Inqilab Logo

বুধবার, ১৭ এপ্রিল ২০২৪, ০৪ বৈশাখ ১৪৩১, ০৭ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

দুর্নীতিতে অবনমন

| প্রকাশের সময় : ৩১ জানুয়ারি, ২০১৯, ১২:০৩ এএম

বার্লিন ভিত্তিক দুর্নীতি বিরোধী প্রতিষ্ঠান ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনালের দুর্নীতির ধারণা সূচকে বাংলাদেশের চার ধাপ অবনমন ঘটেছে। বিশ্বের ১৮০ দেশের মধ্যে পরিচালিত জরিপে গতবছর বাংলাদেশের অবস্থান ছিল ১৭তম। এবার চার ধাপ পিছিয়ে বিশ্বের ১৩তম দুর্নীতিগ্রস্ত দেশ হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে। এক্ষেত্রে দক্ষিণ এশিয়ায় বাংলাদেশের অবস্থান দ্বিতীয় এবং এশিয়া-প্যাসিফিক অঞ্চলের ৩১টি দেশের মধ্যে চতুর্থ। সরকার যখন দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়াই জোরদার করার ঘোষণা দিয়েছে, তখন ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনালের এই রিপোর্ট সরকারের দুর্নীতি বিরোধী অবস্থানের তাৎপর্য এবং প্রয়োজনীয়তাকে আরো জোরদার করেছে। যেখানে দুর্নীতির সাথে রাজনৈতিক ক্ষমতায়ণের একটি নিবিড় সম্পর্ক বিদ্যমান, সেখানে দুর্নীতির প্রকৃতি ও অবস্থান চিহ্নিত হওয়া আবশ্যক। টিআই রিপোর্ট নিয়ে সরকারের পক্ষ থেকে এখনো তেমন কোনো আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া দেখানো না হলেও দুর্নীতি দমন কমিশনের পক্ষ থেকে দুর্নীতি বাড়ার তথ্য-উপাত্তসহ ব্যাখ্যা চাওয়া হবে বলে জানানো হয়েছে। তবে মাত্র একদিন আগেই একটি অনুষ্ঠানে দেশে দুর্নীতির মাত্রাকে সমুদ্রের সাথে তুলনা করেছেন দুদক চেয়ারম্যান। তাহলে টিআই রিপোর্ট নিয়ে বিতর্ক তোলার মধ্য দিয়ে তিনি কি বোঝাতে চাইছেন, তার এই বক্তব্যে তার দুর্নীতি বিরোধী অবস্থানকে দুর্বল ও বিতর্কিত করবে কিনা সে প্রশ্ন উঠতে পারে।
বাংলাদেশের দুর্নীতি, সুশাসনের অভাব ও বিচারহীনতার সংস্কৃতি দেশে-বিদেশে আলোচিত বিষয়। কোন সরকারের আমলে দুর্নীতিতে দেশের অবস্থান কোথায় ছিল সে বিতর্কে গিয়ে দায় এড়ানোর রাজনৈতিক চেষ্টা থাকতেই পারে।দুর্নীতি দমন কমিশন বা টিআই’র মত নিরপেক্ষ প্রতিষ্ঠানের সে রাজনৈতিক বিতর্কে না জড়ানোর কোনো সুযোগ নেই। দুর্নীতি বিরোধী লড়াইয়ে এসব প্রতিষ্ঠান পরস্পরের পরিপুরক হিসেবেই গণ্য হতে পারে। দেশ থেকে লক্ষ লক্ষ কোটি টাকা পাচার হয়ে গেছে। পাচার এখনো অব্যাহত আছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক গবেষণা সংস্থা গেøাবাল ফিনান্সিয়াল ইন্টেগ্রিটি(জিএফআই)’র সর্বসাম্প্রতিক এক রিপোর্টে ২০১৫ সালে বাংলাদেশ থেকে কিভাবে ৬ বিলিয়ন ডলার বা ৫০ হাজার কোটি টাকা পাচার হয়েছে তার বিবরণ তুলে ধরা হয়েছে। এটি কোনো নতুন তথ্য নয়। ইতিপূর্বেও জিএফআই সহ আরো একাধিক প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ থেকে টাকা পাচারের তথ্যাবলী তুলে ধরে রিপোর্ট প্রকাশ করেছে। সে সব রিপোর্টের সাথে জিএফআই’র সর্বশেষ রিপোর্টটির সামঞ্জস্য রয়েছে। সরকারের দুর্নীতি বিরোধী অবস্থান এবং দুদক চেয়ারম্যানের ‘সমুদ্রে কাকে ধরব’ জাতীয় বক্তব্য থেকেই দেশে দুর্নীতির আকৃতি-প্রকৃতি সম্পর্কে আঁচ করা যায়। প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে বিশ্ববিদ্যালয়, সরকারী বেসরকারী হাসপাতাল, ব্যাংকিং খাত ও আমদানী-রফতানীতে জাল জালিয়াতি, আইনের শাসন ও মানবাধিকার সংক্রান্ত প্রতিটি অভিযোগের স্বচ্ছ তদন্ত হওয়া প্রয়োজন।
একাদশ জাতীয় নির্বাচনের ইশতেহারে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ দুর্নীতির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের প্রতিশ্রæতিকে অগ্রাধিকার হিসেবে চিহ্নিত করেছিল এবং দুর্নীতির বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতি ঘোষণা করেছিল। নতুন সরকার গঠনের পরও প্রধানমন্ত্রী বিভিন্ন সভা-সমাবেশে দুর্নীতির বিরুদ্ধে তার কঠোর অবস্থানের কথা পুর্নব্যক্ত করেছেন। এমনকি সরকারের মন্ত্রী-এমপিদের উপর নজরদারীর কথাও প্রকাশ্যে বলেছেন। তবে শুধুমাত্র প্রতিশ্রæতি বা ঘোষণা দিয়ে যে তেমন কোনো কাজ হয় না তা ইতিমধ্যে বিভিন্ন ইস্যুতে প্রমানিত হয়েছে। রাষ্ট্র ও সমাজের রন্ধ্রে রন্ধ্রে দুর্নীতি ছেয়ে গেছে। এ থেকে উত্তরণের জন্য যে রাজনৈতিক সদিচ্ছা ও প্রাতিষ্ঠানিক স্বচ্ছতা থাকা প্রয়োজন তা নিশ্চিত করাই সরকারের জন্য সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ। যেখানে সরকারীদলের প্রভাবশালী নেতা সাবেক মন্ত্রী-এমপিদের অনেকের বিরুদ্ধে ব্যাংক জালিয়াতিসহ বেশকিছু আর্থিক খাতের কেলেঙ্কারি ও অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ আছে, সেখানে দুর্নীতি বিরোধী অবস্থান প্রধানমন্ত্রীর জন্য অনেক বড় চ্যালেঞ্জ। তবে দুর্নীতি দমন কমিশন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী,আর্থিক গোয়েন্দা বিভাগ, জাতীয় রাজস্ব বোর্ডসহ সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান ও সংস্থার সমন্বিত প্রয়াস ও সদিচ্ছা ছাড়া শুধুমাত্র প্রধানমন্ত্রীর পক্ষে দুর্নীতি বিরোধী লড়াইয়ে সফল হওয়া অসম্ভব। ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল এবং জিএফআই রিপোর্টে যে সব তথ্য উপাত্ত উপস্থাপণ করা হয়েছে তার সাথে বিশেষ কোনো সংস্থার দ্বিমত থাকতেই পারে। তবে দুর্নীতির বাস্তবতাকে অস্বীকার করার কোনো সুযোগ নেই। দেশ থেকে হাজার হাজার কোটি টাকা পাচার করে কারা সুইস ব্যাংকে জমা করেছে, কারা কানাডা, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, মালয়েশিয়াসহ বিভিন্ন দেশে বিনিয়োগ বা সেকেন্ড হোমের নামে বিদেশে টাকা পাচার করেছে তাদের খুঁজে বের করা সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোর জন্য খুব কঠিন কাজ নয়। দেশের কাঙ্খিত উন্নয়ন ও অগ্রযাত্রা অব্যাহত রাখতে হলে দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়াইয়ে বিজয়ের কোনো বিকল্প নেই।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: দুর্নীতি

১ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩
৩১ জানুয়ারি, ২০২৩

আরও
আরও পড়ুন