Inqilab Logo

শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৭ বৈশাখ ১৪৩১, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

রমজানের আগেই বাজারে উত্তাপ

অর্থনৈতিক রিপোর্টার : | প্রকাশের সময় : ৩০ মার্চ, ২০১৯, ১২:০৪ এএম

রোজার আগেই দাম বেড়েছে সব ধরণের নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যের। রমজানের আগে এই মূল্যবদ্ধির কারণে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন সমাজের নিম্ন আয়ের মানুষ।
দেশে সব পণ্যেরই পর্যাপ্ত মজুদ ও সরবরাহ স্বাভাবিক রয়েছে। তাই আসন্ন রমজানে নিত্যপণ্যের দাম বাড়বে না। দেশবাসীকে এমন প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি। গত বুধবার ব্যবসায়ীদের সঙ্গে অনুষ্ঠিত এক বৈঠকে এই প্রতিশ্রুতি দেন তিনি। তবে বাজারের পরিস্থির সঙ্গে বাণিজ্যমন্ত্রীর আশ্বাসের কোনও মিল পাওয়া যাচ্ছে না।
জানা গেছে, দেশের অসাধু ব্যবসায়ীরা এখন আর রমজানের অপেক্ষায় থাকছে না। রমজান শুরুর আগেই পরিকল্পিতভাবে অত্যন্ত সুকৌশলে রমজান নির্ভর পণ্যসহ সব ধরনের পণ্যের দাম বাড়িয়ে বিক্রি করছে, যাতে রমজানে পণ্যের দাম বাড়ানো হয়েছে-এমন অভিযোগ করা না যায়।
সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, শুধু চালের বাজার নয়, পুরো ভোগ্যপণ্যের বাজারেই একাধিক সিন্ডিকেট সক্রিয় রয়েছে। তবে বরাবরের মতো এবারও এই সিন্ডিকেটের কথা অস্বীকার করছেন বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ও ব্যবসায়ী মহল। বাণিজ্যমন্ত্রী বলেছেন, এবার সিন্ডিকেটের সুযোগ নেই। বাজারে সবার মধ্যে প্রতিযোগিতা সৃষ্টি করে পণ্যের ন্যায্যমূল্য নিশ্চিত করতে হবে। পবিত্র রমজান মাসের আগে পণ্যের অবৈধ মজুদ ও দাম বৃদ্ধির সুযোগ দেওয়া হবে না।
গতকাল রাজধানীর বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা গেছে, রমজানের অনেক আগেই বেড়েছে গরুর গোশতের দাম। একই সঙ্গে খাসির গোশতের দামও বেড়েছে কেজিতে ৩০ থেকে ৬০ টাকা। ৪শ’ ৫০ থেকে ৪শ’ ৮০ টাকা কেজি দরের গরুর গোশত ইতোমধ্যেই বিক্রি হচ্ছে ৫২০ থেকে ৫৫০ টাকা কেজি দরে। সময়ের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে ডিমের দাম। প্রতি হালি ফার্মের লাল মুরগির ডিমের হালি এলাকাভেদে ৩৬ থেকে ৪০ টাকায় উঠেছে। গরুর গোশত ও ডিমের দাম যখন এভাবে বাড়ছে তখনই এ দুটি খাদ্যপণ্যের সঙ্গে সমন্বয় করে বেড়েছে সব ধরনের মাছ ও সবজির দাম। সস্তা ও গরীবের মাছ নামে খ্যাত চাষের পাঙ্গাস ও তেলাপিয়ার কেজি ২৪০ টাকায় উঠেছে। মাত্র ১৫দিন আগেও এই মাছগুলোর কেজি ছিল ১৬০ থেকে ১৮০ টাকা। বাজারে সব ধরনের সবজির দাম এখন আকাশছোঁয়া। কিছু সবজির কেজি ছুঁয়েছে ৮০ থেকে ১০০ টাকা। বাকিগুলোর বেশির ভাগের কেজি ৭০-৮০ টাকা। গত দুই মাসে সবচেয়ে বেশি দাম বেড়েছে ব্রয়লার মুরগির। দুই মাস আগে প্রতি কেজি ব্রয়লার মুরগির দাম ছিল ১২০ টাকা, তা এখন বিক্রি হচ্ছে ১৮০ টাকায়। বাজারে লাল লেয়ার মুরগি বিক্রি হচ্ছে ২৮০ টাকা কেজি দরে , যা এক সপ্তাহ আগে ছিল ২১০-২২০ টাকা। পাকিস্তানি কক মুরগির কেজি ২৯০ থেকে ৩০০ টাকা, যা গত সপ্তাহে ছিল ২৬০-২৮০ টাকা।
রমজান আসার আগেই সামান্য হলেও বাড়তে শুরু করেছে বিভিনড়ব প্রকার চালের দাম। খোলা ও বোতলজাত সয়াবিন তেল এক মাসে লিটারে বেড়েছে ৫ টাকা। মসুর ডালের (নেপালি) কেজি গত মাসে ছিল ৯০-৯৫ টাকা, যা বর্তমানে বিঘ্নিত হচ্ছে ১০০ থেকে ১১০ টাকায়। দেশি মসুর ডাল মানভেদে বিঘ্নিত হয়েছে ৮৫-৯০ কেজি, যা দুই মাস ছিল ৮০-৮৫ টাকা। দেশি পেঁয়াজের দাম বেড়ে বিঘ্নিত হচ্ছে ২৫ থেকে ২৮ টাকা দরে। চিনি বিঘ্নিত হচ্ছে ৫৫ থেকে ৫৬ টাকা কেজি দরে, যা দুই মাস আগে ছিল ৫০ টাকা।
অন্যদিকে মাছের বাজারে দেখা গেছে, বাড়তি চাহিদা রয়েছে ইলিশের। দামও কিছুটা বেশি। বৈশাখকে সামনে রেখে দাম আরও বাড়তে পারে বলে জানালেন বিক্রেতারা। বর্তমানে এক কেজি ওজনের ইলিশ ১৬০০ থেকে ১৮০০ টাকা, ৯০০ গ্রাম ১৩০০ টাকা, ৮০০ গ্রামের ১১০০ টাকা, ৬০০ থেকে ৭০০ গ্রামের ৮০০ টাকায় বিঘ্নিত হচ্ছেঅ। কারওয়ান বাজারের কিচেন মার্কেটের মা-বাবার দোয়া মৎস্য ভান্ডারের মালিক মাসুদ রানা বলেন, কেজিতে ১০০ থেকে ২০০ টাকা করে ইলিশের দাম বেড়েছে। সামনে আরও বাড়তে পারে। আরেক বিক্রেতা ছালাম বলেন, গত সপ্তাহের চেয়ে ইলিশের দাম অনেক বেড়েছে। মাঝারি সাইজের পিস ১০০ থেকে ১৫০ টাকা বেড়েছে। বড়গুলোর দাম পিসপ্রতি ৩০০ থেকে ৪০০ টাকা বাড়ছে।
সূত্র জানিয়েছে, চাঁদ দেখা সাপেক্ষে চলতি বছরের মে মাসের প্রথম সপ্তাহেই শুরু হচ্ছে রমজান। রমজানকে কেন্দ্র করে বাজারে কয়েকটি নিত্যপণ্যের চাহিদা বাড়ে। আর সেই চাহিদাকে কেন্দ্র করে এক শ্রেণির অসাধু ব্যবসায়ী অনৈতিক মুনাফার নেশায় মেতে ওঠে। কেউ কেউ পণ্য মজুদ করে কৃত্রিম সংকট তৈরি করে। আর চাহিদা বাড়িয়ে সরবরাহ কমিয়ে বাজারকে অস্থির করে তোলে। এতে বাজার অস্থিতিশীল হয়। এতে নি¤ড়ব আয়ের মানুষের কষ্ট বাড়ে। তাই এবার রমজান শুরুর আগেই বজারের দিকে নজর দিতে চায় সরকার। পণ্যের সরবরাহ ঠিক রাখার পাশাপাশি যাতে কেউ কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করতে না পারে সে বিষয়টি কঠোরভাবে মনিটরিংরেয়র মাধ্যমে যে কোনও উপায়ে নিত্যপণ্যের দাম সাধারণ ক্রেতাদের সাধ্যের মধ্যে রাখতে চায় সরকার। তাই আসনড়ব রমজান মাসের আগেই বাজার মনিটরিংয়ের সিদ্ধান্ত নিয়ে ব্যবসায়ীদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি। কিন্তু তার আগেই সব ধরণের পণ্যের দাম বাড়িয়ে বসে আছেন অসাধু ব্যবসায়ীরা।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: রমজান


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ