Inqilab Logo

শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

ঢাকা-চট্টগ্রাম এক্সপ্রেসওয়ে

২০২২ সালে প্রাথমিক চালুর লক্ষ্য

বিশেষ সংবাদদাতা | প্রকাশের সময় : ১০ মার্চ, ২০১৯, ১২:০৫ এএম

ঢাকা-চট্টগ্রাম চার লেন মহাসড়কের পর এবার এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণকে সর্বাধিক গুরুত্ব দিচ্ছে সরকার। সরকারি-বেসরকারি অংশীদারিত্বের (পিপিপি) ভিত্তিতে দেশের দীর্ঘতম এ টোল সড়ক নির্মাণে বিনিয়োগকারী খুঁজছে সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগ। আগ্রহী বিনিয়োগকারীদের সঙ্গে আলোচনার জন্য গত মাসে রিকোয়েস্ট অব ইন্টারেস্ট (আরওআই) আহ্বান করেছে মহাসড়ক বিভাগ। আগামী ১৫ মার্চ পর্যন্ত সম্ভাব্য বিনিয়োগকারীরা প্রকল্পে আগ্রহ প্রকাশের সুযোগ পাবে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, প্রকল্পের সম্ভাব্যতা সমীক্ষা ও বিস্তারিত নকশার কাজ শেষ হয়েছে। ইতোমধ্যে ডিপিপি প্রস্তুত করে মন্ত্রণালয়ে জমা দেয়া হয়েছে। এখন তা অনুমোদনের অপেক্ষায় আছে।
ঢাকা-চট্টগ্রাম এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণে সম্ভাব্য ব্যয় ধরা হয়েছে ২৮ হাজার কোটি টাকা। চালু করার প্রাথমিক লক্ষ্য ২০২২ সাল। এ এক্সপ্রেসওয়ে দিয়ে সড়কপথে মাত্র আড়াই ঘণ্টায় ঢাকা থেকে চট্টগ্রামে যাতায়াত সম্ভব হবে। এক্সপ্রেসওয়েটি বাংলাদেশকে এশিয়ান হাইওয়ের সঙ্গে যুক্ত করবে। পরিকল্পনাধীন দক্ষিণ চট্টগ্রাম ও কক্সবাজারে একটি গভীর সমুদ্রবন্দরকেও সংযুক্ত করবে এই এক্সপ্রেসওয়ে। এজন্য পরিকল্পনা ও বাস্তবায়নাধীন প্রকল্পগুলোর মধ্যে ঢাকা-চট্টগ্রাম এক্সপ্রেসওয়েকে সর্বাধিক গুরুত্ব দিচ্ছে সরকার।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ঢাকা-চট্টগ্রাম এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণে এরই মধ্যে আগ্রহ দেখিয়েছে চায়না স্টেট কনস্ট্রাকশন ইঞ্জিনিয়ারিং করপোরেশনসহ দেশটির আরও চারটি প্রতিষ্ঠান। শুরুতে জিটুজি ভিত্তিতে বাস্তবায়নের পরিকল্পনা থাকায় ২০১৫ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি চায়না হারবার ইঞ্জিনিয়ারিং কোম্পানির সঙ্গে একটি সমঝোতা চুক্তি করে সরকার। একই বছরের ২১ অক্টোবর পলি টেকনোলজি ও ১ নভেম্বর চায়না রেলওয়ে কনস্ট্রাকশন করপোরেশন নামের আরো দুটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হয়। ২০১৬ সালের জানুয়ারিতে চায়না গেঝুবা গ্রুপও ঢাকা-চট্টগ্রাম এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণে আগ্রহ প্রকাশ করে। তাদের সঙ্গেও সমঝোতা চুক্তি স্বাক্ষর হয়। তবে প্রতিষ্ঠানগুলোর কোনোটিই শেষ পর্যন্ত আর চূড়ান্ত প্রস্তাব দেয়নি। সর্বশেষ পিপিপির ভিত্তিতে নির্মাণে আগ্রহ দেখিয়েছে চায়না স্টেট কনস্ট্রাকশন ইঞ্জিনিয়ারিং করপোরেশন লিমিটেড। এর বাইরে আরো বেশ কয়েকটি দেশী-বিদেশী প্রতিষ্ঠান আগ্রহ প্রকাশ করেছে। এ ছাড়া এ প্রকল্পে আগ্রহ দেখিয়ে যোগাযোগ শুরু করেছে ইতাল-থাই ডেভেলপমেন্ট কোম্পানি। ঢাকায় মেট্রোরেল নির্মাণে কাজ করছে ইতাল-থাই।
২১৭ কিলোমিটারের ঢাকা-চট্টগ্রাম এক্সপ্রেসওয়েতে টোল দিয়ে চলবে যানবাহন। এক্সপ্রেসওয়েটিতে মোট সাতটি স্থান থেকে যানবাহন ঢুকতে পারবে। এগুলো হলো নারায়ণগঞ্জের মদনপুর, কুমিল্লার দাউদকান্দি, ময়নামতি ও পদুয়ার বাজার, ফেনী, চট্টগ্রামের বারইয়ারহাট ও সলিমপুর।
জানা গেছে, ঢাকা-চট্টগ্রাম এক্সপ্রেসওয়েটি নির্মাণ করা হবে তিনটি প্যাকেজে। প্রথম প্যাকেজে নির্মাণ করা হবে ঢাকা-কুমিল্লা অংশ। এই অংশের দৈর্ঘ্য প্রায় ৮০ কিলোমিটার। আপাতত ঢাকা (কাঁচপুর)-কুমিল্লা অংশটি নির্মাণের জন্য বিনিয়োগকারী খুঁজছে মহাসড়ক বিভাগ। গত ৬ ফেব্রুয়ারি এই অংশের আরওআই আহ্বান করা হয়েছে। আগ্রহী প্রতিষ্ঠানগুলোকে নিয়ে চলতি বছরের দ্বিতীয় প্রান্তিকে একটি উন্মুক্ত ‘পাবলিক ইনফরমেশন সেশন’ আয়োজনেরও পরিকল্পনা করা হচ্ছে। এরপর পর্যায়ক্রমে কুমিল্লা-ফেনী (দ্বিতীয় প্যাকেজ) ও ফেনী-চট্টগ্রাম (তৃতীয় প্যাকেজ) অংশেরও আরওআই আহ্বান করবে মহাসড়ক বিভাগ।
প্রস্তাবিত ঢাকা-চট্টগ্রাম এক্সপ্রেসওয়ে প্রকল্পটি সরকারের অর্থনৈতিক বিষয়সম্পর্কিত মন্ত্রিসভা কমিটিতে অনুমোদিত হয় ২০১৩ সালের মার্চে। অর্থ বিভাগ গত বছরের মে মাসে প্রকল্পের সবক’টি প্যাকেজের ভিজিএফ (ভায়াবিলিটি গ্যাপ ফান্ডিং) প্রস্তাব অনুমোদন করে। এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের (এডিবি) ঋণসহায়তায় এরই মধ্যে সম্ভাব্যতা সমীক্ষা ও বিস্তারিত নকশা প্রণয়নের কাজও শেষ হয়েছে। প্রকল্পটিতে উপদেষ্টা হিসেবে রয়েছে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট) ও এডিবি।
এদিকে, ঢাকা-চট্টগ্রাম এক্সপ্রেসওয়ে প্রকল্পের জন্য আরেকটি সহায়ক প্রকল্প হাতে নিয়েছে সরকার। সাপোর্ট টু ঢাকা-চট্টগ্রাম এক্সপ্রেসওয়ে (পিপিপি) প্রকল্পে সম্ভাব্য ব্যয় ধরা হয়েছে ১৩ হাজার ৫৩৮ কোটি টাকা। এ প্রকল্পের মাধ্যমে এক্সপ্রেসওয়ের জন্য প্রয়োজনীয় ভূমি অধিগ্রহণ ও ক্ষতিগ্রস্তদের পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করা হবে। পরিকল্পনা অনুযায়ী, ভূমি অধিগ্রহণে ব্যয় ধরা হয়েছে ১০ হাজার ৫৮৮ কোটি টাকা। সবচেয়ে বেশি ভূমি অধিগ্রহণ করতে হবে ঢাকা-কুমিল্লা অংশে ৩৯৯ হেক্টর। এতে সম্ভাব্য ব্যয় ধরা হয়েছে ৪ হাজার ৭৬৭ কোটি টাকা। একইভাবে কুমিল্লা-ফেনী অংশে ১০৭ হেক্টর ভূমি অধিগ্রহণে ২ হাজার ৭৮৫ কোটি ও ফেনী-চট্টগ্রাম অংশে ২৯১ হেক্টর ভূমি অধিগ্রহণে সম্ভাব্য ব্যয় ধরা হয়েছে ৩ হাজার ৩৩৪ কোটি টাকা। তিন ধাপে প্রকল্পে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিদের পুনর্বাসনের জন্য সম্ভাব্য ব্যয় ধরা হয়েছে আরও ৩৭২ কোটি টাকা।
ঢাকা-চট্টগ্রাম এক্সপ্রেসওয়েটি হতে যাচ্ছে সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের সবচেয়ে বড় এবং দ্বিতীয় পিপিপি প্রকল্প। সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের প্রথম পিপিপি প্রকল্পটি হচ্ছে ঢাকা বাইপাস সড়ক নির্মাণ। ৪৮ কিলোমিটার দীর্ঘ সড়কটি নির্মাণে ব্যয় হচ্ছে ৩ হাজার ৩৯ কোটি টাকা। ছয় লেনের সড়কটি নির্মাণের কাজ পেয়েছে যৌথভাবে চীনের সিচুয়ান রোড অ্যান্ড ব্রিজ গ্রুপ (এসআরবিজি), বাংলাদেশের শামী এন্টারপ্রাইজ লিমিটেড ও ইউডিসি কনস্ট্রাকশন লিমিটেড।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: মহাসড়ক

২৮ ডিসেম্বর, ২০২২
২১ ডিসেম্বর, ২০২২
২০ সেপ্টেম্বর, ২০২২

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ