Inqilab Logo

মঙ্গলবার, ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ০৩ বৈশাখ ১৪৩১, ০৬ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

নদী খননের মাটি নদীতেই

নাব্যতা ফেরানোর নামে লুটপাট

নাটোর থেকে মো. আজিজুল হক টুকু : | প্রকাশের সময় : ২৭ ফেব্রুয়ারি, ২০১৯, ১২:০৪ এএম

নাটোরে নদী খনন করে সেই মাটি নদীতেই ফেলা হচ্ছে। ফলে লাভের লাভ কিছুই হচ্ছে না। বরঞ্চ খননের নামে নষ্ট হচ্ছে কোটি কোটি টাকা। এমনই অনিয়ম ঘটেছে নাটোরের গুরুদাসপুরে আত্রাই ও গুমানী নদীর সংস্কারে খনন কাজে।
মাটি সম্পূর্ণ সরিয়ে ফেলা হবে বলে প্রকল্প পরিচালক সাইদুর রহমান দাবি করলেও স্থানীয়রা বিশ্বাস করতে চাইছে না। তাদের প্রশ্ন-যদি এ মাটি সরানো না হয়, তখন দায়ভার কে নেবে? স্থানীয়রা আরো অভিযোগ করেন, প্রায় ৩শ’ ফিটের নদীর মাঝখানে ৩০-৪০ শতাংশ জায়গা খনন করা হচ্ছে। এতে নদীতে নালা তৈরি হচ্ছে। আর দুইপাশ সঙ্কুচিত হয়ে নদীর প্রশস্ততা কমে যাচ্ছে।
স্থানীয় সংসদ সদস্য অধ্যাপক আব্দুল কুদ্দুস খননস্থলে গিয়ে অভিযোগের সত্যতা পান এবং সোমবার ওই খনন কাজ বন্ধ করে দেন। তিনি বলেন, নদী দুটির নাব্যতা ফেরাতে প্রধানমন্ত্রী বিশেষ উদ্যোগ গ্রহণ করেছেন। কিন্তু ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান নদী দুটির মাঝ বরাবর খনন করলেও মাটি ফেলছে নদীর ভেতরেই। এতে উভয় পাশ থেকে সঙ্কুচিত হচ্ছে নদী। বর্ষাকালে ওই মাটি স্রোতে ভেসে আবারো ভরাট হয়ে যাবে। তাই জনস্বার্থে ওই খনন কাজ বন্ধ করে দেয়া হয়েছে।
উপজেলা নদী রক্ষা আন্দোলন কমিটির সভাপতি অধ্যাপক আতাহার হোসেন বলেন, নৌ মন্ত্রণালয়ের বিআইডাব্লিউটিএ বিভাগ যেভাবে নদী ড্রেজিং করে বালু বা মাটি পাড়ের ওপরে ফেলে দেয়, সেভাবে এখানে নদী খনন হচ্ছে না। ভেকু মেশিন দিয়ে মাটি কেটে নদীর মধ্যেই ফেলে রাখার চেয়ে এ ধরনের নদী খনন না করাই ভাল।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বাংলাদেশ অভ্যন্তরীন নৌ পরিবহন (বিআইডাব্লিউটিএ) কর্তৃপক্ষের নামে ওয়েস্টার্ন ইন্টারন্যাশনাল নামের একটি ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান পাবনার ভাঙগুরা উপজেলার এরশাদনগর থেকে নাটোরের গুরুদাসপুর উপজেলার যোগেন্দ্রনগর রাবারড্যাম পর্যন্ত ৫০ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে আত্রাই ও গুমানী নদীর সংস্কারে খনন কাজ বাস্তবায়ন করছে। ওই খনন কাজে ৪২ কোটি ৪৭ লাখ ৫০ হাজার টাকা ব্যয় নির্ধারণ করা হয়েছে।
স্থানীয়রা বলেন, নদী দুটির প্রস্থ ও স্থানভেদে ১৮০ থেকে ২২০ ফিট পর্যন্ত। কিন্তু খননের মাটি নদীর দুই পাড়ের মাঝ বরাবর ফেলা হচ্ছে। এতে ৫০ ফিটের বেশি খনন হচ্ছে না। খননের মাটি নদীর ওপরে ফেলে বেঁধে দিলে খননের উপকারিতা মিলবে কিন্তু এতে শুধু টাকাই গচ্চা যাবে, সুফল আসবে না।
ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের একাংশের সাইড ম্যানেজার মফিজুল ইসলাম দাবি করেন, দরপত্রে উল্লেখ আছে ৮০-৮২ ফিট প্রস্থে গভীরতা ১০-১২ ফিট এবং খননের জায়গা থেকে ৩৮-৪০ ফিট দূরত্বে মাটি ফেলার নির্দেশ রয়েছে। সেই মোতাবেক কাজ চলছে। তবে স্থানীয় সংসদ সদস্যের নির্দেশে খনন কাজ আপাতত বন্ধ আছে। চলনবিল রক্ষা আন্দোলনের সমন্বয়কারী ও বড়াল রক্ষা আন্দোলন কমিটির সদস্য সচিব মিজানুর রহমান বলেন, নদী খননে অনিয়ম হলে কোনো সুফল আসবে না। নদীর মাটি পাড়ের ওপর না ফেললে গভীরতা ও প্রশস্ততা বাড়বে না। বরং এতে দখলদারদের সুবিধা হবে। আর প্রকল্পের ইঞ্জিনিয়ারদের পকেট ভারী হবে। বিআইডাব্লিউটিএ- এর প্রকল্প পরিচালক (পিডি) সাইদুর রহমান জানান, নদী খননের কোনো মাটি নদীর মধ্যে থাকবে না। সব সরিয়ে নেয়া হবে। এতে নদী প্রশস্ত হবে এবং গভীরতাও বাড়বে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: নদী

২৬ অক্টোবর, ২০২২

আরও
আরও পড়ুন
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ