Inqilab Logo

শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

খেলাপি ঋণ পরিশোধে সুদের হার ৯ শতাংশ

সংবাদ সম্মেলনে অর্থমন্ত্রী

অর্থনৈতিক রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ৩ এপ্রিল, ২০১৯, ১২:০৫ এএম

অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল নতুন ব্যাংক অনুমোদনের ক্ষেত্রে পরিশোধিত ও অনুমোদিত মূলধন বাড়ানোর কথা জানিয়েছেন। তিনি বলেছেন, নতুন করে কেউ ব্যাংক প্রতিষ্ঠা করতে চাইলে পরিশোধিত মূলধন ৫শ’ কোটি টাকা এবং অনুমোদিত মূলধন এক হাজার কোটি টাকা দিতে হবে। বর্তমান নীতিমালায় নতুন ব্যাংক প্রতিষ্ঠায় পরিশোধিত মূলধন ৪শ’ কোটি টাকা রাখা হয়েছে।
গতকাল মঙ্গলবার রাজধানীর শেরেবাংলা নগরের এনইসি সম্মেলন কক্ষে এক সংবাদ সম্মেলনে অর্থমন্ত্রী এসব কথা বলেন। আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেন, জীবন বিমা করপোরেশন ও সাধারণ বিমা করপোরেশনেরও পরিশোধিত এবং অনুমোদিত মূলধন বাড়ানো হবে। সেক্ষেত্রে রাষ্ট্রায়ত্ত দুটি বিমা করপোরেশনের পরিশোধিত মূলধন হবে ৫শ’ কোটি টাকা এবং অনুমোদিত হবে এক হাজার কোটি টাকা। যেটি বর্তমানে মাত্র ৩০ কোটি টাকা।
সংবাদ সম্মেলনে ব্যাংক, আয়কর, ভ্যাট আইন, পুঁজিবাজার, আগামী অর্থবছরের বাজেট, বিমাখাতসহ বিভিন্ন বিষয় নিয়ে কথা বলেন অর্থমন্ত্রী। এ সময় অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) চেয়ারম্যান মোশাররফ হোসেন ভুঁইয়া, অর্থ সচিব আবদুর রউফ তালুকদার, ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিব আসাদুল ইসলাম, বিএসইসির চেয়ারম্যান খায়রুল হোসেনসহ সরকারের বেশ কয়েকজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা।
ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে যারা কম্পানির লোকসানসহ যৌক্তিক কারণে সে ঋণ পরিশোধ করতে পারেনি, তাদের জন্য ছাড় দেওয়া হচ্ছে বলে জানান আ হ ম মুস্থফা কামাল। এক সপ্তাহ আগে ঋণখেলাপিদের সাত শতাংশ সরল সুদে ঋণ পরিশোধের কথা বলেছিলেন অর্থমন্ত্রী। কিন্তু সংবাদ সম্মেলনে অর্থমন্ত্রী জানিয়েছেন, সাত শতাংশ নয়, নয় শতাংশ সুদে ঋণ পরিশোধ করতে পারবে খেলাপিরা। কোনো ব্যবসায়ী ১৫ শতাংশ সুদে ঋণ নিয়ে তা যৌক্তিক কারণে পরিশোধ করতে পারেনি, সে ব্যবসায়ী নয় শতাংশ সুদে তা পরিশোধ করতে পারবে। ১২ বছরে এই ঋণ পরিশোধ করার সুযোগ দেওয়া হবে বলে জানান অর্থমন্ত্রী। আর যারা অসাধু ব্যবসায়ী ঋণখেলাপি তারা ঋণ পরিশোধ করতে না পারলে সম্পদ ক্রোক করা হবে সম্পদ ব্যবস্থাপনা কমিটির মাধ্যমে।
আসছে ২০১৯-২০ অর্থবছর থেকে দেশে প্রথমবারের মতো শস্য বিমা চালু করা হবে বলে সংবাদ সম্মেলনে ঘোষণা দেন মুস্তফা কামাল। তিনি বলেন, প্রাথমিকভাবে পরীক্ষামূলকভাবে চর, পাহাড় ও হাওরাঞ্চলে শস্য বিমা চালু করা হবে। পরবর্তীতে শস্য বিমার বিস্তৃতি ঘটবে। সেক্ষেত্রে ভারতের উদাহরণ কাজে লাগানো হবে। বাংলাদেশে শস্য বিমা কেন দরকার, সাম্প্রতিক বছরে হাওরাঞ্চলে আগাম বন্যায় ব্যাপক ফসলহানির ঘটনা উল্লেখ করেন অর্থমন্ত্রী। রূপপুর পারমানবিক বিদ্যুত কেন্দ্র, পদ্মা সেতুর মতো বড় বড় প্রকল্পেও বিমার বিষয়টি চিন্তাভাবনা করা হচ্ছে বলে জানান আ হ ম মুস্তফা কামাল।
শেয়ারবাজারের বিষয়ে অর্থমন্ত্রী সংবাদ সম্মেলনে বলেন, অর্থনীতির আয়না হলো শেয়ারবাজার। অবশ্য এর ব্যবস্থাপনায় ত্রুটি আছে। এর পরিচালনায় ত্রুটির পাশাপাশি এই বাজারে কারা খেলোয়াড় সে সম্পর্কে সাধারণ মানুষ জানে না। এসব কারণে পুঁজিবাজার সঠিকভাবে চলছে না। তবে সরকার চাইছে, শেয়ারবাজার সতেজ থাকুক। শেয়ারবাজার যাতে ভালোভাবে চলে, সেজন্য আগামী দিনগুলোতে মাসে একবার পুঁজিবাজার সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে বৈঠক করা হবে। যেসব কম্পানি ভালো, তাদেরকে কর ছাড় দেওয়া হবে। প্রণোদনাও দেওয়া হবে। সরকারি কম্পানি যেগুলো বাজারে আসার কথা রয়েছে, সেগুলোকে দ্রুততার সঙ্গে শেয়াবাজারে আনা হবে বলেও জানান অর্থমন্ত্রী।
পদ্মা সেতু মেট্রোরেলের মতো বড় বড় প্রকল্পের কাজ দ্রুত শেষ করতে আগামী অর্থবছরে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডকে বাড়তি ৮০ থেকে ৯০ হাজার কোটি টাকা আদায় বাড়াতে হবে বলে জানান অর্থমন্ত্রী। বাড়তি এই টাকা আদায়ে কারো ওপর করের বোঝা চাপানো হবে না। তবে করের আওতা বড় করা হবে। অর্থমন্ত্রী বলেন, এবারের বাজেট বই হবে ছোট, কথা হবে কম। আর কথায় কথায় এসআরও জারি করা হবে না। এতে করে বাজেটের গুণাগুন ঠিক থাকে না। করের হার কমিয়ে করের আওতা বাড়িয়ে রাজস্ব আদায় বাড়ানো হবে বলেও জানান আ হ ম মুস্তফা কামাল। ভ্যাটের বিষয়ে অর্থমন্ত্রী বলেন, বর্তমান সরকারের প্রথম ১৮ মাসে ৭০ হাজার ছেলেমেয়ে এনবিআরে চাকুরি পাবে। দুই বছরে তা এক লাখে উন্নীত হবে। কিভাবে চাকুরি পাবে, সে পথ দেখিয়ে অর্থমন্ত্রী বলেন, আমরা দোকানগুলোতে ইসিআর মেশিন বসাব। ঢাকায় দুই লাখ ৮৬ হাজার হোল্ডিং আছে। সেখানে যদি আমরা আড়াই লাখও মেশিন বসাই, তাতে প্রচুর কর্মসংস্থান হবে। কারণ, এসব মেশিন চালাতে নতুন নতুন ছেলে মেয়ে নিয়োগ দেওয়া হবে।
ব্যাংকিং খাতের বিষয়ে অর্থমন্ত্রী বলেন, যারা সাধু, তারা নানাভাবে প্রণোদনা পাবে। আর যারা অসাধু, তারা বিপদে থাকবে। তিনি বলেন, ঋণ নিয়ে তা পরিশোধ না করলে তার কি হবে, তা কোথাও বলা নেই। আপনি ব্যবসায়ীকে জেলে দেবেন? যদি সে ব্যবসায়ী ঋণ পরিশোধ করতে না পারে তাহলে তাকে ফাঁসি দেবেন? ব্যবসায়ীদের জেলে দিলে ফাঁসি দিলে সমস্যার সমাধান হবে? টাকা উঠে আসবে না। বরং এদেরকে জেলে ঢুকালে সরকারের ক্ষতি। সরকারের টাকা খরচ করে তারা জেলখানায় থাকে। ঋণের টাকাতো আর আসে না।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: অর্থমন্ত্রী


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ