Inqilab Logo

শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

কেমিক্যাল গোডাউন উচ্ছেদে ব্যবসায়ীদের বাধা

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ৩ মার্চ, ২০১৯, ১২:০৪ এএম

রাজধানীর পুরান ঢাকার শহীদ নগর ও বউবাজারের আটটি কারখানায় বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয়েছে। এসব কারখানা সেখানকার আবাসিক এলাকা থেকে সরানোর নির্দেশ দেয়া হয়। ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে একটি টিম গতকাল শনিবার সকালে অতি দাহ্য প্লাস্টিক ও পিভিসি কারখানায় অভিযান চালায়।
অভিযান শুরুর পর স্থানীয় বাড়ির মালিক ও অবৈধ কেমিক্যাল ব্যবসায়ীদের বাধার মুখে মাঝ পথে সিটি কর্পোরেশন গঠিত টাস্কফোর্স অভিযান স্থগিত করতে হয়। এ খবর ডিএসসিসি’র মেয়র সাঈদ খোকনের কানে এলে তিনি পুরান ঢাকার বকশীবাজারের জয়নাগ রোডে গিয়ে অভিযান পুনরায় শুরু করেন। অভিযান স্থগিতের সংবাদ শুনে ডিএসসিসি মেয়র সাঈদ খোকন বলেন, ‘আমি যাবো, কে বাধা দেবে আমি দেখবো’। এরপর মেয়রের উপস্থিতিতে দুপুর পৌনে ৩টার দিকে সেখানে অভিযান আবারও শুরু হয়।
পুলিশের চকবাজার থানা জানিয়েছে, গতকাল শনিবার সকালে সিটি কর্পোরেশনের একটি দল জয়নাগ রোডের একটি আবাসিক ভবনে কেমিক্যালের গোডাউন খুঁজে পায়। ভবনটির বিদ্যুৎ ও গ্যাস সংযোগ বিচ্ছিন্ন করার সময় আশপাশ এলাকার ব্যবসায়ীরা স্লোগান দিতে থাকে এবং তাদের তোপের মুখে অভিযান স্থগিত করতে বাধ্য হয় টাস্কফোর্স। দুপুর ১টা ২০ মিনিটে এ সংবাদ কানে আসে ডিএসসিসি মেয়র সাঈদ খোকনের। তিনি তৎক্ষণাৎ এক সাংবাদিক সম্মেলন করে বলেন, একদল অসাধু ব্যবসায়ী অভিযানে বাধা দিয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।
অভিযানে সিটি কর্পোরেশনের গঠিত টাস্কফোর্সের টিম-৩ অংশগ্রহণ করেন। অভিযানে দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের কর্মকর্তাসহ তিতাস গ্যাস, ঢাকা ওয়াসা ও ডিপিডিসি, বিস্ফোরক অধিদফতর ও চকবাজার থানা পুলিশের সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন। গত ২০ ফেব্রুয়ারি রাতে পুরান ঢাকার চকবাজারের চুড়িহাট্টার ৬৪ নম্বর হাজী ওয়াহেদ ম্যানশনে ভয়াবহ অগ্নিকান্ড ঘটে। ঘটনায় এ পর্যন্ত মোট ৭১ জন মারা গেছেন। প্রাথমিক তদন্তে আগুনের কারণ হিসেবে কেমিক্যালকেই দায়ী করা হচ্ছে। তাই পুরান ঢাকার আবাসিক ভবনগুলো থেকে কেমিক্যাল সরানোর নির্দেশ দিয়েছে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন। মেয়র সাঈদ খোকনের নির্দেশে টাস্কফোর্স গঠন করে গত বৃহস্পতিবার থেকে শুরু হয় আবাসিক ভবন থেকে কেমিক্যাল সরানোর অভিযান। অভিযানের প্রথম দিনে রাজধানীর ২৪ নম্বর ওয়ার্ডের শহীদনগর এলাকায় ১৩টি ও ইসলামবাগ এলাকার ৮টি ভবনের গ্যাস, পানি এবং বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেয়া হয়। এরপর গতকাল শনিবার সকালে সিটি কর্পোরেশনের ৪টি টিম একই অভিযানে যায়।
সরেজমিনে দেখা গেছে, ছোট ছোট ও বহুতল ভবনের নিচতলায় জুতা ও পানির বড় বোতল তৈরির কারখানা গড়ে তোলা হয়েছে। এসব কারখানায় বিভিন্ন ধরনের কেমিক্যাল ঝুঁকিপূর্ণভাবে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রাখা হয়েছে। শহীদ নগরের ২৫২ নম্বর বাড়িতে আবাসিকের কথা বলে বিদ্যুৎ সংযোগ নিয়ে পানির বড় বোতল তৈরির কারখানা গড়ে তুলেছেন আমিরুল ইসলাম নামে এক ব্যক্তি। কারখানার ভেতরে ঢুকে দেখা যায়, পানির বড় বোতল তৈরির জন্য প্লাস্টিকের গুড়া, প্লাস্টিক ও বোতল ছড়িয়ে আছে।
কারখানার ম্যানেজার ওয়াসি আহম্মেদ বলেন, আমাদের কারখানার অনুমোদন রয়েছে। এখানে প্লাস্টিকের পানির বড় বোতল তৈরি করা হয়। তবে তিনি অনুমোদনের কোনোও বৈধ কাগজপত্র দেখাতে পারেননি। এরপর ওই কারখানার বৈদ্যুতিক সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয়। শহীদ নগরের ২৯০/২ নম্বর বাসায় প্লাস্টিক গলিয়ে জুতার সোল তৈরি করা হয়। এই কারখানায় স্পিরিটের মজুদ পেয়েছে সিটি কর্পোরেশনের টিম। বিস্ফোরক অধিদফতরের কর্মকর্তারা এরপর এই কারখানার বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করার নির্দেশ দেন। তবে ওই কারখানার মালিককে পাওয়া যায়নি।
২৯ আরএনডি রোডের একটি জুতার কারখানা তালাবদ্ধ অবস্থায় পেয়েছে অভিযানে থাকা টিমটি। এরপর সেটিরও বিদ্যুৎ সংযোগ বন্ধ করা হয়। শহীদ নগরের ৪ নম্বর সড়কের একটি বহুতল ভবনের নিচে প্লাস্টিকের রশি তৈরি করা হয়। পুরো কারখানায় প্লাস্টিকের দাহ্য পদার্থ।
অভিযানের বিষয়ে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সুবর্না শিরিন বলেন, আমরা শহীদ নগর ও বউবাজার এলাকায় ঘুরে আটটি কারখানার ইউটিলিটি সার্ভিস বিচ্ছিন্ন করেছি। এসব কারখানায় অতি দাহ্য পদার্থ পেয়েছি। তাই এসব কারখানায় বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয়েছে। তিনি জানান, এর আগেও এসব কারখানার মালিকদের নোটিশ দেয়া হয়েছিল। কিন্তু তারা বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করেনি। আজকে আমরা তাদের বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করেছি। কারখানা সরানোর নির্দেশ দেয়া হয়েছে। কারখানা না সরালে পরবর্তীতে আরও কঠোর আইনি ব্যবস্থা নেয়া হবে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ