Inqilab Logo

শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

খালেদা জিয়া জেলের ভয় পান না মির্জা ফখরুল

প্রকাশের সময় : ১৭ মে, ২০১৬, ১২:০০ এএম

স্টাফ রিপোর্টার : বিএনপি জনগণের দল কোনো ষড়যন্ত্র ও চক্রান্তের রাজনীতি বিশ্বাস করে না। সরকার পরিবর্তন এখন সময়ের ব্যাপারমাত্র। রাজনীতির গতিশীলতাই এই পরিবর্তন নিয়ে আসবে। আর সেই পরিবর্তন হবে ভোটের মাধ্যমেই। গতকাল এক প্রতিবাদ সমাবেশে বিএনপি নেতৃবৃন্দ এসব কথা বলেন।
অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করতে জাতীয় ঐক্য গড়ে তোলার জন্য সমাবেশ থেকে দেশপ্রেমিক সকল নাগরিকের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেন, মামলা ও জেলকে ভয় পান না বেগম খালেদা জিয়া। তবে সরকার তাকে সবচেয়ে বেশি ভয় পায়। এজন্যই তার বিরুদ্ধে নীলনকশার অংশ হিসেবে মিথ্যা মামলায় চার্জশিট দেওয়া হয়েছে।
গতকাল বিকেলে রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে বিএনপির চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে চার্জশিট প্রদানের প্রতিবাদ এবং মিথ্যা মামলার প্রতিবাদে ঢাকা মহানগর বিএনপি এ বিক্ষোভ সমাবেশের আয়োজন করে।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে মির্জা ফখরুল বলেন, বিএনপি জনগণকে সঙ্গে নিয়ে রাজনীতি করে, তাই ক্ষমতায় যেতে কারো সঙ্গে হাত মেলায় না। আওয়ামী লীগ খালেদা জিয়াকে ভয় পায়। তাই রাজনীতি থেকে দূরে সরিয়ে রাখতে উনার (খালেদা জিয়া) বিরুদ্ধে একের পর এক মিথ্যা মামলায় চার্জশিট দিচ্ছে। তারা মনে করে খালেদা জিয়া বাইরে থাকলে জনগণের কাছে যাবেন। সেক্ষেত্রে তারা (আওয়ামী লীগ) জোর করে বেশি দিন ক্ষমতায় থাকতে পারবে না।
তিনি বলেন, খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে মামলা সম্পূর্ণ রাজনৈতিক প্রতিহিংসার বহিঃপ্রকাশ। এ মামলার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ, অবিলম্বে সকল মামলা প্রত্যাহারের দাবি জানিয়ে মির্জা ফখরুল ইসলাম বলেন, খালেদা জিয়া মামলা এবং জেলখানা ভয় পায় না। তিনি বহুবার জেলে গেছেন।
তিনি বলেন, এই সরকার সম্পূর্ণভাবে অনির্বাচিত ও অনৈতিক। তারা ছলেবলে কৌশলে ক্ষমতায় টিকে থাকতে চায়। অথচ এই আওয়ামী সরকারই একদিন গণতন্ত্রের জন্য লড়াই করেছিল। তারাই পরবর্তীতে ১৯৭৫ সালে একদলীয় বাকশাল কায়েম করেছিল। আজ তারাই গণতন্ত্রকে গলাটিপে হত্যা করছে। যে কারণে দেশের মানুষ তাদেরকে প্রত্যাখ্যান করেছিলেন। এজন্য আওয়ামী লীগ ২১ বছর ক্ষমতার বাইরে ছিল। এখন তারা মনে করে বিএনপি টিকে থাকলে এবার ২১ বছর নয়, ৪২ বছর ক্ষমতা থেকে দূরে সরে থাকতে হবে।
মির্জা ফখরুল বলেন, দেশের কোথাও আজ শান্তি নেই। সরকার নিজের মতো করে সবকিছু নিয়ন্ত্রণ করছে। আইনশৃঙ্খল বাহিনীকে নিজের মতো নিয়ন্ত্রণ করছে। নির্বাচন কমিশনও তাদের পছন্দের। তাদের কথামতো কমিশন কাজ করছে।
তিনি দল এবং বেগম জিয়ার হাতকে শক্তিশালী করতে নেতাকর্মীদের উদ্দেশে বলেন, কারো বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র নয়, দলের জন্য কাজ করতে হবে। চেয়ারপার্সনের হাতকে শক্তিশালী করতে হবে। নিজেদের মাঝে গণতন্ত্রের চর্চা বাড়াতে হবে।
বিএনপির উপর নির্যাতনের প্রসঙ্গে সাবেক এই মন্ত্রী বলেন, আজকে শুধু দেশের জনপ্রিয় নেত্রী খালেদা জিয়া নন, সারা দেশে বিএনপির নেতাকর্মীদের নামে হাজার হাজার মামলা। গ্রামে-গঞ্জে পর্যন্ত নেতাকর্মীদের নামে মিথ্যা মামলা দিয়েছে। বর্তমানে সারা দেশের ৫ লাখ ৭০ হাজার নেতাকর্মী এসব মামলার আসামি। শুধু তাই নয় ৫০০ জনকে সরকার খুন করেছে।
মির্জা ফখরুল বলেন, এভাবে খুন, গুম করে বেশিদিন ক্ষমতায় থাকতে পারবে না সরকার। কেননা, অতীতে যারাই এভাবে নির্যাতন করেছে তারাই ইতিহাসের আস্তাকুঁড়ে নিক্ষিপ্ত হয়েছে।
বিএনপির মহাসচিব বলেন, এই জালেম ও স্বৈরাচার সরকারকে বিদায় করতে জাতীয় ঐক্যের বিকল্প নেই। তাই বিএনপিকে সকল গণতান্ত্রিক শক্তিকে একত্রে করে জাতীয় ঐক্য গড়ে তুলতে হবে। শাসকদলকে বাধ্য করতে হবে জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠায় একটি সকলের অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের উদ্যোগ নিতে। দেশের চলমান সঙ্কট নিরসনে আলাপ-আলোচনার উদ্যোগ নিতে ক্ষমতাসীনদের প্রতি আহ্বান জানান মির্জা ফখরুল।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ বলেন, সরকার পরিবর্তন সময়ের ব্যাপার। কিন্তু কখন হবে জানি না, তবে সেই পরিবর্তন ভোটের মাধ্যমেই হবে। তিনি বলেন, খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে আরো ৭০টি মামলা দিলেও তিনি আবারো বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী হবেন।
সাবেক এই মন্ত্রী বলেন, মামলা, হামলা, খুন, গুম হত্যার মাধ্যমে দেশের রাজনীতিকে জর্জরিত করেছে আওয়ামী লীগ সরকার। দেশে এখন রাজনীতি নেই, নেই গণতন্ত্র। কেড়ে নেওয়া হয়েছে মানুষের ভোটাধিকার। একটি জাতি যখন তাদের ভোটাধিকার থেকে বঞ্চিত হয়, তখন সেই জাতি বিদ্রোহী হলেও শাসকদল টের পায় না। অভিজ্ঞতা বলছে- সরকার বেশি বাড়াবাড়ি করছে। মামলা দিয়ে গুম, হত্যা করে রাজনীতিকে জর্জরিত করেছে অবৈধ সরকার। কঠিন সমাজে বসবাস করছি আমরা। কয়েকটি জিনিস মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করা হয়েছে। সবচেয়ে বড় বিষয় ভোটাধিকার কেড়ে নেওয়া হয়েছে। সীমা ছাড়িয়ে গেলে জনগণ এমন বিদ্রোহ করে সরকার টেরই পায় না- কীভাবে এমন ঘটনা ঘটলো।
বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী আহম্মেদ বলেন, ভারতের সাথে বর্তমান সরকারের প্রাণের সম্পর্ক। ৫ জানুয়ারির নির্বাচনে তারা এই সরকারকে খোলা সমর্থন দিয়েছে। সেই দেশে বসে সরকার উৎখাতের চক্রান্ত এই প্রপাগা-া কিছুই নয়। আসলাম চৌধুরী শুধু বিএনপির যুগ্ম মহাসচিবই নন, তিনি একজন ব্যবসায়ী। ব্যবসায়িক কাজে তিনি যুক্তরাষ্ট্র, ইন্ডিয়া, পাকিসন্তানসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে গিয়েছে। তেমনি ভারতেও গিয়েছে এটাকে সরকার উৎখাতের গন্ধ খোঁজা হচ্ছে কেনো জানতে জান রিজভী আহম্মেদ।
সভাপতির বক্তব্যে ঢাকা মহানগর বিএনপির আহ্বায়কও বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস বলেন, দেশে আজকে গণতন্ত্র নেই। আমরা পার্টি অফিসের সামনে সমাবেশ করতে চেয়েছিলাম, কিন্তু পুলিশ অনুমতি দেয়নি, এই হচ্ছে অবস্থা। পুলিশের কাছে সমাবেশের অনুমতি নিতে হচ্ছে।
তিনি বলেন, সরকারের উদ্দেশ্য হচ্ছে বিএনপির নেতাকর্মীদের জেলে নেওয়া। এজন্যই খালেদা জিয়া থেকে শুরু করে কর্মীদের বিরুদ্ধেও মামলা দিচ্ছে। এই সরকার স্বৈরাচারী মনোভাব নিয়ে দেশ চালালে বিএনপির ক্ষতি করতে পারবে না, কিন্তু দেশের ক্ষতি করবে। দেশের কোনো উন্নতি হবে না। এভাবে কখনো বিএনপির অগ্রযাত্রাকে থামানো যাবে না।
সভায় অন্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন, দলের ভাইস চেয়ারম্যান শাহ মোয়াজ্জেম হোসেন, মেজর (অব:) হাফিজ উদ্দিন আহমেদ, সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী, যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, খায়রুল কবির খোকন, মহানগর বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক আবুল খায়ের ভূঁইয়া, কাজী আবুল বাশার, বিএনপির আর্ন্তজাতিক বিষয়ক সম্পাদক নাজিম উদ্দিন আলম, অর্থ-বিষয়ক সম্পাদক আব্দুস সালাম, সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক আব্দুস সালাম আজাদ, মহিলা দলের সভানেত্রী নূরে আরা সাফা, সাধারণ সম্পাদক শিরিন সুলতানা, স্বেছাসেবক দলের মীর সরাফত আলী সফু, ছাত্রদল সভাপতি রাজীব আহসান প্রমুখ।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: খালেদা জিয়া জেলের ভয় পান না মির্জা ফখরুল
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ