Inqilab Logo

বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ০৫ বৈশাখ ১৪৩১, ০৮ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

শিশুদের রক্তচাপ পরিমাপ

| প্রকাশের সময় : ২৯ মার্চ, ২০১৯, ১২:০৬ এএম

কিছুদিন আগে নবজাতক ওয়ার্ডে এক অসুস্থ নবজাতকের রক্তচাপ পরিমাপ করছিলেন একজন চিকিৎসক। অভিভাবক খুব অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলেন, এত ছোট বাচ্চারও ‘প্রেসার’ আছে? রক্তের এই ‘প্রেসার’ বা রক্তচাপ ব্যাপারটি মানুষ মাত্রেরই থাকে। জানতে হবে এটি কোন বয়সের জন্য কত হলে স্বাভাবিক। এটি খুব বেড়ে বা কমে গেলে কি লক্ষণ দেখা দেয়। তখন এটি পরিমাপের গুরুত্ব আমরা বুঝতে পারব।
রক্তচাপ জিনিসটি একটু বুঝিয়ে বলা দরকার। আমাদের রক্ত চলাচল করে রক্তনালী দিয়ে। মনে করুন একটি পাইপ দিয়ে পানি চলাচল করছে। এই পাইপটি খুব নরম আর সঙ্কোচন-প্রসারণশীল। তাহলে পাইপ দিয়ে যখন তরল বস্তুটি প্রবাহিত হবে, এর দেয়াল বরাবর এক ধরণের চাপ অনুভূত হবে। ধরুন পাইপের মাথায় আপনি ধরে রাখলেন। তাহলে নিশ্চয়ই বাধার আগের অংশে চাপ বেড়ে যাবে। আবার হঠাৎ করে পানি কমে গেলে দেখবেন গতি অর্থাৎ চাপ কমে গেছে। আমাদের রক্তনালীও প্রবাহিত রক্ত দ্বারা একধরণের চাপ অনুভব করে। বিভিন্ন কারণে এটি বাড়তে বা কমতে পারে। জন্মের পর থেকে যেকোনো বয়সের মানুষের রক্তচাপ থাকে বলেই রক্ত চলাচল করে। শিশুদের ক্ষেত্রে এটা স্বাভাবিক কিনা মন্তব্য করতে হলে কয়েকটি জিনিস মাথায় রাখতে হবে।
শিশু চিকিৎসকরা রক্তচাপ পরিমাপ করে মন্তব্য করার সময় এক ধরণের ‘চার্ট’ ব্যবহার করেন। লিঙ্গ (অর্থাৎ শিশুটি ছেলে নাকি মেয়ে), বয়স এবং উচ্চতা মিলিয়ে এটা দেখতে হয়। সিস্টোলিক এবং ডায়াস্টোলিক (সাধারণ ভাষায় উপর এবং নিচের প্রেসার) আলাদা করে মেলাতে হয়। ধরুন দুই বছর বয়সী ৯০ সেমি উচ্চতার একটি মেয়ের রক্তচাপ পাওয়া গেল ১০৮/৬৫ মিমি পারদ। চার্ট অনুযায়ী মেয়েটির রক্তচাপ স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি। অথচ একই বয়স ও উচ্চতার ছেলে হলে এটিই স্বাভাবিক রক্তচাপ।
এই লেখার পরের অংশটুকু মূলত চিকিৎসকদের জন্য। যেহেতু সারাদেশে জেনারেল প্র্যাকটিশনারদের বিপুল সংখ্যক শিশুদের চিকিৎসা দিতে হয়, আর বাস্তবতার প্রেক্ষিতে শিশু চিকিৎসক ছাড়া অন্যদের মধ্যে রক্তচাপ চার্ট ব্যবহার নেই বললেই চলে, কয়েকটি বিষয় তাদের জানা উচিত। আর আমি অনুরোধ করব যে চিকিৎসকই শিশুদের চিকিৎসা দেন, তিনি যেন রক্তচাপ চার্ট সহ অন্যান্য ‘গ্রোথ চার্ট’ ব্যাবহার করেন।
উচ্চ-রক্তচাপের সংজ্ঞাঃ ১-১৩বছর (অ্যামেরিকান একাডেমি অফ পেডিয়াট্রিক্স ২০১৬ মতে)
১। স্বাভাবিক রক্তচাপঃ চার্টে ৯০তম সেন্টাইলের কম
২। বাড়তি রক্তচাপঃ ৯০তম (অথবা ১২০/৮০ মিমি পারদ) থেকে ৯৫তম সেন্টাইলের কম
৩। উচ্চ-রক্তচাপ প্রথম ধাপঃ ৯৫তম সেন্টাইলের সমান অথবা বেশি, কিন্তু “৯৫তম সেন্টাইলের কম + ১২ মিমি পারদ” এর কম (অথবা ১৩০/৮০- ১৩৯/৮৯ মিমি পারদ)
৪। উচ্চ-রক্তচাপ দ্বিতীয় ধাপঃ “৯৫তম সেন্টাইল + ১২ মিমি পারদ” এর সমান অথবা বেশি (অথবা ১৪০/৯০ মিমি পারদ এর সমান বা বেশি)
১৩ -১৮ বছর
১। স্বাভাবিক রক্তচাপঃ ১২০/৮০ মিমি পারদের কম
২। বাড়তি রক্তচাপঃ ১২০/<৮০ মিমি পারদ ১২৯/<৮০মিমি পারদ
৩। উচ্চ-রক্তচাপ প্রথম ধাপঃ ১৩০/৮০- ১৩৯/৮৯ মিমি পারদ
৪। উচ্চ-রক্তচাপ দ্বিতীয় ধাপঃ ১৪০/৯০ মিমি পারদ এর সমান বা বেশি
কোন কোন শিশুর রক্তচাপ মাপতে হবে
আসলে রক্তচাপ মাপা সাধারণ শারীরিক পরীক্ষার অংশ। তবে তিন বছরের কম বয়সে কয়েকটি বিশেষ ক্ষেত্রে রক্তচাপ পরিমাপ কোন ভাবেই যাতে বাদ না পড়ে।
১। জন্মের সময় গর্ভকালীন বয়স ৩২ সপ্তাহের কম, গর্ভের বয়সের তুলনায় কম ওজন, জন্মের ওজন ১৮০০ গ্রামের কম, নবজাতক সমস্যার জন্য এনআইসিইউতে থাকতে হলে, নাভিমূলে যার নল দিয়ে চিকিৎসা দেয়া লেগেছিল।
২। জন্মগত হৃদরোগ (সেরে যাক বা না যাক)।
৩। বারবার প্রস্রাবে সংক্রমণ, রক্তসহ প্রস্রাব, প্রস্রাবের সাথে প্রোটিন বের হয়ে যাওয়া।
৪। আগের কোন বৃক্কের অথবা রেচনতন্ত্রের কোন সমস্যা জানা থাকলে।
৫। পরিবারে কোন জন্মগত বৃক্কীয় সমস্যার (রেনাল ডিজিজ) ইতিহাস থাকলে।
৬। অঙ্গ প্রতিস্থাপন (যকৃত, বৃক্ক ইত্যাদি)।
৭। যেকোনো ক্যান্সার অথবা অস্থিমজ্জা প্রতিস্থাপন।
৮। রক্তচাপ বাড়ে এমন ওষুধ সেবন।
৯। মস্তিষ্কে রক্তচাপ বাড়ার লক্ষন থাকলে।
১০। অন্যান্য কিছু অসুখ থাকলে ( যেমন- কিছু স্নায়ুতন্ত্রের রোগ, কিছু রক্তরোগ)।
অনেক উচ্চ-রক্তচাপে আক্রান্ত শিশু আসে, যাদের রোগের লক্ষন অন্যকোন অসুখের সাথে মিলে যায়। যদি রক্তচাপ না মাপা হয় এই সমস্যা কখনোই ধরা পড়বে না। অনিয়ন্ত্রিত উচ্চ-রক্তচাপের জটিলতায় শিশুদের মৃত্যু মোটেও বিরল নয়। আশা করি চিকিৎসক এবং অভিভাবক সবাই এই ক্ষেত্রে আরও সচেতন হবেন।

ডাঃ আহাদ আদনান
রেজিস্ট্রার, আইসিএমএইচ
মাতুয়াইল, ঢাকা।

 



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: রক্তচাপ

৩ ডিসেম্বর, ২০২১
১৮ অক্টোবর, ২০২০

আরও
আরও পড়ুন