Inqilab Logo

বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ০৫ বৈশাখ ১৪৩১, ০৮ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

শ্রমিক-পুলিশ সংঘর্ষে আহত ৮০

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ৫ এপ্রিল, ২০১৯, ১২:০৩ এএম

বেতন-ভাতার দাবিতে পাটকল শ্রমিকদের চলমান ৭২ ঘণ্টার অবরোধ ও ধর্মঘট কর্মসূচির গতকাল শেষ দিন সংঘর্ষে রূপ নিয়েছে। প্রধান প্রধান পাটকল অধ্যুষিত এলাকাগুলোতে সড়ক-রেলপথ অবরোধের সময় পুলিশ ও শ্রমিকদের মধ্যে দফায় দফায় সংঘর্ষের খবর পাওয়া গেছে। ঘটেছে ধাওয়া পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা। এসময় বিক্ষুব্ধ শ্রমিকরা বিভিন্ন স্থানে হামলা চালিয়ে ব্যাপক ভাঙচুর চালিয়েছে। সড়ক ও রেলপথে টায়ার ও কাঠে আগুন জ্বালিয়ে বিক্ষোভ করে তারা। নরসিংদীতে ইউএমসি জুট মিলের শ্রমিকরা বাশাইল রেলগেট এলাকায় ঢাকা থেকে চট্টগ্রামগামী কর্ণফুলি এক্সপ্রেসের একটি ট্রেন থামিয়ে বেশ কয়েকটি বগির জানালার গøাস ভাঙচুর করেছে। এসময় পাথর ও লাঠির আঘাতে ট্রেন চালকসহ ৬০ জন আহত হয়। খুলনা মহানগরীর দৌলতপুর নতুন রাস্তা মোড় এলাকায় শ্রমিকরা নতুন রাস্তা মোড়ে পুলিশ বক্সে হামলা চালিয়ে ব্যাপক ভাঙচুর করে। এসময় পুলিশ তাদের নিয়ন্ত্রণের জন্য ধাওয়া দিলে শুরু হয় ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া ও ইটপাটকেল নিক্ষেপ। পরে এলাকায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। এতে চার পুলিশসহ কমপক্ষে ২০ জন আহত হয়েছেন। রাজধানীসহ চট্টগ্রাম ও রাজশাহী এলাকায় সড়ক অবরোধ করেছে শ্রমিকরা। এতে সড়কে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। চরম বিপাকে পড়েছে যাত্রীরা। সড়কের দু’পাশে সৃষ্টি হয়েছে তীব্র যানজট। শ্রমিক নেতারা জানান, ৭২ ঘণ্টার ধর্মঘট শেষ হয়েছে। এরপর ৭ এপ্রিল আগামী রোববার ঢাকায় বাংলাদেশ পাটকল শ্রমিক লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে দেশের রাষ্ট্রায়ত্ত সবগুলো পাটকলের শ্রমিক নেতারা বৈঠক করবেন। সেই বৈঠকে পরবর্তী করণীয় নির্ধারণ করা হবে। আমাদের ব্যুরো ও সংবাদদাতাদের পাঠানো তথ্যে এ প্রতিবেদন :
চট্টগ্রাম ব্যুরো জানায়, নগরী ও জেলায় রাজপথ ও রেলপথ অবরোধ করেছে পাটকল শ্রমিকেরা। নগরীর আমিন জুট মিল এলাকায় সড়কপথ অবরোধ করে বিক্ষোভ করে কয়েকশ শ্রমিক। একই সময়ে একদল শ্রমিক ওই এলাকায় রেললাইন অবরোধ করে। এ সময় বিশ্ববিদ্যালয়গামী শাটল ট্রেনটি আটকা পড়ে। সকালে সীতাকুÐে রাজপথ ও রেলপথ অবরোধ করে পাটকল শ্রমিকেরা। সকাল ৮টা থেকে শ্রমিকেরা সড়ক অবরোধ করে রাখেন। টায়ার জ্বালিয়ে বিভিন্ন শ্লোগানও দেন তারা। অক্সিজেন-মুরাদপুর সড়কে আমিন জুট মিলের সামনে সড়ক অবরোধ করেন পাটকল শ্রমিকেরা। তাদের অবরোধের কারণে সড়কের দুইপাশে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। পরে পুলিশের হস্তক্ষেপে যান চলাচল স্বাভাবিক হয়।
রাজশাহী ব্যুরো জানায়, রাজশাহী জুট মিলের শ্রমিকরা গতকাল তৃতীয়দিনের মতো ধর্মঘট পালন করেছে। সকালে রাজশাহী জুট মিলের শ্রমিকরা লাঠি ও লাল পতাকা হাতে পুলিশি বেষ্টনির মধ্যে রাজশাহী-ঢাকা মহাসড়ক অবরোধ করেন। দুপুর পর্যন্ত শ্রমিকরা অবস্থানের পর মিছিল নিয়ে জুটমিলের ভেতরে প্রবেশ করে বিক্ষোভ প্রদর্শন করেন।
রাজধানী : সকাল ৮টা থেকে ডেমরার স্টাফ কোয়ার্টার সংলগ্ন সড়কে লতিফ বাওয়ানি ও করিম জুট মিলের শ্রমিকরা এ বিক্ষোভ করেন। গত মঙ্গলবার থেকে প্রতিদিন সকাল ৬টা থেকে বেলা ১২টা পর্যন্ত শ্রমিরকা এ কর্মসূচি পালন করে আসছে।
বিক্ষোভকালে রাস্তার ওপরে টায়ার ও কাঠে আগুন জ্বালিয়ে সড়কে যান চলাচল বন্ধ করে দেয় আন্দোলনকারী শ্রমিকরা। এতে কয়েকঘণ্টা যান চলাচল বন্ধ থাকায় চরম ভোগান্তিতে পড়েন আশপাশের মানুষ ও সাধারণ যাত্রীরা।
ডেমরা থানার ওসি সিদ্দিকুর রহমান বলেন, সড়ক অবেরাধ করায় আশপাশের সড়কে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। তবে বেলা ১২টার দিকে তারা অবরোধ তুলে নিয়ে রাস্তা থেকে সরে গেলে যান চলাচল স্বাভাবিক হয়।
শ্রমিকরা বলেন, তাদের তিনটি মূল দাবির মধ্যে বকেয়া পরিশোধ, মজুরি কমিশন বাস্তবায়ন এবং শতভাগ উৎপাদন নিশ্চিত করাসহ আরও কিছু দাবি রয়েছে। আগামী ৬ এপ্রিলের মধ্যে দাবি না মানলে ৭ এপ্রিল থেকে তারা কঠোর কর্মসূচি দেবেন বলে হুশিয়ারি দেন। এদিকে, একই দাবিতে খুলনা ও রাজশাহীতে পাটকল শ্রমিকরা আন্দোলন করছেন।
খুলনা ব্যুরো জানায়, ধর্মঘট ও অবরোধ কর্মসূচির শেষ দিনে খুলনা পাটকল শ্রমিকদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এতে চার পুলিশসহ কমপক্ষে ২০ জন আহত হয়েছেন। খুলনা মহানগরীর দৌলতপুর নতুন রাস্তা মোড় এলাকায় শ্রমিক ও পুলিশের মধ্যে একাধিকবার ধাওয়-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটেছে। শ্রমিকরা নতুন রাস্তা মোড়ে পুলিশ বক্সে হামলা চালিয়ে ব্যাপক ভাঙচুর করে।
জানা গেছে, সকাল ৯টার দিকে শ্রমিকরা নতুন রাস্তা মোড়ে অবস্থিত পুলিশ বক্সে হামলা চালায়। পুলিশ তাদের নিয়ন্ত্রণের জন্য ধাওয়া দিলে শুরু হয় ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া ও ইটপাটকেল নিক্ষেপ। এ সময় এলাকায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, পুলিশ সদস্য বিজিবি হেডকোয়ার্টের সামনে দিয়ে যাওয়ার সময় শ্রমিকরা বাধা দেয়। পরে শ্রমিকরা মাইকে সবাইকে একত্রিত করে পাবলা পুলিশ বক্সে হামলা চালায়। এসময় বেশ কয়েকটি যানবাহনও ভাঙচুর করে তারা।
খবর পেয়ে পুলিশ কমিশনার (ভারপ্রাপ্ত) সরদার রকিবুল ইসলাম ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশের (কেএমপি) অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (আরসিডি) শেখ মনিরুজ্জামান মিঠু বলেন, আহত পুলিশদের প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। পরিস্থিতি এখন স্বাভাবিক। কোনো উত্তেজনা এখন নেই। তবে ঘটনাস্থানেই রয়েছি।
এদিকে অনেকে বলছেন, শ্রম ও কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী বেগম মুন্নুজান সুফিয়ান বৃহস্পতিবার খুলনায় আসছেন। তার নির্বাচনী এলাকায় পাটকল হওয়ায় শ্রমিকরা এ হামলা চালিয়েছেন।
শ্রমিকরা নগরীর খালিশপুর নতুন রাস্তা মোড়ে অবস্থান নিয়ে খুলনা-যশোর মহাসড়ক, নতুন রাস্তা মোড় থেকে সোনাডাঙ্গা বাসস্ট্যান্ড সড়ক, বিআইডিসি সড়ক এবং রেলপথ অবরোধ করে রেখেছে। এছাড়া তারা বিক্ষোভ মিছিল, টায়ারে আগুন জ্বালিয়ে বিক্ষোভ প্রদর্শন ও সমাবেশ অব্যাহত রেখেছেন। শ্রমিকদের সড়ক ও রেলপথ অবরোধের কারণে নতুন রাস্তা মোড় দিয়ে যানবাহন ও খুলনার সঙ্গে রেল চলাচল বন্ধ রয়েছে। ফলে হাজারো মানুষ চরম দুর্ভোগে পড়েছেন।
বকেয়া মজুরি পরিশোধ এবং মজুরি কমিশন বাস্তবায়নসহ নয় দফা দাবিতে বাংলাদেশ পাটকল শ্রমিক লীগের ডাকে খুলনার ক্রিসেন্ট, প্লাটিনাম, খালিশপুর, দৌলতপুর, স্টার, ইস্টার্ন, আলিম এবং যশোরের জেজেআই ও কার্পেটিং জুট মিলের শ্রমিকরা এ আন্দোলন কর্মসূচি পালন করছেন।
আন্দোলনরত শ্রমিক নেতারা বলেন, সরকার ঘোষিত জাতীয় মজুরি ও উৎপাদনশীলতা কমিশন-২০১৫ সুপারিশ বাস্তবায়ন, অবসরপ্রাপ্ত শ্রমিক কর্মচারীদের পিএফ. গ্র্যাচুইটি ও মৃত শ্রমিকের বিমার বকেয়া টাকা প্রদান, টার্মিনেশন ও বরখাস্ত শ্রমিকদের কাজে পুনর্বহাল, শ্রমিক-কর্মচারীদের নিয়োগ ও স্থায়ীকরণ, পাট মৌসুমে পাটক্রয়ের অর্থ বরাদ্দ, উৎপাদন বৃদ্ধির লক্ষ্যে মিলগুলোকে পর্যায়ক্রমে বিএমআরই করাসহ নয় দফা বাস্তবায়নের আশ্বাস দিয়েছিলো। কিন্তু আমাদের দাবিগুলো এখনও বাস্তবায়ন না হওয়ায় আমরা রাজপথে আবার নামতে বাধ্য হয়েছি।
রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকল সিবিএ-নন সিবিএ ঐক্য পরিষদের আহŸায়ক সোহরাব হোসেন বলেন, আমাদের দেওয়া প্রতিশ্রæতি পূরণ না হওয়ায় আবার আন্দোলনে নামতে বাধ্য হতে হয়েছে। আমাদের আগামীতে দাবি পূরণ না হলে কঠোর কর্মসূচি দিবো।
স্টাফ রিপোর্টার, নরসিংদী থেকে জানান, নরসিংদীতে ৯ দফা দাবি আদায়ে রেললাইন অবরোধ করেছেন শ্রমীকরা। এ সময় ট্রেনের বেশ কয়েকটি বগির জানালার গøাস ভাঙচুর করা হয়। গতকাল সকাল সাড়ে ১০টার দিকে ইউএমসি জুট মিলের শ্রমিক কর্মচারীরা বাশাইল রেলগেট ও তরোয়া এলাকায় এ অবরোধ করেন। পরে পুলিশ এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।
জানা যায়, ঢাকা থেকে চট্টগ্রামগামী কর্ণফুলি এক্সপ্রেসের একটি ট্রেন থামিয়ে দেন তারা। পরে উত্তেজিত শ্রমিকরা ট্রেনের বেশ কয়েকটি বগির জানালার গøাস ভাঙচুর করেন। এসময় পাথরের আঘাতে ট্রেনের ৫০/৬০ জন যাত্রী আহত হয়। এবার অনেককে ট্রেন থেকে নামিয়ে পিটিয়ে আহত করে। তবে তার নাম জানা যায়নি।পরে সদর মডেল থানা পুলিশ, রেলওয়ে পুলিশ ও ফায়রা সার্ভিস কর্মীরা ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে শ্রমিকদের সরিয়ে নিলে দুপুর ১২টার দিকে রেল চলাচল স্বাভাবিক হয়।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: আহত


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ