Inqilab Logo

বুধবার, ১৭ এপ্রিল ২০২৪, ০৪ বৈশাখ ১৪৩১, ০৭ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

চট্টগ্রামেও অগ্নিঝুঁকি

রফিকুল ইসলাম সেলিম | প্রকাশের সময় : ৩০ মার্চ, ২০১৯, ১২:০৪ এএম

চট্টগ্রামেও বেশিরভাগ আবাসিক ও বাণিজ্যিক ভবন অগ্নিঝুঁকিতে রয়েছে। সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে নগরীর বস্তিগুলো। বেশির ভাগ ভবনের অনুমোদন নেই। ভবন নির্মাণে মানা হয় না বিল্ডিংকোড। নেই অগ্নি নির্বাপণ ব্যবস্থাও। ফলে প্রতিবছর অগ্নিকাÐে ঘটছে প্রাণহানি। পুড়ে ছাই হচ্ছে সম্পদ। অগ্নিঝুঁকি কমানো না গেলে যে কোন সময় বড় ধরনের বিপর্যয়ের আশঙ্কা করছেন সংশ্লিষ্টরা।
নগরীর অলিগলিতে গড়ে উঠছে সুউচ্চ ভবন। আবাসিক এলাকায় রয়েছে বাণিজ্যিক ভবন, কলকারখানা। নিময় নীতির তোয়াক্কা না করে গড়ে ওঠা এসব ভবনে নেই কোন অগ্নিনির্বাপন ব্যবস্থা। নগরীতে রয়েছে অসংখ্য মার্কেট ও শপিং মল। বেশিরভাগ ভবনে নেই জরুরি প্রয়োজনে নামার বিকল্প ব্যবস্থাও। ভবন নির্মাণ তদারকির দায়িত্ব চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ-সিডিএ’র। তবে অভিযোগ রয়েছে তারা এ ব্যাপারে পুরোপুরি উদাসিন। ভবন নির্মাণের জন্য নকশা পাশ করিয়ে দায়িত্ব শেষ করেন সংস্থার কর্মকর্তারা।
ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স কর্মকর্তারা জানান, অগ্নি প্রতিরোধ ও নির্বাপণ আইন অনুযায়ী ৬ তলার ওপরে ভবনের ক্ষেত্রে তিন স্তরের নিজস্ব স্থায়ী অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা থাকতে হবে। এছাড়া বাণিজ্যিক ভবনের ক্ষেত্রে প্রথম তলা থেকে তিন স্তরের এই নিরাপত্তা ব্যবস্থা রাখার বিধান রয়েছে। কিন্তু চট্টগ্রামের বেশিরভাগ আবাসিক ভবনেই কোন অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা নেই।
বাণিজ্যিক ভবনের মধ্যে কয়েকটি মানসম্মত আবাসিক হোটেল ও দুয়েকটি শপিংমল ছাড়া আর কেউ এ আইন মানছে না। আবাসিক ভবনের ক্ষেত্রে ভবনের উচ্চতা এবং বাসিন্দার সংখ্যা অনুপাতে একাধিক সিঁড়ি থাকার কথা বলা হয়েছে। অন্যদিকে ছয় তলার ওপরে ভবনের ক্ষেত্রে প্রতিটি ফ্লোরের জন্য লিফট আকারের ফায়ার সেফটি লবি রাখার কথা বলা হয়েছে। ভবনের নীচে পর্যাপ্ত পানির মজুদ রাখার কথাও আইনে বলা আছে। তবে বাস্তবে এসব কেউ মানছে না।
ফায়ার সার্ভিসের একজন কর্মকর্তা কালুরঘাটের কেটিএস গার্মেন্টের অভিজ্ঞতা তুলে ধরে বলেন, ওই ভবনের আগুন নেভাতে ফায়ার সার্ভিস কর্মীদের প্রচন্ড বেগ পেতে হয়েছিলো। আর এ কারণে প্রাণহানির ঘটনাও ঘটেছে বেশি।
সংশ্লিষ্টদের মতে নগরীর ঘনবসতিপূর্ণ এলাকায় গড়ে ওঠা ভবন সবচে বেশি অগ্নিঝুঁকিতে রয়েছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো রেয়াজুদ্দিন বাজার ও আশপাশের মার্কেট, আবাসিক ভবন ও হোটেল এবং জহুর হকার্স মার্কেট। এছাড়া নগরীর পাথরঘাটা, লালখান বাজারসহ বেশ কয়েকটি এলাকায় সড়ক এতটাই সরু যে সেখানে কোন অগ্নিকাÐের ঘটনা ঘটলে দমকল বাহিনীর গাড়ি যাওয়ারও কোন ব্যবস্থা নেই।
চট্টগ্রামে অগ্নিঝুঁকির বিষয়টি স্বীকার করে ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স চট্টগ্রাম বিভাগের উপ পরিচালক মো. আবদুল মান্নান দৈনিক ইনকিলাবকে বলেন, ঢাকার মতো অতটা উচ্চ ঝুঁকি না হলেও চট্টগ্রামেও অগ্নিঝুঁকি রয়েছে। এ মহানগরীতে বেশির ভাগ ভবনের নেই কোন নিজস্ব অগ্নিনির্বাপন ব্যবস্থা। আবাসিক, বাণিজ্যিক ভবনের পাশাপাশি হাসপাতাল গুলোতেও নেই কোন ধরনের নিরাপত্তামূলক ব্যবস্থা। তিনি বলেন, ফায়ার সার্ভিসের কাছে সর্বোচ্চ ১৮ তলা ভবন পর্যন্ত অগ্নিনির্বাপক যন্ত্র রয়েছে। তবে নগরীর বেশির ভাগ সড়ক এতটাই সরু যে কোথাও আগুন লাগলে ওই যন্ত্র সেখানে নেয়া যাবে না। তার চেয়ে বড় সমস্যা পানির অভাব। নগরীর জলাশয় আর পুকুর দিঘী ভরাট করে ভবন তৈরী করা হচ্ছে। অগ্নিনির্বাপক ব্যবস্থা রাখতে ইতোমধ্যে পোশাক কারখানাসহ নগরীর কারখানা ভবন, হাসপাতাল, বাণিজ্যিক এবং বহুতল আবাসিক ভবন মালিকদের চিঠি দেয়া হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, বেশির ভাগ মালিকই এসব চিঠির কোন গুরুত্ব দেন না।
আইনে ফায়ার সার্ভিসকে এসব ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে কোন ক্ষমতা দেয়া হয়নি জানিয়ে তিনি বলেন, আমরা শুধু সচেতনতামূলক কর্মসূচি নিতে পারি। আইন অমান্যকারীদের বিরুদ্ধে ভ্রাম্যমান আদালত পরিচালনা করার কোন সুযোগ নেই। অগ্নিঝুঁকি কমাতে ভবন মালিকদের সদিচ্ছাই যথেষ্ট বলেও মনে করেন তিনি।

 



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: চট্টগ্রাম

৩০ জানুয়ারি, ২০২৩

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ