Inqilab Logo

শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

বিলিম্বি

আফতাব চৌধুরী | প্রকাশের সময় : ৫ এপ্রিল, ২০১৯, ১২:০৬ এএম

বিলিম্বি শব্দটি আমাদের দেশে বহুল প্রচলিত নয়, পরিচিতিও কম কিন্তুু ভিটামিন সি সমৃদ্ধ উপকারী এ ফল ইদানিং প্রচুর উৎপাদিত হয়।

বিলিম্বি দেশের বিভিন্ন জেলায় পাওয়া যায় তবে কুমিল্লা, চট্টগ্রাম অঞ্চলে এর ফলন বেশী। ইদানিং সিলেট অঞ্চলেও এর প্রচুর ফলন হয়। বিলিম্বি ছোট মাছ, বড় মাছের মাথা বা মাছের ডিম দিয়ে রান্না করে খেলে স্বাদ অনেক গুণ বেড়ে যায়। ডাল বা মাংসতেও বিলিম্বি ব্যবহার করা যায়। একটি বিলিম্বি গাছ বাড়িতে থাকলে নিজেদের চাহিদা মিটিয়ে সারা বছরই পাড়া প্রতিবেশীকেও দান করা যায়। বলতে গেলে গ্রামের এক বা দু’টি বাড়িতে বিলি¤িব গাছ থাকলে প্রায় পুরো গ্রামের চাহিদা মিঠানো সম্ভব। অপ্রচলিত এ ফলটি এখন বাজারেও প্রচুর পরিমানে পাওয়া যায়। বিক্রিও হয় বেশ দামে। পরিচিতি বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে এর চাহিদাও বাড়ছে দিনে দিনে।
বিলিম্বি গাছ দেখতে অনেকটা লেবু গাছের মতো। কামরাঙ্গা পরিবারের এ গাছের পাতা, ফুল ও ফল দেখতে খুবই সুন্দর। গাছে নতুন পাতা গজালে সে পাতাকে আবার ফুলের মতো মনে হয়। গাছ প্রায় একই রকম তবে ফল আকারে লম্বা- ২/৩ ইঞ্চি, রং সবুজ। দেখতে আঙ্গুলের মতো হলেও সুন্দর। এ ফলটি কাচা অবস্থায় টক হলেও রান্না করার পর বা চাটনি, আচার তৈরি করার পর কড়া টক থাকেনা।
বীজ থেকে চারা উৎপাদন করে তা রোপন করলে স্বল্প সময়ে বড় হতে থাকে। দোঁআশ মাটিতে বাড়ন ভালো হয়। বছরের যে কোন সময়ে বিলিম্বি চারা রোপন করা যায় তবে বর্ষাকালে রোপন করা উত্তম। চারা রোপনের জন্য ২ী২ী২ ফুট গর্ত করে ৫-৭ কেজি পচা গোবর বা পচন সার মাটির সঙ্গে মিশিয়ে রোপন করা ভাল। বানিজ্যিক ভাবে বিলিম্বি চাষ করতে হলে ১২-১৪ মিটার দূর দূর চারা রোপন করতে হবে। ফেব্রয়ারী-মার্চ মাসে গাছের চারিদিকে রিং করে একবার সার প্রয়োগ করলেই ফলন অনেক বেড়ে যায়। একটি পূর্ণ গাছের চারিদিকে আধা মিটার রিং করে ১০ কেজি পচা গোবর তার সঙ্গে ৩০০-৪০০ গ্রাম এমপি ও ইউরিয়া একত্রে মিশ্রন করে প্রয়োগ করতে হয়। ফল খুব সাবধানে সংগ্রহ করতে হয়, কারণ ডাল-পালা খুবই দূর্বল তবে রোগ বালাই বা পোকামাকড়ের আক্রমনের সম্ভাবনা নেই বললেই চলে।
বিলিম্বি টক তরকারী হিসাবে ব্যবহৃত হয় তবে আচার, চাটনী হিসাবেও দারুন উপযোগী। পুষ্টিমানে আমিষ, শ্বেতসার, চর্বি, খনিজ, ভিটামিন, কারোটিন, ক্যালরি সবই আছে। রক্তচাপ ও ডায়াবেটিসের ঝুঁকি কমাবার প্রতিশ্রæতিও রয়েছে এতে। বীজ থেকে এর বিস্তার ঘটে। এপ্রিল থেকে নভেম্বর পর্যন্ত এ গাছে প্রচুর ফল আসে। নিয়মিত পাতা ও ডাল-পালা পানি দিয়ে ভিজিয়ে রাখলে সারা বছরই এ গাছ থেকে ফল পাওয়া যায়। শীতকালে বিলিম্বি গাছের পাতা ঝরে পড়ে তবে বসন্তের আগমণে আবার নতুন কুড়ি ও পাতা গজাতে থাকে। একটি পূর্ণ গাছে বছরে প্রায় ৩০০ কেজি বিলিম্বির ফলন হয়।
চাটনি বানিয়ে বিলিম্বি খেতে মেয়েরা বেশি পছন্দ করে। বিলিম্বি দিয়ে আচার তৈরি করে বোতল জাতের মাধ্যমে বানিজ্যিক দিক দিয়েও লাভবান হওয়ার প্রচুর সম্ভাবনা রয়েছে। বিদেশে রপ্তানি করেও প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করা সম্ভব। এর আচার অন্যান্য আচারের তুলনায় বেশি রুচিবর্ধক। স্বাদ ও ঘ্রাণ খাবারের চাহিদা বাড়িয়ে দেয়। তবে ফলটি কাঁচা অবস্থায় ২/৩ দিনের বেশি রাখা যায় না।

সাংবাদিক ও কলামিস্ট।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: বিলিম্বি

৫ এপ্রিল, ২০১৯
আরও পড়ুন