Inqilab Logo

শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন বাস্তবে রূপ নিয়েছে : বিনিয়োগ সংলাপে সালমান এফ রহমান

অর্থনৈতিক রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ৮ মার্চ, ২০১৯, ১২:০৭ এএম

প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ বিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান বলেছেন, সোনার বাংলা গড়ার স্বপ্ন দেখেছিলেন জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। আর সে স্বপ্নকে আজ বাস্তবে রুপ দিয়েছেন তাঁরই সুযোগ্য কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বাংলাদেশকে নিয়ে ম্যাকিনসি এন্ড কম্পানির উদ্ধৃতি দিয়ে ‘বাংলাদেশ ইস দ্য নেক্সট চায়না’, পিডবিøউসি’র উদ্বৃতি দিয়ে ‘বিশ্বের ২৮ তম এবং ২৩ তম বড় অর্থনীতির দেশ হবে যথাক্রমে ২০৩০ এবং ২০৪১ সালে’, জেট্রো’র উদ্বৃতি দিয়ে ‘লো কস্ট এন্ড হাই রিটার্ন ম্যানুফ্যাকচারিং ডেসটিনেশন ইন এশিয়া’ ইউবিএস’র উদ্বৃতি দিয়ে, ‘২০৫০ সালে বাংলাদেশ বিশ্বের ১২ তম অর্থনৈতিক শক্তি হিসেবে আবির্ভূত হবে’ এবং জেপি মরগান উদ্বৃতি দিয়ে ‘বাংলাদেশ শীর্ষ ৫ অর্থনীতির একটি দেশ হবে’- বাংলাদেশের সম্ভাবনাকে উল্লে ধরেন। গতকাল বৃহস্পতিবার রাজধানীর হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে বাণিজ্য ও বিনিয়োগ বিষয়ে বাংলাদেশের বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী ও রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রতিনিধিদের সঙ্গে সউদী প্রতিনিধি দলের সংলাপ অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন।
বাংলাদেশে বিনিয়োগের আহবান জানিয়ে সালমান এফ রহমান সউদী প্রতিনিধি দলকে জানান, গত ১০ বছরের জিডিপি প্রবৃদ্ধি ৬ থেকে ৭ এর মধ্যে থাকা এবং ২০১৮ সালে জিডিপি প্রবৃদ্ধি ৭ দশমিক ৮৬ শতাংশ। যা চলতি বছরে ৮ শতাংশ ছাড়াবে। একই সঙ্গে প্রতি বছর ১ দশমিক ২ মিলিয়ন কর্মসংস্থান তৈরি হচ্ছে, দারিদ্র্যতা ৪৪ দশমিক ২ থেকে ১২ দশমিক ৯ শতাংশ নামানোসহ বিনিয়োগ, রপ্তানি এবং পার ক্যাপিটা জিডিপির অগ্রগতি তুলে ধরেন।
অনুষ্ঠানে সালমান এফ রহমান সম্প্রতি সামিট কর্পোরেশনের সাথে মিৎসুবিসি এন্ড জেনারেল ইলেকট্রনিক্সের সাথে ১ দশমিক ৩ বিলিয়ন ডলারের বিনিয়োগ, জাপান টোব্যাকোর ১ দশমিক ৪৭ বিলিয়ন ডলারের বিনিয়োগ, চীনের সেনঝেন এবং সাংহাই স্টক এক্সচেঞ্জের ১১ বিরিয়ন ডলারের বিনিয়োগ, আলিপে, আলিবাবা, অ্যামাজন এবং ওয়ালমাটসহ দেশের গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি বিনিয়োগের কথা তুলে ধরেন। এছাড়া বাংলাদেশে বিনিয়োগের জন্য ইতোমধ্যে আগ্রহ প্রকাশ করেছে আমেরিকা, সুইডেন, যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স, চীন, ভারত, মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর, জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া এবং সংযুক্ত আরব আমিরাত বলে উল্লেখ করেন প্রধানমন্ত্রীর এই উপদেষ্টা।
পাওয়ার পয়েন্ট প্রেজেন্টেশনে বাংলাদেশে বিনিয়োগের ১০টি কারণ তুলে ধরেন সালমান এফ রহমান। এর মধ্যে- বাংলাদেশের অভ্যন্তরে উন্মুক্ত বিনিয়োগ। এক্ষেত্রে সরাসরি বিদেশি বিনিয়োগ ২০১৮ সালের প্রথম ৯ মাসে ২ দশমিক ২৬ বিলিয়ন মার্কিন ডলার যা ২০১৭ সালের তুলনায় ৫১ দশমিক ৬২ শতাংশ বেশি।
অভ্যন্তরীণ বাজারে বিনিয়োগের সুযোগ হিসেবে ২০২০ সালে দেশের ১৭ শহর মধ্যবিত্ত এবং ধনি শ্রেণীতে রুপান্তরিত হবে। একই সঙ্গে ২০২৫ সালে এই সংখ্যা ৩৩ টিতে পৌছাবে। এক্ষেত্রে তিনি ২০১৫ সালের হিসেব উল্লেখ করে জানান, প্রতি বছর ২০ লাখ মানুষ মধ্যবিত্ত এবং ধনি শ্রেণীতে যুক্ত হচ্ছে। একই সঙ্গে ৪৯২ উপজেলায় সড়ক এবং নদী পথের যোগাযোগ ব্যবস্থাকে আধুকিনায়ন করা হয়েছে।
জনতাত্তি¡ক বিভাজ্যের বিষয়ে উল্লেখ করে সালামন এফ রহমান জানান, বাংলাদেশে ২৬ বছর ৭ মাস বয়সের মানুষের সংখ্যাই বেশি। ১৫ বছরের নিচের জনসংখ্যা ৪ কোটি ৬৮ লাখ ৩০ হাজার এবং ১১ কোটি ৮০ লাখ কর্মক্ষম মানুষ রয়েছে। যারা কঠোর পরিশ্রমী এবং প্রযুক্তিবান্ধব। এছাড়া দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে বাংলাদেশেই বেশি মাত্রায়, ভাষা, ধর্ম এবং জাতিগত ঐক্য রয়েছে। বাংলাদেশের ৮৫ থেকে ৯০ শতাংশ মানুষ মুসলমান। এর মধ্যে ৯৫ শতাংশ সুন্নি মুসলিম। যাদের একই সংস্কৃতি।
তিনি জানান, বাংলাদেশ দক্ষিণ এশিয়ার ভূ-কৌশলগত প্রবেশদ্বার। ভারত ও চীনকে সংযুক্ত করার অন্যতম প্রবেশদ্বার। যা আঞ্চলিক গুরুত্বপূর্ণ নতুন বাজারকে সংযুক্ত করবে। এর মধ্যে রয়েছে- ভুটান, নেপাল এবং মিয়ানমার। এই প্রবেশদ্বারের মাধ্যমে ২ দশমিক ৯ বিলিয়ন ভোক্তা বা গ্রাহকের কাছে সেবা পৌছানো যাবে। যারা প্রতি বছর ৮ দশমিক ৫৩ ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলারের বেশি ব্যয় করে থাকে।
অগ্রাধিকার বাজারে প্রবেশের বিষয়ে উল্লেখ করে সালমান এফ রহমান বলেন, বাংলাদেশ ৩৮টি দেশ থেকে জিএসপি সুবিধা পাচ্ছে। এর মধ্যে ইউরোপিয় ইউনিয়নভুক্ত ২৮টি দেশ এবং অন্যান্য ২৮ টি দেশ। অন্যান্য দেশের মধ্যে রয়েছে- অস্ট্রেলিয়া, বেলারুশ, কানাডা, লিচেনস্টাইন, জাপান, নিউজিল্যান্ড, নরওয়ে, রাশিয়া, সুইজারল্যান্ড এবং তুরস্ক। একই সঙ্গে বাংলাদেশ ইউরোপীয় ইউনিয়নে ডেনিম পণ্যের প্রথম রপ্তানিকারক। চীনের পরেই বিশ্বব্যাজারে বাংলাদেশ ২য় পোশাক রপ্তানিকারক। পাট উৎপাদন এবং রপ্তানিতে বাংলাদেশ প্রথম। চামড়াজাত পণ্য উৎপাদন এবং রপ্তানিতে বাংলাদেশ ৮ম। এছাড়া সাইকেল রপ্তানিতেও বাংলাদেশ ৮ম।
অবকাঠামো সহযোগিতায় উল্লেখ করে সালমান এফ রহমান বলেন, দেশে বর্তমানে ৬৬টি অর্থনৈতিক জোন রয়েছে। আগামী ১৫ বছরের মধ্যে যা ১০০টিতে উন্নীত হবে। পদ্মা ব্রিজ দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের সাথে উত্তর এবং পূর্বাঞ্চলকে সংযুক্ত করবে। বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ হচ্ছে বাংলাদেশের প্রথম যোগাযোগ এবং সম্প্রচার স্যাটেলাইট। একই সঙ্গে জ্বালানি বৈচিত্র্যতা হিসেবে এলএনজি, নিউক্লিয়ার পাওয়ার, পারমানবিক শক্তি, সৌর শক্তি, বায়ু এবং এলপিজি ইত্যাদি। বর্তমানে দেশে ২০ হাজার ১৩৩ মেগা ওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদিত হচ্ছে। ২০২১ সালে এই সংখ্যা দাড়াবে ২৪ হাজার, ২০৩০ সালে ৩০ হাজার মেগা ওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদিত হবে। এছাড়া দেশের সব হাইওয়েগুলো ৪ লেন করা হচ্ছে। সব মেগা সিটিগুলো মেট্রারেলে সংযুক্ত হবে। এলিভেটেডে এক্সপ্রেসওয়ে থাকবে এবং হাইস্পিড এক্সপ্রেস রেলওয়ে থাকবে। একই সেঙ্গ বিদেশি বিনোয়োগ আকৃষ্ট করতে ২৮ টি হাইটেক ও সফটওয়্যার পার্ক করা হয়েছে। ইতোমধ্যে ৪ জি মোবাইল নেটওয়ার্ক চালু করা হয়েছে। ২০২১ সাল নাগাদ ৫জি মোবাইল নেটওয়ার্ক চালু হবে।
অন্যান্য দেশের তুলনায় বাংলাদেশে সাশ্রয়ী ব্যবসার সুযোগ আছে উল্লেখ করে সালমান এফ রহমান বলেন, বাংলাদেশে বিনিয়োগ করলে পানির খরচ ৬ থেকে ৮৯ শতাংশ এবং ১০ থেকে ৫৫ শতাংশ বিদ্যুতের খরচ বাঁচবে। পাশাপশি শ্রমিকদের মজুরির ক্ষেত্রেও অন্যান্য দেশের তুলনায় ৪৭ থেকে ৮৪ শতাংশ সাশ্রয় হবে। একই সঙ্গে ৪১ থেকে ৪৯ শতাংশ কর্মকর্তাদের বেতন বাঁচবে।
প্রতিযোগিতামূলক মার্কেট তৈরিতে অবকাঠমো এবং ইকোনমিক জোনে বিনিয়োগ করলে ৫ থেকে ১০ বছর জন্য কর মওকুফ সুবিধা পাবে। একই সঙ্গে বড় ধরণের যন্ত্রপাতি ও কাঁচামাল আমদানিতে কর ছাড়ের সুযোগ এবং সরাসরি বাণিজ্য বিনিয়োগে দ্বৈত কর পরিহার করা হয়েছে বলে উল্লেখ করেন প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ বিষয়ক উপদেষ্টা।
বিনিয়োগ করলে আর্থিক প্রনোদনা, রপ্তানি উন্নয়ন তহবিল, ইক্যুইটি ইন্টারপ্রিনারশিপ ফান্ডসহ বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধার কথা তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারিখাতের এই উপদেষ্টা।
এছাড়া ফাস্ট ট্রাক এপ্রæভাল, নাগরিকত্ব প্রদান, স্থায়ী বসবাসের সুযোগ, দ্রæত ইমিগ্রেশনের সুযোগ, স্কিলড ওয়ার্ক পারমিট, বন্ডেড ওয়্যারহাউসিং এবং বিদেশি বাংলাদেশীদের অগ্রাধিকার প্রদানের কথা তুলে ধরেন সালমান এফ রহমান।
বিনিয়োগকারীদের সুবিধার কথা বিবেচনা করে ওয়ান স্টপ সার্ভিস চালু করা হয়েছে। যেখানে বিশ্বমানের সেবা নিশ্চিত করা হয়েছে জানান প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি উপদেষ্টা।
বিদেশি বিনিয়োগকারীরা বিনিয়োগ করার ক্ষেত্রে দেশের স্থিতিশীলতাকেই সবচেয়ে বেশি প্রাধান্য দেয় এ বিষয়ে আশ্বস্ত করে সালমান এফ রহমান বলেন, বর্তমান ক্ষমতাসীন সরকার ব্যবসা বান্ধব, রাজনৈতিক পরিবেশ ও স্থিতিশীল এবং সন্ত্রাস ও মাদকের ক্ষেত্রে এ সরকারের জিরো টলারেন্স।

 

 



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: সালমান এফ রহমান


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ