Inqilab Logo

শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

হতাশা মুমিনের চরিত্র নয়-১

মাওলানা শিব্বীর আহমদ | প্রকাশের সময় : ৬ এপ্রিল, ২০১৯, ১২:০৩ এএম

দুনিয়ার এ জীবনে বিপদ আসেই। নানান সময় নানান দিক থেকে বিপদ এসে হামলে পড়ে আমাদের ওপর। অর্থসম্পদ, সন্তানাদি, সম্মান-মর্যাদা আক্রান্ত হয় সব কিছুই। দুনিয়ার জীবনে এ বিপদের মুখে পড়ার কথা অবশ্য আল্লাহ তায়ালার পক্ষ থেকে সুস্পষ্টভাবেই জানিয়ে দেয়া হয়েছে-‘আমি অবশ্যই তোমাদের পরীক্ষা করব সামান্য ভয় ও ক্ষুধা এবং জান-মাল ও ফসলের কিছুটা ক্ষতি দিয়ে।’ আর তুমি ধৈর্যশীলদের সুসংবাদ দাও- যাদের ওপর কোনো মসিবত এলে বলে- ‘ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন’। অর্থাৎ নিশ্চয়ই আমরা আল্লাহর আর অবশ্যই আমরা তাঁর কাছেই ফিরে যাবো।’ (সূরা বাকারা : ১৫৫-১৫৬)।
বোঝা গেল, বিপদ আসবেই। বিপদের মুহূর্তে কী করতে হবে সেই নির্দেশনাও দেয়া আছে এ আয়াতে। কিন্তু বিপদ যখন কিছুটা দীর্ঘস্থায়ী হয়, তা কেটে যাওয়ার মতো কোনো স্বাভাবিক সম্ভাবনা যখন মানুষের সামনে থাকে না, তখন আঘাত হানে হতাশা। হতাশা তাকে আল্লাহর রহমতের কথা ভুলিয়ে দিতে চায়।
আল্লাহর কুদরত থেকে তার দৃষ্টিকে সরিয়ে দিতে চায়। আল্লাহর সীমাহীন অনুগ্রহ এবং দয়াকে আড়াল করে দিতে চায়। অথচ পবিত্র কোরআনের ভাষ্য মতে, ‘মুমিন কখনোই হতাশ হতে পারে না। কোরআনে বর্ণিত ঘটনা। হযরত ইবরাহিম আলাইহিস সালাম যখন বার্ধক্যে উপনীত, আল্লাহ তায়ালার পক্ষ থেকে একদল ফেরেশতা এসে তখন তাঁকে এক জ্ঞানী পুত্রের সুসংবাদ শোনাল।
বিস্ময়ভরা কণ্ঠে হযরত ইবরাহিম আলাইহিস সালাম জিজ্ঞেস করলেন, ‘আমাকে তো বার্ধক্য পেয়ে বসেছে, এরপরও তোমরা আমাকে এ সুসংবাদ দিচ্ছ?! কিসের ভিত্তিতে তোমরা এ সুসংবাদ দিচ্ছ? ফেরেশতারা বলল, আমরা তো সত্য কথাই বলছি। আপনাকে সত্য সুসংবাদই দিচ্ছি। বার্ধক্য আপনাকে স্পর্শ করেছে করুক, এ বৃদ্ধ বয়সেই আপনার সন্তান হবে। আপনি নিরাশদের দলে যাবেন না। হযরত ইবরাহিম আলাইহিস সালাম তাদের কথার জবাবে বললেন, পথভ্রষ্টরা ছাড়া আর কে আপন প্রতিপালকের রহমত থেকে নিরাশ হতে পারে?’ (সূরা হিজর, ৫৩-৫৬ নং আয়াত দ্রষ্টব্য)।
আরেকজন নবীর আরেকটি ঘটনা। হযরত ইয়াকুব আলাইহিস সালামের সর্বাধিক প্রিয় সন্তান ছিলেন হযরত ইউসুফ আলাইহিস সালাম। কিন্তু তাঁর ভাইয়েরা বাবার এই আদরকে সহজে মেনে নিতে পারেনি, তাই কৌশলে তাঁকে একদিন বাবার কাছ থেকে নিয়ে গিয়ে ক‚পে ফেলে দিলো। আল্লাহর অসীম কুদরতে ক‚প থেকে উঠে এসে একদিন তিনি মিসরের ধনভাÐারের দায়িত্বশীল হলেন।
আর যে ভাইয়েরা তাঁকে নিয়ে চক্রান্ত করেছিল, দুর্ভিক্ষের শিকার হয়ে তারা খাবার আনতে হাজির হলো তাঁর কাছে। এরপর এক কৌশলে তিনি তাঁর সহোদর বিনইয়ামীনকে নিজের সঙ্গে রেখে দিলেন।
দুই ছেলে হারিয়ে বাবা হযরত ইয়াকুব আলাইহিস সালাম অন্য ছেলেদের বললেন, (তরজমা) ‘হে আমার ছেলেরা! তোমরা যাও, ইউসুফ ও তার ভাইয়ের সন্ধান করো। তোমরা আল্লাহর রহমত থেকে নিরাশ হয়ো না। নিশ্চিত জেনো, আল্লাহর রহমত থেকে তো কাফের ছাড়া অন্য কেউ নিরাশ হতে পারে না।’ (সূরা ইউসুফ : ৮৭)।



 

Show all comments
  • মোঃ রিমন ইসলাম ৬ এপ্রিল, ২০১৯, ১:৫৩ এএম says : 0
    হতাশ নয়; মুমিন হবে আশাবাদী। আল্লাহর রহমতের আশায় থাকবে সে; নিরেট পার্থিব বিষয় নিয়েও, দ্বীনী ও পরকালীন বিষয়েও। সর্বশক্তিমান দয়ালু আল্লাহর গুণবাচক নামগুলোর প্রতি যার বিশ্বাস থাকবে অটুট, তার অবশ্য হতাশ হওয়ার সুযোগ কোথায়! এ বিশ্বাস হতাশাকে দূর করবেই।
    Total Reply(0) Reply
  • মাঝহার খন্দকার ৬ এপ্রিল, ২০১৯, ১:৫৫ এএম says : 0
    হতাশা-মানব জীবনের অতি পরিচিত একটি বিষয়। প্রাপ্তির আশা যেমন রয়েছে আমাদের জীবনে, তেমনি রয়েছে হারানোর বেদনা এবং হতাশা। জীবন ধারণের বিভিন্ন ক্ষেত্রে, বিভিন্ন আদান-প্রদান বা লেনদেনে অনেক কিছু না পাওয়ার আঘাতে হতাশ হই আমরা। হয়ে পড়ি দুশ্চিন্তাগ্রস্ত। এই হতাশাই আবার কাল হয়ে দাঁড়ায়। শয়তানের প্ররোচনায় হতাশ হয়ে আত্মহত্যার পথ বেছে নেয় অনেক মানুষ। ইসলাম মানুষকে হতাশ না হওয়ার ব্যাপারে যথেষ্ট উৎসাহ প্রদান করেছে। এক কথায় ইসলাম ধর্মে হতাশার কোনো স্থান নেই।
    Total Reply(0) Reply
  • সাদ বিন জাফর ৬ এপ্রিল, ২০১৯, ১:৫৫ এএম says : 0
    পবিত্র কোরানে বহু স্থানে আল্লাহ তায়ালা বিভিন্ন প্রসঙ্গে বারবার বলেছেন, আমার রহমত থেকে তোমরা নিরাশ বা হতাশ হয়ো না। পবিত্র কোরানের সুরা জুমারের ৫৩নং আয়াতে আল্লাহ তায়ালা আরো ইরশাদ করেছন, বলুন, হে আমার বান্দাগণ! যারা নিজেদের ওপর জুলুম করেছ, তোমরা আল্লাহর রহমত থেকে নিরাশ হয়ো না। নিশ্চয় আল্লাহ সব গোনাহ মাফ করেন। তিনি ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।
    Total Reply(0) Reply
  • সিফাত মাহমুদ ৬ এপ্রিল, ২০১৯, ১:৫৫ এএম says : 0
    সাধারণত বিভিন্ন বিপদের কারণেই হতাশাগ্রস্ত হই আমরা। কিন্তু ইসলামের নবি এই বিপদকে ইতিবাচক দৃষ্টিতে দেখার শিক্ষা প্রদান করেছেন। বোখারি শরীফের একটি হাদিসে এসেছে, নবিজি [সা.] বলেছেন, আল্লাহ যার কল্যাণ কামনা করেন, তাকে বিপদেও জড়িত করেন। ইসলামী জ্ঞানের বিখ্যাত পণ্ডিত ইমাম গাজ্জালি [রহ.] বলেছেন, প্রতিটি বেদনা বস্তুত একটি একটি সম্ভাবনা। বিপদে-আপদে হতাশ না হয়ে ধৈর্য ধারণ কর এবং ইতিবাচক দৃষ্টিতে বিপদের মোকাবেলা কর।
    Total Reply(0) Reply
  • কাজী আনিস ৬ এপ্রিল, ২০১৯, ১:৫৬ এএম says : 0
    স্বাভাবিক নিয়মে জীবনের নানা বাঁকে মুমিনের জীবনে হতাশ হওয়ার মতো পরিস্থিতি আসতে পারে; দুঃখ-কষ্ট জীবনেরই অংশ। এসব এলে হতাশ হয়ে পড়া মুমিনের লক্ষণ নয়। এগুলো এলে কি করতে হবে তা আল্লাহতায়ালা কোরআনে কারিমে বলে দিয়েছেন। ইরশাদ হয়েছে, ‘হে ঈমানদানগণ! ধৈর্য্যধারণ কর এবং মোকাবেলায় দৃঢ়তা অবলম্বন কর। আর আল্লাহকে ভয় করতে থাক যাতে তোমরা তোমাদের উদ্দেশ্য লাভে সমর্থ হতে পার। -সূরা আলে ইমরান: ২০০
    Total Reply(0) Reply
  • তবিবুর রহমান ৬ এপ্রিল, ২০১৯, ১:৫৬ এএম says : 0
    ইসলামি স্বলারদের অভিমত হলো- যখন দুঃখ ও কষ্ট চারদিক থেকে ঘিরে ধরবে, তখন নফল নামাজ আদায় করে আল্লাহর দরবারে মোনাজাত করবে। এটাই ইসলামের শিক্ষা ও আল্লাহর রাসূলের আমল।
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: হতাশা

৩০ সেপ্টেম্বর, ২০২২

আরও
আরও পড়ুন