Inqilab Logo

শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৭ বৈশাখ ১৪৩১, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

স্থিতিশীল থাকবে বাজার

রমজান সামনে রেখে রেকর্ড : আমদানি মূল্য কারসাজি হলে কঠোর ব্যবস্থা

রফিকুল ইসলাম সেলিম | প্রকাশের সময় : ১৯ এপ্রিল, ২০১৯, ১২:০৫ এএম


এবার দেশে রেকর্ড পরিমাণ পণ্য আমদানি হয়েছে। বিশেষ করে পবিত্র রমজান মাসে নিত্যপ্রয়োজনীয় অনেক ভোগ্যপণ্য আমদানি হয়েছে চাহিদার তুলনায় বেশি। বিশ্ববাজারেও এসব পণ্যের দাম পড়তির দিকে। দেশের প্রধান সমুদ্র বন্দর চট্টগ্রাম বন্দরেও নেই কোন জাহাজ ও পণ্যজট। ফলে আসন্ন রমজান মাসে বাড়তি চাহিদা তৈরি হলেও মূল্যবৃদ্ধির কোনো কারণ নেই। সিন্ডিকেটের কারসাজি না হলে এবার বাজার স্থিতিশীল থাকবে বলে প্রত্যাশা সংশ্লিষ্টদের। 

গত কয়েকদিনে প্রায় সাত লাখ টন পণ্য খালাস করে ১৫টি জাহাজ চট্টগ্রাম বন্দর ছেড়ে গেছে। বন্দরের প্রায় আট লাখ টন ভোগ্যপণ্য বোঝাই ১৫টি জাহাজ থেকে পণ্য খালাস হচ্ছে। আগামী ২০ দিনের মধ্যে আরও অন্তত ১২টি জাহাজ আসার সিডিউল রয়েছে। সোমবার মধ্যরাত থেকে নৌযান শ্রমিকদের একদিনের ধর্মঘটে পণ্য খালাস ও পরিবহনে কিছুটা ছন্দপতন হলেও ধর্মঘট প্রত্যাহার হওয়ায় খালাস ও পরিবহন কার্যক্রম আবার স্বাভাবিক হয়েছে। সারাদেশে সড়ক যোগাযোগও স্বাভাবিক থাকায় ভোগ্যপণ্য দেশের প্রত্যন্ত এলাকায় পৌঁছে যাচ্ছে। দেশের অন্যতম পাইকারি বাজার চাক্তাই-খাতুনগঞ্জে শুরু হয়েছে জমজমাট বেচাকেনা।
বাংলাদেশ ট্যারিফ কমিশন (বিটিসি) সম্প্রতি ভোজ্যতেল, চিনি, মসুর ডাল, ছোলা, পেঁয়াজসহ বিভিন্ন নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের আমদানি, আন্তর্জাতিক বাজারদর ও দেশের বাজারদরের পরিস্থিতি নিয়ে একটি প্রতিবেদন তৈরি করে। তাতে বলা হয়, দেশের চাহিদার তুলনায় এসব পণ্যের আমদানি স্বাভাবিক। কোনো কোনো ক্ষেত্রে আমদানি বেশি হয়েছে।
আমদানিকারকসহ সংশ্লিষ্টরা জানায়, দেশে বছরে প্রায় ১৬ লাখ টন চিনির চাহিদা রয়েছে। এরমধ্যে ১৫ লাখ টন আমদানি করতে হয়। গত আট মাসে চিনি আমদানি হয়েছে ১৫ লাখ ৬৩ হাজার টন। বিশ্ববাজারে অপরিশোধিত চিনির দাম ৪ শতাংশ ও এক বছরে ২৫ শতাংশ কমেছে। ভোজ্যতেলের চাহিদা ১৫ লাখ টন। এরমধ্যে সরিষাসহ দেশে উৎপাদিত হয় প্রায় ২ লাখ টন ভোজ্যতেল। বাকিটা আমদানি করা হয়। গত আট মাসে ১২ লাখ ৭১ হাজার টন পরিশোধিত ও অপরিশোধিত ভোজ্যতেল আমদানি হয়েছে। ফলে বাজারে ভোজ্যতেলেরও কোন ঘাটতি নেই। ট্যারিফ কমিশনের হিসাবে বছরে ছোলার চাহিদা ১ লাখ টন। এরমধ্যে ৮০ হাজার টনের মতো বিক্রি হয় রমজান মাসে। গত আট মাসে ১ লাখ ৪ হাজার টন মসুর ডাল আমদানি হয়েছে। ফলে ছোলা এবং মসুর ডালেরও দাম বাড়ার কথা না। একইভাবে পেঁয়াজের দামও বাজারে স্থিতিশীল। দেশে বছরে খেজুরের চাহিদা ২০ হাজার টন। এর মধ্যে ১৮ হাজার টন চাহিদা রমজান মাসে। চলতি অর্থবছরের আট মাসে দেশে ২০ হাজার টন খেজুর আমদানি হয়েছে।
এদিকে আসন্ন রমজান মাসে বাজার সাধারণের নাগালে রাখতে সরকারি তরফে এবারও আগেভাবে নানা উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। ইতোমধ্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ব্যবসায়ীদের এক সমাবেশে রমজানে বাজার স্থিতিশীল এবং সহনীয় রাখার আহবান জানিয়েছেন। সার্বিক বাজার পরিস্থিতি নিয়ে ব্যবসায়ী নেতাদের সাথে বৈঠক করেছেন বাণিজ্য মন্ত্রী টিপু মুনশি। এর পাশাপাশি বাজার নিয়ন্ত্রণে রাখতে প্রস্তুতি নিয়েছে ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি)। এ ধারাবাহিকতায় গতকাল চট্টগ্রামের আমদানিকারক ও ব্যবসায়ী নেতাদের সাথে বাজার পরিস্থিতি নিয়ে বৈঠক করেন বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. মফিজুল ইসলাম।
তিনি বলেন, দেশে অত্যাবশ্যকীয় ভোগ্যপণ্যের মজুদ যথেষ্ট, তাই দাম বাড়ার কারণ নেই। তিনি রমজানে মূল্য কারসাজির বিরুদ্ধে হুঁশিয়ারী উচ্চারণ করেন। বাণিজ্য সচিব বলেন, ব্যবসায়ীরা লাভ করবে। তবে মজুদ, সিন্ডিকেট অপরাধের পর্যায়ে পড়ে। তখন আইনের কঠোর প্রয়োগের বিকল্প থাকে না। সভায় চট্টগ্রামের আমদানিকারক ও ব্যবসায়ী নেতারা রমজান মাসে পণ্যমূল্য সাধারণের নাগালে থাকবে বলে বাণিজ্য সচিবকে আশ্বস্ত করেন।
চট্টগ্রাম চেম্বার সভাপতি মাহবুব্লু আলম বলেন, এক সময় চট্টগ্রামের দুঃখ ছিল চাক্তাই খাল, এখন দুঃখ হচ্ছে ১৩ টন। মহাসড়কে ওজনস্কেল বসিয়ে শুধু চট্টগ্রামের ব্যবসায়ীদের হয়রানি করা হচ্ছে। তিনি বলেন, আমদানি বেশি হওয়ায় ছোলা, মসুর ডালের দাম এবার কম। মাসের শেষ দিকে খুচরায় হু হু করে দাম বেড়ে যায়। বিষয়টি জেলা প্রশাসনের নজরদারিতে আনতে হবে।
আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান বিএসএম গ্রæপের চেয়ারম্যান এসএম আবুল বশর বলেন, চিনি, ছোলা, ডাল, আদা, রসুনের দাম গত ৫ বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন। আকস্মিক নৌযান শ্রমিকদের এক দিনের কর্মবিরতির কারণে ব্যবসায়ীদের ক্ষতি হয়েছে। এক মাস আগে ৩৮০ ডলারের মসুর এখন ৪৬০ ডলার। অস্ট্রেলিয়া, কানাডার মসুর পাইকারিতে বিক্রি হচ্ছে ৪৮-৫০ টাকা। টনপ্রতি ছোলা ৭৮০ ডলারে কিনেছি। ৬৬-৬৭ টাকার বেশি দামে ছোলা বিক্রি হচ্ছে না খাতুনগঞ্জে।
খাতুনগঞ্জ ট্রেড অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ ছগীর আহমদ বলেন, ভোক্তাদের এক সপ্তাহের বাজার করা উচিত। পুরো রমজান মাসের বাজার একসঙ্গে করলে অস্থিরতা তৈরি হয়। খাতুনগঞ্জের ব্যবসায়ী এসএম মহিউদ্দিন মাহিন বলেন, ওজন স্কেলের কারণে ১৩ টনের বেশি পণ্য ট্রাকে পাঠাতে পারি না। ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক ছাড়া দেশের আর কোথাও ওজন স্কেল নেই। ৭৫০ ডলারের ছোলা পাইকারি বাজারে এবার ৬৫-৭০ টাকার বেশি হবে না। কাজীর দেউড়ি বাজার ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি আবদুর রাজ্জাক বলেন, বাজারে সবচেয়ে ভালো মানের ছোলা ৭১ টাকায় কিনে ৭৩ টাকা বিক্রি করছি। চিনি কিনছি ৪৮ টাকা।
সভায় অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার শঙ্কর রঞ্জন সাহা বলেন, দ্রব্যমূল্যের অস্থিতিশীলতা প্রশাসনের নজরদারিতে থাকবে। মজুদ, কালোবাজারি সরকার বরদাশত করবে না। ক্যাব সভাপতি এসএম নাজের হোসাইন বলেন, ঘি, সেমাইতে বেশি ভেজাল হচ্ছে। ব্যবসায়ীদের আশ্বাস রমজানের শেষ দিকে ঠিক থাকে না। তাই মনিটরিং টিম যেন নিয়মিত অভিযান চালায়। চট্টগ্রামের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক কামাল হোসেন সভায় সভাপতিত্ব করেন। সভায় র‌্যাব, পুলিশ, বিজিবিসহ প্রশাসনের কর্মকর্তা, আমদানি-রফতানিকারক, ব্যবসায়ী নেতৃবৃন্দ ও ক্যাবের প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: রমজান


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ