Inqilab Logo

শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৭ বৈশাখ ১৪৩১, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

তনুর ডিএনএ প্রোফাইল মেলাতে ৩ সেনা সদস্যসহ ২০ জনের তালিকা

প্রকাশের সময় : ২২ মে, ২০১৬, ১২:০০ এএম

সাদিক মামুন, কুমিল্লা থেকে : কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া সরকারি কলেজের ইতিহাস বিভাগের স্নাতক দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্রী ও ভিক্টোরিয়া কলেজ থিয়েটারের সদস্য সোহাগী জাহান তনু হত্যা মামলার তদন্ত কার্যক্রম বেশ জোরেশোরে চলছে। ডিএনএ রিপোর্টে তনুর শরীর ও পরনের বস্ত্রে তিন পুরুষের শুক্রানুর অস্তিত্ব পাবার পর ধর্ষকদের চিহ্নিত করার প্রাথমিক কাজ হিসেবে প্রায় বিশজনের তালিকা তৈরি করেছে সিআইডির মামলা তদন্ত সহায়ক দল। তালিকায় তিন সেনা সদস্যের নামও রয়েছে। আইনি প্রক্রিয়ায় সন্দেহভাজনদের তালিকা চেয়ে তাদের কর্মস্থলে চিঠিও পাঠানো হবে। চাঞ্চল্যকর তনু হত্যার ঘটনায় ইতোমধ্যে দেশবাসীর আলোচনার জায়গায় উঠে এসেছে তনুর লাশের প্রথম ময়নাতদন্তকারী চিকিৎসক ডা. শারমিন সুলতানা শাম্মী। সিআইডির তদন্ত সহায়ক দল সন্দেহভাজনদের তালিকার বাইরেও ডা. শাম্মীকে নিয়ে ভাবতে শুরু করেছেন। কেননা তাড়াহুড়া করে প্রথম ময়নাতদন্তের রিপোর্ট দিতে ডা. শাম্মী কেন এতো উৎসাহী হয়ে উঠেছিলেন। আর প্রথম ময়নাতদন্তে তনুর কানের নিচে আঘাত ও রক্ত জমাটের বিষয়টিকে পোকামাকড়ের বলে উল্লেখ করার পেছনে এবং খুনের কারণ নির্ণয় করাসহ ধর্ষণের আলামত না পাওয়ার বিষয়গুলো সিআইডিকে ভাবিয়ে তুলেছে। আর এসব ভাবনা থেকে সিআইডি অনেকটা নিশ্চিত হয়েছেন প্রথম ময়নাতদন্তে ডা. শারমিন সুলতানা শাম্মীর গাফলতি রয়েছে। আর গাফলতির প্রমাণ পাওয়া গেলে তাকেও আইনের আওতায় আনা হবে বলে সিআইডি সূত্রে জানা গেছে। এদিকে সিআইডির একজন সিনিয়র কর্মকর্তা জানান, সব তথ্য-উপাত্ত বিচার-বিশ্লেষণ করে তালিকা থেকে চূড়ান্ত সন্দেহের পর তনুর শরীরে পাওয়া ডিএনএ প্রোফাইলের সঙ্গে সন্দেহভাজনদের ডিএনএ প্রোফাইল মেলানোর কাজ শুরু হবে।
এদিকে কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ ফরেনসিক বিভাগের প্রধান ও দ্বিতীয় ময়নাতদন্ত মেডিকেল বোর্ডের প্রধান ডা. কামদা প্রসাদ সাহা ওরফে কেপি সাহার নেতৃত্বাধীন টিম তনুর লাশের দ্বিতীয় ময়নাতদন্ত রিপোর্ট দিতে কেন এতো সময় নিচ্ছে তা নিয়ে ওই টিমের বিষয়ে সিআইডিসহ জনমনে সন্দেহ বাড়ছে। অন্যদিকে সিআইডি থেকে প্রকাশিত তনুর ডিএনএ টেস্ট রিপোর্ট আদালতের মাধ্যমে আইনি প্রক্রিয়ায় আনবে কিনা এ বিষয়ে ডা. কামদা প্রসাদ সাহার টিম আজ রোববার বৈঠকে বসবে কিনা তা গতকাল পর্যন্ত জানা যায়নি। তবে বৈঠকে বসলেও মেডিকেল বোর্ডের সিদ্ধান্ত ও আদালত পর্যন্ত যাওয়া-আসা মিলিয়ে দ্বিতীয় ময়নাতদন্তের রিপোর্ট আগামী এক সপ্তাহেও পাওয়ার সম্ভাবনা নেই।
দেশব্যাপী আলোচিত তনু হত্যা মামলার অগ্রগতি নিয়ে সন্তুষ্ট তনুর পরিবার। সিআইডির ফরেনসিক ল্যাব থেকে প্রাপ্ত ডিএনএ টেস্টে তনুকে ধর্ষণ করা হয়েছে এমন বিষয় রিপোর্টে পাওয়ার পর তনুর পরিবারসহ গোটা দেশবাসী মামলা তদন্তের পরবর্তী ধাপগুলো নিয়ে বেশ আশাবাদী হয়ে উঠেছে। দেশের মানুষ আশা করছেন সিআইডি তাদের সর্বাত্মক প্রচেষ্টা দিয়ে তনুর খুনিদের আইনের আওতায় এনে নজির সৃষ্টি করবে। দেশের মানুষের এমন প্রত্যাশাকেই মূল্যায়ন করেছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল। সম্প্রতি ঢাকায় রাজারবাগ পুলিশ লাইন্সে এক অনুষ্ঠানে তিনি বলেছেন সিআইডি তাদের, মেধা, অভিজ্ঞতা দিয়ে অত্যন্ত সতর্কতা ও দায়িত্বশীলতার সাথে তনু হত্যা মামলার জট খুলতে শুরু করেছে। সিআইডি তাদের সক্ষমতা দিয়ে সফলতার মাধ্যমে এই মামলার তদন্তও শেষ করবে।
উল্লেখ্য, প্রায় ৬০ দিন আগে গত ২০ মার্চ কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজ ছাত্রী সোহাগী জাহান তনুর লাশ রাত ১০টার দিকে তার বাড়ির কাছাকছি কুমিল্লা সেনানিবাসের আবাসিক এলাকা পাওয়ার হাউজের ঝোপ থেকে তার বাবা ইয়ার হোসেন ও প্রতিবেশি এক শিক্ষকসহ উদ্ধার করেন। ২১ মার্চ ময়না তদন্ত শেষে তনুকে তার গ্রামের বাড়ি কুমিল্লার মুরাদনগরের মির্জাপুরে দাফন করা হয়। এ ঘটনায় কুমিল্লা কোতোয়ালী থানায় তনুর বাবা হত্যা মামলা করেন। কলেজ ছাত্রী সোহাগী জাহান তনু হত্যার ঘটনা ঘিরে শুরু থেকেই বিচারের দাবিতে উত্তাল হয়ে উঠে সারা দেশ। একই সাথে চলে সোশ্যাল মিডিয়াতেও প্রতিবাদের ঝড়। চাঞ্চল্যকর এ মামলাটি বর্তমানে সিআইডি তদন্ত করছেন।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: তনুর ডিএনএ প্রোফাইল মেলাতে ৩ সেনা সদস্যসহ ২০ জনের তালিকা
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ