Inqilab Logo

শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

ভোটার আস্থাহীনে ৫ কারণ

নির্বাচন বিশ্লেষকদের অভিমত

রফিক মুহাম্মদ | প্রকাশের সময় : ২৩ মার্চ, ২০১৯, ১২:০৫ এএম

উপজেলা নির্বাচনের প্রতি ভোটারদের অনীহা দিন দিন বাড়ছে। এ নিয়ে সরকার ও নির্বাচন কমিশন এক ধরনের অস্বস্তিতে পড়েছে। নির্বাচনের প্রতি ভোটারদের এই আস্থাহীনতা বিশেষজ্ঞদেরও ভাবনায় ফেলেছে।
বাংলাদেশে নির্বাচন মানে উৎসব। তফসিল ঘোষণার পর থেকে নির্বাচনকে ঘিরে প্রার্থী-সমর্থক ও ভোটারদের মধ্যে এক ধরনের উৎসাহ-উদ্দীপনা এমনকি উত্তেজনারও সৃষ্টি হয়। নির্বাচনের দিন সকাল থেকে ভোটকেন্দ্রে থাকে ভোটারদের উপচে পড়া ভিড়। তবে ভোটের এই চিরায়ত রূপ সদ্যসমাপ্ত ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন এবং উপজেলা নির্বাচনের প্রথম দুই ধাপে একেবারেই দেখা যায়নি। এসব নির্বাচনে সারা দিন ভোটকেন্দ্র ছিল ভোটারশূন্য। নির্বাচন কর্মকর্তারা ভোটারের প্রতীক্ষায় কেন্দ্রে বসে ঝিমিয়ে সময় পার করেছেন।
উপজেলা নির্বাচনের প্রতি ভোটারদের এই অনীহার কারণ কী? নির্বাচন বিশেষজ্ঞ ও বিশ্লেষকদের কাছে এ বিষয়ে জানতে চাইলে তারা ভোটের প্রতি ভোটারদের এই আস্থাহীনতার জন্য প্রধানত ৫টি কারণ উল্লেখ করেছেন। এ পাঁচটি কারণের মধ্যে প্রধান ও প্রথম হচ্ছে, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নিজের ভোট দিতে না পারা। দ্বিতীয়টি হচ্ছে, যথাযথ দায়িত্ব পালনে নির্বাচন কমিশনের ব্যর্থতা। তৃতীয়, প্রশাসনের পক্ষপাতমূলক আচরণে ভোটাররা হতাশ। চতুর্থ, বিএনপির ভোট বর্জন করায় শক্ত কোনো প্রতিপক্ষ নেই। কে জয়ী হবেন, তা আগেই বুঝে যাওয়ায় ভোটার কেন্দ্রে যাচ্ছে না। আর পঞ্চম কারণ হচ্ছে, ভোট না দিলেও গণনায় অনেক ভোট দেখানোতে ভোটাররা আগ্রহ হারাচ্ছে।
এ বিষয়ে সাবেক নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) এম সাখাওয়াত হোসেন বলেন, ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত নির্বাচনে জনগণ তাদের ভোট দিতে পারেনি এমন অভিযোগ রয়েছে। ওই নির্বাচনে নিজের ভোট দিতে না পারায় এখন ভোটের প্রতি আগ্রহ হারিয়ে ফেলেছে। বলা যায়, জাতীয় নির্বাচনের প্রভাব এর পরের সব নির্বাচনে পড়েছে। নির্বাচন কমিশন থেকে যত যা-ই বলা হোক না কেন, নির্বাচনগুলোতে ভোটারের উপস্থিতি ধারাবাহিকভাবে কমছে। এ ছাড়া, উপজেলা নির্বাচনে বিএনপিসহ অনেক রাজনৈতিক দল অংশগ্রহণ করেনি। ফলে নির্বাচনে তেমন কোনো প্রতিদ্ব›িদ্বতা নেই। আওয়ামী লীগের প্রার্থীদের মধ্যে ইতোমধ্যে প্রায় এক-তৃতীয়াংশ চেয়ারম্যান বিনা প্রতিদ্ব›িদ্বতায় নির্বাচিত হয়েছেন। বাকি উপজেলাগুলোতেও সরকারদলীয় প্রার্থী জয়ী হবেন, এমন ধারণা সবার মনে। এসব কারণে ভোটাররা ভোট দেয়ার আগ্রহ হারিয়ে ফেলেছে।
সাবেক নির্বাচন কমিশনার মো. শাহনেওয়াজ বলেন, যখন নির্বাচনে বড় দল আসে না এবং বিভিন্ন পদে যারা দাঁড়িয়েছেন, তাদের মধ্যেই কেউ জিতবেন বলে বিষয়টি স্পষ্ট হয়ে যায়, তখন ভোটাররা উৎসাহ হারিয়ে ফেলেন। এ ছাড়া ভোটের পরিবেশ, প্রশাসনের ভূমিকা এসবও ভোটারদের কাছে অনেক গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। সাম্প্রতিক অভিজ্ঞতার আলোকে ভোটাররা এখন কতটা সুন্দর ও সুষ্ঠু পরিবেশে ভোট দিতে পারবেন, সেটি নিয়ে সন্দিহান হয়ে আছেন। ফলে তারা কেন্দ্রে যান না।
বিশিষ্ট নির্বাচন বিশ্লেষক সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার বলেন, নির্বাচনী ব্যবস্থা ভেঙে পড়ার কারণে গণতন্ত্রও খাদের কিনারায় এসে দাঁড়িয়েছে। ভোট ও নির্বাচন ব্যবস্থার ওপর মানুষের আস্থা কমে গেছে। কারণ, ভোট এখন আর মানুষকে দিতে হয় না। নির্বাচনের পুরো বিষয়েই কারসাজি বিদ্যমান। প্রশাসন নিয়ন্ত্রিত কারসাজিপূর্ণ নির্বাচন প্রক্রিয়ার কারণে মানুষ ভোটের ওপর আস্থা হারিয়েছে। ভোটাররা দেখছে তারা ভোট না দিলেও দিন শেষে প্রচুর ভোট গণনা করা হচ্ছে। এসব কারণে ভোট নিয়ে মানুষের মনে অনীহা সৃষ্টি হয়েছে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের সাবেক অধ্যাপক আতাউর রহমান বলেন, প্রতিদ্ব›িদ্বতাহীন ভোটের প্রতি জনগণ আস্থা হারিয়েছে। একদলের আধিপত্য এবং নির্বাচন কমিশনের প্রশ্নবিদ্ধ ভূমিকার ফলে তাদের প্রতি জনগণের আস্থাহীনতা তৈরি হয়েছে। বিশেষ করে প্রশাসনের ভূমিকা ও নির্বাচন কমিশনের ব্যর্থতা ভোটারদের হতাশ করেছে।
প্রধান নির্বাচন কমিশনার তাদের প্রতি ভোটারদের আস্থা নেই, এমন অভিযোগ মানতে নারাজ। একটি বড় রাজনৈতিক দল বিএনপি নির্বাচন বর্জন করায় ভোটার উপস্থিতি কম হচ্ছে বলে তিনি মনে করেন।



 

Show all comments
  • Emdad Haque ২৩ মার্চ, ২০১৯, ১:২৬ এএম says : 0
    ভোটারেরা জানে তারা ভোট না দিলেও সাংবিধানিক ভাবে ভোট হয়ে যায়। যেহেতু সংবিধান আছে তাই কস্ট করে ভোট দিতে যাওয়ার বিড়ম্বনাকে এড়িয়ে চলছে।
    Total Reply(0) Reply
  • Mahfuj Patwary ২৩ মার্চ, ২০১৯, ১:২৬ এএম says : 0
    স্বৈরাচার সরকারকে দেশের মানুষ বিশ্বাস করে না, তাই এ সরকারের অধীনে কোন নির্বাচনে জনগন ভোট দিবে না।
    Total Reply(0) Reply
  • নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ২৩ মার্চ, ২০১৯, ১:২৭ এএম says : 0
    যত যাই বলুন না কেন-একটা শুষ্ঠু নির্বাচন এবং ব্যাপক ভোটার উপস্থিতির জন্য সরকারের সদিচ্ছা ছাড়া কোন ক্রমেই সম্ভব না। আর বর্তমান অথর্ব সিইসিতো বলেই দিয়েছে ভোটার উপস্থিতি তাদের কাজ না । তাহলে কাজটা কার ? তাদেরই বা কাজ কি ? একটা স্বাধীন দেশের জনগণ স্বাধীন ভাবে ভোট দিয়ে তাদের নেতা নির্বাচন করতে পাবে না, এটাই বর্তমান বাস্তবতা । কেউ কি বলবেন এই দেশ এবং দেশের জনগণ কোন অর্থে স্বাধীন ??? -আসলে এ দেশটা স্বাধীন হয়েছে শুধু একটা ব্যাক্তি বা তার পরিবারকে পূজা করার জন্য । তাদের কোন অন্যায়ই অন্যায় না --------------- ।
    Total Reply(0) Reply
  • নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ২৩ মার্চ, ২০১৯, ১:২৭ এএম says : 0
    খোদ প্রধান নির্বাচন কমিশনার এবং একজন কমিশনার যে উক্তি করেছেন, তাতে কার্যত আগের রাতে বুথ দখল ও জাল ভোটের অভিযোগের কথাই স্বীকার করে নিয়েছেন তাঁরা।
    Total Reply(0) Reply
  • নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ২৩ মার্চ, ২০১৯, ১:২৮ এএম says : 0
    ২০০৮-এর মত আর একটি তত্ত্বাবধায়ক সরকার অধীনেই জাতীয় সংসদ নির্বাচন করা উচিত হয়ে পরেছে। সম্পন্ন নির্বাচন ব্যবস্থাপনা ধংস করে হয়েছে
    Total Reply(0) Reply
  • RubelBD ২৩ মার্চ, ২০১৯, ১:২৮ এএম says : 0
    যেখানে দাওয়াত দেওয়া হবে ঠিকই কিন্তু গিয়ে দেখবেন মেহমানদের খাবার খাবে কতিপয় ....আবার খাবার চাইলে জিবনের শংকা আছে এমন দাওয়াতে যাওয়ার মত লোক ২০১৯ সালে শুধু বাংলাদেশে কেন উগান্ডা,ভানুয়াতু, হনুলুলু র মতো দেশে ও পাবেন না ।
    Total Reply(0) Reply
  • Ariful islam ২৩ মার্চ, ২০১৯, ১:২৮ এএম says : 0
    , ব্যাপক কারচুপির কারণে ভোটের ফলাফল উল্টিয়ে দেওয়া
    Total Reply(0) Reply
  • NAhmed ২৩ মার্চ, ২০১৯, ১:২৮ এএম says : 0
    সম্ভবত এদেশে আর কখনো উৎসবমুখর নির্বাচন হতে দেখা যাবে না. পুরো নির্বাচনী ব্যবস্থাকেই মনের মাধুরী মিশিয়ে পাল্টে ফেলা হয়েছে শাসকদলের সুবিধার্থে।আর এতে সাহায্য করেছে নির্বাচন কমিশন।
    Total Reply(0) Reply
  • নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ২৩ মার্চ, ২০১৯, ১:২৮ এএম says : 0
    কেনো, .... আস্থা তৈরি হয়ে গেছে, এতেই চলবে। স্বৈরতন্ত্রের গণতন্ত্রে এর চেয়ে বেশি কিছু আশা করা অন্যায়।
    Total Reply(0) Reply
  • Z.Rahman ২৩ মার্চ, ২০১৯, ১:২৯ এএম says : 0
    নির্বাচনহীনতার যে এক ব্যাপক কুফল আছে সেটা রাজনীতিবিদেরা অনুভব করছে না। একসময় যদি আবার কেউ ক্ষমতা দখল করে তখন আর সাধারণ জনতা মাঠে নামবে না নির্বাচন চাইবে না যেমনটা ৯০ এর দশকে আর ১/১১ পরে চেয়েছিলো।
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: উপজেলা পরিষদ নির্বাচন


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ