Inqilab Logo

শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৭ বৈশাখ ১৪৩১, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

কর্মসূচিতে কতজন এসেছে কারা চলে গেছে দেখেছি : আলোচনা সভায় মির্জা ফখরুল

ঐক্যফ্রন্ট ও কামালকে নিয়ে নেতাদের প্রশ্ন

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ২৫ মার্চ, ২০১৯, ১২:০৭ এএম

বেগম খালেদা জিয়া গ্রেফতারের পর কর্মসূচিতে কতজন এসেছে কারা কারা আস্তে আস্তে চলে গেছেন তা জানা আছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি নেতাদের বক্তব্যের প্রতি ইঙ্গিত করে বলেন, আজকে অনেকে অনেক কথা বলছেন। আমরা দেখেছি, আমাদের নেত্রীর গ্রেপ্তারের পরে যখন কর্মস‚চি দিয়েছি কতজন এসেছেন, কতজন আসেননি। আমরা তো দেখেছি কারা কারা সেই কর্মসূচির মধ্য থেকে আস্তে আস্তে চলে গেছেন। এই নির্বাচনের মধ্যে কারা বেরিয়ে এসছেন, প্রতিবাদ করেছেন, কারা প্রতিবাদ করেননি। শুধু কথা বলে, একটা বন্ধ আবদ্ধ ঘরের মধ্যে নিরাপদ জায়গায় এসব কথা বলে আমরা সেই শত্রæকে (আওয়ামী লীগ) পরাজিত করতে পারবো না।
গতকাল (রোববার) রাজধানীর কাকরাইলে ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স ইন্সটিটিউটের মিলনায়তনে কেএম ওবায়দুর রহমান স্মৃতি সংসদের উদ্যোগে বিএনপির সাবেক মহাসচিব কেএম ওবায়দুর রহমানের ১২তম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত এক আলোচনা সভায় তিনি এসব কথা বলেন।
মির্জা ফখরুল বলেন, কথা সবাই বলতে পারেন কিন্তু কাজ করতে হবে। কতজন আসছেন না আসছেন, কে কতটুকু বিপ্লবের পথে যাচ্ছেন, বিদ্রোহের পথে যাচ্ছেন সেই বিষয়গুলো অবশ্যই আপনাদের মানতে হবে। এ সময়ে নেতাকর্মীদের আসন থেকে দুই-একজন কর্মী কথা বলতে চাইলে মির্জা ফখরুল বলেন, ইয়েস কে কথা বলছেন আসেন। মঞ্চে আসেন। ছাত্রদলের ঢাকা কলেজের একজন কর্মী মহাসচিবের কাছে এসে বলেন, ঐক্যফ্রন্টের যে সর্বশেষ কর্মসূচি দেয়া হয়েছে সেখানে ম্যাডামের (খালেদা জিয়া) মুক্তি চাওয়া হয়নি কেনো? উত্তরে মির্জা ফখরুল বলেন, প্রশ্নই উঠে না। কে বলেছে একথা? প্রথমে কর্মসূচি গেছে, মুক্তির কথা ছিলো। এখনো কর্মসূচি চলছে। এসব মিথ্যা কথা বলবে না। কখনোই জনগণকে বিভ্রান্ত করবেন না। উচিত নয়।
তিনি বলেন, আজকে আমাদের লক্ষ্য হচ্ছে, এই ভয়ংকর ফ্যাসিবাদকে সরাতে হবে ক্ষমতা থেকে। সেই সরাতে গিয়ে সেই ঐক্য ভেঙে গেলে আর কোনো দিন তাদের সরাতে পারবেন না। আজকে আমাদেরকে ছোট-খাটো সমস্যাকে বড় করে না দেখে অটুট ঐক্য গড়ে তুলে হবে। একই সঙ্গে জনগণের মধ্যে ঐক্য গড়ে তুলতে হবে। সেই লক্ষ্যেই আমাদের এগুতে হবে। আসুন এই দখলদার স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে আমরা লড়াই করি।
জাতীয় ঐক্য সুপরিকল্পিতভাবে ভাঙন সৃষ্টির অপচেষ্টা হচ্ছে অভিযোগ করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ঐক্যের ফলে আজকে জনগণ যেভাবে নির্বাচন সম্পূর্ণভাবে বর্জন করেছে স্বৈরাচারি আওয়ামী লীগ সরকারকে, ফ্যাসিবাদী আওয়ামী লীগকে। সেই ঐক্যে ভাঙন সৃষ্টির চেষ্টা করা হচ্ছে। কিন্তু আমরা দৃঢ় প্রতিজ্ঞ, দেশনেত্রীর নির্দেশে আমরা এই ঐক্যকে আরো সুদৃঢ় করবো এবং সমগ্র বাংলাদেশের জনগণকে স্বৈরাচার আওয়ামী লীগেকে ঐক্যবদ্ধ করে পরাজিত করবো।
খালেদা জিয়ার নির্দেশে জাতীয় ঐক্য গঠিত হয়েছে উল্লেখ করে মির্জা ফখরুল বলেন, দেশনেত্রী পরিস্কার করে নির্দেশ দিয়ে গিয়েছিলেন যে, দলমত নির্বিশেষে সকলকে গণতন্ত্রের পক্ষে ঐক্য গড়ে তুলতে হবে এবং এই স্বৈরাচারকে পরাজিত করবার জন্য সেই ঐক্যকে নিয়েই লড়াই করতে হবে। নির্বাচনে যাওয়ার পূর্বেও আমরা নেত্রীর সঙ্গে কারাগারে যোগাযোগ করেছি। তিনি নির্দেশ দিয়েছেন যে, নির্বাচনে যেতে হবে এবং ঐক্য গড়ে তুলতে হবে জনগণের মধ্যে। নির্বাচনের পরেও তিনি (খালেদা জিয়া) এ নির্দেশই দিয়েছে যে, এই ঐক্যকে ধরে রাখতে হবে।
নির্বাচনে যাওয়া নিয়ে প্রশ্ন তুলে মির্জা ফখরুলের বক্তব্যের আগে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শাহ মোয়াজ্জেম হোসেন বলেন, কেনো এই নির্বাচনে আমরা গেলাম। কথা হলো- নিদর্লীয় সরকার ছাড়া নির্বাচন হবে না, কিন্তু তাতো হলো না। দলীয় সরকারের অধীনেই হলো। কথা হলো খালেদা জিয়া ছাড়া নির্বাচন হবে না কিন্তু খালেদা জিয়া ছাড়া আমরা নির্বাচনে গেলাম। তারপরেও কেনো সেই নির্বাচন। কেনো এই অবস্থা হলো? কেনো আজো খালেদা জিয়া জেলে? কেনো একটা দাবিও সরকার মানলো না, কী কারনে এটা হলো? এর কারণ অবশ্যই বের করতে হবে। যদি বের করতে ব্যর্থ হই আবার ব্যর্থ হবো। আমার অনেক প্রশ্ন আছে আজকে এখানে করব না। দলীয় মিটিংয়ে বলব।
নাম উল্লেখ না করে ড. কামালকে নিয়ে প্রশ্ন তুলে শাহ মোয়াজ্জেম হোসেন বলেন, আমরা তার (ড. কামাল হোসেন) ইতিহাস জানি। বাংলাদেশের তার কোনোদিন কোনো আসন ছিলো না। প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রেসিডেন্ট প্রার্থী হিসেবে এক সময়ে সে (ড. কামাল হোসেন) বৃদ্ধ সাত্তার সাহেবের (বিচারপতি আবদুস সাত্তার) কাছে এক কোটি ভোটে হেরেছিলেন। আমরা তাকে নেতা মানলাম। কেনো ফখরুল (মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর) কী দোষ করেছিলো? মহাসচিব ফখরুল, আমাদের নেত্রী বেগম খালেদা জিয়া। আমাদের তো অন্য কারো দরকার নেই। আমাদের কারো দরকার ছিলো না। আমরা যা পারি করবো, না পারলে করবো না- নির্বাচন করবো না। কিন্তু এটা কী হলো? ঠাটা পড়লো সমগ্র জাতির উপরে।
জেএসডির সভাপতি আসম আবদুর রব সরকারের উদ্দেশ্যে হুশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেন, মনে করছেন, এটা চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত এভাবে টিকে থাকবে। আমি বলছি, অসম্ভব। হিটলার নাই, মুছোলিনি নাই, ফেরাউন নাই, সাদ্দাম হোসেন নাই, আপনারাও থাকবেন না। তিনি বলেন, ২০ ফেব্রæয়ারি রাতে সকল মামলা প্রত্যাহার করে শেখ মুজিবকে যেমন জনগণ বের করে নিয়ে এসেছে, খালেদা জিয়াও সেভাবেই মুক্ত হবেন। আন্দোলন কখনো ব্যর্থ হয়না। মনে করেন, ৪/৫ দিন আন্দোলন থেমে গেছে। আন্দোলন জমা থাকে। সকল আন্দোলন পুঞ্জীভূত হয়ে যখন বিস্ফোরিত হবে সেদিন তারা ভেসে যাবে। হতাশ হওয়ার কিছু নাই।
সংগঠনের সভাপতি টিএম গিয়াস উদ্দিন আহমেদের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক শাহজাহান স¤্রাটের পরিচালনায় আলোচনা সভায় দলের ভাইস চেয়ারম্যান নিতাই রায় চৌধুরী, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য আবদুস সালাম, যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, খায়রুল কবির খোকন, সাংবাদিক মাহফুজউল্লাহ, কেএম ওবায়দুর রহমানের মেয়ে ও বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক শামা ওবায়দুল ইসলাম রিংকু বক্তব্য রাখেন।



 

Show all comments
  • শফিক রহমান ২৫ মার্চ, ২০১৯, ৩:৩২ এএম says : 0
    মির্জা সাহেবকে বিতর্কিত করতে পারলেই সরকার সফল এবং বিএনপি বিধ্বস্ত
    Total Reply(0) Reply
  • মোঃ সুজন মজুমদার ২৫ মার্চ, ২০১৯, ৩:৩২ এএম says : 0
    আপনার মতন ""ভিজা বিড়াল দিয়ে ""খালেদা জিয়ার ""মুক্তি সম্ভব নয়""
    Total Reply(0) Reply
  • কবির হোসাইন ২৫ মার্চ, ২০১৯, ৩:৪২ এএম says : 0
    বিএনপিকে এখন কঠোর থাকতে হবে।
    Total Reply(0) Reply
  • রফিকুল ইসলাম ২৫ মার্চ, ২০১৯, ৩:৪৩ এএম says : 0
    বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর একজন ভালো ও ভদ্র রাজনীতিবিদ
    Total Reply(0) Reply
  • সাব্বির ২৫ মার্চ, ২০১৯, ৩:৪৪ এএম says : 0
    দুরসময়ে সুবিধাবাদি নেতাদের চেনা যায়
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: মির্জা ফখরুল

২১ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩
২০ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ