Inqilab Logo

শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

নামবিওর ট্রাফিক ইনডেক্স : বিশ্বের শীর্ষ যানজটের শহর ঢাকা

বিশেষ সংবাদদাতা | প্রকাশের সময় : ১৬ ফেব্রুয়ারি, ২০১৯, ৯:০৮ পিএম

কলকাতাকে টপকে বিশ্বের যানজটপূর্ণ শহরের তালিকায় শীর্ষে স্থান পেয়েছে ঢাকা। গত দুই বছর এ তালিকায় শীর্ষে ছিল কলকাতা। বহুজাতিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান নামবিওর প্রকাশিত ‘ট্রাাফিক ইনডেক্স ২০১৯’-বিশ্বের যানজটপূর্ণ শহরের তালিকায় ঢাকার অবস্থান এখন শীর্ষে। এর আগে ২০১৮ ও ২০১৭ সালে সূচকটিতে দ্বিতীয় অবস্থানে ছিল ঢাকা। ২০১৬ সালে তৃতীয় ও ২০১৫ সালে এ অবস্থান ছিল অষ্টম। অর্থাৎ ঢাকায় যানজটের প্রকোপ ক্রমেই বাড়ছে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, একটি শহরের আয়তনের কমপক্ষে ২৫ শতাংশ সড়ক থাকতে হয়। তবে ঢাকায় সড়ক রয়েছে সাত-আট শতাংশ। যদিও গাড়ি চলাচলের মতো রয়েছে তিন-চার শতাংশ সড়ক। অথচ গত বছর রাজধানীর সড়কে নতুন ২৫ হাজার ২৭০টি ব্যক্তিগত গাড়ি ও এক লাখ চার হাজার বাইক নেমেছে। কয়েক বছর ধরেই এ সংখ্যা বাড়ছে।
বিশ্বের বিভিন্ন শহরের নানা পরিসংখ্যান সংগ্রহ করে অনলাইনে তা প্রকাশ করে নামবিও। এর মধ্যে রয়েছে জীবনযাপনের ব্যয়, অপরাধের হার, স্বাস্থ্যসেবার গুণগত মান ও যানজটের অবস্থা। প্রতিষ্ঠানটির সংগৃহীত তথ্য ফোর্বস, বিজনেস ইনসাইডার, টাইম, দ্য ইকোনমিস্ট, বিবিসি, দ্য নিউইয়র্ক টাইমস, চায়না ডেইলি, দ্য টেলিগ্রাফসহ বিশ্বের খ্যাতনামা বিভিন্ন সংবাদপত্র ব্যবহার করে।
জানা গেছে, বিশ্বের বিভিন্ন দেশের রাজধানী ও গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্যিক ২০৭টি শহরকে বিবেচনায় নিয়ে এ বছর ট্রাফিক ইনডেস্ক-২০১৯ প্রকাশ করেছে নামবিও। এক্ষেত্রে শীর্ষ স্থানে থাকা ঢাকার স্কোর ২৯৭ দশমিক ৭৬। ঢাকা শীর্ষে ওঠায় এ বছর দ্বিতীয় স্থানে নেমে গেছে ভারতের কলকাতা। যানজটের জন্য শহরটির স্কোর ২৮৩ দশমিক ৬৮। আর ২৭৭ দশমিক ৮১ স্কোর নিয়ে তৃতীয় অবস্থানে উঠে এসেছে ভারতের আরেক শহর দিল্লি।
তালিকায় চতুর্থ ও পঞ্চম স্থানে উঠে এসেছে কেনিয়ার রাজধানী নাইরোবি ও ইন্দোনেশিয়ার রাজধানী জাকার্তা। যানজটপূর্ণ শহর দুটির স্কোর যথাক্রমে ২৭৭ দশমিক ৬৬ ও ২৭৪ দশমিক ৩৯। শীর্ষ যানজটপূর্ণ শহরের তালিকায় ষষ্ঠ থেকে দশম স্থানে রয়েছে যথাক্রমে শ্রীলঙ্কার রাজধানী কলম্বো, ভারতের শহর মুম্বাই, ফিলিপাইনের রাজধানী ম্যানিলা, সংযুক্ত আরব আমিরাতের শহর শারজাহ ও ইরানের রাজধানী তেহরান।
বিশেষজ্ঞদের মতে, রাজধানীতে পরিকল্পিত বাস নেটওয়ার্ক গড়ে ওঠেনি। এছাড়া যানজট কমাতে আধুনিক গণপরিবহন (মেট্রোরেল, বিআরটি) ব্যবস্থা চালুর সুপারিশ করা হয়েছিল কৌশলগত পরিবহন পরিকল্পনায় (এসটিপি)। পরে সংশোধিত এসটিপিতে আধুনিক গণপরিবহন আরও বাড়ানোর সুপারিশ করা হয়, যদিও এগুলো এখনও আলোর মুখ দেখেনি। তবে মেট্রোরেল ও বাস র‌্যাপিড ট্রানজিট (বিআরটি) নির্মাণাধীন রয়েছে। এর সুফল পেতে কমপক্ষে দুই বছর লাগবে। অথচ অপরিকল্পিতভাবে বিভিন্ন ফ্লাইওভার নির্মাণ করা হয়েছে একের পর এক। এতে গত কয়েক বছরে যানজটের অবস্থা ক্রমেই ভয়াবহতার দিকে যাচ্ছে।
এদিকে ২০১৯ সালেও বিশ্বের সবচেয়ে কম যানজটপূর্ণ শহরের মধ্যে শীর্ষস্থান ধরে রেখেছে অস্ট্রিয়ার রাজধানী ভিয়েনা। শীর্ষ পাঁচে এরপর রয়েছে যথাক্রমে চেক রিপাবলিকের শহর বিয়ারনো, ডেনমার্কের কোপেনহেগেন, সুইডেনের গোথেনবার্গ ও জামার্নির ফ্রাঙ্কফুট।
ট্রাফিক ইনডেক্স প্রণয়নে কয়েকটি উপসূচক ব্যবহার করেছে নামবিও। এর মধ্যে রয়েছে সময় সূচক, সময় অপচয় সূচক, অদক্ষতা সূচক ও কার্বন নিঃসরণ সূচক। এ চার সূচক মিলিয়ে যেসব শহরের স্কোর ২৫০ বা তার বেশি, সেগুলো রয়েছে রেড রোজে। আর স্কোর যত কম হবে ততই যানজটের প্রকোপ কমবে।
ইনডেক্সে সময় সূচকের ক্ষেত্রে কোনো গন্তব্যে পৌঁছানোকে বোঝানো হয়েছে। এক্ষেত্রে কর্মস্থল বা স্কুলে যাতায়াতের সময়কে বিবেচনায় নেওয়া হয়েছে। আর ২৫ মিনিটের পথে গন্তব্যে পৌঁছাতে কত সময় লাগে, তা নির্দেশ করে সময় অপচয় উপ-সূচক। অদক্ষতার সূচক মূলত যানজটের অর্থনৈতিক ক্ষতি নির্দেশ করে। এক্ষেত্রে গণপরিবহনের পরিবর্তে ব্যক্তিগত গাড়ির ওপর নির্ভরশীলতা নির্দেশ করে। আর যানজটে সময় অপচয়ের কারণে নিঃসরিত অতিরিক্ত কার্বন-ডাই-অক্সাইডের মাত্রা নির্দেশ করে কার্বন নিঃসরণ সূচক। চারটি উপসূচকের মধ্যে সময় সূচক ও সময় অপচয় সূচকে ঢাকার অবস্থান প্রথম। তবে অদক্ষতা সূচকে ঢাকা শহর রয়েছে দ্বিতীয় অবস্থানে, আর কার্বন নিঃসরণ সূচকে ঢাকা রয়েছে ৯৯তম অবস্থানে। অর্থাৎ কম কার্বন নিঃসরণের কারণে শুধু একটি সূচকে ঢাকা ভালো অবস্থানে রয়েছে।
এতে দেখা যায়, ঢাকা শহরে কোনো গন্তব্যে পৌঁছাতে ২৫ মিনিটের দূরত্ব অতিক্রম করতে গড়ে সময় লাগে ৬৩ মিনিট। ঢাকা শহরের যানজটের অন্যতম কারণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে ব্যক্তিগত গাড়ি। প্রায় ২৬ শতাংশ সড়ক ব্যবহার করে থাকে ব্যক্তিগত গাড়ি, যেগুলোয় গড়ে দেড়জন (এক দশমিক পাঁচ) করে যাতায়াত করে। আর ৪৯ শতাংশ সড়ক ব্যবহার করে বাস, যেগুলোয় গড়ে ৫০ জন করে যাতায়াত করে।
নামবিওর তথ্যের সঙ্গে ঐকমত্য পোষণ করেন বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) পুরকৌশল বিভাগের অধ্যাপক প্রফেসর ড. শামছুল হক। গণমাধ্যমকে তিনি বলেন, ঢাকা শহরের যানজট ক্রমেই নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাচ্ছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নানামুখী পরিকল্পনা নেওয়া হলেও তার কোনোটিই পুরোপুরি বাস্তবায়িত হয়নি। তিনি বলেন, গণপরিবহন ব্যবস্থার বিকাশে কয়েক বছর ধরে আলোচনা হলেও কোনো কাজই হয়নি। বরং অপরিকল্পিতভাবে ফ্লাইওভার নির্মাণ করে যানজটকে স্থায়ী রূপ দেওয়া হয়েছে।
উল্লেখ্য, ২০১৫ সালে ঢাকা নগরীর অভ্যন্তরে যানবাহনের গড় গতি ছিল ঘণ্টায় মাত্র সাড়ে ছয় কিলোমিটার। সড়কের স্বল্পতা, ব্যক্তিগত গাড়ির আধিক্য ও যান চলাচলে বিশৃঙ্খলাই এর মূল কারণ। গণপরিবহন ব্যবস্থার উন্নয়ন না করলে ২০৩৫ সালে এ গতি চার কিলোমিটারে নেমে যাবে ধারণা করছেন বিশেষজ্ঞরা।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: যানজট

১৯ জানুয়ারি, ২০২৩
৯ জানুয়ারি, ২০২৩
১৯ ডিসেম্বর, ২০২২
২৭ নভেম্বর, ২০২২
২৯ অক্টোবর, ২০২২

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ