Inqilab Logo

শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

আজ কাগমারী সম্মেলন দিবস

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ৭ ফেব্রুয়ারি, ২০১৯, ১২:০৩ এএম

‘কাগমারী সম্মেলন’ ইতিহাসের এক গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়। ওই দিন পাকিস্তানি শাসকদের উদ্দেশে মওলানা ভাসানীর ‘আসসালামু আলাইকুম’ শব্দের ব্যবহারের কারণেই কাগমারী সম্মেলন ইতিহাসের পাতায় জায়গা করে নিয়েছে। আজ সেই কাগমারী সম্মেলনের ৬২তম দিবস।
১৯৫৭ সালের ফেব্রুয়ারি মাসের এই দিনে টাঙ্গাইল জেলার কাগমারীতে অনুষ্ঠিত হয় পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী লীগের কাউন্সিল অধিবেশন। একই সময় সেখানে অনুষ্ঠিত হয় মজলুম জননেতা মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানীর নেতৃত্বে আন্তর্জাতিক সাংস্কৃতিক সম্মেলন। তখন থেকেই দিবসটি কাগমারী সম্মেলন দিবস হিসেবে পালন করা হয়। পূর্ব বাংলার স্বায়ত্তশাসন ও সাম্রাজ্যবাদবিরোধী আন্দোনের ডাক দেয়া হয় ওই সম্মেলন থেকেই। ওই সম্মেলন বাংলাদেশের মানুষের অধিকার আদায়ের দাবি আন্তর্জাতিক মহলে ব্যাপক সাড়া ফেলে দেয়। মওলানা ভাসানীর ডাকে কাগমারীতে অনুষ্ঠিত ওই সম্মেলনকে বাঙালির ইতিহাসে সবচেয়ে বড় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান বলা হয়। সে সম্মেলনে চীন, সোভিয়েত ইউনিয়ন, ভারত, ব্রিটেন, মিসর, অস্ট্রেলিয়া, যুক্তরাষ্ট্র, কানাডাসহ বিশ্বের বহু দেশের প্রতিনিধিরা অংশগ্রহণ করেন। সেখানেই পাকিস্তানের স্বৈরশাসকদের বিরুদ্ধে মওলানা ভাসানী ‘আসসালামু আলাইকুম’ শব্দ ব্যবহার করেন।
টাঙ্গাইল জেলার কাগমারীতে ১৯৫৭ সালের ৬ ফেব্রুয়ারি শুরু হয় আওয়ামী লীগের কাউন্সিল অধিবেশন ও সাংস্কৃতিক সম্মেলন। ৭ ফেব্রুয়ারি কাউন্সিল অধিবেশনে মূল আলোচ্যসূচি ছিল পূর্ব পাকিস্তানের জন্য পূর্ণ স্বায়ত্তশাসন এবং জোটনিরপেক্ষ পররাষ্ট্রনীতি। কিন্তু আমেরিকার পক্ষ নিয়ে সিয়াটো ও সেন্টোর সামরিক চুক্তির প্রতি আওয়ামী লীগ নেতা পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী দৃঢ় সমর্থন ব্যক্ত করলে সম্মেলনে মতবিরোধের সৃষ্টি হয়। সোহরাওয়ার্দী সামরিক জোটের পক্ষে যুক্তি প্রদর্শন করেন। তিনি পাকিস্তান স্বাক্ষরিত সামরিক চুক্তি এবং কেন্দ্রে পূর্ব পাকিস্তানে আরোপিত অর্থনৈতিক নীতিমালার পক্ষে মত দেন। সোহরাওয়ার্দীর এই পররাষ্ট্রনীতি বিষয়ক বক্তব্য আওয়ামী লীগের বামপন্থী তেৃবৃন্দ সমর্থন করেননি। তাদের পুরোধা ছিলেন আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি (সম্মেলনেরও সভাপতি) মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী। মওলানা ভাসানী সোহরাওয়ার্দীর অনুসৃত সামরিক জোটের সমালোচনা করে প্রাদেশিক স্বায়ত্তশাসনের দাবি তোলেন।
পাকিস্তানের পররাষ্ট্রনীতি এবং পূর্ব বাংলার স্বায়ত্তশাসনের প্রশ্নে দলের দুই শীর্ষ নেতার (ভাসানী-সোহরাওয়ার্দী) মধ্যে মতবিরোধ প্রকাশ্য রূপ নেয়। ইঙ্গো-মার্কিন জোটের বাইরে স্বাধীন পররাষ্ট্রনীতির পক্ষে ভাসানী অনড় থাকেন। পূর্ব বাংলার পূর্ণ স্বায়ত্তশাসনের প্রশ্নে মওলানা বলেন, কেন্দ্রীয় সরকার যদি পূর্ব পাকিস্তানকে তার প্রাপ্য অধিকার থেকে বঞ্চিত করে, তাহলে সেদিন বেশি দেরি নেই যেদিন পূর্ব বাংলার মানুষ পাকিস্তানকে ‘আসসালামু আলাইকুম’ জানাবে। তার এই ঘোষণায় শাসকশ্রেণির মধ্যে তীব্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করে। কাগমারী সম্মেলনের পর থেকে বাংলাদেশে সূচিত হয় এক নতুন বাম প্রগতিশীল রাজনৈতিক ধারা। সে কারণে দিবসটি ঐতিহাসিকভাবে খুবই তাৎপর্যপূর্ণ।
ঐতিহাসিকদের মতে, কাগমারী সম্মেলন তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের জাতীয় রাজনীতির ক্ষেত্রে একটি মাইলফলক; বাংলাদেশের স্বাধিকার আন্দোলনের ইতিহাসে এক স্মরণীয় ঘটনা। কাগমারী সম্মেলনের মাধ্যমেই তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের স্বায়ত্তশাসন ও স্বাধিকার আন্দোলনের সূচনা হয়।
দিবসটি উপলক্ষে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও সামাজিক সংগঠন বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করবে। কাগমারী সম্মেলন দিবস উপলক্ষে আজ বৃহস্পতিবার নয়াপল্টনস্থ যাদু মিয়া মিলনায়তনে বাংলাদেশ ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি ও বাংলাদেশ ন্যাপ আলোচনা সভার আয়োজন করেছে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: দিবস

২২ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩
২১ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ