Inqilab Logo

শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

শান্তিপূর্ণ পথেই রোহিঙ্গা সঙ্কটের সমাধান

| প্রকাশের সময় : ৬ এপ্রিল, ২০১৯, ১২:০৫ এএম

রোহিঙ্গা ইস্যুতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, এ ইস্যুতে আমরা কখনো মিয়ানমারের সাথে সংঘাতে যাব না। আমরা কারো সঙ্গে যুদ্ধ করব না, যুদ্ধ করতে চাই না। সবার সঙ্গে একটা শান্তিপূর্ণ পরিবেশ চাই। তবে কেউ যদি আমাদের আক্রমণ করে, তার যথাযথ জবাব যেন আমরা দিতে পারি, তার জন্য সবসময় আমাদের প্রস্তুত থাকতে হবে। তিনি এ কথাও বলেছেন, যুদ্ধে জন্য নয়, শান্তির জন্যও আমাদের প্রস্তুতি থাকা দরকার। একটি স্বাধীন দেশ হিসেবে প্রতিটি ক্ষেত্রে বিশ্বের সাথে তাল মিলিয়ে যাতে চলতে পারি, এ ব্যবস্থাও আমাদের থাকা উচিত। বলার অপেক্ষা রাখে না, মিয়ানমার রাখাইন মুসলমানদের ওপর ইতিহাসের যে বর্বরতম হত্যাযজ্ঞ চালায় এবং তাদের বসতভিটা জ্বালিয়ে-পুড়িয়ে দিয়ে বাংলাদেশের দিকে বিতাড়িত করে, তাতে বাংলাদেশ মানবিকতার দৃষ্টান্ত দেখিয়ে তাদের আশ্রয় দেয়। প্রায় দশ লাখ রোহিঙ্গা মুসলমানের আশ্রয় দেয়। বাংলাদেশের পক্ষে এত মানুষের আশ্রয় দেয়া এবং খাদ্য সংস্থান করা অত্যন্ত দুষ্কর হলেও বাংলাদেশ সেটা করে বিশ্বের সামানে দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অত্যন্ত মানবিক হয়ে সে সময় বলেছিলেন, আমরা একবেলা কম খেয়ে হলেও রোহিঙ্গাদের খাওয়ার ব্যবস্থা করব। বাংলাদেশে রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দেয়ার বিষয়টি সারাবিশ্বে বিপুলভাবে প্রশংসিত হয়েছে।
এ কথা অনস্বীকার্য, নানা সীমাবদ্ধতা থাকা সত্তে¡ও ‘মানুষ মানুষের জন্য’ এই মানবিক মূল্যবোধকে ধারণ করে রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দেয়া হয়, যা মিয়ানমারের অন্যান্য প্রতিবেশি দেশ খুব কমই দেখিয়েছে। বাংলাদেশ রোহিঙ্গাদের শুধু আশ্রয়ই দেয়নি, তাদের খাদ্য সংস্থান এবং দেশের অন্যত্র আলাদা জায়গায় তাদের বসবাসের ব্যবস্থা করছে। এই বিপুল সংখ্যক অসহায় মানুষের খাদ্য সংস্থান ও আশ্রয় দিতে গিয়ে দেশের অর্থনীতিতেও চাপ পড়ছে। ইতোমধ্যে আমাদের খাদ্যের স্বয়ংসম্পূর্ণতার ওপর তার প্রভাব পড়তে শুরু করেছে। খাদ্যে টান পড়েছে। অথচ শুরুর দিকে বিশ্বের বিভিন্ন প্রভাবশালী দেশ কিছু খানা-খাদ্য পাঠালেও এখন তাতে ভাটা পড়েছে। রোহিঙ্গাদের দেখতে বিশ্বের ক্ষমতাধর রাষ্ট্রের রাষ্ট্র প্রধানসহ সেলিব্রেটিরাও শুভেচ্ছাদূত হয়ে এসেছেন। তারা কেবল প্রেস কনফারেন্স করে মায়ানমারের তিরস্কার করা ছাড়া তেমন কোনো ভূমিকা রাখেনি। বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গাদের ফেরত পাঠানোর ব্যাপারে জোরালো কোনো ভূমিকা নেয়নি। তাদের এমন নরম কথায় বা লিপ সার্ভিসকে মিয়ানমার অনেকটা থোড়াই কেয়ার করেছে এবং করে চলেছে। উপরন্তু মিয়ানমার বিভিন্নভাবে উস্কানিমূলক কর্মকাÐের মাধ্যমে বাংলাদেশের সাথে সংঘাত বাঁধানোর পাঁয়তারা করেছে। সীমান্তে কাঁটাতারের বেড়া নির্মাণ, হেলিকপ্টারে আকাশসীমা লঙ্ঘনের মতো ঔদ্ধত্য প্রদর্শন করেছে। তারপরও বাংলাদেশ সরকার অসীম ধৈর্য্যরে পরিচয় দিয়ে সেগুলো মোকাবেলা করেছে। মিয়ানমারের এসব উস্কানিমূলক কর্মকাÐে পা দেয়নি। বরং সরকার দূরদর্শী সিদ্ধান্ত ও বিচক্ষণতার পরিচয় দিয়ে মিয়ানমারের সাথে কূটনৈতিকভাবে আলোচনা চালিয়ে গেছে। এসব আলোচনায় রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নেয়ার ক্ষেত্রে কিছু ইতিবাচক সিদ্ধান্ত হলেও মিয়ানমার তা রক্ষা করেনি। তারপরও বাংলাদেশ ধৈর্য্য ধরে সমাধানের এ পথেই রয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার গত বৃহস্পতিবারের বক্তব্যেও তা স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। তিনি ‘সকলের সঙ্গে বন্ধুত্ব, কারো সাথে বৈরিতা নয়’ বাংলাদেশের কূটনীতির এই মূলনীতি অবলম্বন করে চলেছেন। কারণ তিনি ভাল করেই জানেন, যুদ্ধ কখনো শান্তি ও স্থিতি আনতে পারে না। বলা বাহুল্য, রোহিঙ্গা নিধনের শুরু থেকে বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের ঘনিষ্ট দুই বৃহৎ মিত্র চীন ও ভারত এ ব্যাপারে কোনো ভূমিকা রাখেনি। বরং তারা পরোক্ষ ও প্রত্যক্ষভাবে মিয়ানমারকেই সমর্থন দিয়েছে। অথচ বাংলাদেশ এই দুই দেশের ব্যবসা-বাণিজ্যের খুবই গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্রে। বাংলাদেশে চীনের বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ ও বাণিজ্য রয়েছে। ভারতীয় পণ্য এবং জনশক্তি রপ্তানির অন্যতম প্রধান বাজার বাংলাদেশ। এতদসত্তে¡ও রোহিঙ্গা সংকট সমাধানে দেশ দুটিকে বাংলাদেশের পাশে কার্যকরভাবে পাওয়া যাচ্ছে না। এমনকি রোহিঙ্গাদের ফেরত নেয়ার ক্ষেত্রে কোনো ধরনের দূতিয়ালির উদ্যোগ নিচ্ছে না। চীন ও ভারত বাংলাদেশে বিনিয়োগ ও বাণিজ্যের ক্ষেত্রে একে অপরের প্রতিদ্ব›দ্বী। কে কার আগে বাংলাদেশের বাজার দখল করবেÑএমন প্রতিযোগিতায় লিপ্ত। তাদের বুঝতে হবে, মিয়ানমার যেমন তাদের বন্ধু, তেমনি বাংলাদেশও তাদের বন্ধু। এই দুই বন্ধুর মধ্যে সমস্যা জিইয়ে রাখা তাদের স্বার্থেরও অনুকূল নয়। তাদের উচিত রোহিঙ্গা সংকট নিয়ে বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের মধ্যকার সমস্যার সমাধান করে দেয়া। অন্যদিকে বিশ্বের অন্যান্য দেশ শুরুতে মিয়ানমারের বিরুদ্ধে কঠোর বার্তা এবং রোহিঙ্গাদের ফেরত নিতে হবে বললেও তারা এখন নিশ্চুপ। এ প্রেক্ষিতে, বাংলাদেশকে কূটনৈতিক তৎপরতা বৃদ্ধি করা ছাড়া আর কোনো গত্যন্তর নেই। তবে এ ব্যাপারে সরকারের পক্ষ থেকে জোরালো কূটনৈতিক উদ্যোগের যথেষ্ট ঘাটতি রয়েছে। রোহিঙ্গাদের কারণে যে খাদ্য ঘাটতি দেখা দিচ্ছে, এ ব্যাপারে বিশ্বের প্রভাবশালী ও ধনী রাষ্ট্রগুলোর সহায়তা আদায় এখন গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রতিবেশিদের সাথে শান্তি ও সুসম্পর্ক বজায় রাখার ক্ষেত্রে সবসময়ই আন্তরিক। এটা প্রতিবেশি দেশগুলোকেও যথাযথভাবে উপলব্ধি করতে হবে। আমরা কোনোভাবেই কারো সাথে যুদ্ধ, সংঘাত বা বৈরি আচরণে বিশ্বাসী নই। আমরা কূটনৈতিক পর্যায়ে আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে সমস্যার সমাধানে বদ্ধপরিকর। আমাদের মতো উন্নয়নশীল একটি দেশের পক্ষে বছরের পর বছর অতিরিক্ত দশ লাখ মানুষের ভরণ-পোষণ করা অসম্ভব। দেশের আভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা এবং আঞ্চলিক স্থিতিশীলতার বিষয়টিও এখানে জড়িত। সরকারের উচিত হবে, রোহিঙ্গা সংকট নিরসনে কূটনৈতিক তৎপরতা আরো জোরদার করা।

 

 



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: রোহিঙ্গা

১৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩

আরও
আরও পড়ুন