Inqilab Logo

শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

দুর্ঘটনা ঝুঁকিপূর্ণ রেলপথ

সারাদেশে অরক্ষিত রেললাইন ও অনুমোদনহীন রেলক্রসিংয়ে বেড়েই চলছে

প্রকাশের সময় : ২৪ মে, ২০১৬, ১২:০০ এএম

নূরুল ইসলাম : সারাদেশেই অরক্ষিত রেললাইন দিয়ে ঝুঁকিপূর্ণভাবে চলছে ট্রেন। চলতে পথে সহ¯্রাধিক অরক্ষিত রেলক্রসিং। অহরহ ঘটছে দুর্ঘটনা। তারপরও নেয়া হচ্ছে না কার্যকর কোনো উদ্যোগ। রেল ভ্রমণকে গতিশীল ও আরামদায়ক করার আগে নিরাপদ করা জরুরি বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। গত পাঁচ বছরে  সারাদেশে ট্রেন দুর্ঘটনায় ৪ শতাধিক লোক নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন দেড় হাজারেরও বেশি।
রেল সূত্রে জানা গেছে, সারাদেশে মোট দুই হাজার ৫৪১টি রেলক্রসিং রয়েছে। এর মধ্যে এক হাজার ৪১৩টির অনুমোদন রয়েছে। বাকি এক হাজার ১২৮টির অনুমোদন নেই। এই অনুমোদনহীন রেলক্রসিংগুলোতে অহরহ দুর্ঘটনা ঘটছে। প্রাণ হারাচ্ছে নিরীহ মানুষজন। আবার অনুমোদিত রেলক্রসিংয়েও দুর্ঘটনা ঘটছে নিয়ম না মানা বা অসাবধানতার কারণে। সর্বশেষ গত ১৬ মে সোমবার চট্টগ্রাম নগরীর বায়েজিদ থানার ষোলশহর দুই নম্বর গেট এলাকায় তেলবাহী ট্রেনের ধাক্কায় একটি বাসের তিনজন যাত্রী নিহত ও কমপক্ষে ২০ জন আহত হন। রেল সূত্র জানায়, বিআরটিসির বাসটি রেলক্রসিং অতিক্রম করার সময় যানজটে আটকা পড়ে।
এসময় সিগন্যাল পেয়ে তেলবাহী ট্রেনটি রেলক্রসিং পার হওয়ার সময় বাসটিকে ধাক্কা দেয়। এতে বাসটি ছিটকে পড়ে। আলাপকালে একাধিক ট্রেনচালক জানান, সারাদেশে এমন বহু অনুমোদিত রেলক্রসিং আছে যেগুলোর রাস্তা দিয়ে দিনে- রাতে অসংখ্য যাত্রীবাহী বাসসহ বিভিন্ন যানবাহন চলাচল করে। ট্রেন আসার সিগন্যাল দেয়ার পরও সেসব ক্রসিংয়ের দায়িত্বরতরা ঠিকমতো দায়িত্ব পালন করে না। এতে করে প্রতিনিয়ত দুর্ঘটনা ঘটে, না ঘটলেও ঘটার আশঙ্কা থাকে। একজন এলএম নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, চিহ্নিত কিছু এলাকায় প্রতিদিনই দুর্ঘটনা ঘটত যদি চালকরা সচেতন না হতো। ওই সব এলাকাকে দুর্ঘটনাপ্রবণ এলাকা ধরেই চালক ট্রেনের গতি কমিয়ে সাবধানতার সাথে চলেন। এতে করে দুর্ঘটনা এড়ানো সম্ভব হয়।
সূত্র জানায়, টঙ্গী থেকে ঢাকা হয়ে নারায়ণগঞ্জ পর্যন্ত ৩৫টি রেলক্রসিং আছে। এর মধ্যে ১৪টিই অবৈধ। অবৈধ রেলক্রসিংয়ে কোনো গেটম্যান না থাকায় রেললাইনের ওপর বসে হাটবাজার। গভীর রাত পর্যন্ত ক্রেতারা রেললাইনে দাঁড়িয়েই কেনাকাটা করেন। এ কারণে প্রতিনিয়ত ট্রেনে কাটা পড়ে মানুষের মর্মান্তিক মৃত্যু ঘটছে।
জানা গেছে, নারায়ণগঞ্জের ১ নম্বর রেলগেট থেকে ২ নম্বর রেলগেট পর্যন্ত এলাকায় এখনো বিভিন্ন ভ্রাম্যমাণ দোকান বসে। এছাড়া ঢাকার জুরাইন রেলগেট, খিলগাঁও রেলগেট এবং টঙ্গী বাজার এলাকায় রেললাইনের ওপর দিনে-রাতে বাজার বসে। এসব এলাকা দিয়ে ট্রেন চলাচল অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ। রেল কর্তৃপক্ষ এসব এলাকার স্থায়ী দোকানপাট উচ্ছেদ করলেও পরবর্তীতে নজরদারি না রাখার কারণে আবার একই অবস্থা বিরাজমান। ২০১৪ সালের ১১ সেপ্টেম্বর  রাজধানীর কারওয়ানবাজারে চলন্ত ট্রেনের ধাক্কায় চারজন নিহত এবং ছয়জন গুরুতর আহত হন। দুর্ঘটনাস্থলে রেললাইনের দুই পাশে এবং মধ্যবর্তী স্থানে মাছ বাজার বসত। একই সাথে দু’দিক থেকে ট্রেন এলে ভয়ে ছোটাছুটি করতে গিয়ে চারজনের মৃত্যু ঘটে। এই ঘটনার পর রেল কর্তৃপক্ষ অভিযান চালিয়ে রেললাইনের ওপর স্থাপিত দোকান ও বাজার উচ্ছেদ করে। কিন্তু এখনো সেখানে রেললাইনের ওপর বাজার বসে।
সারাদেশে ট্রেন দুর্ঘটনায় শতাধিক মানুষের মৃত্যু ঘটে। গত ৫ বছরে এই মৃত্যুর সংখ্যা চার শতাধিক। এর মধ্যে ২০১৩ সালে ২৫টি ট্রেন দুর্ঘটনায় ৮৯ জন মারা যায় এবং ২৮২ জন আহত হয়। ২০১২ সালে ১৪টি রেল দুর্ঘটনায় ৩৮ জন মারা যায় এবং ২০১ জন মারাত্মকভাবে আহত হয়। ২০১১ সালে ৪২টি ট্রেন দুর্ঘটনায় ৫১ জন মারা যায় এবং ৩৪১ জন আহত হয়। ২০১০ সালে ৪২টি ট্রেন দুর্ঘটনায় ৪৩ জন মারা যায় এবং ২৮৩ জন আহত হয়। ২০১৪ সালে ঢাকা ও এর আশপাশে ট্রেন দুর্ঘটনায় নিহতের সংখ্যা প্রায় দুই শ’ জন। রেল সূত্র জানায়, আইন অনুযায়ী ট্রেন চলাকালীন লাইনের দুই পাশে ১০ ফুট করে এলাকায় ১৪৪ ধারা জারি থাকে। রেললাইনসহ ওই সীমানার মধ্যে মানুষের প্রবেশ আইনত নিষিদ্ধ। এই আইন অনেকেই জানে না। কেউ মানেও না। ট্রেন চলাকালে রাজধানীসহ সারাদেশের রেলক্রসিংয়ে ঘণ্টা বেজে ওঠে। কোথাও কোথাও গেটম্যান নিজেই হুইসেল বাজিয়ে মানুষকে সতর্ক করে। অথচ এর মধ্যেও গেটের উল্টো দিক দিয়ে প্রাইভেট কার, মোটরসাইকেল, অটোরিকশা বা যাত্রীবাহী বাস প্রবেশ করে। এসময় লোকজনকেও হেঁটে রেললাইন পার হতে দেখা যায়। এ ধরনের ঝুঁকিপূর্ণ চলাচল শুধু যে বাসযাত্রী বা পথচারীদের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ তা কিন্তু নয়। এতে করে ট্রেনও দুর্ঘটনায় পতিত হতে পারে। তাতে প্রাণহানির সংখ্যা অনেক বেশি হওয়ারও আশঙ্কা থাকে। জানতে চাইলে রেলওয়ের এক কর্মকর্তা বলেন, নাগরিকদের রেল আইন সম্পর্কে অবহিত করার চেষ্টা চলছে। প্রয়োজনের চেয়ে জনবল কম থাকায় নিয়মিত তা করা সম্ভব হয়ে ওঠে না।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: দুর্ঘটনা ঝুঁকিপূর্ণ রেলপথ
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ