Inqilab Logo

শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৭ বৈশাখ ১৪৩১, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

আবর্জনায় ভরা রাজধানী

পরিষ্কার শুরু করেছে সিটি কর্পোরেশন

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ১৬ এপ্রিল, ২০১৯, ১২:০৩ এএম

রাজধানী ঢাকার অলিগলিতে এমনিতেই ময়লা আবর্জনায় পূর্ণ থাকে। ইউনোস্কোর এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে বিশ্বে বসবাসের অযোগ্য শহরগুলোর অন্যতম একটি ঢাকা। এ অবস্থায় পহেলা বৈশাখে বর্ষবরণ উপলক্ষে আয়োজিত নানান অনুষ্ঠানকে কেন্দ্র করে নগরবাসী ঢাকাকে ময়লা-আবর্জনার এক ভাগারে পরিণত করেছে। বাংলা নববর্ষ উদযাপন করতে এসে নাগরিকরা যে যেমন পেরেছে ময়লা আবর্জনা ছড়িয়ে গেছে। নববর্ষের উৎসবে যারা এসেছেন তাদের বেশিরভাগই সমাজের সচেতন ও শিক্ষিত মানুষ। তারা সমব সময় সিটি কর্পোরেশন, ওয়াসাসহ বিভিন্ন সেবা সংস্থাকে উপদেশ দিয়ে থাকেন, যেন নগরকে পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখা হয়। ড্রেন, খাল পরিষ্কার করা হয়। শহরের অলি-গলি ও রাস্তা-ঘাট যেন নিয়মিত পরিষ্কার করা হয়। অথচ তারাই নববর্ষের উৎসবে এসে যেভাবে শহরের পার্ক, রবিন্দ্র সরোবরসহ রাস্তা-ঘাটগুলো ময়লা করে গেছেন তা পরিষ্কার করতে সিটি কর্পোরেশনের পরিচ্ছন্ন কর্মীদের অন্তত ৩/৪দিন সময় লাগবে। গতকাল সোমবার রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে নববর্ষের দিনে মানুষের ছিটানো ময়লা আবর্জনা কুড়ানো সিটি কর্পোরেশনের পরিচ্ছন্নকর্মী আমজাদ হোসেন এভাবে তার বিরক্তিভাব প্রকাশ করেন।
গত রোববার রাজধানী ঢাকা ছিল উৎসবের শহর। এইদিনে বাংলা নববর্ষ উদযাপনে রাজধানীবাসী শহরের রমনা পার্ক, সেহরাওয়ার্দী উদ্যান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা, ধানমন্ডির রবিন্দ্র সরোবর, সংসদভবনের সামনে মানিক মিয়া এভিনিউ ও হাতিরঝিলসহ শহরের বিভিন্ন বিনোদন কেন্দ্রে উৎসবে মেতে উঠে। গতকাল সরেজমিন এ সমস্ত স্থানে গিয়ে দেখা যায়, উৎসবে আগতদের ফেলে যাওয়া ময়লা আবর্জনা ছেয়ে আছে যত্রতত্র। বিশেষ করে রাজধানীর ধানমন্ডির রবিন্দ্র সরোবর, রমনা পার্ক ও সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে দর্শনার্থীদের রেখে যাওয়া আবর্জনায় স্তূপ হয়ে আছে। এখানকার কোথাও বোতল, কোথাও কাগজ, কোথাও বা আইসক্রিমের প্যাকেট। সঙ্গে ছড়ানো-ছিটানো মঞ্চ তৈরির বাশ, ডাবের খোল, বাদামের খোসা, কাগজ আর ডালপালা। এসব আবর্জনা সরাতে ইতোমধ্যে কাজ শুরু করেছে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের পরিচ্ছন্নতা কর্মীরা।
জানতে চাইলে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন বর্জ্য বিভাগের অতিরিক্ত প্রধান কর্মকর্তা খন্দকার মিল্লাতুল ইসলাম ইনকিলাবকে কলেন, নববর্ষের উৎসবে আসা নগরবাসী রাজধানীর রমনা পার্ক, সোহরাওয়ার্দী উদ্যান ও রবিন্দ্র সরোবরসহ বিভিন্ন স্থানে যেসব আবর্জনা ছড়িয়ে ছিটিয়ে গেছে তা ইতোমধ্যে আমরা আপসারণ করতে সক্ষম হয়েছি। এর পরও যদি কোথাও ময়লা আবর্জনা থেকে যায় আর সেটা আমাদের দৃষ্টিতে আসলে আমরা তা সাথে সাথে আপসারণ করে দিব। তিনি বলেন, এমনিতেই সিটি কর্পোরেশনের পরিচ্ছন্ন বিভাগে লোকবলের অভাব রয়েছে। তারপরও আমরা আমাদের সাধ্যমত চেষ্টা করেছি শহরকে পরিষ্কার করতে। তিনি আরও বলেন, যারা এই উৎসবে অংশগ্রহণ করেছেন তাদের প্রত্যেকেই শিক্ষিত ও সচেতন মানুষ। তারা যদি এইভাবে শহরকে অপিষ্কার করে তা হলে আর কাকে বুঝাবো।
দেখা গেছে, রাজধানীর রবিন্দ্র সরোবর, রমনা পার্ক ও সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে বিভিন্ন ধরনের কাগজ, প্যাকেট, পলিথিন, নানা পনীয়’র বোতলসহ ময়লা আবর্জনায় ছেয়ে আছে। সঙ্গে ছড়ানো-ছিটানো অবস্থায় আছে মঞ্চ তৈরির বাশ, ডাবের খোল, বাদামের খোসা আর ডালপালা। তবে এই তিন’টি স্পটই পরিষ্কারের কাজ করছেন ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের পরিচ্ছন্নতা কর্মীরা। তারা এই স্থানগুলো থেকে আবর্জনা অনেকটাই আপসারণ করে ফেলেছে। এছাড়া শহরের কিছু কিছু স্থানের ময়লা আবর্জনা ছড়িয়ে থাকতে দেখা গেছে। পরিচ্ছন্নকর্মীরা বলেন, যেসব স্থানে এখনো আবর্জনা রয়ে গেছে সেগুলোও দ্রুত আপসারণ করা হবে।
রমনা পার্ক ও সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে চলমান ইলেকট্রিকের কাজ প্রায় শেষপর্যায়ে। গত রোববার রাত থেকেই এ কাজে সময় পার করেছেন বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (পিডিবি) নিজস্ব ও আউটসোর্সিংয়ের মাধ্যমে নিয়োগপ্রাপ্ত কর্মীরা। গতকাল সোমবার বিকেলের মধ্যেই বাকি কাজ শেষ হবে বলে জানান গণপূর্ত বিভাগের ইলেকট্রিক ম্যান রেজাউল করিম। সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, নগর গণপূর্ত বিভাগের অধীনে রমনা পার্ক ও সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের পরিষ্কারের কাজ দেওয়া হয়েছে রিমন এন্টারপ্রাইজের ওপর। তাদের ৪৫ জন কর্মী সকাল ৯টা থেকে কাজ করছেন। সবার কাছে রয়েছে একটি করে বস্তা। তারা বিভিন্ন ধরনের ময়লা আবর্জনা, ছড়িয়ে থাকা কাগজ, বোতল, চা-কফির কাপ, আইসক্রিমের প্যাকেট কুড়িয়ে বস্তায় ভরছেন। পরে একটা নির্দিষ্ট স্থানে রাখছেন। যেখান থেকে শহরের বাইরে কোনো ময়লা ফেলার স্থানে নিয়ে রাখা হবে। পরিচ্ছন্নতা কর্মী সবুজ বলেন, আমরা গতকাল সোমবার সকাল ৯টা থেকে কাজ শুরু করেছি। বৈশাখের কারণে এবার ময়লা বেশি হয়েছে।
অন্যদিকে ধানমন্ডির রবিন্দ্র সরোবর ঢাকা দক্ষিণ সিটির আন্ডারে থাকলেও এটি বর্তমানে ইজারা দেয়া আছে। গতকাল সোমবার বিকালে সরেজমি রবিন্দ্র সরোবর গিয়ে দেখা যায় ইজারাদার প্রতিষ্ঠানের নিয়োগকৃত পরিচ্ছন্নকর্মীরা ময়লা আবর্জনা, বিভিন্ন পানিয়’র বোতল, চিপসের প্যাকেট, কাগজের ঠোঙ্গা, ছড়িয়ে থাকা ডালপালা কুড়িয়ে বস্তায় ভরছে। পরিচ্ছন্নকর্মী জসিম বলেন, প্রতিদিনই এখানে প্রচুর ময়লা আবর্জনা হয়। তবে যে কোন উৎসবের দিন ময়লা আবর্জনা একটু বেশি হয়। তিনি বলেন, আমরা গত রাত থেকে ময়লা আবর্জনা অপসারনের কাজ শুরু করেছি। ইতোমধ্যে অনেকটা শেষ হয়ে গেছে। আর অল্প সময়ের বাকি কাজও শেষ হয়ে যাবে।
স্থানীয় ওয়ার্ড কাউন্সিলর জাকির হোসেন স্বাপন ইনকিলাবকে বলেন, ধানমন্ডির রবিন্দ্র সরোবর ও লেকটি আমার ওয়ার্ডে পড়েছে। বিভিন্ন আনন্দ উৎসব ছাড়াও এখানে প্রতিদিন দর্শনার্থীর ভিড় থাকে। যে কারণে প্রতিদিন এখানে প্রচুর ময়লা আবর্জনার সৃষ্টি হয়। আমরা এ ময়লা আবর্জনা নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যেই আপসারণ করে থাকি। আর গত রোববার পয়লা বৈশাখের উৎসবেও এখানে হাজার হাজার দর্শনার্থীর ভিড় জমেছিল। উৎসবের দিন ময়লা আবর্জনা অন্যদিনের তুলনায় বেশি হয়। আর সে মতে আমাদের প্রস্তুতিও ছিল। তাই আমরা সময়মত সে ময়লা আজর্বনা আপসারণ করে ফেলেছি।
রমনা পার্ক ও সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের ময়লা পরিষ্কারের দায়িত্ব পাওয়া রিমন এন্টারপ্রাইজের সুপারভাইজার ওবায়দুল ইসলাম বলেন, এখানে আমাদের ৪৫ জন লোকবল আছে। যারা কাজ করছেন ময়লা সরাতে। সকাল ৯টা থেকে শুরু হয়েছিল, বিকেল ৫টা পর্যন্ত কাজ চলবে। আশা করি দ্রুত সময়ের মধ্যে এই ময়লা আবর্জনা আপসারণ করতে পারবো। #



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: সিটি কর্পোরেশন


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ