Inqilab Logo

শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

চীনকে শায়েস্তা করার ছক যুক্তরাষ্ট্রের

২০২৫ সালের মধ্যে হামলা শুরুর মহাপরিকল্পনা

প্রকাশের সময় : ২৯ জানুয়ারি, ২০১৬, ১২:০০ এএম

ইনকিলাব ডেস্ক : অর্থনৈতিক ও সামরিক ক্ষেত্রে দ্রুত পরাক্রমশালী হয়ে ওঠা চীনকে শায়েস্তা করতে নৌ, স্থল ও আকাশপথে সর্বশক্তি দিয়ে আক্রমণের ছক কষছে যুক্তরাষ্ট্র। নির্দেশ পাওয়ার এক ঘণ্টার মধ্যে ধ্বংসযজ্ঞ শুরু করে যত দিন পরাস্ত করা না যায় তত দিন পর্যন্ত তা চালিয়ে যাওয়ার পরিকল্পনা করেছে দেশটি। সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনের পর একমেরু বিশ্বের মোড়ল যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্ব অর্থনৈতিক ও সামরিকভাবে দ্রুত শক্তিধর হয়ে ওঠা চীনকে পরাস্ত করে এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে শক্তির ভারসাম্য আনতে ২০২৫ সালেই এই যুদ্ধ শুরুর পরিকল্পনা করা হয়েছে। ওই যুদ্ধে চীনের পাল্টা আক্রমণ প্রতিহত করার কৌশল নির্ধারণসহ যুদ্ধে জয়ী হতে এখন থেকেই এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে যুক্তরাষ্ট্রের মিত্র ও চীনের সঙ্গে দ্বন্দ্বে জড়িয়ে পড়া জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া, সিঙ্গাপুর, ফিলিপাইন, ভারত, থাইল্যান্ড ও ইন্দোনেশিয়াকে সামরিকভাবে শক্তিশালী করার উদ্যোগ নিয়েছে ওয়াশিংটন। তবে কম্বোডিয়া, লাওসসহ অপেক্ষাকৃত দুর্বল সামরিক শক্তির বেশ কিছু দেশের এ কৌশলে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নেই উল্লেখ করে পরিকল্পনায় এসব দেশ সম্পর্কে বিস্তারিত কিছু বলা হয়নি। সক্ষমতা, উপস্থিতি ও অংশীদারিত্ব নামে এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক কৌশলবিষয়ক একটি স্বাধীন পর্যালোচনা প্রতিবেদনে এসব তথ্য উঠে এসেছে। চলতি জানুয়ারি মাসে ২৯০ পৃষ্ঠার প্রতিবেদনটি প্রণয়ন করেছে যুক্তরাষ্ট্রের আধাসরকারি সংস্থা সেন্টার ফর স্ট্র্যাটেজিক অ্যান্ড ইন্টারন্যাশনাল স্টাডিজ-(সিএসআইএস)। যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল ডিফেন্স ডিপার্টমেন্ট অথরাইজেশন অ্যাক্টের আওতায় সংস্থাটি গঠিত হয়েছে। প্রতিবেদনটি চীনের বিরুদ্ধে যুদ্ধের মাস্টারপ্ল্যান ছাড়া আর কিছুই নয় বলে উল্লেখ করেছে কানাডাভিত্তিক গবেষণা সংস্থা গ্লোবাল রিসার্চ।
গত সপ্তাহে প্রকাশিত সিএসআইএসের নথিপত্রে বলা হয়েছে, ২০১২ সাল থেকে আন্তর্জাতিক নিরাপত্তা পরিবেশ তাৎপর্যপূর্ণভাবে জটিল হয়ে উঠতে শুরু করেছে। চীন নিজের প্রভাব বলয় বাড়াচ্ছে এবং পূর্ব ও দক্ষিণ চীন সাগরে দ্বীপ নির্মাণ করছে। ইউক্রেনে রাশিয়ার আক্রমণের কারণে পূর্ব ইউরোপ ও মধ্যপ্রাচ্যে বেশি মনোযোগ দিয়ে এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে যুক্তরাষ্ট্র কম গুরুত্ব দিয়েছে। এ সুযোগে প্রভাবশালী হয়ে ওঠা চীনকে প্রতিহত করা এখন দুষ্কর হয়ে উঠেছে। সামরিক শক্তিতে ভারসাম্যহীনতায় প্রশান্ত মহাসাগরীয় কমান্ড বিব্রতকর অবস্থায় পড়েছে। কিন্তু পূর্ব ও দক্ষিণ চীন সাগরে প্রবেশে চীনের বাধা এবং ঝুঁকি এড়াতে চীন যথেষ্ট ধৈর্যশীল নয় বলে যুক্তরাষ্ট্র বেশ চিন্তিত। ওয়াশিংটনের ধারণা, চীন খুবই আগ্রাসী ও সম্প্রসারণবাদী শক্তিতে রূপ নিচ্ছে। গত তিন বছর ধরে ভারত ও প্রশান্ত মহাসাগরে দেশটি যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক উপস্থিতিকে চ্যালেঞ্জ জানাচ্ছে। চীন যদি এভাবে অর্থনৈতিক ও সামরিক দিক দিয়ে শক্তিশালী হয়ে উঠতে থাকে, তাহলে ভবিষ্যতে বিশ্বশক্তির মূল কেন্দ্র হবে দেশটি, যেভাবে যুক্তরাষ্ট্রের উত্থান ঘটেছে উনিশ শতকের শেষে ও বিংশ শতাব্দীর শুরুতে।
চীনের বিরুদ্ধে যুদ্ধ নিয়ে পেন্টাগনের সার্বিক কৌশল এয়ারসি ব্যাটল নামে পরিচিত, যে যুদ্ধে চীনের মূল ভূখ-ে ভয়ানক বিমান ও ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়ে সামরিক স্থাপনা, সম্পদ ও অবকাঠামো গুঁড়িয়ে দেওয়া হবে। একই সঙ্গে ধ্বংস করা হবে চীনের যোগাযোগব্যবস্থা, অর্থনীতি ও রাজনৈতিক নেতৃত্ব। অর্থনৈতিক অবরোধের মাধ্যমে শিপিং লাইন ধ্বংস করে মধ্যপ্রাচ্য ও আফ্রিকা থেকে দক্ষিণপূর্ব এশিয়া হয়ে চীন যে জ্বালানি ও কাঁচামাল আমদানি করে, সেই পথ বন্ধ করে দেওয়া হবে।
চীনের মূল ভূখ-ের কাছাকাছি দক্ষিণ কোরিয়া, জাপান, গোয়াম ও অস্ট্রেলিয়ায় থাকা যুক্তরাষ্ট্রের বিমান ও নৌ ঘাঁটি থেকে এসব হামলা চালানো হবে। এ ছাড়া বিমানবাহী রণতরী ও সাবমেরিন থেকেও আক্রমণ চলবে। জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া ও গোয়ামে কৌশলগত বোমারু বিমান, গাইডেড মিসাইল সাবমেরিন, নৌবাহিনীর অত্যাধুনিক জাহাজ, অ্যান্টি সাবমেরিন ওয়ারফেয়ার এবং এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরজুড়ে পেট্রল এয়ারক্রাফট মোতায়েন করা হবে। জাপান ও কোরিয়ায় মোতায়েন করা হবে ভয়ংকর চতুর্থ ও পঞ্চম প্রজন্মের বোমারু বিমান। যুদ্ধে কৌশল নির্ধারণ ও সতর্কতার জন্য মহাকাশে থাকা স্যাটেলাইট বার্তা ব্যবহার করা হবে। এতে বলা হয়েছে, চীন যদি আরো সামনে বা ক্যালিফোর্নিয়া উপকূল বা যুক্তরাষ্ট্রের মূল ভূখ-ে হামলা করে, তাহলে কোনো সন্দেহ রাখা উচিত নয় যে যুক্তরাষ্ট্র কল্পনাতীত ক্ষিপ্রতায় ও আগ্রাসীভাবে তা মোকাবিলা করবে। তবে এ বিষয়েও সন্দেহ নেই যে প্রতিরোধ ভেঙে যুক্তরাষ্ট্রের নৌবাহিনী ও বিমানবাহিনী দক্ষিণ চীন সাগরে ঢুকে পড়লে কিংবা চীনের মূল ভূখ-ে হামলা করলে চীনও জাপান ও কোরিয়ায় থাকা যুক্তরাষ্ট্রের ঘাঁটিতে আক্রমণ চালাবে। পেন্টাগন আরো উদ্বিগ্ন যে চীনের সামরিক ঘাঁটি ও শহরগুলো ধ্বংসে যুক্তরাষ্ট্রের পরিকল্পনা দেশটি নস্যাৎ করে দেওয়ারও ক্ষমতা রাখে। ওয়েবসাইট।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: চীনকে শায়েস্তা করার ছক যুক্তরাষ্ট্রের
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ