Inqilab Logo

বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ০৫ বৈশাখ ১৪৩১, ০৮ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

রাজধানীতে যাতায়াত নির্বিঘ্ন করতে হবে

| প্রকাশের সময় : ১৯ ফেব্রুয়ারি, ২০১৯, ১২:০৪ এএম

রাজধানীর মেট্রোরেল প্রকল্পের ফার্মগেট থেকে শাহবাগ হয়ে মতিঝিল পর্যন্ত অংশের কাজ শুরু হয়েছে। এই অংশের রাস্তার প্রশস্ততা ২২ মিটার। এর মধ্যে রাস্তার মাঝ বরাবর ১১ মিটার এলাকা নির্দিষ্ট করে দু’পাশে টিনের বেড়া দিয়েছে মেট্রোরেল কর্র্তৃপক্ষ। দু’পাশ দিয়ে যানবাহন চলাচলের রাস্তা ৫ মিটারের বেশি নেই। এই সরু রাস্তা দিয়েই যানবাহন চলাচল করছে অত্যন্ত ধীর গতিতে। ফলে দিনভর যানজট লেগেই থাকছে এবং যাত্রীসাধারণের ভোগান্তির কোনো শেষ থাকছে না। ১০ মিনিটের রাস্তা পাড়ি দিতে গণপরিবহনের লাগছে ঘণ্টার পর ঘণ্টা। যানজটের কারণে যাত্রীদের সময়শৃংখলা আগেও ছিল না; এখন তা রীতিমত ভেঙ্গে পড়েছে। মেট্রোরেলের কাজের সুবিধার্থে ইতোমধ্যে কিছু বাসের রুট পরিবর্তন করা হয়েছে। তাতে ভোগান্তি আরো বেড়েছে। যাত্রীরা অনেকটাই দিশাহারা হয়ে পড়েছে। কে কোথায় কোন বাসে যাবে, তা নির্ধারণ করাই কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে। মিরপুর থেকে ফার্মগেট হয়ে যেসব বাস বাংলামটর-শাহবাগ হয়ে গুলিস্তান-মতিঝিল আসতো, এখন সেগুলো সংসদ ভবন থেকে ঘুরে এলিফ্যান্ট রোড অথবা তেজগাঁও-মগবাজার হয়ে আসছে। এতে অসংখ্য যাত্রীর পথ এলোমেলো হয়ে গেছে। ট্রাফিকসূত্র জানিয়েছে, মেট্রোরেলের কাজ আগ্রসর হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে আরো কিছু রুটের পরিবর্তন হবে। সেক্ষেত্রে পরিস্থিতি কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে, সহজেই অনুমান করা যায়। রাজধানীর প্রধান তিনটি সড়ক হলো : বিমানবন্দর-ফার্মগেট-শাহবাগ-জিরোপয়েন্ট-মতিঝিল, গুলিস্তান-পল্টন-বাড্ডা-বসুন্ধরা-বিমানবন্দর এবং মিরপুর-গুলিস্তান। এই তিনটি সড়কের কোথাও যানজট হলে গোটা শহরেই তা সম্প্রসারিত হয়ে পড়ে। আমরা ফ্লাইওভার নির্মাণকে কেন্দ্র করে যানজট ও জনভোগান্তির চরম অবস্থা প্রত্যক্ষ করেছি। বছরের পর বছর ধরে সংশ্লিষ্ট এলাকার মানুষ ও যাত্রীসাধারণ অশেষ দুর্ভোগের শিকার হয়েছে। মেট্রোরেলের প্রথম ধাপের কাজ (উত্তরা-আগারগাঁও পর্যন্ত ১২ কিলোমিটার) অনেকটাই দৃশ্যমান হয়েছে। এই কাজের জন্য ওই এলাকার মানুষ ও যাত্রীসাধারণ কতটা দুর্ভোগ পুইয়েছে দিনের পর দিন এবং এখনো পোয়াচ্ছে, তা কারো অজানা নেই। এখন আলোচ্য অংশের জন্য একইভাবে কিংবা তার চেয়েও বেশি দুর্ভোগ স্বীকার করতে হবে সকলকে।
উন্নয়ন প্রকল্প জনস্বার্থেই। রাজধানীকেন্দ্রিক মেট্রোরেল ও ফ্লাইওভারসহ যে সব উন্নয়ন প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে তাদের লক্ষ্য রাজধানীর সার্বিক উন্নয়ন, যানজট নিরসন, চলাচল ও যাতায়াতের সুবিধা বাড়ানো এবং জীবনযাপনে স্বাচ্ছন্দ্য আনা। কাজেই এসব উন্নয়ন প্রকল্পের ব্যাপারে নেতিবাচক মনোভাব প্রদর্শনের কোনো অবকাশ নেই। এগুলোকে স্বাভাবিক ও অপরিহার্য বিষয় হিসাবেই গণ্য করতে হবে। কোনো উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নে জনভোগান্তি একেবারেই হবে না, সেটা বাস্তবসম্মত নয়। কিন্তু ভোগান্তি যখন সীমা ছাড়িয়ে যায়, তখনই প্রশ্ন ওঠে। রাজধানীকেন্দ্রিক উন্নয়ন প্রকল্পগুলোর ক্ষেত্রে এ প্রশ্ন বরাবরই উঠেছে। সঙ্গতভাবে এটাই প্রত্যাশিত, যে-কোনো প্রকল্প বাস্তবায়নের আগে এমন একটি সুষ্ঠু পরিকল্পনা করা হবে, যাতে জনসাধারণের চলমান সুযোগ-সুবিধা যতটা সম্ভব অক্ষুন্ন থাকে। রাজধানীর উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নে তেমন পরিকল্পনা গ্রহণ করতে দেখা যায় না বা তাঁর প্রমাণ পাওয়া যায় না। সেটা আমরা যেমন ফ্লাইওভার নির্মাণের ক্ষেত্রে লক্ষ্য করেছি, তেমনি মেট্রোরেলের ক্ষেত্রেও লক্ষ্য করছি। রাজধানীর ফ্লাইওভার বা মেট্রোরেল আর পদ্মাসেতু কিংবা রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্প এক নয়। পদ্মা সেতু রূপপুর পারমানবিক বিদ্যুৎ প্রকল্পের কারণে জনসাধারণের ক্ষতিগ্রস্ত হওয়া কিংবা দুর্ভোগে পড়ার কোনো বাস্তবতা বিদ্যমান নেই, যেটা আছে রাজধানীর ফ্লাইওভার কিংবা মেট্রোরেলের ক্ষেত্রে। রাজধানীতে প্রায় দুকোটি লোকের বসবাস। এখানে যানজট নিত্যদিনের ঘটনা। এর পরিবেশ ও বসবাসযোগ্যতা মারাত্মক হুমকির সম্মুখীন। বিশ্বে যানজটের ক্ষেত্রে ঢাকা শীর্ষে। এর পরিবেশ ও বসবাসযোগ্যতা রীতিমত তলানিতে এসে ঠেকেছে। এমতাবস্থায়, নাগরিক সুবিধা ও স্বাচ্ছন্দ্য যতটুকু আছে তা বহাল রাখার কোনো বিকল্প নেই। মেট্রোরেল আমরা অবশ্যই চাই, তবে এর কাজের সময় রাজধানীর এত মানুষ কীভাবে চলাচল করবে তার সুব্যবস্থাও চাই। বিদ্যমান সুবিধা ও ব্যবস্থার পূর্ণাঙ্গ ব্যবহার নিশ্চিত করা এক্ষেত্রে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ, যার অভাব আমরা বাস্তবে প্রত্যক্ষ করছি। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ, বিভাগ ও মন্ত্রণালয়ের এ দিকে দ্রুত নজর দেয়া প্রয়োজন।
দুর্ভাগ্যজনক হলেও বলতে হচ্ছে, আমাদের দেশে উন্নয়ন প্রকল্প গ্রহণের ক্ষেত্রে যথেষ্ট চিন্তাভাবনা, গবেষণা ও পরিকল্পনা হয় না। একারণে প্রকল্পের বাস্তবায়ন পর্যায়ে নানা ত্রুটি-বিচ্যুতি ধরা পড়ে। অনেক সময় ডিজাইনে পরিবর্তন আনা হয়, অনেক সময় কাজের প্রক্রিয়ার ক্ষেত্রেও পরিবর্তন ঘটে। কখনো কখনো প্রয়োজনীয় পরিবর্তন উপেক্ষিত হয় কিংবা সম্ভব হয় না। সেক্ষেত্রে ত্রুটিযুক্ত অবস্থায় প্রকল্প শেষ হয় এবং জনসাধারণ তার প্রত্যাশিত সুবিধা থেকে বঞ্চিত হয়। একথাও কারো অজানা নেই, আমাদের দেশে অবকাঠামো, বিশেষ করে রাস্তা, ব্রিজ, বাঁধ নির্মাণের ব্যয় বিশ্বে সর্বোচ্চ। অথচ কাজের মান সর্বনিম্ন। এসব কাজের জন্য যাদের ঠিকাদার নির্বাচন করা হয়, তাদের অধিকাংশই অনভিজ্ঞ ও দুর্নীতিপরায়ণ। এখানে রাজনৈতিক বিবেচনা একটা বড় ভূমিকা পালন করে। সব প্রকল্পের ক্ষেত্রেই দুর্নীতি ও লুটপাট একটা অনিবার্য অনুসঙ্গ। এভাবে জনগণের ট্যাক্সের টাকা কিংবা বৈদেশিক ঋণের টাকা যে কত লুটপাট হয়ে যায়। তার ইয়ত্তা নেই। যথাসময়ে প্রকল্পের কাজ শেষ হয়েছে, এমন দৃষ্টান্ত এদেশে বিরল। সময় এবং ব্যয় বাড়ানো প্রায় সকল উন্নয়ন প্রকল্পের ক্ষেত্রেই সাধারন বাস্তবতা। এই অবস্থা থেকে আমাদের বেরিয়ে আসতে হবে। প্রকল্পের কাজ যথাসময় যথাবাজেটে শেষ করতে হবে। অভিজ্ঞদের টিকাদার নির্বাচন করতে হবে এবং কাজের মান নিশ্চিত করতে হবে। প্রকল্প বাস্তবায়নে নজরদারি নিয়মিত ও তীক্ষ করতে হবে। এই বিবেচনা সামনে রেখে আমরা আশা করবো, মেট্রোরেল প্রকল্পের কাজ যথাসময়ে ঠিকভাবে ও মানে সম্পন্ন করা হবে। এ প্রকল্পের কারণে যে জনদুর্ভোগ সৃষ্টি হচ্ছে, তা দূর করার ত্বরিত পদক্ষেপ নিতে হবে। মনে রাখতে হবে, দু’তিন বছর কম সময় নয়। এই সময় পর্যন্ত বর্তমান জনদুর্ভোগ প্রলম্বিত হলে জীবনযাপনই দুর্বিষহ হয়ে পড়বে না, বিনিয়োগ, ব্যবসা-বাণিজ্যসহ সকল ক্ষেত্রেই দেখা দেবে তার নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া।



 

Show all comments
  • মামুন ১৯ ফেব্রুয়ারি, ২০১৯, ১০:০৬ এএম says : 0
    যানজটের যে মহামারি,তা মনে হয় বাংলাদেশের ভাগ‍্যে নির্ধারিত রুগী।সরকার যদি সকল বাস পরিবহনের ভাড়া যাত্রীদের জন‍্যে মুওকুফ করে দিতো,তাহলে ব‍্যক্তিগত গাড়িগুলো বন্দ্ব হয়ে যেতো।কিছুটা হলেও যানজটের ভোগান্তি কমতো।তবে বাসগুলোর সার্ভিস যেন ভাল হয় সে খেয়াল রাখতে হবে।অন্তত অফিস শুরু এবং শেষ সময়ে এই পদ্দ্বতিটা অবলম্বন করা যায়। যেমনটা অন‍্য দেশগুলো করেন। ্
    Total Reply(0) Reply
  • Mamun ১৯ ফেব্রুয়ারি, ২০১৯, ১০:৪৩ এএম says : 0
    অনেক সুনদর হয়েছে।
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: মেট্রোরেল


আরও
আরও পড়ুন