Inqilab Logo

শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

সবুজ সঙ্কেত পেতে প্রার্থীদের দৌড়ঝাঁপ

উপজেলা ভাইস-চেয়ারম্যান ও সিটিতে কাউন্সিলর পদ উন্মুক্ত আ.লীগের

ইয়াছিন রানা | প্রকাশের সময় : ১১ ফেব্রুয়ারি, ২০১৯, ১২:০৪ এএম | আপডেট : ১২:১৬ এএম, ১১ ফেব্রুয়ারি, ২০১৯

উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে ভাইস-চেয়ারম্যান, মহিলা ভাইস-চেয়ারম্যান ও ঢাকা উত্তর-দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ৩৬ টি ওয়ার্ডের কাউন্সিলর নির্বাচনে দলীয় প্রার্থী মনোনয়ন না দিয়ে উন্মুক্ত রেখেছে সরকারি দল আওয়ামী লীগ। এবার এই পদগুলোতে দলের প্রার্থী রয়েছে ৫ থেকে ১০ জন করে। এ কয়দিন ধরে প্রার্থীরা দলের মনোনয়নের জন্য দৌঁড়ঝাপ করলেও দলের মনোনয়ন না দেয়ার সিদ্ধান্তে এবার কেন্দ্রীয় নেতা, জেলা নেতা, মন্ত্রী, এমপিদের কাছ থেকে গ্রিন সিগনাল বা সবুজ সংকেত পেতে প্রতিযোগীতায় নেমেছেন।
প্রার্থীরা মনে করছেন, নির্বাচন উন্মুক্ত হওয়ায় একাধিক প্রার্থীর কারণে স্থানীয় সংগঠন কোন একক প্রার্থীর পক্ষে কাজ না করে নানা ভাবে বিভক্ত হয়ে যাবে। এর মধ্যে গ্রিন সিগনাল পাওয়া মানে, স্থানীয় সংগঠন ও প্রশাসনকে সেই প্রার্থীর পক্ষে কাজ করবে। এতে করে নির্বাচনে জয়লাভের পথ সুগম হবে প্রার্থীর।
এমনাবস্থায় স্থানীয় এমপি মন্ত্রী বা জেলা নেতাদের গ্রিন সিগনাল পেতে সকল প্রার্থী দৌড়ঝাপ চালাচ্ছেন যাতে করে স্থানীয় আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগসহ প্রশাসন, পুলিশকে তাদের পক্ষে কাজ করা এবং বিভিন্নভাবে সহায়তা করার জন্য উপরস্থ নেতারা বলে দিবেন। ফলে আলাদা একটি মেরুকরণ তৈরী হবে। একজন সিগনাল পেলে অন্য প্রার্থীদের কাছেই স্বাভাবিক একটি বার্তা পৌঁছাবে। তাতে করে দলে কোন্দল বা মারিমারির ঘটনা কম ঘটবে। বা ঘটলেও পুলিশ প্রশাসন গ্রিন সিগনাল পাওয়া সেই নেতার পক্ষ অবলম্বন করবে। ফলে দলের অপর প্রতিদ্ব›িদ্ব প্রার্থীদের সহজেই পরাজিত করে জয়লাভ করা সহজ হবে। গ্রিন সিগনাল পাওয়ার জন্য দৌড়ঝাপ চালানোর এগুলোই হচ্ছে মূল কারণ।
উল্লেখ্য, বিএনপি নির্বাচনে অংশ না নেয়ায় শুধুমাত্র উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান পদে ও ঢাকা উত্তর সিটির উপ-নির্বাচনে মেয়র পদে প্রার্থী মনোনয়ন দিয়েছে আওয়ামী লীগ। এদিকে ৩ ফেব্রুয়ারি আওয়ামী লীগের মনোনয়ন ফরম বিতরণের শুরুর দিন দলের সাধারণ সম্পাদক বলেছিলেন, ভাইস-চেয়ারম্যান ও মহিলা ভাইস-চেয়ারম্যান পদ উন্মুক্ত রাখা হবে। পরবর্তীতে সেদিন বিকালেই দলের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে, ভাইস-চেয়ারম্যান ও মহিলা ভাইস-চেয়ারম্যান প্রার্থীদের দলের মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করতে বলা হয়। এরপর ৮ ফেব্রুয়ারি দলের স্থানীয় সরকার মনোনয়ন বোর্ড শুধুমাত্র উপজেলা চেয়ারম্যান পদে দলের মনোনয়ন দিয়ে বাদ বাকি পদ ও ঢাকা সিটি করপোরেশনের কাউন্সিলর পদ উন্মুক্ত রাখার সিদ্ধান্ত নেয়।
এমনাবস্থায় দলের মনোনয়ন না দেয়া হলেও স্থানীয় মন্ত্রী, এমপি ও সংগঠনের দায়িত্বশীল নেতাদের আশির্বাদ অর্থাৎ গ্রিন সিগনাল পেতে কেন্দ্রীয় নেতা, জেলা নেতা, স্থানীয় এমপি এবং প্রার্থী যে নেতার অনুসারি হয়ে রাজনীতি করেন তার বাসা, অফিসে দৌড়াদৌড়ি করছেন। প্রার্থীরা যে বিভিন্ন নেতাদের বাসায় যাচ্ছেন, দেখা করছেন তা ফেসবুকে ছড়িয়ে দিয়ে প্রচার করতে চাচ্ছেন যে দলের উর্ধ্বতন নেতারা তার পক্ষে রয়েছেন।
সূত্র জানায়, নেতাদের আশির্বাদ পেতে দামী দামী উপহার সামগ্রী নিয়ে দারস্ত হচ্ছেন প্রার্থীরা। নেতাকে সন্তুষ্ট করে তার পক্ষে থাকার জন্য করছেন নানা প্রচেষ্টা। কারণ একটি উপজেলা বা ওয়ার্ডে বেশিরভাগ প্রার্থীই এমপির অনুসারি। এমপির অনুসারি নন এমন সংখ্যা কোথায় একজন-দুজন, তবে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে নেই। তাই এমপির গ্রিন সিগনাল পেতেই চলছে প্রতিযোগীতা।
এ বিষয়ে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ঢাকা উত্তরের একজন ওয়ার্ড কাউন্সিলর প্রার্থী ইনকিলাবকে বলেন, এমপির গ্রিন সিগনাল পেলে তো আর কিছুর প্রয়োজন নেই। এমপি যদি দলের একজন নেতার পক্ষে অন্যদের কাজ করার জন্য বলে দেন তাহলে তো অন্যদের তাতে না করার সুযোগ থাকে না। পুলিশ প্রশাসন থেকেও সহযোগিতা পাওয়া যায়। তাই এমপির গ্রিন সিগনালটাই বড় বিষয়।
তিনি আরো বলেন, ঢাকা উত্তরে দুইজন এমপির আসনে নির্বাচন হচ্ছে। একজন ঢাকা-১৮ আসনের এমপি সাহারা খাতুন আরেক জন ঢাকা-১১ আসনের এমপি রহমতউল্লা। আমরা সকল প্রার্থীই তাদের রাজনীতি করি। কারো সঙ্গে তাদের সম্পর্ক একটু বেশি ভাল আর কারো সঙ্গে একটু কম। তবে সকল প্রার্থীই তাদের। তাই এমপি কার পক্ষে আর কার বিপক্ষে থাকবেন তা নিয়ে নিজেদের মধ্যে প্রতিযোগীতা হচ্ছে।
এ বিষয়ে মুন্সিগঞ্জের একটি উপজেলা ভাইস-চেয়ারম্যান প্রার্থী বলেন, স্থানীয়ভাবে এমপির কথার বাইরে কিছু হওয়ার সম্ভাবনা খুব কম। দুই একটি স্থানে একটু ভিন্ন।
ঢাকা উত্তরের ৪৮ নং ওয়ার্ডের রেডিও প্রতীক প্রাপ্ত কাউন্সিলর প্রার্থী আমিনুল ইসলাম হান্নান ইনকিলাবকে বলেন, উন্মুক্তভাবে কাউন্সিলর নির্বাচন হচ্ছে তা আমাদের সকলের জন্যই ভাল হয়েছে। এখন নির্বাচন পর্যন্ত প্রশাসন যদি সবার জন্য সমান থাকে তাহলে সুন্দর একটি নির্বাচন হবে। নির্বাচনে জয়ের ব্যাপারে আশাবাদি তিনি।
ঢাকা দক্ষিণ সিটির ৬৫ নং ওয়ার্ডের কাউন্সির প্রার্থী হারুন অর রশিদ ইনকিলাবকে বলেন, প্রশাসন যদি কারো পক্ষ নেয় তাহলে অন্য প্রার্থীদের নির্বাচন করা কঠিন। বিপুল জনপ্রিয়তা থাকলেও তার জয়লাভ করা অনেক কষ্টের হয়ে যায়।
একই সিটির ৭০ নং ওয়ার্ডের প্রার্থী আতিকুর রহমান আতিক ইনকিলাবকে বলেন, যে দলের মনোনয়ন পান তিনি স্বাভাবিক ভাবেই এগিয়ে থাকেন। তবে এবার নির্বাচন যেহেতু উন্মুক্ত তাই প্রার্থীরা সবাই যে যার মতো করে প্রচারণা চালাবেন। নির্বাচনে জয়লাভের বিষয়ে শতভাগ আশাবাদি বলে জানান আতিক।#



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: আ.লীগ

১২ ডিসেম্বর, ২০২২

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ