Inqilab Logo

শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

নারী-পুরুষ সমতা অর্জনে সব বাধা ভাঙবোই প্রধানমন্ত্রী

‘বিএনপি-জামায়াত ইসলামের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রে লিপ্ত’

প্রকাশের সময় : ১৯ মে, ২০১৬, ১২:০০ এএম | আপডেট : ১:২৬ এএম, ১৯ মে, ২০১৬

ইনকিলাব ডেস্ক ঃ উন্নত-সমৃদ্ধ জাতি গঠনে নারী-পুরষের সমতা অর্জনে সব বাধা ভাঙার দৃঢ় প্রত্যয় পুনর্ব্যক্ত করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেছেন, নারী-পুরুষে সমতা অর্জনে সব বাধা ভাঙতে আমি দৃঢ় প্রতিজ্ঞ। আমাদের সরকার এ লক্ষ্যে ‘জাতীয় নারী উন্নয়ন নীতির মতো একটি যুগান্তকারী ও সুদূরপ্রসারী পদক্ষেপ নিয়েছে। এ নীতি নারীদের সমান সুযোগ ও অধিকার নিশ্চিত করছে। এতে নারীর শিক্ষা, অর্থনৈতিক ও সামাজিক আত্মনির্ভরশীলতাকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকারও দেওয়া হয়েছে।
গতকাল বুধবার স্থানীয় সময় বিকেলে বুলগেরিয়ার রাজধানী সোফিয়ায় ‘গ্লোবাল উইমেন লিডার্স ফোরামে’ ভাষণ দিচ্ছিলেন প্রধানমন্ত্রী। ফোরামের আয়োজন করে জাতিসংঘের শিক্ষা, বিজ্ঞান ও সংস্কৃতি সংস্থা ইউনেস্কো এবং উইমেন বিজনেস ফোরাম অব বুলগেরিয়া। প্রধানমন্ত্রী বলেন, নারীর ক্ষমতায়নের বিষয়টি আমার হৃদয়ের গভীরে প্রোথিত। লিঙ্গ সমতা ও নারীর ক্ষমতায়নে আমি এই দৃঢ় প্রত্যয় আমার বাবা বাংলাদেশের
প্রতিষ্ঠাতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কাছ থেকে নিয়েছি। শেখ হাসিনা বলেন, জাতির স্বাধীনতা অর্জনে নেতৃত্ব দেওয়া বঙ্গবন্ধু উন্নত-সমৃদ্ধ সোনার বাংলা গড়তে চেয়েছিলেন, যেখানে জাতি গঠনে নারীরা পুরুষের সঙ্গে সমানভাবে অবদান রাখবে। তিনি বুঝতে পেরেছিলেন, যদি আমরা নারীদের পিছিয়ে রাখি, তবে আমাদের উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জন সম্ভব হবে না। কারণ এই নারীই যে আমাদের জনসংখ্যার অর্ধেক।
বঙ্গবন্ধুর কাছ থেকে অনুপ্রেরণা নিয়েই বাংলাদেশ সরকার সবক্ষেত্রে লিঙ্গ সমতাকে সর্বাচ্চ অগ্রাধিকার দিচ্ছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের নারীবান্ধব উন্নয়ন কৌশল সেই ফলও দিচ্ছে। যার স্বীকৃতিও বিশ্ব সম্প্রদায় দিচ্ছে আমাদের। গত বছর নিউইয়র্কে সরকারের টেকসই উন্নয়ন এজেন্ডা ২০৩০ গ্রহণের কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এই নতুন উন্নয়ন এজেন্ডায় লিঙ্গ সমতা ও নারীর ক্ষমতায়নের উপর জোর দেওয়া হয়েছে। এখানে রয়েছে আমাদের নারী ও মেয়েদের জীবনে ইতিবাচক পরিবর্তন আনার লক্ষ্যে বেশ কিছু নির্দিষ্ট লক্ষ্যমাত্রাও।
শেখ হাসিনা বলেন, এই সুযোগ আমাদের লুফে নেওয়া উচিত। আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি, আমরা যে উচ্চাকাক্সক্ষী লক্ষ্য নির্ধারণ করেছি, তা জাতীয় ও আন্তর্জাতিক ঐক্যবদ্ধ প্রচেষ্টার মাধ্যমে অর্জন করতে পারবোই। বিশ্বকে নারীর নিরাপদ আবাস হিসেবে গড়ে তুলতে প্রধানমন্ত্রী সবার প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেন, নারী ও মেয়েদের জন্য নিরাপদ পরিবেশ গড়তে, তাদের শিক্ষা ও সঠিক দক্ষতায় গড়ে তুলতে এবং ক্ষমতায়নের মাধ্যমে তাদের সামাজিক পরিবর্তনের কর্মী বানিয়ে তুলতে আমাদের একসঙ্গে কাজ করতে হবে। আর এটা অর্জনে আমাদের প্রয়োজন আন্তরিক প্রত্যয় ও দক্ষ নেতৃত্ব।
শেখ হাসিনা বলেন, নারীর ক্ষমতায়ন ও তাদের এগিয়ে নিতে আমি আমার কাজ চালিয়ে যাওয়ার প্রতিজ্ঞা পুনর্ব্যক্ত করছি এবং আমি আশা করি বিশ্ব নারী নেতৃত্বের অংশীদার হিসেবে তা চালিয়ে যেতে পারবো। বিশ্ব নেতৃত্বের প্রতি আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, চলুন বিশ্বকে সবার জন্য, নারীর জন্য সুন্দর আবাস হিসেবে গড়ে তুলতে আজ আমরা নিজেদের অঙ্গীকার শানিত করি। এমন আবাস গড়ে তোলার অঙ্গীকার করি, যেখানে আমরা নির্ভয়ে মর্যাদা নিয়ে বসবাস করতে পারি। আমরা এটা পারবোই। অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখেন বুলগেরিয়ার প্রেসিডেন্ট রোজেন প্লেভনেলিয়েভ, ইউনেস্কোর মহাপরিচালক ইনিরা বোকোভা, বুলগেরিয়ার জাতীয় সংসদের সভাপতি সেসকা সাচিভা দানগোভস্কা, উপ-প্রধানমন্ত্রী এবং শ্রম ও সামাজিক নীতি-বিষয়ক মন্ত্রী আইভায়লো কালফিন, জ্বালানি মন্ত্রী ইমিনুজকা পিকোভা, আঞ্চলিক উন্নয়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রী লিলিয়ানা পাভলোভা, কাউন্সিল অব ওমেন ইন বিজনেসের সভাপতি বোরিয়ানা মানোলোভা।
বিএনপি-জামায়াত ইসলামের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রে লিপ্ত
এর আগে লন্ডনে যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগের সভায় বক্তৃতায় সরকার উৎখাতে বিএনপি-জামায়াতে ইসলামী জোট এখন ইসলাম ধর্মের বিরুদ্ধে ‘ষড়যন্ত্র’ শুরু করেছে বলে অভিযোগ করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। মঙ্গলবার রাতে লন্ডনে দলীয় এক সমাবেশে তিনি বলেন, ‘এই চক্রান্তকারী, খুনি, ষড়যন্ত্রকারী-আজকে তারা বাংলাদেশের বিরুদ্ধে এমনকি আমি বলব, ইসলাম ধর্মের বিরুদ্ধে চক্রান্ত শুরু করে দিয়েছে।’
ইসরায়েলের ক্ষমতাসীন লিকুদ পার্টির এক রাজনীতিকের সঙ্গে বৈঠকের সূত্র ধরে বিএনপি নেতা আসলাম চৌধুরীকে সম্প্রতি গ্রেপ্তার করা হয়েছে। আওয়ামী লীগ সরকারকে উৎখাতে ইসরায়েলের গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদের সঙ্গে তিনি ষড়যন্ত্র করছিলেন বলে অভিযোগ আনা হয়েছে। এ বিষয়ের দিকে ইঙ্গিত করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘কাদের সাথে হাত মিলাচ্ছে? শুধু আমাকে সরানোর জন্য তারা এতো দূর গেছে।’ দখলদার ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর হাতে ফিলিস্তিনি নারী-শিশু হত্যার কথা উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘যারা অন্তঃসত্ত্বা নারীদের পর্যন্ত হত্যা করল, হাজার হাজার শিশুদের হত্যা করল...ভবিষ্যতে এই শিশু যেন তাদের অধিকার নিয়ে লড়াই করতে না পারে। ‘যারা এই ভাবে খুন করল, আর তাদের সাথে হাত মিলাচ্ছে, সরকার উৎখাত করার জন্য ক্ষমতা থেকে হটানোর জন্য।’ বাংলাদেশে সাম্প্রতিক গুপ্তহত্যার জন্যও বিএনপিকে দায়ী করেন আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা। ‘আন্দোলনের নামে মানুষ পুড়িয়ে হত্যা করেছে। আজ পর্যন্ত জাতির কাছে ক্ষমাও চাননি। এখন গুপ্ত হত্যায় নেমে গেছে,’ বিএনপি জোটের অবরোধে সহিংসতায় প্রাণহানির প্রসঙ্গে বলেন তিনি।
শেখ হাসিনার ‘স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস’ উপলক্ষে মঙ্গলবার রাতে লন্ডনে যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগ আয়োজিত সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্য দেন শেখ হাসিনা। বুলগেরিয়ায় অনুষ্ঠেয় ওয়ার্ল্ড উইমেন লিডারস ফোরামে যোগ দিতে ঢাকা ছেড়ে যাওয়া প্রধানমন্ত্রী দুই দিন লন্ডনে কাটান।
বিএনপি নেতাদের বিরুদ্ধে দুর্নীতি ও হত্যার অভিযোগ তুলে তিনি বলেন, ‘ক্ষমতায় থেকে লুটপাট করে খেয়েছে, দুর্নীতি করেছে, মানি লন্ডারিং করেছে, মানুষ হত্যা করেছে। আর এখনও তাদের চরিত্র এতটুকু পরিবর্তন হয় নাই।’ যুদ্ধাপরাধে বিএনপি ও জামায়াতের কয়েকজন নেতার ফাঁসি কার্যকরের কথা উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘যেহেতু ওই পরাজিত শক্তি, যুদ্ধাপরাধীদের বিচার হচ্ছে, একের পর এক বিচারের রায় কার্যকর হচ্ছে- এটা তাদের ভালো লাগে না। ‘কারণ যাদের হাতে আমাদের লাখো শহীদের রক্তে রঞ্জিত পতাকা তুলে দিয়েছিল, তারা যুদ্ধাপরাধী হিসাবে সাজাপ্রাপ্ত। আর সেই সাজাও আমরা কার্যকর করেছি।’
একাত্তরের মানবতাবিরোধী অপরাধে এখন পর্যন্ত জামায়াতে ইসলামির আমির মতিউর রহমন নিজামী, সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মুজাহিদ, সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মো. কামারুজ্জামান ও কাদের মোল্লা এবং বিএনপি নেতা সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরীর ফাঁসি কার্যকর হয়েছে। জামায়াত নেতাদের মন্ত্রিসভার সদস্য করায় বিএনপি নেতৃত্বকেও বিচারের মুখোমুখি হতে হবে বলে মন্তব্য করেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘যারা ওই পতাকা যুদ্ধাপরাধীদের হাতে তুলে দিয়েছে, তাদেরও বিচার হবে বাংলাদেশে। কারণ তারা সমান দোষে দোষী। তারা আবার মুখ উঁচু করে কথা বলে কীভাবে? জাতির ঘৃণা তাদের উপর হওয়া উচিত। ‘আমি তো দেশবাসীকে বলব, অন্তত যারা স্বাধীনতায় বিশ্বাস করেন, তাদের ঘৃণা যেন এরা উপলব্ধি করতে পারে।’
বিএনপি-জামায়াত নেতৃত্বাধীন চারদলীয় জোট ২০০১ সালে সরকার গঠনের পর নিজামী ও মুজাহিদকে মন্ত্রিসভায় রেখেছিলেন তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া। বঙ্গবন্ধু হত্যাকা-ের পর ভারতে নির্বাসিত জীবন শেষে ১৯৮১ সালের ১৭ মে দেশে ফিরে আসার স্মৃতিও বক্তব্যে উল্লেখ করেন শেখ হাসিনা। ১৯৭৫ সালের ১৫ অগাস্ট দেশের বাইরে অবস্থান করায় প্রাণে বেঁচে যান বঙ্গবন্ধুর দুই মেয়ে শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা। ১৯৮১ সালে আওয়ামী লীগের ত্রিবার্ষিক সম্মেলনে শেখ হাসিনাকে আওয়ামী লীগের সভাপতি নির্বাচন করা হয়।
ওই সময়ের স্মৃতিচারণ করে তিনি বলেন, ‘রেহানার ছেলে ববির জন্মের পর আমি আবার ফিরে যাই দিল্লিতে। আমি সেই সময় জানতাম না, আমার অবর্তমানে আমাকে আওয়ামী লীগের প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত করা হয় ’৮১ সালের কাউন্সিলে। ‘আমি জানতাম না- দেশে ফিরে যাব, কোথায় যাব, কোথায় থাকব, কীভাবে চলব, কী করব? কিচ্ছু চিন্তা করিনি।’
১৯৮১ সালের ১৭ মে’র কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘যেদিন আমি দেশে ফিরে যাই সেদিনটা ছিল অত্যন্ত দুর্যোগপূর্ণ একটি দিন। আমি ঝড়-বৃষ্টি মাথায় নিয়েই বাংলাদেশে নেমেছিলাম।’
প্রতিকূল আবহাওয়ার মধ্যে ১৭ মে বিকালে তেজগাঁও বিমানবন্দরে অবতরণ করে শেখ হাসিনাকে বহনকারী উড়োজাহাজ। আওয়ামী লীগের হাজার হাজার নেতাকর্মী রাজধানীর পুরনো ওই বিমানবন্দরের টারমার্কে গিয়ে তাদের সভানেত্রীকে উড়োজাহাজ থেকে নামিয়ে আনে। শেখ হাসিনা বলেন, ‘মনে হচ্ছিল, প্রকৃতিই যেন আমার সাথে একাকার হয়ে গিয়েছিল।
‘৩০ জুলাই ’৭৫ সালে যখন বাংলার মাটি ছাড়ি, তখন তো আমার সবাই ছিল। মা, বাবা, ভাই, তাদের তো রেখেই এসেছিলাম। কামাল, জামাল, রাসেল, আমার ছোট ভাইয়ের বউরা এয়ারপোর্টে এসেছিল আমাকে বিদায় জানাতে। ‘’৮১ সালে যেদিন আমি ফিরে যাই, সেদিন কিন্তু আমার আপন চেনা মুখগুলো পাইনি। তাদের আর আমি দেখতে পারিনি। বিনিময়ে দেখেছিলাম বনানী কবরস্থানে ওই সারি সারি কবর।’
দলের নেতাকর্মী ও সমর্থকদের ‘ভালোবাসার’ কথা তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, ‘কিন্তু আমি পেয়েছিলাম লাখো মানুষ। আমি ভাবতে পারিনি, এতো মানুষ আসবে। তারা কোনো নিয়ম মানেনি। প্লেন যখন নেমেছিল, হাজার হাজার মানুষ কিন্তু ছুটে এসেছিল। ‘প্লেনের সিঁড়িও লাগাতে পারেনি। আমার জীবনের এটা একটা অদ্ভূত অভিজ্ঞতা। তখন একটা ট্রাক নিয়ে আসা হল। প্লেনের সাথে একটা মই দিয়ে দেওয়া হলো। ওই মইটা পার হয়েই আমি ট্রাকে চড়ে আসলাম।’ জনতার ভিড়ে ওই বিমানবন্দর থেকে মানিক মিয়া এভিনিউয়ে পৌঁছাতে চার ঘণ্টা লেগে যায় বলেও জানান তিনি।



 

Show all comments
  • Faruk ১৯ মে, ২০১৬, ১:৫০ পিএম says : 0
    Thanks to PM
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: নারী-পুরুষ সমতা অর্জনে সব বাধা ভাঙবোই প্রধানমন্ত্রী
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ