Inqilab Logo

শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

নিমতলী থেকে চকবাজার

স্টালিন সরকার | প্রকাশের সময় : ২২ ফেব্রুয়ারি, ২০১৯, ১২:৫৫ এএম

পুরান ঢাকার নিমতলীর ভয়াবহ অগ্নিকান্ডের কথা মনে আছে! ২০১০ সালের ৩ জুন নিমতলীর ৪৩/১ নবাবকাটরায় পাঁচতলা বাড়িতে স্মরণকালের অন্যতম ভয়াবহ অগ্নিকাÐে প্রাণ হারিয়েছে ১২৩ জনকে। ঘনবসতিপূর্ণ এলাকায় দাহ্য পদার্থের গোডাউন থাকায় সেই অগ্নিকাÐ ঘটেছিল। চকবাজারের চুড়িহাট্টায় অগ্নিকাÐ ঘটনায় আগুন মনে করিয়ে দিল সেই নিমতলী ট্র্যাজেডির কথা। সে সময়ও একাধিক তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছিল। পুরান ঢাকার জনবসতিপূর্ণ এলাকা থেকে সব ধরণের প্লাস্টিক পলিথিনের গুদাম, কারখানা, কেমিক্যাল ও দাহ্য পদার্থের ফ্যাক্টরি, প্লাস্টিক পলিথিনের কাঁচামালের গোডাউন সরিয়ে নেয়ার ঘোষণা দেয়া হয়েছিল। কিন্তু গত ৯ বছরে পরিস্থিতির কোনো উন্নতি হয়নি। তদন্ত রিপোর্ট জাতি জানতে পারেনি; অবৈধভাবে গড়ে ওঠা ফ্যাক্টারীও সরেনি।
রাজধানীর চকবাজার এলাকায় একুশের রাতে ভয়াবহ অগ্নিকাÐের ঘটনা ঘটেছে। রাত সাড়ে ১০টার দিকে চকবাজারের চুড়িহাট্টা এলাকার ওয়াহিদ ম্যানশন নামের পাঁচতলা ভবনে প্রথম আগুন লাগে। সে আগুন ছড়িয়ে যায় সবখানে। প্রাণ হারায় বহু মানুষ। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, পাশের সড়কে ট্রান্সফরমার বিস্ফোরণের পর একটি গাড়িতে আগুন লাগে। সেখান থেকেই আগুনের সূত্রপাত। ওই ভবন থেকে আগুন পাশের তিনটি ভবনে ছড়িয়ে পড়ে।
রাত দেড়টার দিকে আগুন অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে আসে। পরবর্তীতে সে আগুন আবার দাউ দাউ করে ওঠে। ওয়াহিদ ম্যানশনের পাশেই রয়েছে পারফিউম, বডি স্প্রে, প্লাস্টিক পলিথিনের কাঁচামালে গুদাম কারখানা। এমন কথাই জানিয়েছে এলাকাবাসী ও ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা। ঘটনাস্থলে উদ্ধারকারী লোকজন বলেছে, অগ্নিকাÐের স্থল থেকে ক্ষণে ক্ষণে বিস্ফোরণের শব্দ শোনা যাচ্ছিল। আগুনের খবর পেয়েই ফায়ার সার্ভিসের ৩৬টি ইউনিট ঘটনাস্থলে ছুটে যায়। ভয়াবহ এই আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে তাদের প্রায় ১০ ঘন্টা সময় লাগে। ততক্ষণে সবকিছু শেষ হয়ে গেছে। আগুন লাগার কারণ সম্পর্কে ভিন্ন ভিন্ন তথ্য পাওয়া যায়। কেউ জানান গাড়ির গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরিত হয়ে আগুন লেগেছে। কেউ বলছেন বৈদ্যুতিক ট্রান্সফরমারের বিস্ফোরণ ঘটেছিল। আবার কেউ ভবনটির পাশের খাবার হোটেল থেকে আগুনের সূত্রপাত হয় বলে জানান। মহান একুশে এবং আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসে যখন জাতীয় শহীদ মিনারে সর্বস্তরের মানুষ ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানাতে ব্যস্ত তখন কয়েক কিলোমিটার দুরে চকবাজারে আগুনের লেলিহান শিখা সবকিছু পুরে ছারখার করে দেয়।
এমনই ঘটনা ঘটেছিল ২০১০ সালের ৩ জুন নিমতলীর ৪৩/১ নবাবকাটরায় পাঁচতলা বাড়িতে। ভয়াবহ অগ্নিকাÐে ঘটনায় প্রাণ হারায় ১২৩ জন মানুষ। আহত হয় কয়েক শ মানুষ। আপনজন হারিয়ে নিঃস্ব হতে হয় অনেক পরিবারকে। মূলত কেমিক্যাল গোডাউনের আগুনেই ওই দিনের অগ্নিকাÐটি ঘটে। গোডাউনের অতি দাহ্য রাসায়নিক পদার্থের কারণে আগুন দ্রæত ছড়িয়ে পড়ে চারদিকে। পুরান ঢাকার বিভিন্ন এলাকায় প্রায় চার হাজার কেমিক্যাল গোডাউন, কারখানা রয়েছে। এসব গোডাউন ও কারখানায় বিস্ফোরক ও দাহ্য পদার্থ থাকায় আবাসিক এলাকার জন্য অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ। চকবাজারে আগুনের ঘটনার পর একাধিক তদন্ত টীম গঠন করা হয়েছে। সরকারের দায়িত্বশীল মন্ত্রী ও কর্মকর্তা-কর্মচারীরা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে নানা প্রতিশ্রæতি দিচ্ছেন। দেখা যাক তদন্ত কমিটির পরিণতি ৯ বছর আগের নিমতলীর ঘটনায় গঠিত তদন্ত কমিটির পথে হাটে কিনা। আর মন্ত্রীদের প্রতিশ্রæতি কতদূর গড়ায় সেটাও দেখার জন্য দেশবাসী অপেক্ষা করছে। ##

 

 

 



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: চক বাজার ট্রাজিডি
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ