Inqilab Logo

শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

বিতর্কিত ডাকসু নির্বাচন

ঢাবি ক্যাম্পাস উত্তাল : আজ থেকে লাগাতার ধর্মঘট

নূর হোসেন ইমন | প্রকাশের সময় : ১২ মার্চ, ২০১৯, ১২:০৪ এএম

ডাকসু নির্বাচনে ভোট দিয়ে শিক্ষার্থীরা ইতিহাসের অংশ হতে চেয়েছিল; হয়ে গেলেন কলঙ্কিত নির্বাচনের স্বাক্ষী। দীর্ঘ ২৮ বছর পর অনুষ্ঠিত বহুল প্রতিক্ষিত এই নির্বাচনে ব্যালট বাক্স ভতির্, লাগামহীন জালভোট, ব্যাপক অনিয়ম ও কারচুপির ঘটনায় বিক্ষোভে উত্তাল হয়ে উঠেছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস। জাল ভোট প্রদান, সিলযুক্ত ব্যাটল বাক্স উদ্ধার, ভোট দানে বাঁধা, প্রার্থীদের মারধরসহ নানা অনিয়মের অভিযোগে ক্ষমতাসীন দলের অঙ্গ সংগঠন ছাত্রলীগ ছাড়া সব প্যানেলের প্রার্থীরা নির্বাচন বর্জন করেছে। তারা ক্যাম্পাস জুড়ে বিক্ষোভ করে ভিসির বাসা ঘেড়াও করে রেখেছে। নির্বাচন বাতিল করে পুনঃতফসিল ঘোষণা না করা পর্যন্ত অবস্থান এবং ধর্মঘট কর্মসূচি পালন করার ঘোষণা দিয়েছে।
এর আগে ভোট বর্জনের ঘোষণা দেয় নির্বাচনে প্রতিদ্ব›িদ্ব ছাত্রদল। তারও আগে ভোট বর্জনের ঘোষণা দিয়ে সংবাদ সম্মেলন করে বাম সংগঠনগুলোর জোট প্রগতিশীল ছাত্র ঐক্য, কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীদের প্লাটফর্ম বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদ, স্বাধিকার স্বতন্ত্র পরিষদ, ছাত্র ফেডারেশন ও স্বতন্ত্র জোট। তারা দাবি ভোট কারচুপির ভয়াবহ চিত্র তুলে ধরেন। তবে ছাত্রলীগ সংবাদ সম্মেলন করে জানিয়েছে পরাজয় নিশ্চিত বুঝে নির্বাচনকে প্রশ্নবিদ্ধ করতেই স্বার্থন্বেষী মহল এমন অভিযোগ তুলছে। নতুন করে নির্বাচনের দাবি হাস্যকর। তবে ছাত্রছাত্রীরা স্বর্তস্ফূর্তভাবে ভোট দিয়েছে দাবি করে ঢাবির ভিসি প্রফেসর ড. মো. আখতারুজ্জান বলেন, দু’একটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা ছাড়া নির্বাচন শান্তিপূর্ণ হয়েছে। শিক্ষার্থীদের গণতন্ত্রের প্রতি প্রবল আস্থা দেশে আমি দারুণ খুশি। তবে হলগুলোতে ভোটের ব্যাপক অনিয়মের কথা স্বীকার করে চিফ রিটার্নিং কর্মকর্তা এস এম মাহফুজুর রহমান বলেছেন, আমি বিব্রত। জাল ভোট প্রদান, সিলযুক্ত ব্যাটল বাক্স উদ্ধারসহ যেসব ঘটনা ঘটেছে সেগুলোর জন্য আমি ব্যক্তিগতভাবে বিব্রতবোধ করছি। এসব ঘটনার জন্য হল প্রশাসনকে দায়ী।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সবগুলো হল আগে থেকেই ছাত্রলীগের নিয়ন্ত্রণে ছিল। নির্বাচনী প্রচারণায় সেই নিয়ন্ত্রণ কিছুটা শীতিল হলেও ভোটের দিন সবকিছুই তাদের নিয়ন্ত্রণে চলে যায়। যারা ভোট নেন এবং যারা নির্বাচন পর্যবেক্ষণ করেন প্রায় সবাই পক্ষপাতিত্ব আচরণ করেন। ভোটের দিন ব্যালট বাক্স হলে পাঠানোর সিদ্ধান্তের পরও হঠাৎ করে আগের রাতে ব্যালট বাক্স হলে পাঠানোয় রাতেই নির্বাচনের নিরপেক্ষতা নিয় প্রশ্ন ওঠে। বিশিষ্টজন, ডাকসুর কয়েকজন সাবেক ভিপি-জিএস এবং প্রার্থীদের অনেকেই আশঙ্কা করেন জাতীয় নির্বাচন ও উপজেলা নির্বাচনের মতোই ডাকসু নির্বাচনেও আগের রাতেই ব্যালটে সিল মেরে বাক্সে ভরে রাখা হতে পারে। তারপরও ভোটাররা স্বর্তস্ফূর্তভাবে ভোট দেয়ার জন্য লাইলে দাঁড়িয়ে যায়। কিন্তু লাইল আর এগোয় না। ভোট গ্রহণ শুরুর পর পরই অনিয়মের পরিস্থিতি টের পয়ে যায় শিক্ষার্থীরা। কুয়েত মৈত্রী হলে জাল ভোট দিয়ে ব্যালট বাক্স ভরে রাখা আবিস্কার করে ছাত্রীরা। ছাত্রলীগের প্রার্থীর নামের পার্শ্বে টিক দেয়া জালভোট ভর্তি ব্যালট বাক্সের বস্তা উদ্ধার করলে উত্তেজনার সৃষ্টি হয়। ভোট জালিয়াতির অভিযোগে শিক্ষার্থীরা প্রো-ভিসি (প্রশাসন) অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ সামাদ ও প্রক্টর ড. এ কে এম গোলাম রাব্বানী ও হল প্রভোস্ট শবনম জাহানকে অবরোধ করে রাখেন। ছাত্রছাত্রীরা ভোট গ্রহণ বন্ধের দাবিতে বিক্ষোভ করলে চাপের মুখে তাৎক্ষণিকভাবে হলের প্রোভোস্ট শবনম জাহানকে অব্যাহতি দেওয়া হয়। এক ঘন্টা স্থগিত থাকার পর পুনরায় শুরু হয়। সে সময়ই রোকেয়া হলেও একটি কক্ষে কয়েকটি ব্যালট বাক্স তালা মেরে রাখা হয়েছে দেখে ছাত্রীরা বিক্ষোভ চালানোর এক পর্যায়ে তালা ভেঙে কক্ষে প্রবেশ করে ব্যালট বাক্সগুলো উদ্ধার করে। সেখানে সিল মারা ব্যালটের সঙ্গে নতুন ব্যালট পেপারও পাওয়া যায়। বিক্ষুব্ধ ছাত্রীরা প্রো-ভিসির প্রাইভেটকারটি জালভোটের ব্যালট দিয়ে ঢেকে দেন। ভোট জালিয়াতিকে তারা লজ্জার ভোট বলে শ্লোগান দেন। সেখানে ছাত্রলীগের মেয়েরা কোটা আন্দোলনের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ছাত্রনেতা ভিপি প্রার্থী নুরুল হক নুরুকে মারধোর করে। এরপর একে একে সুফিয়া কামাল হল, সূর্যসেন হল থেকে আসতে থাকে নানা অভিযোগ। প্রার্থীদের অভিযোগের বাইরে অভিযোগ আসতে থাকে সাধারণ ভোটারদের কাছ থেকেও। সিল মারা ব্যালট, ব্যালট ভর্তি বাক্স, কৃত্রিমভাবে সৃষ্টি করা ভোটারদের লম্বা লাইনসহ বিভিন্ন অভিযোগের মধ্যেই চলতে থাকে ভোটগ্রহণ। একইসঙ্গে একাধিক ভিপি প্রার্থীর ওপর ছাত্রলীগের হামলার অভিযোগও আসে। দুপুরে ছাত্রলীগ ছাড়া অন্য সব দল ভোট বর্জনের ঘোষণা দিলে ক্যাম্পাস হয়ে ওঠে উত্তপ্ত। অভিযোগের সত্যতার এত প্রমাণ থাকার পরও ভোট বাতিল না করায় প্রশাসনের সমালোচনা করেন বিভিন্ন ছাত্র সংগঠনের বর্তমান নেতা ও প্রার্থীরা। তারা বলছেন, এই প্রহসনের নির্বাচন ছাত্রসমাজ মেনে নেবে না।
সকাল ৮টায় শুরু করে দুপুর ২টা পর্যন্ত ভোটগ্রহণের সময় নির্ধারণ করা হলেও কারচুপির অভিযোগে ভোট বন্ধের পর পুনরায় শুরু করায় ২টার পরেও নির্বাচন চলতে থাকে কয়েকটি কেন্দ্রে। বিশ্ববিদ্যালয়ের মধুর ক্যান্টিনে প্রগতিশীল ছাত্রজোট, সাম্রাজ্যবাদ বিরোধী ছাত্রঐক্য, বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদ, স্বাধীকার স্বতন্ত্র পরিষদসহ নির্বাচনে অংশ নেয়া বিভিন্ন প্যানেলের প্রার্থীরা যৌথ সংবাদ সম্মেলন করে কারচুপি, প্রার্থীদের উপর হামলা, ছাত্রলীগ ব্যতীত অন্য সংগঠনের সমর্থকদের ভোটকেন্দ্রে ঢুকতে না দেয়াসহ বিভিন্ন অভিযোগ এনে ভোট বর্জন করে লাগাতার ছাত্র ধর্মঘট ঘোষণা করে। এর পর বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে তারা তারা ভিসি বাসভবনের সামনে অবস্থান নেন। অন্যদিকে ছাত্রদল আলাদা সংবাদ সম্মেলন করে ভোট বর্জন ভিসি কার্যালয় ঘেরাও করে। নির্বাচনে অংশ নেয়া ইসলামী শাসনতন্ত্র ছাত্র আন্দোলনসহ অন্যান্য সংগঠন থেকেও ভোট বর্জনের ঘোষণা আসতে থাকে। কারচুপি ও ভোট ডাকাতির দায় প্রশাসনের উল্লেখ করে নির্বাচন বাতিলের দাবিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সাবেক শিক্ষার্থীবৃন্দ’র ব্যানারে প্রতিবাদ সমাবেশ করেছে সাবেক শিক্ষার্থীরা। গতকাল বিকেল ৫টায় শাহবাগ জাতীয় জাদুঘরের সামনে এ প্রতিবাদ সমাবেশ করে তারা। এদিকে ডাকসু নির্বাচন সুষ্ঠু হয়েছে উল্লেখ করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান বলেছেন, আমি কয়েকটি হলে ঘুরে দেখেছি শিক্ষার্থীরা অত্যন্ত শান্তিপূর্ণভাবে ভোটগ্রহণ করেছে।
কুয়েত মৈত্রী হলে বস্তাভর্তি ব্যালট
এদিকে ভোট গ্রহণের শুরুতেই ছাত্র হলগুলোতে ব্যালট বাক্স প্রার্থীদের না দেখানোয় চরম উত্তেজনার সৃষ্টি হয়। সকালে বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলাদেশ কুয়েত মৈত্রী হলে প্রার্থীদের ফাঁকা ব্যালট বাক্স না দেখিয়ে ভোট শুরু করতে চাইলে বাধা দেই শিক্ষার্থীরা। ফলে ৮টায় ভোটগ্রহণ শুরু হওয়ার কথা থাকলেও ফাঁকা বাক্স দেখানো ছাড়া ভোট শুরু হতে দেয়নি তারা। সকাল সাড়ে ৯টার দিকে শিক্ষার্থীরা হলটিতে থেকে ছাত্রলীগের প্রার্থীদের নামের পাশে সিল মারা ৩ বস্তা ব্যালট উদ্ধার করে। এরপরেই হলটিতে প্রভোস্ট এর পদত্যাগ ও ছাত্রলীগের প্যানেলকে বাতিলের দাবিতে বিক্ষোভ করতে থাকে ছাত্রীরা। শিক্ষার্থীরা এসময় কেন্দ্র পরিদর্শণ করতে আসলে প্রো-ভিসি ড. মো. সামাদকে ঘিরে ধরে। বিক্ষোভের মুখে হল প্রভোস্ট ড. শবনম জাহানকে অব্যাহতি দিয়ে দূর্যোগ ব্যবস্থাপনা বিভাগের প্রফেসর মাহবুবা নাসরিনকে ভারপ্রাপ্ত প্রভোস্ট হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রো-ভিসি ড. মো.সামাদ হলটিতে অনিয়মের বিষয়টি স্বীকার করে দোষীদের বিরুদ্ধে শাস্তির ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে জানান। এরপর সকাল ১১টায় কেন্দ্রটিতে আবার ভোট নেয়া শুরু করে প্রশাসন।
ফাঁকা ব্যালট বাক্স দফায় দফায় বিক্ষোভ
এদিকে সকাল থেকেই ফাঁকা ব্যালট বাক্স না দেখিয়ে ভোট গ্রহণ করার প্রতিবাদে বিক্ষোভ করতে থাকে থাকে বিশ্ববিদ্যালয়ের রোকেয়া ও সুফিয়া কামাল হলে। রোকেয়া হলে মোট ৯টি বাক্স এর মধ্যে প্রার্থীদের ৬টি বাক্স দেখানোর অভিযোগ আনে প্রার্থীরা। বাকি ৩টি বাক্স না দেখানোয় ভোট বর্জন করে হলের ভিতরেই বিক্ষোভ করতে থাকে ছাত্রীরা। শিক্ষার্থীরা ভোটগ্রহণ করার পাশের অন্য একটি তালাবদ্ধ কক্ষ থেকে তালা ভেঙ্গে ৩টি ব্যালট বাক্স উদ্ধার করে। পরে স্টিলের বাক্স ভেঙ্গে তারা সেখান থেকে সিল না মারা ব্যালট বাক্স উদ্ধার করা হয়। প্রার্থীদের দাবি প্রশাসনের ছাত্রলীগের প্যানেলকে জিতানোর উদ্যোশে এসব ব্যালট আলাদা করে রাখা হয়, যাতে পরবর্তীতে সুবিধামত সময়ে ব্যালটগুলো দাগানো যায়। ১১টার পর থেকেই কেন্দ্রটিতে ভোটগ্রহণ স্থগিত হয়ে গেলেও দুপুর ২টায় আবার ভোটগ্রহণ শুরু করে প্রশাসন। তবে মাইকে ডেকে শিক্ষার্থীদের ভোট দেয়ার জন্য ডাকা হলেও এসময় কেন্দ্রে ভোটর উপস্থিতি ছিলো তুলনামূলক কম। এদিকে ফাঁকা ব্যালট বাক্স না দেখানোয় কয়েক দফায় ভোট স্থগিত হয় সুফিয়া কামাল হলে। ওই কেন্দ্রটিতে বিভিন্ন অনিয়মের অভিযোগ এনে বিরোধী স্বতন্ত্র প্যানেল সুমা-মুনিরা প্যানেল ভোট বর্জন করে।
ভিপিপ্রার্থী নুরের উপর হামলা
রোকেয়া হলে শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভের খবর শুনে সেখানে গিয়ে ছাত্রলীগের সভাপতি রেজওয়ানুল হক চৌধুরী শোভন, সাধারণ সম্পাদক গোলাম রাব্বানীর উপস্থিতিতে নারী কর্মীদের হামলার শিকার হয়েছে ভিপি প্রার্থী নুরুল হক নুর। তালাবদ্ধ কক্ষে ৩টি ব্যালট বাক্স গোপন রাখা হয়েছে ছাত্রীদের এমন অভিযোগের ভিত্তিতে সেখানে উপস্থিত হন তিনি। এসময় প্রথমে বাধা দিলেও বিক্ষোভের মুখে নুরুল হক নুর, ছাত্রদল থেকে জিএস প্রার্থী আনিসুর রহমান খন্দকার অনিকসহ ছাত্রলীগের শীর্ষ দু’নেতা সেখানে ঢুকেন। কক্ষ থেকে বেরিয়ে এসে আনিসুর রহমান খন্দকার ওই কক্ষে রাখা বাক্স ঘুলোতে কেন সিলগালা করা হয়নি এমন অভিযোগ করলে সামনে উপস্থিত ছাত্রলীগ প্যানেল থেকে ভিপি-জিএস প্রার্থীসহ হল শাখা ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা চিৎকার চেঁচামেচি করে উঠে। এসময় নুর সাংবাদিকদের সাথে কথা বলতে চাইলে ছাত্রলীগের নারী কর্মীরা তাকে কিল, ঘুঁসি মারতে তাকেন এবং তার পাঞ্জাবি টেনে বারান্দার নিচে নামিয়ে দেন। এর একটু পরই নুর মাথা ঘুরিয়ে পড়ে গেলে তাকে সেখান থেকে উদ্ধার করে বাইরে নিয়ে আসা হয়।
কেন্দ্র ছিলো ছাত্রলীগের নিয়ন্ত্রণে
ভোট কেন্দ্রের ভিতরে হল প্রশাসন ও হাউজ টিউটররা ভোট গ্রহণ করলেও প্রবেশ পথ থেকে শুরু করে বাইরের লাইনগুলো ছিলো ছাত্রলীগের নিয়ন্ত্রণে। ফলে তারা নিজেদের কর্মী ও পরিচিত লোকজন ছাড়া আর কাউকে কেন্দ্রে প্রবেশ করতে দেয়নি। ছেলেদের হলগুলোর সবগুলোতেই ছিলো ভোটারদের কৃত্তিম দীর্ঘ লাইন। ৮টায় ভোটগ্রহণ শুরুর কথা থাকলেও ভোর ৬টা থেকেই কেন্দ্রের প্রবেশ পথ ও লাইনের নিয়ন্ত্রণ নেয় ছাত্রলীগ। বিশ্ববিদ্যালয়ের হাজী মুহম্মদ মুহসীন হল, মাস্টার’দা সূর্যসেন হল, বিজয় একাত্তর হল, মুক্তিযোদ্ধা জিয়াউর রহমান হল, জাতির জনক শেখ মুজিবর রহমান হল, কবি জসীমউদ্দীন থেকে শুরু করে সাইন্সের ছাত্রদের হলগুলোতেও ছিলো একই অবস্থা। ছাত্রলীগ নিয়ন্ত্রীত গণরুমে থাকা ১ম ও ২য় বর্ষের শিক্ষার্থীদের এসব লাইনে ভোর থেকে দাঁড় করিয়ে রাখা হয়। একবার ভোট দেয়া শেষ হয়ে যাওয়ার পর আবারও তাদের লাইনে দাঁড়াতে দেখা যায়। বিরোধী প্রার্থীদের দাবি ছাত্রলীগ দীর্ঘ লাইন করে রেখে বাইরের ভোটারদের সামনে আসতে দেয়নি। ফলে ভোট দিতে আসা অনেক শিক্ষার্থীকে দীর্ঘক্ষণ লাইনে দাঁড়ানোর পর ধৈয্য হারা হয়ে চলে যেতে দেখা যায়। বিশ্ববিদ্যালয়ের হাজী মুহম্মদ মুহসীন হলে সকাল থেকেই প্রবেশ মুখ ও লাইনের নিয়ন্ত্রর নেন হল শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি সরকার রায়হান জহির, সাধারণ সম্পাদক মেহেদী হাসান সানীসহ ছাত্রলীগ প্যানেল থেকে নির্বাচনে অংশ নেয়া প্রার্থীরা। ছাত্রলীগের বাধার মুখে শিক্ষার্থীরা কেন্দ্রে ডুকতে পারছেন না এমন সংবাদের ভিত্তিতে হল প্রশাসনের সাথে কথা বলতে কেন্দ্রে আসেন বাম ছাত্রজোট থেকে ভিপি প্রার্থী লিটন নন্দী। হল প্রভোস্ট প্রফেসর ড. মো. নিজামুল হক ভূঁইয়া ও হল রিটার্নিং অফিসার প্রফেসর ড. মো. আবুল কালাম আজাদের সাথে কথা বলতে লাগলে কেন্দ্রের ভিতরই গালিগালাজ করে তেড়ে আসেন হল শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক মেহেদী হাসান সানী। এসময় তিনি প্রায় ৫০জন নেতাকর্মী নিয়ে লিটন নন্দীকে ধাওয়া দেন। পরে এ ভিপি প্রার্থী প্রভোস্ট এর সহযোগিতায় হল থেকে বেরিয়ে আসেন। ভোট দিতে গিয়ে হামলার শিকার হন ছাত্রদলের সূর্যসেন হল শাখার যুগ্ম আহ্বায়ক শামীম আক্তার শুভ। বেলা ১২টার দিকে সূর্যসেন হলে ছাত্রলীগকর্মী শাহ আলম, তাকি ও রাতুলের নেতৃত্বে তার উপর হামলা চালানো হয়। পরে তাকে আহত অবস্থায় উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়েছে।
প্রধান রিটার্নিং কর্মকর্তাকে ঘেরাও
নির্বাচনের প্রধান রিটার্নিং কর্মকর্তা প্রফেসর এস এম মাহফুজুর রহমানকে ঘেরাও করার ঘটনা ঘটেছে। দুপুরে ভোট বর্জন করে শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ মিছিল চলাকালে রোকেয়া হলের সামনে এ ঘটনা ঘটে। এর কিছুক্ষণ আগে রোকেয়া হলে ভোট স্থগিতের খবর পেয়ে তিনি সেখানে যান। এসময় প্রার্থী ও সমর্থকরা তাকে ঘিরে পেলে। পরে সেখান থেকে রেজিস্টার বিল্ডিং এ নিয়ে আসা হয়।
নির্বাচন প্রশ্নবিদ্ধ করতে ষড়যন্ত্র হচ্ছে ঃ ছাত্রলীগ
এদিকে ভোট কারচুপি ও হামলার ঘটনা অস্বীকার করে ডাকসু নির্বাচনকে প্রশ্নবিদ্ধ করতে একটি স্বার্থান্বেষী মহল ষড়যন্ত্র করছে বলে মন্তব্য করেছেন ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সভাপতি ও ডাকসুতে ভিপি প্রার্থী রেজওয়ানুল হক চৌধুরী শোভন। বিকেলে মধুর ক্যান্টিনে ছাত্রলীগ আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ মন্তব্য করেন। শোভন বলেন, নির্বাচন সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ পরিবেশে অনুষ্ঠিত হয়েছে। রোকেয়া হলে কেন্দ্রের ভেতরে নুরুল হক নুর ও মুহসীন হলে লিটন নন্দীকে মারধরের ঘটনা ভিত্তিহীন। ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ও জিএস প্রার্থী গোলাম রাব্বানী বলেন, সুন্দর পরিবেশে বাম সংগঠনসহ ছাত্রদলের বিভিন্ন নেতারা যে তাণ্ডব চালিয়েছে তার নিন্দা জানাই। এসময় সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন ছাত্রলীগের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি সনজিত চন্দ্র দাস ও সাধারণ সম্পাদক সাদ্দাম হোসেন প্রমুখ।



 

Show all comments
  • নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ১২ মার্চ, ২০১৯, ১:২৯ এএম says : 0
    ইসি আর ভিসি প্রতিযোগীতা করছে কে কত বেশি সুষ্ঠু ভোট উপহার দিতে পারে
    Total Reply(0) Reply
  • Mohammed Yeakub ১২ মার্চ, ২০১৯, ১:২৯ এএম says : 0
    Chhatroleague is following the foot step of Awamileauge
    Total Reply(0) Reply
  • Ismail Hossain ১২ মার্চ, ২০১৯, ১:৩০ এএম says : 0
    ৫২,৬৯,৭১,৯০ মত আরেক ইতিহাস চাই ২০১৯ সালে তোমারই পারবে দেশটাকে বাঁচতে।
    Total Reply(0) Reply
  • MD Mamun Talukder ১২ মার্চ, ২০১৯, ১:৩০ এএম says : 0
    শেরে বাংলাকে নিয়ে অামরা বরিশালের মানুষ যতটা না গর্বিত , ইসি ও ভিসি এই দুজনকে নিয়ে ঠিক ততটাই লজ্জিত
    Total Reply(0) Reply
  • নবীন ১২ মার্চ, ২০১৯, ১:৩০ এএম says : 0
    বিএনপি জামাতের একটাই পথ কিভাবে মিথ্যা গুজব ছড়িয়ে সরকারের দুর্নাম করা যায় কারন বাংলাদেশের মানুষ হাড়ে হাড়ে টের পেয়েগেছে তারা বোমাবাজি আর এতিমের হক লুট করে দেশের মানুষের সর্বস লুট করে বিদেশে বসে বসে যুগের পর যুগ পার করবে কাজকর্ম না করে আর বাংলাদেশের মানুষের বিরুদ্ধে ষরযন্ত্র করবে।
    Total Reply(0) Reply
  • khokon ১২ মার্চ, ২০১৯, ১:৩১ এএম says : 0
    আওয়ামি লীগ বিশ্বে নতুন নির্বাচন পদ্দতির আবিষ্কারক। "মিডনাইট ইলেকশন (সিলেকশন )" বর্তমান সরকারকে পুরস্কার দেয়া হোক।
    Total Reply(0) Reply
  • Muhammad Rahman ১২ মার্চ, ২০১৯, ১:৩১ এএম says : 0
    Long time no election this time nobody crying..Now give election again some body crying..Why?????!!!!
    Total Reply(0) Reply
  • Nayem Nil ১২ মার্চ, ২০১৯, ১:৩১ এএম says : 0
    আওয়ামী লীগের সবচেয়ে বড় গুণ... লজ্জা কখনো এদেরকে স্পর্শ করতে পারেনা..!!
    Total Reply(0) Reply
  • নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ১২ মার্চ, ২০১৯, ১:৩২ এএম says : 0
    ডাকসু হারলে কি সরকারের গদি চলে যেত???!!!! এই নির্বাচনটা জাতির ভবিষ্যৎের স্বার্থেই সুস্ঠ করা উচিত ছিল জিয়া, এরসাদের সামরিক সরকারও ডাকসু নির্বাচনে হস্তক্ষেপ করেনি, এরা নাম বাকশালি গনতন্ত্রী!! আমরা আর মামুরাই জিতবো!!
    Total Reply(0) Reply
  • কৌশিক শুভ্র ১২ মার্চ, ২০১৯, ১:৩২ এএম says : 0
    নির্বাচন নিয়ে আলোচনা শুরুর পর থেকে ভিসির আচরণ কথা বার্তা এবং শুধু ছাত্রলীগের পছন্দের উপরে অবিচল দাঁড়িয়ে থাকা ভিসির কাছ থেকে প্রকৃতপক্ষে আমরা কি এর চেয়ে বেশি কিছু আসলেই আশা করেছিলাম?
    Total Reply(0) Reply
  • Salauddin Skdr ১২ মার্চ, ২০১৯, ১:৩২ এএম says : 0
    কাল থেকে শুরু হবে পাতানু ডাকসু নির্বাচন ধামাচাপা দিয়ার প্লেন
    Total Reply(0) Reply
  • Anower Hossan ১২ মার্চ, ২০১৯, ১:৩৩ এএম says : 0
    আওয়ামী পোষা প্রাণীগুলোর থেকে এরচেয়ে বেশী কিছু আশাকরা আর হিজরার কাছে সন্তান আশা করা একই কথা ।
    Total Reply(0) Reply
  • Akter Uz Jaman Babu ১২ মার্চ, ২০১৯, ১:৩৩ এএম says : 0
    সবই ঠিক আছে তবে নুরু ভাইকে মাড়ার ভিডিও টা দেখে নিজের অজান্তেই চোখের পানি চলে আসছে, প্রথমে চাপাতি দিয়ে কুপালো,পরে মেশিন গান দিয়ে বুকে ছয় রাউন গুলি করে,চারদিক থেকে বৃষ্টির মতো মারছিল উনাকে, তাও কিছুই হয়নি এই বীরের, সবশেষে এক মেয়ে আর সাংবাদিকের সাথে ধাক্কা খেয়ে অজ্ঞান হয়ে পড়েন এই বীর। খুজে ভিডিওটা দেখে নিতে পারেন।
    Total Reply(0) Reply
  • Mostafiz Mohammad ১২ মার্চ, ২০১৯, ১:৩৪ এএম says : 0
    লোক দেখানো এই মার্কা নির্বাচন করার দরকার ছিল কি। এমনিতেই ক্ষমতাসীন দলের লোকদের বিজয়ী ঘোষনা করলেই কি কারো কিছু করার ছিল।
    Total Reply(0) Reply
  • Mir Md Mofazzal Hossain ১২ মার্চ, ২০১৯, ১:৩৪ এএম says : 0
    ডাকসু নির্বাচনকে বিতর্কিত করার সকল আয়োজন করেই নির্বাচনে অংশ নিয়েছে বিরোধীরা। তারা জানে কোন ভাবেই নির্বাচনে জিততে পারবেনা।
    Total Reply(0) Reply
  • Dipu Zaman ১২ মার্চ, ২০১৯, ১:৩৫ এএম says : 0
    আমি একটা জিনিস বুঝিনা, যেখানে ছাত্রলীগ আছে সেখানে ভোটাভুটির দরকার-টা কি? টাকা, সময়, শ্রম সব নষ্ট। কবে যে মাথায় বুদ্ধি হবে এদের।
    Total Reply(0) Reply
  • নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ১২ মার্চ, ২০১৯, ১:৩৫ এএম says : 0
    আমি ডাকসুর একজন দলনিরপেক্ষ ভোটার ছিলাম। ভোটের প্রথম থেকেই বেশ কয়েকটা বিষয় লক্ষ্য করেছিঃ ১.প্রচার প্রচারণা আগেই শেষ হলেও ভোটারদের লাইনে প্রার্থী অথবা সমর্থকেরা প্রচারনা চালিয়েছে যাদের প্রায় সবাই ছাত্রলীগের। ২. ঘন্টার পর ঘন্টা দাঁড়িয়ে থেকেও লাইন খুবই অস্বাভাবিক স্থিরভাবে আগাচ্ছিল। ৩.লাইনের একদম শুরুতে ছাত্রলীগের কর্মীদের অতিরিক্ত জটলা ছিল ৪. ভোটকক্ষের ভিতরে ছাত্রলীগের সদস্যরা ছিল যারা ব্যালট বাক্সের পাশেও দাঁড়িয়ে ছিল। পুরো ব্যাপারগুলো আমার কাছে নিরপেক্ষ নির্বাচনের পরিপন্থী বলে মনে হয়েছে। এটা ছিল জহুরুল হক হলের চিত্র। এখানেই শুধুমাত্র আমার জানা মতে শান্তিপূর্ণ হয়েছে। অন্যান্য হলের অবস্থা ছিল আরো খারাপ। মেয়েদের হল গুলো তো বলাই বাহুল্য
    Total Reply(0) Reply
  • নাম প্রকাশে অনিচ্ছুকmorshed ১২ মার্চ, ২০১৯, ১:৩৬ এএম says : 0
    ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রসংসদ নির্বাচনে হলে হলে ভোটারের ডামি লাইন তৈরী করে রাখা হয়েছে। শিক্ষার্থীদের ভোট দেয়া ঠেকাতে ক্ষমতাসীন দলের ছাত্রসংগঠন ছাত্রলীগ এই পরিস্থিতির সৃষ্টি করে রেখেছে বলে অভিযোগ করেছেন সাধারণ শিক্ষার্থী
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ডাকসু

৩ নভেম্বর, ২০২১
১৪ মার্চ, ২০২০
২৯ ডিসেম্বর, ২০১৯

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ