Inqilab Logo

শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

পশ্চিমবঙ্গে নাগরিকপঞ্জী চালু নিয়ে অমিত-মমতা পাল্টাপাল্টি হুঙ্কার

ইনকিলাব ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ১৩ এপ্রিল, ২০১৯, ১২:০৪ এএম

ভারতের সাধারণ নির্বাচন চলার মধ্যে নাগরিকপঞ্জী নিয়ে তুমুল বাগ্যুদ্ধে জড়িয়ে পড়েছেন বিজেপি সভাপতি অমিত শাহ ও পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। হুঙ্কার পাল্টা হুঙ্কার চলছে, যাকে বলে দু’জনের একেবারে যুদ্ধংদেহি অবস্থা। অমিত শাহ বৃহস্পতিবার রায়গঞ্জের জনসভা থেকে হুঙ্কার দেন, ‘মমতাজি সর্বশক্তি দিয়ে বাধা দিলেও এনআরসি ঠেকাতে পারবেন না। আসামের মতো এ রাজ্যেও নাগরিকপঞ্জি হবেই। অনুপ্রবেশকারীদের বেছে বেছে সাগরে ফেলে দেয়া হবে।’ এ দিনই দার্জিলিঙের জনসভা থেকে আর একবার নিজের অবস্থান স্পষ্ট করে দিয়ে মমতা চ্যালেঞ্জ দেন, ‘বাংলায় এনআরসি হতে দেব না।’
এ মাসের গোড়া থেকে উত্তরবঙ্গে প্রচার শুরু করেছেন মমতা। মঙ্গলবার রায়গঞ্জে বিজেপিকে হুঁশিয়ারি দিয়ে তিনি বলেন, ‘ক্ষমতা থাকলে এ রাজ্যে এক জনের গায়েও হাত দিয়ে দেখান।’
নাগরিকপঞ্জী এবং নাগরিকত্ব সংশোধনী বিল নিয়েও একাধিকবার বিজেপিকে চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দিয়েছেন মমতা। বৃহস্পতিবার সেই রায়গঞ্জেই দলের নির্বাচনী সভায় শাহ বলেন, ‘বাংলায় এনআরসি (নাগরিকপঞ্জি) হবেই।’ এই প্রসঙ্গেই বিজেপির প্রস্তাবিত নাগরিকত্ব সংশোধনী বিল ব্যাখ্যা করে বিজেপি সভাপতি বলেন, ‘বাঙালি শরণার্থীদের দেশের নাগরিকত্ব দেয়া হবে। হিন্দু, বৌদ্ধ, জৈন এবং খ্রিস্টান ধর্মের যেসব মানুষ অত্যাচারিত হয়ে এখানে আশ্রয় নিয়েছেন, তারা আমাদের সহোদর। তারা অনুপ্রবেশকারী নন। তাদের সবাইকে নাগরিকত্ব দেয়া হবে।’
নাগরিকত্ব বিল নিয়ে প্রথম থেকেই বিরোধিতা করছেন মমতা। আসামে বিজেপির বিরুদ্ধে বঙ্গভাষী হিন্দু ও সংখ্যালঘুদের উপরে অত্যাচারের অভিযোগও একাধিক বার তুলেছেন তিনি। বিষয়টি নিয়ে সংসদেও প্রতিবাদ করেছে তৃণমূল।
উত্তরবঙ্গে ভোট চাইতে এসে শাহ বলেন, ‘ভয় পাবেন না। হিন্দু, বৌদ্ধ, জৈন, খ্রিস্টান শরণার্থীদের আমরা এ দেশের সন্তান বলেই মনে করি। নাগরিকত্ব সংশোধনী বিল সংসদে উঠলেই তৃণমূলের সাংসদেরা চেঁচামেচি করেন।’ কটাক্ষের সুরে তার মন্তব্য, ‘অনুপ্রবেশকারীরা কি আপনাদের চাচাতো ভাই? তৃণমূল মানেই অনুপ্রবেশে মদদদাতা।’
এদিন শাহকে পাল্টা কটাক্ষ করে রাজ্যের মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম বলেন, ‘উনি যতই হুঙ্কার দিন, বাংলায় কারও ক্ষমতা নেই নাগরিকপঞ্জী চালু করবে। বাংলার মানুষ বিভেদের রাজনীতিকে প্রশ্রয় দেন না। আমরা আগেও প্রতিবাদ করেছি, এখনও করছি এবং পরেও করবো। মানুষ ওই দাঙ্গাবাজকে উচিত শাস্তি দেবে।’
দার্জিলিংয়ের চকবাজারে বৃহস্পতিবার তৃণমূল প্রধান মমতা বলেন, ‘বিজেপি পাহাড়ের জন্য ভাবেনি। পাহাড়ে শুধু ভোটের জন্য আসে। ভোটে জিতে দেখা মেলেনি বিজেপি সাংসদের। বিজেপি পাহাড়ের উন্নয়ন চায় না। সাবেক বিজেপি সাংসদ সুরিন্দর সিং আলুওয়ালিয়া এসে হালুয়া খেয়ে চলে গিয়েছেন। এখনকার প্রার্থীও চলে যাবেন।’
মমতা বক্তৃতা শুরু করার কয়েক মিনিট আগে ৩০ কিলোমিটার দূরে কালিম্পংয়ে অমিত শাহ বলেন, ‘বাংলায় এখন একমাত্র যে কারখানা চলছে, তা হল বোমা তৈরির কারখানা। শ্রমিক ও গরিবের পাশে একমাত্র বিজেপি থাকে। মমতাকে উৎখাত করতে পারে একমাত্র বিজেপি। মোদিজি ফের প্রধানমন্ত্রী হবেন। বাংলায় আমরা শরণার্থীদের সম্মান দেব। কিন্তু অনুপ্রেবশকারীদের তাড়াব। এখানেও এনআরসি হবে।’
চকবাজারে এর উত্তর দেন মমতা। তিনি বলেন, ‘কৃষক মেরে কৃষক প্রেম, বিজেপি শেম শেম। আসামে ৪২ লাখ বাঙালিকে তাড়িয়েছে। ২২ লাখ হিন্দু। বাকিরা মুসলিম। নেপালি ও বিহারীদেরও তাড়িয়েছে। এনআরসি এখানে করে দেখুক। আমি করতে দেব না। একটাও আসন এখান থেকে বিজেপি পাবে না। প্রথমে দিল্লি সামলাও। এবার বিজেপি শূন্য পাবে। দিল্লিতে এনআরসির প্রতিবাদ আমরাই করেছিলাম। আর হতে দেব না।’
রাজনৈতিক মহলের একাংশের মতে, রায়গঞ্জের মতো সীমান্ত অঞ্চলে এসে শাহ যেভাবে ‘মেরুকরণে’র তাস ব্যবহার করে মুখ্যমন্ত্রীকে ‘আক্রমণ’ করলেন, তা তাৎপর্যপূর্ণ।
উল্লেখ্য, প্রথম থেকেই মমতা নাগরিকপঞ্জী নাগরিকত্ব সংশোধনী বিলের বিরোধিতায় সরব হয়েছেন। তবে বিজেপি নির্বাচনী প্রচারের শেষ পর্যায়ে এনআরসিকেই ইস্যু করে প্রচারে নেমেছে।
হাওয়া বুঝে ভোট দিন : মোদি
‘ভারতে আরও একবার মোদি সরকারের’ গন্ধ পাচ্ছেন বলে মন্তব্য করেছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। তিনি বলেছেন, সর্বশেষ পাওয়া তথ্য থেকেই স্পষ্ট হয়ে গেছে, হাওয়া কোনদিকে বইছে। সুতরাং হাওয়া বুঝে ভোট দিন। বৃহস্পতিবার লোকসভার প্রথম ধাপের নির্বাচনের দিন আসামের শিলচরে এক জনসভায় এ কথা বলেন তিনি। উপস্থিত কর্মী-সমর্থকদের উদ্দেশে মোদি আরও বলেন ‘কোনদিকে বাতাস বইছে, আপনাদের উৎসাহ থেকেই তা বোঝা যাচ্ছে।’
তিনি বলেন, ফের নাগরিকত্ব সংশোধনী বিল সংসদে পেশ করা হবে। এবার পাশও হবে বলে তিনি সকলকে আশ্বস্ত করেন।
এদিকে ভোটের দিন আসামে জনসভা করায় মোদির বিরুদ্ধে নির্বাচনী আচরণবিধি লঙ্ঘনের অভিযোগ এনেছেন আসামের বর্ষীয়ান কংগ্রেস নেতা ও সাবেক মুখ্যমন্ত্রী তরুণ গগৈ। তিনি অভিযোগ করেন, নির্বাচনের পরের দিন এমন প্রচারণা চালাতে পারতেন। আসামে লোকসভার ৫টি আসনে ভোটগ্রহণ চলছে। ১৮ এপ্রিল দ্বিতীয় দফার ভোট হওয়ার কথা। এ উপলক্ষে বৃহস্পতিবার আসামে দুটি নির্বাচনী জনসভায় বক্তব্য রাখেন মোদি। তিনি নাগরিকত্বপঞ্জীকেই হাতিয়ার করে প্রচার চালান। সূত্র : আনন্দবাজার পত্রিকা।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ভারত


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ