Inqilab Logo

শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৭ বৈশাখ ১৪৩১, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

সবজি চাষিরা ক্ষতিগ্রস্ত

মিজানুর রহমান তোতা | প্রকাশের সময় : ৫ মার্চ, ২০১৯, ১২:০৩ এএম

‘দিনরাত পরিশ্রম করে সবজি উৎপাদন করে যদি লাভের চেয়ে লোকসান হয় তাহলে খুব কষ্ট লাগে। আমরা ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে উৎপাদনে উৎসাহ হারিয়ে ফেলছি’-কথাগুলো বলছিলেন সবজি বিপ্লবের এলাকা যশোরের আমবটতলার চাষি রহমত আলী। তিনি মাঠ থেকে শিম তুলে পাইকারী বাজারে বিক্রির সময় জানালেন, ‘এবার সবজিতে বেশিরভাগ চাষির খুব একটা লাভ হয়নি। সবজির পাইকারী বাজারে এককেজি শিম বেচাকেনা হয়েছে ১০/১২ টাকা। গতবার ছিল ২৫/৩০টাকা। শুধু শিম নয়, মুলাসহ বিভিন্ন সবজিতে চাষিদের লাভ কম হয়েছে। লোকসান হয়েছে বেশি’।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ পরিচালক কৃষিবিদ ড. মো. আখতারুজ্জামান জানালেন, ‘সবজির উৎপাদন অনেক ভালো হওয়ায় বাজারে ব্যাপক সরবরাহ ছিল, সেজন্য মূল্য কমে গেছে। তার কথা, চাষির ন্যায্যমূল্যপ্রাপ্তির ব্যাপারে আমাদের কিছু করণীয় নেই।’ যশোর জেলা বাজার কর্মকর্তা মো. সুজাত হোসেন খান বললেন, ‘পরিকল্পনামাফিক ও সময়ভিত্তিক উৎপাদন করতে হবে চাষিদের। একইসাথে মার্কেট লিংকেজ চালু ও সমবায়ভিত্তিক বাজার ব্যবস্থাপনা গড়ে তুলতে হবে। তাহলেই চাষিদের উৎপাদিত সবজির ন্যায্যমূল্য নিশ্চিত করা সম্ভব’। তার মতে, ভোক্তাদের অধিকার সংরক্ষণে সাধারণত কৃষিপণ্যের বৃদ্ধিমূল্য নিয়ন্ত্রণ করা হয়। মূল্য কেন কম হলো চাষিদের স্বার্থে তা কখনো দেখা হয় না।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্র জানায়, দেশে মোট সবজি চাহিদার সিংহভাগই যোগান হয় ‘ভেজিটেবল জোন’ যশোরসহ দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চল থেকে। চাষিদের উপযুক্ত মূল্যপ্রাপ্তির নিশ্চয়তা বিধান না করলে সবজি চাষিরা অব্যাহত মার খেলে উৎপাদনে নিরুৎসাহিত হবেন। সূত্র জানায়, যশোরসহ দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের দশ জেলায় প্রতিবছর ৫০ হাজার হেক্টরেরও বেশি জমিতে ১০ লাখ মেট্রিক টন শাক-সবজি উৎপাদন হয়। বর্তমানে দেশের মোট চাহিদার ৬৫ ভাগ সবজি সরবরাহ হচ্ছে। শীর্ষ অবস্থান ধরে রাখার জন্য চাষিরা প্রাণান্ত চেষ্টা করে থাকেন। চলতি শীতকালীন মৌসুমে টার্গেটের অনেক বেশী ফুলকপি, বাঁধাকপি, মুলা, লাউ, বেগুন, সিম, টমেটো, ঢ়েড়স, কাঁকরোল, বরবটি, চিচিঙ্গা, ঝিঙে, করলা, পুইশাক, ডাটা শাক, পটল, মিষ্টি কুমড়া, চাল কুমড়া, উচ্ছে, লাল শাক ও সবুজ শাকসহ প্রায় সব ধরণের সবজি উৎপাদন হয়েছে।
এবার শীত মৌসুমের প্রথমদিকে মোটামুটি সবজির মূল্য পেয়েছেন চাষিরা। পরবর্তীতে মাঠের মূল্য কমে যায়। মধ্যস্বত্বভোগীদের কারণে বাজারে সবজির মূল্য মাঝেমধ্যে বৃদ্ধি পেলেও মাঠের মূল্য সবসময় কম থাকে। একজন সবজি চাষি জানালেন ‘প্রতিটি ফুলকপি উৎপাদনে চাষিদের চাষ. বীজ, সার, কীটনাশক ও পরিচর্যাসহ কমপক্ষে খরচ হয় আড়াই টাকা থেকে ৩টাকা। মৌসুমের প্রথমদিকে প্রতিটি ফুলকপি ৭/৮টাকা বিক্রি হলেও বর্তমানে ২টাকায় নেমে এসেছে। একইভাবে বেগুন, লাউ, পাতা কপি ও শিমের মাঠমূল্য কমে গেছে। এ অঞ্চলে বছরের বারোমাসই সবজির পর সবজি আবাদ হয়। তবে শীতকালীন সবজি উৎপাদন বরাবরই বেশি হয়। চাষিদের বক্তব্য, গতবারের চেয়ে শীতকালীন সবজিতে তুলনামূলক লাভ কম হয়েছে। অনেকক্ষেত্রে হয়েছে লোকসান।
সরকারি পদক্ষেপে বাজার ব্যবস্থাপনা গড়ে তোলা, চাষিদের সমস্যার সমাধান, উৎপাদিত সবজির উপযুক্ত মূল্য পাওয়ার নিশ্চয়তা ও সংরক্ষণে পর্যাপ্ত কোল্ড স্টোরেজের ব্যবস্থা করা হলে কৃষির এই খাতটির সামগ্রিক উন্নয়ন ঘটবে। চাষিরাও লাভবান হবেন।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: সবজি

৪ এপ্রিল, ২০২২
২৩ ফেব্রুয়ারি, ২০২২
৪ ফেব্রুয়ারি, ২০২২
২৯ জানুয়ারি, ২০২২

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ