Inqilab Logo

শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১, ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

গৃহহীন ২৫ মন্ত্রী

সাবেক মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীরা সরকারি বাসা ছাড়ছেন না

পঞ্চায়েত হাবিব | প্রকাশের সময় : ৭ মার্চ, ২০১৯, ১২:০৩ এএম

বর্তমান সরকারের ২৫ জন মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রী-উপমন্ত্রী এখনো গৃহহীন। দুই মাস থেকে দায়িত্ব পালন করলেও তারা বসবাসের জন্য সরকারি বাসা-বাড়ি বরাদ্দ পাচ্ছেন না। অথচ রেওয়াজ হলো শপথ নেয়ার পরেই মন্ত্রীদের নামে সরকারি বাসা-ফ্লাট বরাদ্দ দেয়ার কথা। বিগত সরকারের সাবেক মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীরা বাসা ছেড়ে না দেয়ায় এই পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। সরকারি আবাসন পরিদপ্তরের কর্মকর্তারা জানান, সাবেক মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীদের মধ্যে ১৬ জন প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন কয়েকদিনের মধ্যেই তারা সরকারি বাসা ছেড়ে দেবেন। এদের মধ্যে প্রতিমন্ত্রী-উপমন্ত্রীদের বসবাসের জন্য নির্মিত মিনিষ্টার হাউজের ফ্লাটে ৭ জন থাকেন।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে মন্ত্রিসভার সদস্যরা রাজধানীর মিন্টো রোর্ডের বাসা এবং মন্ত্রিপাড়ার মিনিষ্টার হাউজে ফ্লাটের জন্য আবেদন করেছেন। উল্লেখ মিন্টো রোড, বেইলি রোড, হেয়ার রোজসহ ধানমন্ত্রী-গুলশান-বনানী-বারীধারায় মন্ত্রী প্রতিমন্ত্রীদের জন্য সরকারি বাসা বরাদ্দ দেয়া হয়ে থাকে।
জানতে চাইলে গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম ইনকিলাবকে বলেন, সাবেক মন্ত্রীদের মধ্যে যারা নতুন মন্ত্রিসভায় নেই, নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই তারা মিন্টো রোডের বাসভবন ছাড়বেন। নতুনরাও সঠিক সময়ে বাসভবনের বরাদ্দ পাবেন।
জানা যায়, গত ফেব্রুয়ারি মাসেই নতুন মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী ও উপমন্ত্রীদের মাঝে বাসভবন বরাদ্দ দেয়ার সিদ্ধান্ত হয়। সাবেক মন্ত্রীদের কয়েকজন বাড়ি ছাড়তে চাচ্ছেন না। কেউ কেউ যদি যদি মন্ত্রী প্রতিমন্ত্রী করা হয় সেই আশার সরকারি বাড়ি আকড়ে ধরে রয়েছেন। সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় সুত্র জানায় জাসদ নেতা সাবেক তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু একমাস বেশি থাকার সময় চেয়ে আবেদন করেছেন। আর বিরোধী দলীয় চীপ হুইপ হিসেবে বাসার জন্য আবেদন করে পুরনো বাসায় রয়ে গেছেন সাবেক প্রতিমন্ত্রী মশিউর রহমান রাঙ্গা।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, নতুন সরকারের মন্ত্রিসভার ২৫জন সদস্য মিন্টো রোডের বাসভবনের জন্য আবেদন করেছেন। কেউ সরকারি বাসা বরাদ্দ পাননি। গত জানুয়ারি মাসের মধ্যে সাবেক মন্ত্রীদের মিন্টো রোডের বাসভবন ছাড়ার নিয়ম থাকলেও দু’একজন ছাড়া অধিকাংশই বাসা দখলে রেখেছেন। সাবেক মন্ত্রীদের জোর করে বাসা ছাড়তে বাধ্য করতে না পেরে সমস্যায় পড়ে গেছে পূর্ত মন্ত্রণালয়ের আবাসন বিভাগ।
জানতে চাইলে সরকারি আবাসন পরিদপ্তরের পরিচালক (অতিরিক্ত সচিব) মো, মনিরুজ্জামান ইনকিলাবকে ফোনে বলেন, মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী ও উপমন্ত্রীরা নতুন করে মন্ত্রিসভায় স্থান না পাওয়া বা মন্ত্রীর দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দেয়ার ১ মাসের মধ্যেই সরকারি বাসভবন হোক মিন্টো রোড অথবা অন্য কোন স্থানে হোক, তা ছাড়ার বিধান রয়েছে। এ নিয়ে অতীতে সাবেক মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীরা বাসা ছাড়তে কেউ বিলম্ব করেননি। এবার ব্যাতিক্রম ঘটছে।
সরকারি আবাসন পরিদপ্তরের অতিরিক্ত পরিচালক মো,শহিদুল ইসলাম ভূঞা বলেন, মিন্টো রোড, বেইলি রোড়ের ১৬টি বাসা খালি হচ্ছে। মিনিষ্টার হাউজে ফ্লাটের ৭টি বাসা খালি হচ্ছে। এ গুলো থেকে অনেক মন্ত্রীও প্রতিমন্ত্রীদের দেওয়া হবে। এছাড়া আমাদের মন্ত্রী এখনো বাসায় উঠতে পারেনি।
আবাসন বিভাগ সূত্র জানায়, নতুন মন্ত্রিসভার ১৩ জন মন্ত্রী, ১২ জন প্রতিমন্ত্রী এবং একজন উপমন্ত্রী মিন্টো রোডের বাসভবনের জন্য আবেদন করেছেন। এছাড়া পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক চুক্তি বাস্তবায়ন কমিটির আহবায়ক সংসদ সদস্য আবুল হাসনাত আব্দুল্লাহ মন্ত্রী কোটায় মিন্টো রোডের সরকারি বাসভবনের জন্য আবেদন করেছেন।
সাবেক ত্রাণ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রী মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া মিন্টো রোডের বাসভবন ছাড়লেও ফেব্রুয়ারিতে ছাড়তে চেয়ে এখন সরকারি বাসা দখলে রেছেছেন হাসানুল হক ইনু।
সরকারি বাসভবনের জন্য আবেদন করে এখনো বাসা পাননি তারা হচ্ছেন, কৃষিমন্ত্রী ড. আবদুর রাজ্জাক, তথ্য মন্ত্রী হাছান মাহমুদ, বানিজ্য মন্ত্রী টিপু মুনশি,শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি, বস্ত্র ও পাট মন্ত্রী গাজী গোলাম দস্তগীর, শিল্পমন্ত্রী নূরুল মজিদ মাহমুদ, রেলমন্ত্রী নুরুল ইসলাম সুজন, খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার, মোস্তফা জব্বার এবং মোহাম্মদ শাহাবুদ্দিন। প্রতিমন্ত্রীদের মধ্যে বাসভবনের আবেদন করেছেন-শেখ মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ, স্বপন ভট্টাচার্য, জাকির হোসেন, জুনায়েদ আহমেদ পলক, ইমরান আহমেদ, ড. এনামুর রহমান, মো. মাহবুব আলী, জাহিদ ফারুক, মুরাদ হাসান, ফরহাদ হোসেন ও মন্নুজান সুফিয়ান। আর উপমন্ত্রীদের মধ্যে এনামুল হক শামীম বাসভবনের জন্য আবেদন করেছেন। তিনি সংসদের আবাসিক বাসায় বরাদ্দ পেয়েছেন। তবে এখনো উঠেননি। গৃহায়ণ মন্ত্রী শ ম রেজাউল করিমের নামে বাসা বরাদ্দ হলেও অন্যান্যরা বাসা না পাওয়ায় তিনি এখনো সরকারি বাসায় উঠেননি।
এদিকে সংশ্লিষট সংসদীয় কমিটি সিদ্ধান্ত নিয়েছে মন্ত্রী হলে সংসদ সদস্যদের জন্য বরাদ্দকৃত ন্যাম ভবনের ফ্ল্যাট ছেড়ে দিতে হবে। একসঙ্গে দুটি বাসা নিজের নিয়ন্ত্রণে রাখা যাবে না। একাদশ জাতীয় সংসদ গঠনের পর মন্ত্রী পরিষদে ব্যাপক রদবদল হয়েছে। দশম সংসদের অধিকাংশ মন্ত্রীর ঠাঁই হয়নি নতুন মন্ত্রিসভায়। তাই নতুন যারা দায়িত্ব পেয়েছেন তাদের মন্ত্রিপাড়ার বাসভবনে চলে যাওয়ার কথা। মন্ত্রীদের জন্য মন্ত্রিপাড়ায় আলাদা বাসা রয়েছে। কিন্তু সংসদ গঠনের প্রায় দুই মাস পার হলেও এখনও এমপি হিসেবে বরাদ্দ পাওয়া বাসা ছাড়েননি প্রায় এক ডজন মন্ত্রী ও প্রতিমন্ত্রী। এতে নতুন সদস্যদের বাসা বরাদ্দে হিমশিম খাচ্ছে সংসদ কমিটি। সংসদ সদস্য হিসেবে বরাদ্দকৃত বাসা দখলে যারা রেখেছেন তাদের মধ্যে রয়েছেন মুক্তিযুদ্ধ বিষয়কমন্ত্রী আ ক ম মোজ্জামেল হক। দশম সংসদে মন্ত্রিপাড়ায় এবং নাখালপাড়ার সংসদ সদস্যদের জন্য বরাদ্দকৃত বাসায়ও থাকতেন। তার দখলে সরকারি দুটি বাসা থাকলেও এবার নাখালপাড়ার বাসাটি ছেড়ে দিতে বলা হয়েছে। দখলে রাখা অন্যদের মধ্যে রয়েছেন রেলমন্ত্রী নুরুল ইসলাম সুজন। তিনি নাখালপাড়া ৬ নম্বর ভবনের একটি ফ্ল্যাটে থাকেন। নাখালপাড়ার ২ নম্বর ভবনে থাকেন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণমন্ত্রী জাহিদ মালেক স্বপন, শিল্পমন্ত্রী নুরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়নও সংসদ সদস্য হিসেবে বরাদ্দ পাওয়া আগের বাসাতেই থাকেন। এ রকম প্রায় এক ডজন মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী, উপমন্ত্রী আগের বাসা দখলে রেখেছেন। একাদশ জাতীয় সংসদের চিফ হুইপ নূর ই আলম চৌধুরী সংসদ সদস্য হিসেবে বরাদ্দ পাওয়া বাসা ছেড়ে দেয়ার জন্য ওইসব মন্ত্রী ও প্রতিমন্ত্রীদের ২৫ ফেব্রুয়ারি চিঠি দিয়েছেন।
চিঠিতে বলা হয় মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী, উপমন্ত্রীদের ২৮ ফেব্রুয়ারির মধ্যে এমপি হিসেবে বরাদ্দ পাওয়া বাসা খালি করে বুঝিয়ে দিতে হবে। অন্যথায় সরকার থেকে প্রাপ্য উল্লিখিত বাড়ি ভাড়া ও অন্যান্য ভাতাদি থেকে ১ মার্চ থেকে কেটে নেয়া হবে। অনেক মন্ত্রীর পিএস সংসদ সচিবালয়ের সংশ্লিষ্ট দফতরে ফোনে ১৫ মার্চ পর্যন্ত সময় চেয়েছেন। জানতে চাইলে চিফ হুইপ নূর ই আলম চৌধুরী ইনকিলাবকে বলেন, এবার মন্ত্রী হয়েছেন তারা মন্ত্রিপাড়ার বাসায় উঠবেন। সেখানে বাসা বরাদ্দে একটু সময় লাগাতে এখান থেকে ছেড়ে যেতে সময় লাগছে। আশা করি, আগামী কয়েক দিনের মধ্যেই সবাই বাসা ছেড়ে দেবেন।
র্বতমান ৪৬ সদস্যের মন্ত্রিসভায় অনেকই নতুন মুখ। বাদ পড়েছেন হেভিওয়েট প্রার্থীরা। এবার শেখ হাসিনার মন্ত্রিসভায় ২৪ জন মন্ত্রী, ১৯ জন প্রতিমন্ত্রী এবং উপমন্ত্রী থাকছেন ৩ জন। বিগত মন্ত্রিসভার ২৫ মন্ত্রী, ৯প্রতিমন্ত্রী ও ২ উপমন্ত্রী এবারের মন্ত্রিসভায় স্থান পাননি। আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন শরিক দলের কেউ মন্ত্রিসভায় ঠাঁই পাননি।



 

Show all comments
  • Nasir Uddin ৭ মার্চ, ২০১৯, ৩:১৭ এএম says : 0
    ata abar kamon kotha ?
    Total Reply(0) Reply
  • ISLAM ৭ মার্চ, ২০১৯, ১২:৩৩ পিএম says : 0
    প্রায় সকল মন্ত্রী এমপিদেরই ঢাকা শহরে নিজেদের বাসা বাড়ী রয়েছে । কোন একজনকে দেখলাম না যিনি নিজ থেকে বললেন যে আমার রাজনীতি দেশের মানুষের জন্য আমি কোন সরকারি সুযোগ সুবিধা না নিয়ে দেশের জন্য এবং সাধারন মানুষের জন্য কাজ করবো।
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: সরকার


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ