Inqilab Logo

শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

তামিম-সাদমান কীর্তির পরও হতাশা

ওয়েলিংটন টেস্ট

স্পোর্টস রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ১১ মার্চ, ২০১৯, ১২:০৩ এএম

নিউজিল্যান্ডের মাঠে পেসাররা বরাবরই পান স্যুয়িং। নতুন বলে সেই সেই ঘূর্ণি হয় বিষাক্ত। সফরকারী দলগুলো তাই কখনই ধারাবাহিকভাবে উদ্বোধনী জুটিতে পায় না ভালো শুরু। এবার তামিম ইকবাল আর সাদমান ইসলাম মিলে টানা তিন ইনিংসে পেলেন ফিফটির জুটি। আর এতে হয়ে গেছে এক বিরল কীর্তিও। 

হ্যামিল্টনের দুই ইনিংসে ৫৭ আর ৮৮ রানের জুটি গড়ার পর ওয়েলিংটনের প্রথম ইনিংসে প্রায় ২১ ওভার ব্যাট করে ৭৫ রানের জুটি আসে দুজনের মধ্যে। ১৯৩০ সাল থেকে নিউজিল্যান্ডে হওয়া টেস্ট সিরিজের মধ্যে কোন সফরকারী দলের ওপেনিং জুটি এই নিয়ে মাত্র দ্বিতীয়বার করতে পারল টানা তিন ফিফটি। সর্বশেষ ও এর আগের একমাত্র হওয়া জুটিটিও ২০ বছর আগে। ১৯৯৯ সালে দক্ষিণ আফ্রিকার গ্যারি কারস্টেন ও হার্শেল গিবস ৭৬, ১২৭ ও ৭৩ রানের জুটি গড়তে পেরেছিলেন।
টেস্টে বরাবরই ওপেনিং জুটি নিয়ে ভুগতে থাকা বাংলাদেশ এর আগে টানা তিন ইনিংসে ফিফটির জুটি পেয়েছে আরও দুবার। সেই দুবারও তামিমই ছিলেন এক প্রান্তে। ২০১০ সালে ইংল্যান্ড সফরে তার সঙ্গে ইমরুল কায়েসের জুটিতে এসেছিল ৮৮, ১৮৫ ও ১২৬। ২০১৭ সালে তামিম টানা তিন ফিফটির জুটি করেন সৌম্য সরকারের সঙ্গে। শ্রীলঙ্কা সফরে গল টেস্টে ১১৮ ও ৬৭ রানের জুটির পর পি সারা ওভালের প্রথম ইনিংসে এই জুটিতে রান আসে ৯৫। তবে ওয়েলিংটনে এদিন সবুজ গালিচায় উদ্বোধনী জুটিতে দারুণ শুরুটাও হেলায় হাতছাড়া করেছে বাংলাদেশ। তামিম-সাদমানের জুটি ভাঙার পর ধসেছে মিডল অর্ডার। ধুঁকতে ধুঁকতে পরে অলআউট হয়েছে ২১১ রানে।
প্রথম দুই দিন বৃষ্টির কারণে একটি বলও মাঠে গড়ায়নি। আর ৭২.৪ ওভার খেলার পর ফের বৃষ্টির হানায় অঅগে ভাগেই শেষ হরতে পয়েছে তৃতীয় দিনও। যদি সব ঠিক থাকে আজ ম্যাচের চতুর্থ দিন নির্ধারিত সময়ে আধাঘণ্টা আগে শুরু হবার কথা। গতকাল বিলম্বিত টসে হারের পর কঠিনতম কাজটিই করতে হয়েছে বাংলাদেশকে। তবে প্রথম সেশনে উদ্বোধনী জুটিতে দারুণ সূচনা এনে দেন তামিম ইকবাল ও শাদমান ইসলাম। দুজনে মিলে গড়েন ৭৫ রানের জুটি। শাদমান ২৭ রান করে কলিন ডি গ্র্যান্ডহোমের বলে আউট হন। তবে তামিম টেস্ট ক্যারিয়ারে ২৭তম অর্ধ-শতক তুলে নেন।
এরপর মুমিনুল হক টিকতে পারেনি বেশিক্ষণ। ব্যাক্তিগত ১৫ রানে উইকেটের পেছনে ক্যাচ দিয়ে প্যাভিলিয়নে ফেরত যান মুমিনুল। মোহাম্মদ মিঠুনও ব্যাট হাতে ব্যার্থ হন। মধ্যাহ্ন বিরতির ঠিক আগের বলেই মিঠুনও নেইল ওয়াগনারে বলে উইকেটর পেছনে ক্যাচ দিয়ে আউট হন।
প্রথম ইনিংসের দ্বিতীয় সেশনটাও ভালো কাটেনি বাংলাদেশের। মধ্যাহ্ন বিরতির পর শুরুতেই তামিম ৭৪ রান করে আউট হন। সৌম্য সকার (২০) ও মাহমুদউল্লাহ (১৩) দ্রুত বিদায় নিলে ১৬৮ রানে ৬ উইকেট হারায় বাংলাদেশ। এরপর লিটন দাসের ব্যাটে ২০০ রান স্পর্শ করে সফরকারী দল। তাইজুল ৮ রান করে লিটনকে ভালই সঙ্গ দেন। মুস্তাফজুর রহমান শূন্য রানে বিদায় নেন। এরপর অবশ্য ৪৯ বলে ৩৩ রান করে টিম সাউদির বলে বিদায় নেন লিটন দাশ। আর শেষ উইকেট হিসেবে আবু জায়েদ বোল্টের বলে বোল্ড হন।
সেই ভিত ধরে এগুলেই ভালো সংগ্রহের দিকে যাওয়া যেত। কিন্তু মুমিনুল হক, মোহাম্মদ মিঠুনরা শর্ট বলে ফাঁদে পড়ে নিজেদের বিলিয়ে দেন। শর্ট বলে থামেন সর্বোচ্চ ৭৪ করা তামিম, অধিনায়ক মাহমুদউল্লাহরও একই হাল। এদের সবাইকে ফিরিয়ে ২৮ রানে ৪ উইকেট নেন ওয়েগনার। সবচেয়ে দৃষ্টিকটু ছিল মুমিনুল আর মিঠুনের আউট। দুজনেই ওয়েগনারের শর্ট বলে পরাস্ত হয়ে রিভিউ নিয়ে বাঁচার পরের বলেই আবার শর্ট বলেই ঘায়েল হয়েছেন।
দিনশেষে নিজেদের এই দুর্বলতা আড়াল করেননি দলের হয়ে কথা বলা লিটন, ‘নতুন বলে আমরা যেমন জানি সুইং করবে, এরপরও আমরা অনেক সময় মারতে গিয়ে আউট হয়ে যাই। তেমনি আমরা জানি সে শর্ট বল করবে। কিন্তু বলটা এমন জায়গায় রাখে, কিছু করার থাকে না। এখানে মনোযোগ আরও বাড়িয়ে বল আরও বেশি ছাড়লে হয়তো কিছু করা যাবে।’
উইকেটে ছিল সবুজ ঘাস, বৃষ্টি থাকায় ছিল ভেজাও। এমন উইকেট হয় ভীষণ চ্যালেঞ্জের। তবে লিটন মনে করছেন এই উইকেটেও টিকতে পারলে করা যেত অনেক রান, ‘উইকেট ভয়ংকর বলব না। তবে কন্ডিশন তো বোলারদের পক্ষে ছিল। এ রকম কন্ডিশনে ব্যাটসম্যানের ফোকাস ভালো থাকলে সফল হওয়ার সুযোগ বেশি থাকে। তামিম ভাই ফোকাসড ছিলেন, সফল হয়েছেন।’
নিজেদের প্রথম ইনিংস ২১১ রানে শেষ করে স্বাগতিকদেরও পেরেশানিতে রেখেছেন বাংলাদেশের পেসাররা। আবু জায়েদ রাহি ফিরিয়েছেন ওদের দুই ওপেনারকেই। আজ ২ উইকেটে ৩৮ রান নিয়ে চতুর্থ দিন শুরু করবে কিউইরা। ম্যাচের এখন যা অবস্থা তাতে ইতিবাচক দিক পাচ্ছেন লিটন, ‘দুই দিন খেলা হয়নি। তার পর খুব ভালো একটি শুরু পেয়েছিলাম আমরা। যে রকম শুরু হয়েছিল, আরেকটু ভালো করা যেত। ব্যাটসম্যানরা আরেকটু মনোযোগ দিয়ে খেললে আরও ভালো হতো। এরপরও দিনের শেষে ওদের দুটি উইকেট নিতে পেরেছি এটি ভালো দিক।’
সংক্ষিপ্ত স্কোর
বাংলাদেশ ১ম ইনিংস : ৬১ ওভারে ২১১ (তামিম ৭৪, সাদমান ২৭, মুমিনুল ১৫, মিঠুন ৩, সৌম্য ২০, মাহমুদউল্লাহ ১৩, লিটন ৩৩, তাইজুল ৮, মুস্তাফিজ ০, আবু জায়েদ ৪, ইবাদত ০*; বোল্ট ১১-৩-৩৮-৩, সাউদি ১৫-২-৫২-১, ডি গ্র্যান্ডহোম ৭-০-১৫-১, হেনরি ১৫-০-৬৭-১, ওয়েগনার ১৩-৪-২৮-৪)।
নিউজিল্যান্ড ১ম ইনিংস : ১১.২ ওভারে ৩৮/২ (রাভাল ৩, ল্যাথাম ৪, উইলিয়ামসন ১০*, টেইলর ১৯*; আবু জায়েদ ৬-২-১৮-২, ইবাদত, ৫.৪-২-১৮-০)।তৃতীয় দিন শেষে

 



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ