Inqilab Logo

শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

ব্যাংকের সংখ্যা নিয়ে চিন্তিত নন অর্থমন্ত্রী

৫০ হাজার টন গম কেনার সিদ্ধান্ত

অর্থনৈতিক রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ১৯ ফেব্রুয়ারি, ২০১৯, ১২:০৪ এএম

অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেছেন, স্টাডি করে চাহিদার ভিত্তিতেই কেন্দ্রীয় ব্যাংক নতুন তিনটি ব্যাংকের অনুমোদন দিয়েছে। এ ক্ষেত্রে ব্যাংকের সংখ্যা নিয়ে চিন্তিত নন বলেও উল্লেখ করেন তিনি। এছাড়া ঋণ কীভাবে ক্লাসিফাইড হলো, তা দেখার জন্য আমরা শিগগিরই স্পেশাল অডিটের ব্যবস্থা করছি। স্পেশাল অডিটের পর ব্যাংক নিয়ে আমাদের কথা বলা ভালো হবে বলেন অর্থমন্ত্রী। গতকাল সচিবালয়ে অর্থনৈতিক বিষয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটি ও সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটিতে যোগ দেয়ার আগে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে অর্থমন্ত্রী এসব কথা বলেন।
গত রোববার বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিচালনা পরিষদ সভায় নতুন তিনটি ব্যাংকের নীতিগত অনুমোদন দেয়ার সিদ্ধান্ত হয়। ব্যাংকগুলো হলো- বেঙ্গল কমার্শিয়াল ব্যাংক, দ্য সিটিজেন ব্যাংক ও পিপলস ব্যাংক। এ তিন ব্যাংক অনুমোদনের ফলে দেশে সব মিলিয়ে তফসিলি ব্যাংকের সংখ্যা দাঁড়াল ৬২টিতে। নতুন তিনটি ব্যাংক অনুমোদনের বিষয়ে জানতে চাইলে অর্থমন্ত্রী বলেন, তিনটি ব্যাংক সম্পর্কে আমাকে জানতে হবে। আমি এখনও জানি না। আমার মনে হয় সেন্ট্রাল ব্যাংকের গভর্নরের সঙ্গে আলাপ করলে আমরা তথ্য পাব। তখন ভালো হবে। তিনি বলেন, সেন্ট্রাল ব্যাংকের গভর্নর বলেছেন, ডেফিনেটলি প্রয়োজনীয়তা না থাকলে এই কাজ করত না। তাদের হয়তো ইন্সট্রাকশন আছে, প্রয়োজনীয়তা অনুভব করেছেন এবং সেই প্রয়োজনীয়তার ভিত্তিতে তারা করে থাকতে পারেন।
আগের অর্থমন্ত্রী বলতেন ‘বাংলাদেশে আর নতুন ব্যাংকের প্রয়োজন নেই’-এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে মুস্তফা কামাল বলেন, বাংলাদেশে কয়টি ব্যাংক আছে সেটা বড় ব্যাপার না। ব্যাংকগুলো যদি স্বাভাবিকভাবে নিয়মনীতি মেনে চলে, সংখ্যা দিয়ে কোনো কিছু হবে না। ব্যাংকের কার্যক্রম যদি থাকে, যে উদ্দেশ্যে ব্যাংক করা, সেভাবে যদি কাস্টমারদের নিয়মানুযায়ী সার্ভিস দিতে পারে, অনিয়মের মাঝে নয়।
‘তাহলে ইন দ্যাট কেস মনে হয় নম্বর (ব্যাংকের সংখ্যা) নিয়ে আমি চিন্তিত নই। আমাদের যে ব্যাংকগুলো আছে, ৪০০-৫০০ কোটি টাকা পেইড আপ ক্যাপিটাল, দিস ইজ হোয়াট। বিদেশে যে কোনো একটি ব্যাংকের ব্রাঞ্চের সমপরিমাণ পেইড আপ ক্যাপিটাল ও রিসোর্সেস আমাদের ২০টি ব্যাংকের নেই। সুতরাং নম্বর দিয়ে হবে না’ বলেন অর্থমন্ত্রী।
আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেন, আপনি বড় একটা (ব্যাংক) করেন ৫০টা না করে। সেই একই কথা হলো। আমি মনে করি, নম্বর দিয়ে না। আমাদের চাহিদা আছে কি না, চাহিদা নিরূপণ করে যদি করা হয়ে থাকে, ইন দ্যাট কেইস ফাইন, ইটস ওকে। আমার বিশ্বাস সেন্ট্রাল ব্যাংক এবং যারা সংশ্লিষ্ট আছেন তারা সবাই কমপ্লিটলি একটা স্টাডি করে, স্টাডির ভিত্তিতেই তারা সেই কাজটি করেছে।
বাংলাদেশ ব্যাংক পেইড আপ ক্যাপিটাল ৪০০ কোটির পরিবর্তে ৫০০ কোটি টাকার শর্তও দিয়েছে নতুন ব্যাংকগুলোকে-এ বিষয়ে মন্ত্রী বলেন, ‘ইট ইজ গুড, ভেরি গুড। আস্তে আস্তে পেইড আপ ক্যাপিটাল যদি বাড়িয়ে নেয়, তাহলে সেফটিনেটটা বড় হয়। আমার মনে হয়, সেই উদ্দেশেই তারা করেছে। আস্তে আস্তে এটা বাড়াতে পারে।
ব্যাংক মার্জার (একাধিক ব্যাংক একত্রিত করা) করার কথা বলা হচ্ছে- এ বিষয়ে অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘মার্জার করা হবে। মার্জার অবশ্যই করা হবে। মার্জার করার যদি কোনো প্রয়োজনীয়তা হয়, তবে করা হয়। এখন তো ব্যাংকগুলোকে আমরা কিছু কথাবার্তা বলছি। তাদের কিছু শর্ত দেয়া হবে, তারা কীভাবে পারফর্ম করবে, কীভাবে ক্যাসিফাইড লোন কমিয়ে নিয়ে আসা হবে। আমাদের মূল সমস্যা হচ্ছে ক্লাসিফাইড লোন, ক্লাসিফাইড লোন কমিয়ে নিয়ে আসতে হলে ব্যাংকগুলোকে একটা অবস্থান সৃষ্টি করে দিতে হবে যে, তারা এটা কীভাবে করবে। আশির দশক থেকে ক্লাসিফাইড লোন হয়ে আসছে।
আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেন, এই যে লম্বা সময় থেকে ক্লাসিফাইড লোন হয়ে আসছে সেগুলো থেকে আমরা কীভাবে অব্যাহতি পেতে পারি, সেই বিষয়েও আমরা কথা বলছি। আমার মনে হয়, তারপরে আমরা একটা সমাধানে আসতে পারব।
মুস্তফা কামাল বলেন, লোনগুলো কীভাবে ক্লাসিফাইড হলো, তা দেখার জন্য আমরা শিগগিরই স্পেশাল অডিটের ব্যবস্থা করছি। স্পেশাল অডিটের পর আমাদের কথা বলা ভালো হবে
এদিকে প্রতি টন ২৯৪ দশমিক ৯৫ ডলার দরে মোট ১২৩ কোটি ৮৭ লাখ টাকা ব্যয়ে ৫০ হাজার টন গম কেনার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। আন্তর্জাতিক দরপত্রের মাধ্যমে সিঙ্গাপুরের প্রতিষ্ঠান মেসার্স অ্যাগ্রোক্রপ ইন্টারন্যাশনাল এ গম বাংলাদেশ সরকারকে সরবরাহ করবে। রাশিয়া থেকে গম আমদানি করা হবে। গতকাল সচিবালয়ের মন্ত্রিসভা কক্ষে অনুষ্ঠিত সরকারের ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির বৈঠকে এ অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তাফা কামালের সভাপতিত্বে বৈঠকে কমিটির সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন। সভা শেষে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের অতিরিক্ত সচিব মোসাম্মৎ নাসিমা বেগম সাংবাদিকদের এসব তথ্য জানান।
অতিরিক্ত সচিব জানান, বৈঠকে ৫০ হাজার টন ইউরিয়া আমদানির সিদ্ধান্ত অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে চট্টগ্রাম বন্দরের মাধ্যমে ২৫ হাজার টন ইউরিয়া কিনতে ব্যয় হবে ৭০ কোটি ৫৬ লাখ টাকা। প্রতি টনে পড়বে ৩৩৬ দশমিক ২১ মার্কিন ডলার। এ সার আমদানির কাজ পেয়েছে বাংলাদেশের মেসার্স পোটন ট্রেডার্স। বাকি ২৫ হাজার টন ইউরিয়া আমদানি করা হবে মোংলা বন্দর দিয়ে। এতে লাগবে ৭০ কোটি ৭৭ লাখ টাকা। এই সারও আনার দরপত্র পেয়েছে পোটন ট্রেডার্স। প্রতি টন সার আমদানিতে খরচ হবে ৩৩৭ দশমিক ২১ ডলার।
অতিরিক্ত সচিব আরও জানান, সরকারের বিভিন্ন দফতরে ইন্টারনেট সেবা দিতে ২০১৭ সালের জানুয়ারি থেকে ২০১৮ সালের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ৯৩ কোটি ৪৫ লাখ টাকা বকেয়া পরিশোধ সংক্রান্ত প্রস্তাবও কমিটির বৈঠকে অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।
এদিকে দেশের উত্তরাঞ্চলের যোগাযোগ ব্যবস্থা উন্নয়নে এলেঙ্গা-হাটিকমরুল-রংপুর মহাসড়ক চারলেন উন্নীত করা হচ্ছে। প্রকল্পে ব্যয় হবে ৭৬৯ কোটি ৩৯ লাখ টাকা। নাসিমা বেগম বলেন, সাসেক সড়ক সংযোগ প্রকল্প-২ এর আওতায় এলেঙ্গা-হাটিকামরুল-রংপুর মহাসড়ক চার লেন উন্নীতকরণ শীর্ষক প্রকল্পের প্যাকেজ এসপি-০৩ লট, ডব্লিউপি-১০, ডব্লিউপি-১১ এবং ডব্লিউপি-১২ এর ক্রয় প্রস্তাব অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। এতে মোট ব্যয় হবে ৭৬৯ কোটি ৩৯ লাখ টাকা। বাংলাদেশ সরকার ও এডিবির অর্থায়নে সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তর প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করবে।
একই প্রকল্পের আওতায় টাঙ্গাইল থেকে এলেঙ্গার ১০ কিলোমিটার রাস্তা দুই লেন থেক চার লেনে উন্নীতকরণের ভেরিয়েশন প্রস্তাব অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। আগে এ প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছিল ৩৫৩ কোটি ৬০ লাখ টাকা। প্রকল্পে অতিরিক্ত ১১৭ কোটি টাকা ব্যয় বেড়ে যাওয়ায় কমিটি তা অনুমোদন দিয়েছে। প্রকল্পটির মোট ব্যয় দাঁড়িয়েছে ৪৭০ কোটি ৭৫ লাখ টাকা।
এছাড়া ক্রয় কমিটির বৈঠকে আজিমপুর সরকারি কলোনিতে দুটি ২০ তলা বিশিষ্ট ভবন নির্মাণের দরপ্রস্তাব অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। এজন্য ব্যয় ধরা হয়েছে ১৯৫ কোটি ৬৯ লাখ টাকা। জিকেবি অ্যান্ড কোম্পানি প্রাইভেট লিমিটেড নামের বাংলাদেশি প্রতিষ্ঠান এ ভবন নির্মাণের কাজ পেয়েছে বলে জানান অতিরিক্ত সচিব নাসিমা বেগম।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: অর্থমন্ত্রী


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ