Inqilab Logo

বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

কেতাবে থাকলেও গোয়ালে নেই

কর্মস্থলে না থেকেই বেতন-ভাতা নিচ্ছেন ৭ ডাক্তার, ২১ জনের বিপরীতে আছেন ৬ জন

মো. হাবিব ওসমান, কালীগঞ্জ (ঝিনাইদহ) উপজেলা থেকে : | প্রকাশের সময় : ২ ফেব্রুয়ারি, ২০১৯, ১২:০৫ এএম

কাজীর গরু কেতাবে আছে, গোয়ালে নেই এ প্রবাদবাক্যটি ঝিনাইদহের কালীগঞ্জে বিভিন্ন হাসপাতালের ক্ষেত্রে যথার্থ । আর বাস্তবরূপও তাই। ডাক্তার সম্পা, তিনি যে কোথায় আছেন, তা কেউ বলতেও পারেন না। সেই ৪ বছর আগে যোগদানের পরদিন থেকেই তিনি নিরুদ্দেশ। কিন্তু তবুও তার সেই চাকরি কাগজে কলমে এখনো বহাল আছে। আর কর্মস্থলে কাজ না করেই বেতন ভাতা নিচ্ছেন ৪ ডাক্তার ও ৩ নার্সসহ অনেকেই।

৫০ শষ্যার হাসপাতালটিতে ২১ জন ডাক্তার থাকার কথা থাকলেও বর্তমানে আছেন মাত্র ৬ জন ডাক্তার। সেই সাথে এক্সরে মেশিন নষ্ট, নেই ইসিজি টেকনিশিয়ান আর ডাক্তারের অভাবে হাসপাতালটিতে অপারেশন করা হয় সপ্তাহে মাত্র ১ দিন। সম্প্রতি স্বাস্থ্য মন্ত্রীর নির্দেশও উপেক্ষিত হচ্ছে এ উপজেলাতে। তাই মাস বছরের পর বছর এমন অনিয়মের ষোলকলা পূর্ণ হয়ে বর্তমানে ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য বিভাগের এখন চরম বেহাল অবস্থা।

কেউ কেউ বলেছে, এসব অনিয়মের পেছনে শক্ত খুটি হয়ে রয়েছেন স্বাস্থ্য মন্ত্রনালয়ের একটি অসৎ চক্র। ওই চক্রটির সহযোগিতায় ডেপুটেশন (প্রেষন) নামের এক তেলেসমাতি কাগজের বদৌলতে কাজ না করেই নিজ বাড়িতে থেকেই বেতন তুলতে পারেন। সরকারি নিয়োগ মোতাবেক ওই সকল ডাক্তার নার্সদের কর্মস্থল কালীগঞ্জ দেখানো হলেও বাস্তবে তারা রয়েছেন অন্য জেলা শহরে। এমনকি ডেপুটেশন বা প্রেষনের কাগজটিতে অন্য জেলাতে কাজ করার কথা বলা হলেও মূলত সেখানেও শুভঙ্করের ফাঁকি দিয়ে ব্যক্তিগত কাজ করে বেড়ান তারা। বছরের গড় বছর কর্মে ফাকি ও অনিয়মে জড়িত ওইসব ডাক্তার নার্সদের পেছনে শক্ত দেওয়াল হয়ে আছে স্বাস্থ্য মন্ত্রনালয়, জেলা ও উপজেলা স্বাস্থ্য বিভাগের কতিপয় অসৎ কর্মকর্তারা। আর বাড়িতে বসেই প্রতিমাসে বেতন তুলতে পারার সুবাদে ওই টাকার একটি অংশ ওইসব অসৎ কর্তাদের দিয়ে থাকেন বলেও অভিযোগ রয়েছে।

এসব নানা অনিয়মে স্বাস্থ্য সেবার এমন বেহাল চিত্র দেখে খোদ উপজেলা স্বাস্থ্য সেবা উন্নয়ন কমিটির ৮ মাস আগে কয়েকটি সভাতেই সদস্যরা তিরস্কার করে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়াসহ ডেপুটেশন বাতিলের সুপারিশ করা হয়েছে। কিন্তু তাতেও কাজ হয়নি।

কালীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য ও একাধিক সুত্রে জানা গেছে, উপজেলার বলরামপুর উপস্বাস্থ্য কেন্দ্রের ডা. সানজিদা ইয়াসমিন সম্পার চাকরি এখনো বহাল থাকায় ওই স্থানে নতুন কোন নিয়োগ দেওয়া সম্ভব হচ্ছেনা। আর কাষ্টভাঙ্গা ইউনিয়ন উপস্বাস্থ্য কেন্দ্রের ডাক্তার আতিকুর রহমান গত ২ বছর আগে যোগদানের কিছুদিন পরই চাকুরি থেকে ইস্তফা দিয়েছেন। তাই সেখানেও নিয়মের বেড়াজালে পড়ে নতুন ডাক্তার যোগদান করতে না পারায় নাজুক অবস্থা বিরাজ করছে।

এদিকে উপজেলার ১১ টি ইউনিয়নে ১১ জন মেডিকেল অ্যাসিস্টেনট (সেকমো) এর মধ্যে প্রেষণের কাগজ করে ৪ জনই রয়েছেন অন্য জেলা শহরে। এদের মধ্যে জামাল ইউনিয়ন উপ-স্বাস্থ্য কেন্দ্রের ডা. ইয়াসমিন আরা রয়েছেন কুষ্টিয়ার মিরপুরে, কোলা ইউনিয়ন উপ-স্বাস্ত্য কেন্দ্রের ডা. জয়নাল আবেদিন রয়েছেন কুষ্টিয়ার দৌলতপুরে ও সুন্দরপুর দূর্গাপুর ইউনিয়ন উপ-স্বাস্থ্য কেন্দ্রের ডা. তাসলিমা খাতুন রয়েছেন কুষ্টিয়ার কুমারখালীতে। এরাও কাজ না করে প্রতি মাসে ই-মেইল করে বেতন ভাতার শীট পাঠিয়ে বেতন তুলে নিচ্ছেন। তবে কাজ না করেই মাস বছরের পর বছর বেতন ভাতা তুলে নেবার পেছনে এদের সবারই রয়েছে ডেপুটেশন নামের এক তেলেসমাতী রক্ষাকবজ। একই ভাবে কালীগঞ্জ হাসপাতালের ৩ জন নার্স শাহানাজ পারভীন, হালিমা খাতুন ও লক্ষীরানী বিশ^াস ডেপুটেশন নিয়ে দীঘদিন বাইরে রয়েছেন। তারাও একই পন্থায় প্রতিমাসের বেতন ভাতা তুলে নিয়ে যান।

ডেপুটেশন বা প্রেষণে উপ-সহকারী মেডিকেল অফিসারদের মধ্যে কুষ্টিয়ার দৌলতপুরে থাকা জয়নাল আবেদিন জানান, তার স্ত্রীও দৌলতপুরে একই চাকরি করেন। ছেলে মেয়ে বাবা মাসহ পরিবারের দেখাশুনার জন্য তিনি ডেপুটেশন নিয়ে সেখানে আছেন। আর কুষ্টিয়ার মিরপুরে থাকা ইয়াসমিন আরার ব্যাক্তিগত মোবাইল ফোনটি বন্ধ থাকায় তার সাথে কথা বলা সম্ভব হয়নি। তবে এদের প্রায় সবাই পারিবারিক সমস্যা দেখিয়ে ডেপুটেশন নিয়েছেন বলে জানা গেছে।

এসব বিষয়ে উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. হুসায়েন শাফায়াত জানান, তিনি যোগদানের আগে থেকেই দেখছেন ওইসব ডাক্তার, নার্সরা ডেপুটেশন নিয়ে বাইরে থাকেন। তবে অনুপস্থিত ডাক্তারদের প্রতিমাসের উত্তোলনকৃত বেতনের একটি অংশ নেওয়ার বিষয়টি অস্বীকার করেন ।

”ডেপুটেশন” কাগজ সংক্রান্ত বিষয়ে ঝিনাইদহ জেলা সিভিল সার্জন ডা. রাশেদা খাতুন বলেন, অনেক ইউনিয়নে ডাক্তারদের বসার জায়গা সঙ্কট। এছাড়া ঢাকার ডি জি অফিস থেকে ডেপুটেশন অর্ডার কপির বিপক্ষে তার কিছুই করার নেই। ডাক্তারদের অনুপস্থিতিতে সেবাদান সমস্যার বিষয়টি তিনি স্বাস্থ্য মন্ত্রনালয়ে অবহিত করেছেন। তবে নিরুদ্দেশ ডা. সম্পার চাকুরিটি এখনো বহাল থাকার কথা স্বীকার করলেও তিনি আর চাকরি ফিরে পাবেন না বলে জানান।
ডাক্তার থেকেও নেই এমন বিষয়ে কালীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার সূবর্ণা রানী সাহা জানান, তিনি এ উপজেলাতে নতুন যোগদান করেছেন। সমন্বয় কমিটির সভাতে বিষয়টি আলোচনা করে পদক্ষেপ নিবেন বলে জানালেও আজ অবধি কোন পদক্ষেপ নিতে পারেনি।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: কর্মস্থলে না থেকেই বেতন-ভাতা নিচ্ছেন

২ ফেব্রুয়ারি, ২০১৯
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ