Inqilab Logo

শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

ভারতের ভোটে নজরদারিতে তিন দেশে ফেসবুকের ‘ওয়ার রুম’

ইনকিলাব ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ৯ এপ্রিল, ২০১৯, ৫:৫৮ পিএম

সোশ্যাল মিডিয়ায় ভুয়া খবর ছড়িয়ে যাতে জনমতে প্রভাব ফেলা না যায়, তার জন্য পৃথিবী জুড়ে বিভিন্ন কেন্দ্র থেকে ভারতের নির্বাচনের উপর নজর রাখছে ফেসবুক। আমেরিকা, সিঙ্গাপুর এবং আয়ারল্যান্ডের তিনটি অফিস থেকে ২৪ ঘণ্টা এই নজর রাখার কাজ করছে মোট ৪০টি দল, কাজ করছেন প্রায় ৩০,০০০ কর্মী। খবর এনডিটিভি।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, শুধু ভারতের নির্বাচন নিয়েই পৃথিবীর তিনটি শহরে খোলা হয়েছে তিনটি নজরদারি কেন্দ্র। মূল কেন্দ্রটি আমেরিকার ক্যালিফোর্নিয়ায়। অন্য দু’টি কেন্দ্র হল সিঙ্গাপুর এবং আয়ারল্যান্ডের ডাবলিন। তিনটি শহর থেকে প্রতি মুহূর্তে ভারতের নির্বাচনের উপর নজর রাখছে মোট ৪০টি দল। এ ছাড়া এই দলের সঙ্গে রাখা হয়েছে ফেসবুকের তথ্যসুরক্ষা দলের অন্তত ৩০,০০০ কর্মীকে। দরকার পড়লেই যে কোনও মুহূর্তে এই কর্মীদের তলব করতে পারে ফেসবুক কর্তৃপক্ষ।

২০১৫ সালে মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচন, ২০১৬ সালে ব্রেক্সিট গণভোট এবং ২০১৮ সালে মেক্সিকোর সাধারণ নির্বাচন, এই তিনটি ক্ষেত্রেই ফেসবুক ব্যবহারকারীদের ব্যক্তিগত তথ্য ব্যবহার করে জনমত প্রভাবিত করার অভিযোগ উঠেছিল। এই কেলেঙ্কারির কথা স্বীকার করে নিয়েছিলেন ফেসবুক প্রতিষ্ঠাতা মার্ক জাকারবার্গও। কেমব্রিজ অ্যানালিটিকা নামের একটি সংস্থা ফেসবুকের কাছ থেকে এই তথ্য হাতিয়ে তা ব্যবহার করেছিল অবৈধ ভাবে, এই তথ্য সামনে আসার পর প্রশ্ন উঠেছিল ফেসবুকে ব্যবহারকারীদের তথ্য কতটা সুরক্ষিত, তা নিয়েও। আর্থিক ভাবেও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল ফেসবুক। এর পরই ব্যবহারকারীদের তথ্যসুরক্ষায় বিপুল পরিমাণ টাকা বরাদ্দ করার কথা জানায় ফেসবুক।

প্রকাশিত রিপোর্টে ফেসবুকের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্তা কৌশিক আইয়ার বলেছেন, ‘আমরা অনেক আগেই বুঝতে পারি, ভারতের ক্ষেত্রে আমাদের সব থেকে বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে উঠবে ভাষার বৈচিত্র। তাই আমাদের বিভিন্ন যন্ত্র যাতে ভারতের বিভিন্ন ভাষা পড়তে পারে, সেই প্রযুক্তির খাতে আমরা সব থেকে বেশি টাকা বরাদ্দ করেছিলাম। স্বয়ংক্রিয় অনুবাদ পদ্ধতি এবং তার মাধ্যমে কোনও পোস্টের ভুয়ো বা আপত্তিকর অংশ চিহ্নিত করার ক্ষেত্রেও আমরা অনেক বেশি শক্তিশালী এখন। কোথাও কোনও সঙ্কট দেখা দিলে এখন আমরা অনেক তাড়াতাড়ি ব্যবস্থা নিতে পারছি।’

নতুন ব্যবস্থা কতটা সফল হচ্ছে, তার একটা প্রাথমিক ধারণা পাওয়া গিয়েছে ব্রাজিলের সাধারণ নির্বাচন এবং আমেরিকার মধ্যবর্তী নির্বাচনে। কিন্তু আসল লড়াই যে ভারতই, তা স্বীকার করে নিয়েছেন ফেসবুক কর্তারাই। কারণ, পৃথিবীর সব থেকে বড় নির্বাচন হয় বহু ভাষাভাষির দেশ ভারতেই। তথ্যসুরক্ষার বিষয়টি মাথায় রেখে গত ১৮ মাসে এই বিভাগে নিজেদের কর্মীসংখ্যা ১০,০০০ থেকে বাড়িয়ে ৩০,০০০ করেছে ফেসবুক। পাশাপাশি প্রতি মুহূর্তে নজর রাখা হচ্ছে বিভিন্ন ভাষায় ভারতের সবক’টি প্রধান সংবাদমাধ্যমের উপরও। ফেসবুকের নয়াদিল্লি অফিসের পাশাপাশি ২৪ ঘণ্টা তারা যোগাযোগ রাখছেন নির্বাচন কমিশনের সঙ্গেও। কোথাও কোনও ভুয়া খবর পোস্ট করা হলে তিন ঘণ্টার মধ্যেই তা সরিয়ে দেওয়া লক্ষ্য এখন ফেসবুকের। ফেসবুক কর্তৃপক্ষকে এই সময়সীমা বেঁধে দিয়েছিল ভারতের নির্বাচন কমিশনই। ফেসবুক কর্তা কৌশিক আইয়ারের দাবি, ‘আমাদের একটা বড় কাজ নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে যোগসূত্র তৈরি করা। ওখান থেকে কিছু জানালেই আমরা যত দ্রুত সম্ভব তা সরিয়ে দিচ্ছি। ব্রাজিলের সাধারণ নির্বাচনের সময়ও এই পদ্ধতিতে কাজ করে আমরা সাফল্য পেয়েছিলাম।’

তাহলে কি সোশ্যাল মিডিয়ায় ভুয়ো খবরের গ্রাস থেকে মুক্ত করা যাবে পৃথিবীর বৃহত্তম নির্বাচনকে? এই প্রশ্নের উত্তরে অবশ্য কৌশিক বলছেন, ‘আমরা প্রস্তুত। আমরা যা করেছি, তার পিছনে আছে গত কয়েক মাসের নিরলস গবেষণা, প্রযুক্তিগত দক্ষতা এবং ভুয়ো খবরকে সুনির্দিষ্ট ভাবে চিহ্নিত করার ক্ষমতা। পর্যাপ্ত টাকা বরাদ্দ থাকায় আমরা খোলা মনে কাজ করতে পেরেছি, অনেক জলদি সিদ্ধান্তও নিতে পেরেছি। যদিও প্রতি মুহূর্তে প্রযুক্তির পরিবর্তন করতে হচ্ছে। এটাই দস্তুর আজকের পৃথিবীতে। এই নির্বাচন হয়ে গেলে আমরা বুঝতে পারব, কতটা সফল হলাম আমরা। কোথায় খামতি থাকছে, তাও বুঝতে পারবো আমরা। সেই মত ঠিক করা হবে আগামী দিনের পরিকল্পনা ও বিনিয়োগ।’

 



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ভারত


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ