Inqilab Logo

মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১, ১৩ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

হাজার কোটি টাকা পাচার : ক্রিসেন্টের ৩ প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে মানি লন্ডারিং মামলা

অর্থনৈতিক রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ৩০ জানুয়ারি, ২০১৯, ৮:৩২ পিএম
  • টাকা ফেরাতে আন্তর্জাতিক ফার্ম নিয়োগ দেওয়া হবে: এনবিআর চেয়ারম্যান
  • ক্রিসেন্ট লেদার প্রডাক্টের চেয়ারম্যান এম এ কাদের গ্রেফতার

৯১৯ কোটি টাকা বিদেশে পাচার করায় ক্রিসেন্ট গ্রুপের ৩ প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে রাজধানীর চকবাজার মডেল থানায় মানি লন্ডারিং আইনে মামলা করেছে শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তর। এ ঘটনায় জনতা ব্যাংকের কর্মকর্তাসহ মোট ১৭ জনকে আসামি করা হয়েছে। ক্রিসেন্ট লেদার প্রোডাক্টস ও ক্রিসেন্ট ট্যানারিজের চেয়ারম্যান এমএ কাদেরকে গ্রেফতার করা হয়েছে।

বুধবার (৩০ জানুয়ারি) সংবাদ সম্মেলন এ কথা জানিয়েছেন জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) চেয়ারম্যান মোশাররফ হোসেন ভূঁইয়া। এনবিআরের সম্মেলন কক্ষে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এনবিআরের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

এনবিআর চেয়ারম্যান জানান, ক্রিসেন্ট লেদার ৪২২ কোটি ৪৬ লাখ, রিমেক্স ফুটওয়্যার ৪৮১ কোটি ২৬ লাখ টাকা ও ক্রিসেন্ট ট্যানারিজ ১৫ কোটি ৮৪ লাখ বিদেশে পাচার করেছে। শুল্ক গোয়েন্দার তদন্তে বিষয়টি প্রমাণিত হয়েছে। এ ঘটনায় ক্রিসেন্ট গ্রুপের ৪ পরিচালকসহ ১৩ ব্যাংক কর্মকর্তার বিরুদ্ধে চকবাজার থানায় পৃথক ৩টি মামলা হয়েছে। এরা হলেন রিমেক্স ফুটওয়্যারের চেয়ারম্যান আব্দুল আজিজ, ব্যবস্থাপনা পরিচালক লিটুল জাহান মিরা, ক্রিসেন্ট লেদার প্রোডাক্টস ও ক্রিসেন্ট ট্যানারিজের চেয়ারম্যান এমএ কাদের এবং ব্যবস্থাপনা পরিচালক সুলতানা বেগম মনি।

এছাড়া জনতা ব্যাংক লিমিটেডে সংশ্লিষ্ট ১৩ জন কর্মকর্তাকে আসামী করে গতকাল চকবাজার মডেল থানা, চকবাজার, ঢাকায় পৃথক পৃথক ৩টি মামলা দায়ের করা হয়েছে, মামলা নং যথাক্রমে-৫৪, ৫৫ ও ৫৬। মামলা নং-৫৪ ও ৫৬ এর অন্যতম আসামী ক্রিসেন্ট লেদার প্রোডাক্টস লিমিটেড ও ক্রিসেন্ট ট্যানারিজ লিমিটেডের চেয়ারম্যান এম এ কাদেরকে গতকাল শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তর কর্তৃক আটক করা হয়েছে।

এনবিআর চেয়ারম্যান বলেন, ক্রিসেন্ট লেদার প্রোডাক্টস লিমিটেড থেকে জনতা ব্যাংকের ইমামগঞ্জ কর্পোরেট শাখায় রপ্তানি বিল ক্রয় করে কিন্তু ৪ মাসের মধ্যে প্রত্যাবাসিত হয়নি এরূপ বিলের সংখ্যা ২১৫টি; এবং টাকার পরিমাণ ৪২৮ দশমিক ৫৩ কোটি টাকা। অন্যদিকে পরবর্তী ৭ মাসে অর্থাৎ ২০১৮ সালের ৩১ অক্টোবর পর্যন্ত ২১৫টি বিলের মধ্যে মাত্র ৩ বিলের বিপরীতে ৫ দশমিক ৯৭ কোটি টাকা প্রত্যাবাসিত হয়েছে। ফলে ২১২টি বিলের বিপরীতে ৪২২ দশমিক ৪৬ কোটি টাকা অপ্রত্যাবাসিত রয়েছে। এনবিআরের তদন্তে উঠে এসেছে কোম্পানি এবং ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের যোগসাজসে ৪২২ দশমিক ৪৬ কোটি টাকার সমপরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা বিদেশে পাচার করেছেন।

এছাড়া রিমেক্স ফুটওয়্যার লিমিটেডও জনত ব্য্যাংকের ইমামগঞ্জ শাখা হতে ২৪০টি বিলের বিপরীতে ৪৮১ দশমিক ২৬ কোটি টাকা অপ্রত্যাবাসিত রয়েছে। এনবিআরের পর্যালোচনা দেখা গেছে জনতা ব্যাংক লিমিটেড, ইমামগঞ্জ কর্পোরেট শাখা সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাগণ, একই ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ের এফটিডি (এক্সপোর্ট) এর তৎকালীন ডিজিএম এবং জিএম এবং বিভাগীয় কার্যালয়, ঢাকা-দক্ষিণ এর তৎকালীন জিএম এবং রিমেক্স ফুটওয়্যার লিমিটেডের মালিকেরা পারষ্পরিক যোগসাজসে ৪৮১ দশমিক ২৬ কোটি টাকার সমপরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা বিদেশে পাচার করেছেন। এছাড়া ক্রিসেন্ট ট্যানারিজ লিমিটেড একই ব্যাংকের একই শাখার মাধ্যমে ১৫ দশমিক ৮৪ কোটি টাকার সমপরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা বিদেশে পাচার করেছেন।

গতকাল চকবাজার মডেল থানায় দায়েরকৃত মামলা নং- ৫৪, ৫৫ ও ৫৬ তে এজাহারভুক্ত আসামিরা হলেন- ক্রিসেন্ট লেদার প্রোডাক্টস লিমিটেড ও ক্রিসেন্ট ট্যানারিজ লিমিটেডের চেয়ারম্যান এম এ কাদের, ক্রিসেন্ট লেদার প্রোডাক্টস লিমিটেড ও ক্রিসেন্ট ট্যানারিজ লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সুলতানা বেগম (মনি), রিমেক্স ফুটওয়্যার লিমিটেডের চেয়ারম্যান আব্দুল আজিজ, রিমেক্স ফুটওয়্যার লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক লিটুল জাহান (মিরা), জনতা ব্যাংক লিমিটেডের সিনিয়র অফিসার (সাময়িক বরখাস্ত মো. আবদুল্লাহ আল মামুন, মো. মনিরুজ্জামান, মো. সাইদুজ্জাহান, প্রিন্সিপাল অফিসার (সাময়িক বরখাস্ত) মুহাম্মদ রুহুল আমিন, (৯) মো. মগরেব আলী, মো. খায়রুল আমিন, এজিএম (সাময়িক বরখাস্ত) মো. আতাউর রহমান সরকার, ডিজিএম মো. ইকবাল, এ কে এম আসাদুজ্জামান, কাজী রইস উদ্দিন আহমেদ, জিএম মো. রেজাউল করিম, ডিএমডি ফখরুল আলম, সোনালী ব্যাংক লিমিটেডের ডিএমডি মো. জাকির হোসেন। এনবিআর চেয়ারম্যান বলেন, এছাড়াও আরো কিছু প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ আইন, ২০১২ (সংশোধিত ২০১৫) অনুযায়ী মামলা দায়েরের প্রক্রিয়া চলমান।

মোশাররফ হোসেন ভূঁইয়া বলেন, প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণা অনুসারে দুর্নীািতর জিরো টলারেন্স ঘোষণা করেছেন। মাদকের বিরুদ্ধেও একই অবস্থান। মাদক দ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইন ও চোরাচালান আইনে তাৎক্ষণিক বিচার করা হবে। মোবাইল কোর্টের পাশাপাশি নিয়মিত কোর্টও চলবে। তিনি আরও বলেন, স্থল বন্দরে সম্মিলিত প্রচেষ্টায় কাজ করা হবে। ভারতের সঙ্গে দুটি ট্রেন যোগাযোগ রয়েছে। ওই ট্রেনে চোরাচালানের পণ্য আসছে সেখানেও অভিযান পরিচালনা করা হবে। সরকার পাচার এবং চোরাচালান বন্ধে আপোসহীন। সম্প্রতি টাকা পাচারের যে তথ্য এসেছে পরিমাণ নিয়ে কিছু বলছি না তবে অর্থ পাচার হচ্ছে তাতে সন্দেহ নেই। পাচার করা অর্থের ব্যাপারে এনবিআর, কেন্দ্রীয় ব্যাংক, দুদক এবং আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর দায়িত্ব রয়েছে। তিনি বলেন, দেশে বিনিয়োগের পরিবেশ রয়েছে, রপ্তানি অবারিত সুযোগ তারপরও কেন টাকা পাচার হচ্ছে। তিনি বলেন, যারা টাকা পাচার করেন, তারা ভোগ করতে পারেন না। আমরা আগে শুনতাম সুইচ ব্যাংকে টাকা রাখার ঘটনা। কিন্তু তারাও টাকা ফেরত দেয় না। অথচ অনেকে দেশের ব্যাংকের টাকা লুট করে নিয়ে যাচ্ছে। তিনি বলেন, দেশে ১০-১২টি কোম্পানি টাকা পাচারের তথ্য এনবিআরের কাছে রয়েছে। ফেব্রুয়ারির প্রথম সপ্তাহে সংশ্লিষ্টদের নিয়ে বৈঠক করে তাদের ব্যাপারে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

এক প্রশ্নের জবাবে এনবিআর চেয়ারম্যান বলেন, টাকা ফিরিয়ে আনতে আন্তর্জাতিক ফার্ম নিয়োগ দেওয়ার কাজ চলছে। ইতিমধ্যে বিদেশি কয়েকটি ফার্মের সঙ্গে আলোচনা হয়েছে। আরেক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, মাদক কারবারির সঙ্গে জড়িতদের সম্পদের হিসাবস নেওয়া হবে।

 

 

 



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ