Inqilab Logo

শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১, ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

আগেই ব্যবস্থা নেয়া দরকার ছিল

সচিবালয়ে সাংবাদিকদের অর্থমন্ত্রী

অর্থনৈতিক রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ২৮ মার্চ, ২০১৯, ১২:০৩ এএম

জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) সার্ভার হ্যাকিংয়ের মাধ্যমে শত শত কোটি টাকার পণ্য চট্টগ্রাম বন্দর থেকে ছাড় করে নেয়ার বিষয়ে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেছেন, আগেই আমাদের এই বিষয়ে ব্যবস্থা নেয়া দরকার ছিল।
গতকাল বুধবার সচিবালয়ে অর্থনৈতিক বিষয়-সংক্রান্ত ও সরকারি ক্রয়-সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে অর্থমন্ত্রী একথা বলেন। বৈঠকে দেশের খাদ্য নিরাপত্তা বাড়াতে আন্তর্জাতিক কোটেশনের মাধ্যমে আরো ৫০ হাজার টন গম আমদানির সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। এ জন্য মোট ব্যয় হবে ১১৪ কোটি টাকা। গম আমদানিসহ মোট ৬টি ক্রয় প্রস্তাব অনুমোদন দেওয়া হয়। বৈঠকে মোট ১০টি ক্রয় প্রস্তাব উপস্থাপন করা হয়।
এনবিআরের সার্ভারে অনুপ্রবেশ বা হ্যাকিংয়ের ঘটনা তুলে ধরে গতকাল একটি জাতীয় দৈনিকের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, কাস্টমস কর্মকর্তাদের সরকারি আইডি ও পাসওয়ার্ড চুরি করে পণ্য পাচারে জড়িত সংঘবদ্ধ একটি চক্র তিন বছরের বেশি সময় ধরে এই সার্ভারের অবৈধ ব্যবহার করেছে। এ সময় চক্রটি শত শত কোটি টাকার পণ্য চট্টগ্রাম বন্দর থেকে ছাড় করে নিয়েছে। এ বিষয়ে অর্থমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে অর্থমন্ত্রী বলেন, আমি দেখেছি। এটা আগেও হয়েছে। অফিসে গিয়ে এ ব্যাপারে ব্যবস্থা নেব। কী ব্যবস্থা নেয়া যায় সেটা আমরা দেখব। আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেন, আমরা মনে হয় আগে থেকেই আমাদের এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেয়া দরকার ছিল।
এনবিআরে এ ঘটনার শুরু ২০১৬ সালে-জানাতেই আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেন, এটা একই রকমভাবে হচ্ছে। অফিসারদের আইডি ইউজ করে কনসাইনমেন্টগুলো রিলিজ করা হয়।
অর্থমন্ত্রী বলেন, ওই এলাকাকে তো তারকাঁটার বেড়া দিয়ে নিয়ন্ত্রণ করা যাবে না। দূর থেকে আইডি কার্ড ইউজ করে পারবে না। ভেতরে যেতে হবে সার্ভারে ঢুকতে হলে। আমার মনে হয় সার্ভার আরও অনেক বেশি সংরক্ষিত হওয়া দরকার। এটা আমাদের দুর্ভাগ্য। আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেন, টেকনোলজি যত ডেভেলপ করবে এই বিপদগুলো তত থেকে যাবে। আমরা আমাদের টেকনোলজি শুধু বাড়াচ্ছি কিন্তু এগুলোর সেফটি-সিকিউরিটি বাড়াচ্ছি না। প্রত্যেকটির পেছনে একাধিক ফায়ারওয়াল রাখতে হবে। একটা ভাঙতে পারলে আরেকটা...। আমরা যেন সিকিউরড থাকি। ওই ওয়ালগুলো আমাদের তৈরি করতে হবে।
চক্রটি এই সার্ভারে ২০১৬ সাল থেকে ৩ হাজার ৭৭৭ বার লগইন করেছে বলে শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তরের এক তদন্তে ধরা পড়েছে। এ ছাড়া চিঠিও জাল করা হয়েছে। আর এতে সহায়তা করেছেন চট্টগ্রাম কাস্টম, বন্দর কর্তৃপক্ষ এবং পণ্য পরিবহনে নিয়োজিত বেসরকারি সংস্থার কিছু অসাধু কর্মকর্তা-কর্মচারী।
এর আগে ২০১৬ সালে বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ থেকে ৮ কোটি ১০ লাখ মার্কিন ডলার হ্যাকাররা চুরি করে নিয়ে যায়। এই রহস্যের সমাধান এখনো হয়নি। এরপর আবারও সার্ভারে অনুপ্রবেশের ঘটনা ঘটল। এতে সার্ভারের অনিরাপত্তার বিষয়টি আবারও সামনে এল। এসব ঘটনায় এখন পর্যন্ত চারটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। এর মধ্যে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) তদন্ত কমিটির প্রধান কমিশনার (আপিল) ফখরুল আলম, শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তরে কমিটির প্রধান অতিরিক্ত মহাপরিচালক আবদুল হাকিম, কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সেলের (সিআইসি) কমিটির প্রধান অতিরিক্ত মহাপরিচালক খালেদ মোহাম্মদ আবু হোসেন এবং চট্টগ্রাম কাস্টমসের গঠিত কমিটির প্রধান যুগ্ম কমিশনার এইচ এম শরিফুল হাসান।
রমনা থানায় এ ঘটনায় একটি মামলাও হয়েছে। এই প্রক্রিয়ায় ৩০টি কনটেইনার ছাড় করা হয়েছে বলে মামলায় উল্লেখ রয়েছে। এসব কনটেইনারে লোহা ও ইস্পাত পণ্য ছিল বলে ঘোষণা দেওয়া ছিল। তবে শুল্ক গোয়েন্দা কর্মকর্তারা ধারণা করছেন, কনটেইনারগুলোতে বিদেশি সিগারেট, দামি মদ ও পোশাক কারখানার কাপড় ছিল। পণ্য পাচারের সঙ্গে জড়িত ১১ জনের বিরুদ্ধে দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে। এ ঘটনায় কত ক্ষতি হয়েছে, তা এখনো নিরূপণ করা সম্ভব হয়নি। তদন্ত শেষের পরই ক্ষতির পরিমাণ বলা যাবে বলে জানান শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তরের মহাপরিচালক সহিদুল ইসলাম।#



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: অর্থমন্ত্রী


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ