Inqilab Logo

শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৭ বৈশাখ ১৪৩১, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

‘আবার আসবে বাংলাদেশ’ আশা নিউজিল্যান্ডের

ইমরান মাহমুদ | প্রকাশের সময় : ২৩ মার্চ, ২০১৯, ১২:০৪ এএম

হিংসাকবলিত পৃথিবীতে এই একটা দেশই হয়তো বাকি ছিল, যেখানে এত দিন সেই অর্থে সন্ত্রাসের কালো ছায়া পড়েনি। শান্তির এক দেশ। যুদ্ধ-বিগ্রহের মাঝেও বিশ্বে এক টুকরো শন্তির প্রতীক হিসেবে টিকে ছিল নিউজিল্যান্ড। মাত্র এক সপ্তাহের ব্যবধানে বদলে গেছে কতকিছু। আগের শুক্রবার দুই মসজিদে সাদা সন্ত্রাসীর সশস্ত্র হামলায় শহীদ হয়েছেন ৫ বাংলাদেশিসহ ৫১ জন মুসল্লি। সেই ন্যাক্কারাজনক ঘটনার পর আমূলে পাল্টে গেছে কিউইদের জীবনযাত্রা। পাল্টে গেছে মুসলিমদের প্রতি তাদের দৃষ্টিভঙ্গিও। গতকাল গেছে আরেকটি শুক্রবার।

আগে যেখানে গোটা নিউজিল্যান্ডে খুঁজলে হাতেগোনা কয়েকটি মসজিদে জুম্মার খুৎবা শোনা যেতো, সেখানে গতকাল দেশটির প্রায় সবক’টি মসজিদেই আলাদা মাইক লাগিয়ে দেয়া হয়েছে খুৎবা! শুধু তাই নয়, অন্যান্য দিনের তুলনায় উপস্থিতিও ছিল চোখে পড়ার মত। ক্রাইস্টচার্চের যে’দুটি মসজিদে হামলার ঘটনাটি ঘটে তার একটি যেখানে অল্পের জন্য প্রাণে বেঁচে গিয়েছিলেন বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের সদস্যরা হ্যাগলি ওভালের সেই নূর জামে মসজিদের খুৎবাসহ নামাজ তো সরাসরি প্রচার হয়েছে নিউজিল্যান্ডের রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনেও!

শুধু মুসলিমরাই নয়, ভাতৃত্ব আর মানবতার টানে পাঞ্জাবী, টুপি আর হিজাব পড়ে এদিন ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে মসজিদে এসেছিলেন প্রায় ২০ হাজার সমব্যাথি। তাদের মাঝে ছিলেন দেশটির রাগবি তারকা সনি বিল উইলিয়ামস। ২০০৯ সালে ইসলামের আলোকিত জীবনাদর্শ যাকে টেনেছে মুসলিম পতাকাতলে।

নামাজ ও শোক অনুষ্ঠানে নামাজ আদায় শেষে এই তারকা খেলোয়াড় বলেন, ‘মানুষ সত্যিই জানে না ইসলাম আসলে কি। ইসলামের আলোকিত পথের সন্ধানকে উপলব্ধি না করা পর্যন্ত তা অনুসরণ করা সম্ভব নয়। এজন্যে ইসলামকে বুঝতে হবে, জানতে হবে এবং তাহলে ইসলাম অন্ধকার দূর করার মত আলো দিতে পারবে।’ সনি যোগ করেন, ‘ক্রাইস্টচার্চের হত্যাযজ্ঞের পর নিউজিল্যান্ডের মানুষ যেভাবে মুসলিমদের প্রতি সংহতি প্রকাশ করেছে তাতে তিনি গর্বিত তবে এধরনের আরো স্বীকৃতি প্রয়োজন রয়েছে, ‘সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে মুসলমানদের নেতৃত্ব দেয়ার সময় এসেছে। এ নিয়ে কোনো লজ্জা বোধ করে দূরে সরে থাকা ঠিক নয়। ক্রাইস্টচার্চে শুক্রবার গত সপ্তাহে সন্ত্রাসী ঘটনায় দুটি মসজিদে ৫০ জনকে হত্যার পর এখন নিউজিল্যান্ডের মানুষ আরো বেশি করে ইসলামকে জড়িয়ে ধরবে।’

দেশটিকে আগের মতো শান্তিময় করে তুলতে দিনরাত স্বপ্ন দেখে চলেছেন দেশটির প্রধানমন্ত্রী জেসিন্ডা আর্ডেন। দেশটির পার্লামেন্টে কুরআন তেলাওয়াত দিয়ে অধিবেশন শুরু, হিজাব চাপিয়ে হতাহতদের পরিবারের পাশে দাঁড়ানো এবং দেশটির অস্ত্র আইনের শংশোধনকরে নিজেই এখন সন্ত্রাসীদের কালো তালিকায়, পেয়েছেন মৃত্যু হুমকিও। তাতেও দেশটি পিছপা হচ্ছে না শান্তি ফেরানোর এই মিশন থেকে। যার শুরুটা ক্রিকেট দলকে দিয়েই করতে চায়। নিউজিল্যান্ড ব্যাপারটি নিয়ে যথেষ্ট বিব্রত। দেশটির ক্রীড়ামন্ত্রী গ্র্যান্ট রবার্টসন ও ঠিক এভাবেই ভাবছেন। তাঁর মনের মধ্যে খচখচানি। একটা দেশের জাতীয় ক্রিকেট দল খেলতে এল। উল্টো তারা দেশে ফিরে গেল সফর অসমাপ্ত রেখেই। এটা তো আগামী দিন গুলিতেও দেশ হিসেবে নিউজিল্যান্ডকে তাড়িয়ে নিয়ে বেড়াবে। ক্রীড়ামন্ত্রী অবশ্য আশা করেন, বাংলাদেশ ভবিষ্যতে আবারও আসবে। পরের বার বাংলাদেশ দলকে দুই হাত বাড়িয়ে বরণ করে নেওয়ার প্রতিশ্রæতিই দিয়েছেন তিনি।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: নিউজিল্যান্ড


আরও
আরও পড়ুন
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ