Inqilab Logo

শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৭ বৈশাখ ১৪৩১, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

দুই শিশুর মৃত্যু, ১ নিখোঁজ দু’শো ঘর ভষ্মীভূত

স্টাফ রিপোর্টার : | প্রকাশের সময় : ২ মার্চ, ২০১৯, ১২:০৫ এএম

চকবাজারের চুড়িহাট্টায় ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের রেশ না কাটতেই মিরপুরের ভাষানটেক এলাকার একটি বস্তিতে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। এ ঘটনায় দুই শিশুর মৃত্যুসহ বস্তির প্রায় দু’শো ঘর পুড়ে গেছে। গতকাল সকালে বস্তির ডোবা থেকে শিশু দু’টির লাশ উদ্ধার করা হয়। এ ঘটনায় নুসরাত জাহান (১২) নামে আরও এক শিশু নিখোঁজ রয়েছে।
ফায়ার সার্ভিস জানায়, বুধবার রাত দেড়টার দিকে মিরপুর ১৪ নম্বরের ভাষানটেক থানাধীন জাহাঙ্গীর বস্তিতে আগুন লাগে। ফায়ার সার্ভিসের ২১টি ইউনিট ৮ ঘণ্টা চেষ্টা চালিয়ে রাত ৩টার দিকে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। গতকাল সকাল ৮টার দিকে পরিপূর্ণভাবে আগুন নির্বাপন করা হয়। প্রাথমিকভাবে আগুন লাগার কারণ ও ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ জানা যায়নি। ঘটনা অনুসন্ধানে পাঁচ সদস্যদের তদন্ত কমিটি গঠন করেছে ফায়ার সার্ভিস।
বস্তির বাসীন্দা ও ফায়ার সার্ভিস সূত্র জানায়, বস্তির ডোবা থেকে উদ্ধার হওয়া শিশু দুটি হলো- তন্ময় ও ইয়াসমিন। এর মধ্যে তন্ময়ের বয়স আড়াই বছর ও ইয়াসমিনের বয়স তিন মাস। তন্ময়ের বাবার নাম চুন্নু মিয়া ও মায়ের নাম রূপা আক্তার। তাদের গ্রামের বাড়ি কিশোরগঞ্জের মিঠামইনের শ্যামপুর গ্রামে। এছাড়া ইয়াসমিনের বাবার নাম নূরে আলম ও মায়ের নাম খোদেজা বেগম। তাদের বাড়ি কিশোরগঞ্জের তাড়াইল উপজেলার দিকদাই গ্রামে। ফায়ার সার্ভিস জানায়, নিখোঁজ শিশুটির নাম নুসরাত জাহান। তার বাবার নাম নজরুল ইসলাম। গতকাল বিকেল পর্যন্ত শিশুটির কোন খোঁজ পাওয়া যায়নি।
ফায়ার সার্ভিস সূত্রে জানা গেছে, বুধবার রাত ১টা ৩৪ মিনিটে আগুনের খবর পেয়ে ১টা ৪৪ মিনিটে তারা ঘটনাস্থলে পৌঁছে নির্বাপন কাজ শুরু করে। শুরুতে ৯টি ইউনিট কাজ শুরু করলেও পরবর্তীতে ২১টি ইউনিট ঘটনাস্থলে আসে। ফায়ার সার্ভিসের আনুমানিক দেড়শ’ জন কর্মী চেষ্টা চালিয়ে রাত ৩টার দিকে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। গতকাল সকাল ৮টার দিকে পরিপূর্ণভাবে আগুন নেভানো সম্ভব হয়।
ফায়ার সার্ভিসের কর্মকর্তারা বলেন, শিশু দুটি আগুনে পুড়ে মারা যায়নি বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে। তারা বলেন, আগুন লাগার পর হুড়োহুড়ি করে দৌঁড়ে বের হওয়ার সময় শিশু দুটি ডোবার পানিতে পরে যায়। পরে সেখানেই পানিতে ডুবে তাদের মৃত্যু হয়। তারা আরও বলেন, আগুন লাগার পর রাতে চেষ্টা করেও শিশু দুটিকে উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি। গতকাল বেলা ১২টা ৩ মিনিটে একটি শিশু ও ১২টা ১৭ মিনিটে আরেকটি শিশুর লাশ ডোবা থেকে উদ্ধার করা হয়।
বস্তিবাসীরা জানিয়েছেন, প্রায় ৫০ জন লোক বস্তিটি নিয়ন্ত্রণ করতেন। ঘরের আকার ভেদে প্রতি রুমের ভাড়া ১৫শ’ থেকে আড়াই হাজার টাকা। আকতার হোসেন নামে একজন বলেন, আমার ২৫টি ঘর ছিল। ১৫শ’ থেকে দু’হাজার টাকা করে প্রতিটি ঘরের ভাড়া ছিল। আগুনে সব পুড়ে শেষ হয়ে গেছে।
৫ সদস্যের তদন্ত কমিটি
এদিকে, ভাষানটেকের জাহাঙ্গীরের বস্তিতে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা অনুসন্ধানে পাঁচ সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্স সদর দফতর। সদর দফতরের উপ-পরিচালক (অ্যাম্বুলেন্স) নূর হাসানকে প্রধান করে এ কমিটি করা হয়েছে। আগামী পাঁচ কর্মদিবসের মধ্যে কমিটিকে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে।
ফায়ার সার্ভিসের পরিচালক (অপারেশন) মেজর শাকিল নেওয়াজ বলেন, ডোবার ওপরে বাঁশ-টিন দিয়ে টঙ ঘর করে বস্তিটি তৈরি করা হয়েছে। এসব ঘরের মধ্যে এলোমেলোভাবে বিদ্যুতের তার টানা হয়েছে। এ ছাড়া এখানে মশার কয়েল ছিল। এসব কারণে আগুন লেগে দ্রুত ছড়িয়ে যায়। তিনি আরও বলেন, প্রাথমিকভাবে আগুনের কারণ জানা যায়নি। তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন পেলে আগুনের কারণ ও ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ জানা যাবে।
উল্লখ্য, গত ২০ ফেব্রুয়ারি রাত সাড়ে ১০টার দিকে চকবাজারের চুড়িহাট্টার ওয়াহেদ ম্যানশন থেকে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। পরে আগুন চুড়িহাট্টার ৭টি ভবনে ছড়িয়ে পড়ে। ফায়ার সার্ভিসের ৩৭টি ইউনিট প্রাায় ১৪ ঘণ্টা চেষ্টার পর আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে। ঘটনাস্থল থেকে ৬৭ জনের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে বলে ফায়ার সার্ভিস জানিয়েছে। এ ঘটনায় আরও অনেকে নিখোঁজ রয়েছেন।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: দু’শো ঘর ভষ্মীভূত
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ