তা ব্যারেজ প্রকল্প হাতে নেয়া হয়েছিল। মধ্য জানুয়ারীতে তিস্তার ডালিয়া পয়েন্টে পানিপ্রবাহ কমে ১ হাজার কিউসেকে নেমে আসে বলে পানি উন্নয়ন বোর্ডের হাইড্রোলজী বিভাগের একটি সূত্র ইনকিলাবকে জানায়। উদ্বেগজনক এই তথ্যটি যৌথ নদী কমিশনের কাছে দেয়া হয়েছে বলে ইনকিলাবকে জানান এস ও আমিনুর রশিদ।
এদিকে তিস্তার পাশাপাশি ব্রহ্মপুত্র নদীর পানি ব্যারেজ নির্মাণ না করে উজানের ভারতীয় অংশে ক্যানেলের মাধ্যমে বিস্তীর্ণ কৃষি জমিতে সেচ সুবিধা দেওয়ায় শুষ্ক মৌসুমে ওই দুটি বৃহত্তম নদনদীর শাখা নদীর অনেকগুলোই মরাখালে পরিণত হয়। তিন যুগ আগেও রংপুর আঞ্চলের দেড় শতাধিক নদীকে ঘিরে লাখ লাখ জেলে ও মাঝির জীবিকা নির্বাহ হত। এখন বহু নদীর অস্তিত্বই হারিয়ে গেছে কালের গর্ভে। এগুলোর আর কোনোদিনই জেগে ওঠার সম্ভাবনা নেই।
কুড়িগ্রামের চিলমারির নদীবন্দর, গাইবান্ধার বালাসি ও ফুলছড়ির ঘাটের ঐতিহাসিক গুরুত্ব ও ঐতিহ্য এখন কেবলই ইতিহাস মাত্র। লালমনিরহাটের সাংবাদিক রেজাউল করিম মানিকের মতে, বিখ্যাত ভাওয়াইয়া গান ওকি গাড়িয়াল ভাই, হাঁকাও গাড়ি মোর চিলমারির বন্দর ও রে..., অথবা আমাদের ছোট নদী চলে বাঁকে বাঁকে, বৈশাখ মাসে তার হাঁটু জল থাকে,- নামক কবিতাগুলো বাস্তব মর্মার্থ এখন অর্থহীন বাক্য বলেই শ্রোতা ও পাঠকের কাছে মনে হয়। কেননা এখন চিলমারি, বালাসী বা ফুলছড়ির ঘাট অপর্যাপ্ত পানির কারণে নিষ্প্রাণ ও অচল। অপরদিকে বৈশাখ মাসে নয়, এখন মাঘ ফাল্গুনেই রংপুর বিভাগের অধিকাংশ নদ/নদীতেই হাঁটু পানি তো দূরের কথা, গোড়ালী ডোবার মতো পানিও পাওয়া যায় না।
মাঘ ফাল্গুন চৈত্র মাসে দু/তিন যুগ আগেও পঞ্চগড়ের করতোয়া, ঠাকুরগাঁওয়ের টাঙন, দিনাজপুরের পুনর্ভবা, নীলফামারী, লালমনিরহাট, কুড়িগ্রামের বুড়ি তিস্তা ও তিস্তা এবং গাইবান্ধার ঘাঘটের বউ মাছ, বাইম মাছ ও কালিবাউশ মাছ পাওয়া যেত প্রচুর পরিমাণে। নদীর মাছ ধরে হাটে বাজারে বিক্রি করতো লাখ লাখ জেলে।
ব্রহ্মপুত্র ও যমুনা নদীর পাংগাশ ও বোয়াল মাছের খ্যাতি ছিল দেশজুড়ে। এখন বর্ষা ও বন্যার সময়টুকু ছাড়া অন্য সময়ে পানিপ্রবাহ না থাকায় ৫০টির মতো মৎস্য প্রজাতিই এখন বিলুপ্তির পথে।
গত দু’দিনে বৃহত্তর রংপুর অঞ্চলের রাজনীতি সংশ্লিষ্ট ও রাজনীতির বাইরের বেম কিছু পরিবেশ সচেতন মানুষের সাথে কথা বলে জানা গেছে, ১৯৭৬ সালে ফারাক্কা অভিমুখে লংমার্চসহ অতি সম্প্রতি বাম জোটের তিস্তা অভিমুখে লংমার্চের মতো কর্মসূচির পুনরাবৃত্তির পাশাপাশি সভা, সেমিনার ও বক্তব্যে ভারতের পানি আগ্রাসনের প্রতিবাদ করা সময়ের দাবি বলে মনে করে সবাই।
আন্তঃদেশীয় নদ/নদীর পানি প্রবাহের ন্যায্য হিস্যার বিষয়ে ভাটির দেশ হিসেবে বাংলাদেশ যেন তার প্রাপ্য পায় সেটা নিশ্চিত করতে সরকারের সচেতন ও দৃঢ় ভূমিকাও আশা করে এই এই এলাকার সব শ্রেণি-পেশার মানুষ।



 

Show all comments
  • Md Labu Miah ৩০ জানুয়ারি, ২০১৯, ৩:০২ এএম says : 0
    বাংলাদেশের নিম্নান্চলে বাদ দিয়ে পানি আটকে রাখার ব্যবস্হা করতে সরকারকে বলেন। আর সব ছোট বড় নদী খনন করতে বলেন। এটাই সমাধান। শুধু ভারত ভারত বলে কোন লাভ নাই। চায়না ভারতের সাথে পানি নিয়ে কি করতেছে সেটা লক্ষ্য করবেন।
    Total Reply(0) Reply
  • Abdul Motalab ৩০ জানুয়ারি, ২০১৯, ৩:০৩ এএম says : 0
    বিএনপি যদি জনগণের কাছে আস্থা বাড়াতে চায় জনসমর্থন বাড়াতে চায় তাহলে ভারতের প্রতিটি আগ্রাসনের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানো উচিত।
    Total Reply(0) Reply
  • জামিল হাসান শাওন ৩০ জানুয়ারি, ২০১৯, ৩:০৩ এএম says : 0
    বন্ধু রাষ্ট্র বলে কথা
    Total Reply(0) Reply
  • Mohammed Kowaj Ali khan ৩০ জানুয়ারি, ২০১৯, ৬:০৬ এএম says : 0
    নদীতে বাঁধ নিরমান করে নদীর পানি আটকানো এবং চেরে দেওয়া বিশ্বের একটি জঘন্য অপরাধ। এই অমানবিক অপরাধ ভারত করিতেছে। বিপদ বাংলাদেশের জন্য মনে করিতেছে কিন্ত মহাবিপদ যে ভারতের জন্য অপেক্ষা করিতেছে, তাহা কিন্ত ভারত জানিতে পারিতেছে না। বাংলাদেশের করতব্য ছিল ভারতের বীরুদ্বে মামলা করা। একদিন আসিবে ওরা সবাই কাদিবে যাহারা জাতীয় বেঈমান। ইনশাআল্লাহ।। ।
    Total Reply(0) Reply
  • syed ৩০ জানুয়ারি, ২০১৯, ৬:২৯ এএম says : 0
    Critical Hidden War-Weapon continuously using by India against Bangladesh: ♢ This Critical Hidden War-Weapon termed as 'Water-Bomb' ♢ How does 'Water-Bomb' make? * By placing Human-made Physical-Barriers in the Highland-Rivers of India in order to obstruct Normal- Water- Flow of the Lowland-Rivers of the of Bangladesh, such as, Farakka-Barrage. ʘ ’Water-Bomb' construction has following Cycles > * Cycle-01 : Controlled, or Stopped water delivery from the Highland Rivers of India, by using previously placed Physical-Barriers of Highland Rivers intended to ‘Dried-up the Lowland Rivers’ of Bangladesh, during Winter seasons * Cycle-02 : Suddenly release, Stop, and Release ‘Extreme-Flood-Water’ from the Highland Rivers of the India to the Lowland Rivers of Bangladesh, by using previously placed Physical-Barriers of the Highland Rivers, during Rainy seasons How does 'Water-Bomb' work? * During Cycle-01, Lowland Rivers' bottom filled up with ground soil, sand, & debris; thus narrowed Lowland Rivers of Bangladesh * During Cycle-02, Lowland Rivers' unable to accommodate ‘Extreme-Flood-Water’ from the Highland Rivers of India due to Cycle-01, resulted ‘Flush-Flood-Water’ developed both sides of the Lowland Rivers of Bangladesh * Thus ‘Flush-Flood-Water’ of the Lowland Rivers having ‘High Strike-Strength Power with Pulsing manner’ due to suddenly release, Stop, and Release of ‘Extreme-Flood-Water’ from the Highland Rivers of India * Thus ‘High Strike--Strength Power with Pulsing manner’ of the Flush-Flood-Water moving as ‘Come-Hit- Go’ fashion, resulted severe Landfall, Landslides, and damages both sides of the Rivers, which are unaccountable to Bangladesh, every years * Come-Hit-Go fashion of the ‘High Strike--Strength Power with Pulsing manner’ of the Flush-Flood- Water, following to the next Cycles “Dried-up the Lowland Rivers of Bangladesh, continuously years over years ♢ Why 'Water-Bomb' yet not focused/explored ? * Some funny International Organizations leading by India such as, "International River Commission" * Fraud Agreement between India and Bangladesh such as, Water Distribution Agreement along the Rivers Barriers * Global Warming, lie to hide the 'Water-Bomb' * Sea Level becomes higher, same lie * Dredging Rivers by Bangladesh Government ♢ What we Bangladeshi have to do? * Raise Our Voice to Stop using of Critical Hidden War-Weapon the 'Water-Bomb' against Bangladesh * Educate Victims of 'Water-Bomb' that India is more Hostile for Bangladesh then other neighbors, followed by- * Bangladesh have to quit from "International River Commission" * We could started "Stop Buying Indian Products" in support of 'Water-Bomb' Victims ♤ Thus 'Water-Bomb' commonly known as “Flush-Flood-Water”, or “Dried-up Rivers” thus makes Fool to the Victims ♤
    Total Reply(0) Reply
  • Nannu chowhan ৩০ জানুয়ারি, ২০১৯, ৮:৪৪ এএম says : 0
    Bondhu desher shohojogitai khomotai ashia eakhon bondhu desh amader bash dia tader shartho uddhar koritese....
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ভারত


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ