Inqilab Logo

শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

হঠাৎ খুনোখুনিতে উদ্বেগ

রফিকুল ইসলাম সেলিম | প্রকাশের সময় : ২০ এপ্রিল, ২০১৯, ১২:০৪ এএম

অব্যাহত খুনোখুনিতে চট্টগ্রামে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা ও আতঙ্ক বিরাজ করছে। হঠাৎ করেই বেড়ে গেছে খুনের ঘটনা। নগরী ও জেলায় ১৩ দিনে ১২টি হত্যাকান্ড ঘটেছে। এই সময়ে র‌্যাব-পুলিশের কথিত বন্দুকযুদ্ধে প্রাণ গেছে দুইজনের। পুলিশ ও সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সামাজিক ও নৈতিক অবক্ষয়, পারিবারিক বন্ধন শিথিল হয়ে যাওয়ায় খুনের ঘটনা বাড়ছে। এলাকায় আধিপত্য বিস্তারেও ঘটছে হত্যাকান্ড। মাদকের ব্যবসা নিয়ন্ত্রণে লাশ ফেলছে মাদকের কারবারিরা। ৫ এপ্রিল থেকে ১৮ এপ্রিল পর্যন্ত মহানগরী ও জেলায় লাশ পড়েছে ১৪ জনের। এরমধ্যে ১২টি খুনের ঘটনা এবং বাকি দুটো ঘটনা কথিত ক্রসফায়ারের। প্রাইভেটকার ছিনতাইয়ের সময় চালককে খুন করে সাগরে লাশ ফেলতে গিয়ে ধরা পড়েছে তিন খুনি। নগরীর নিকটবর্তি সীতাকুন্ডের ভাটিয়ারিতে সংগঠিত ওই খুনের ঘটনায় ধরা পড়েছে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রসহ তিনজন। চমেক হাসপাতালে রোগী দেখার কথা বলে চার যুবক সীতাকুন্ড থেকে প্রাইভেট কারে উঠে। কিছুদূর আসার পর চালককে খুন করে লাশ সিটে বসিয়ে গাড়ি চালিয়ে নিয়ে যায় তারা। এরপর সাগরে লাশ ফেলতে গিয়ে গাড়ি বিকল হয়ে গেলে স্থানীয়দের হাতে ধরা পড়ে খুনিরা। ফটিকছড়ি ভূজপুরে ধর্ষণে ব্যর্থ হয়ে প্রবাসীর স্ত্রীকে গলা কেটে হত্যা করা হয়েছে। ওই ঘটনায় ধরা পড়েছে দুইজন।
কিশোর প্রেমের বিরোধে এক বড় ভাইয়ের গুলিতে খুন হন কথিত অপর বড় ভাই। পরে প্রধান আসামি প্রাণ হারান পুলিশের সাথে কথিত বন্দুকযুদ্ধে। নগরীর গোলপাহাড়ের একটি কিশোর গ্রুপের নেতৃত্ব দিতেন লোকমান হোসেন রনি। ওই গ্রুপের কিশোরদের সাথে ত্রিভুজ প্রেমের জেরে বিরোধ বাধে নগরীর বাকলিয়া খালপাড় এলাকার কিশোরদের। এর জেরে খালপাড় এলাকায় গিয়ে খুন হন লোকমান হোসেন রনি। এ ঘটনায় খালপাড় এলাকার বড় ভাই সাইফুলকে প্রধান আসামি করে মামলা করেন রনির মা। দুইদিন পর পুলিশ গ্রেফতার করে খালপাড়ের বড় ভাই মো. সাইফুলকে। গ্রেফতার এড়াতেই নগরীর বাকলিয়া কল্পলোক আবাসিক এলাকায় পুলিশের সাথে কথিত বন্দুকযুদ্ধে মারা যান সাইফুল। সাইফুল ও রনি দুইজনই যুবলীগের রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ত ছিলেন। রাজনৈতিক প্রভাব বিস্তারে উভয়ে এলাকায় গ্রুপ গড়ে তোলে। র‌্যাবের সাথে বন্দুকযুদ্ধে বাঁশখালীতে মারা যান দেলোয়ার হোসেন নামে এক নৌদস্যু।
মাদক ব্যবসার বিরোধের জেরে নগরীর খুলশী এলাকায় খুন করা হয় জানে আলম নামে এক ইয়াবা ব্যবসায়ীকে। ওই ঘটনায় গ্রেফতার খুনি চক্রের দুই সদস্য স্বীকার করে ৪০ হাজার টাকা করে পাওয়ার লোভে জানে আলমকে খুন করে তারা। মাত্র ১০ পিস ইয়াবা নিয়ে ঝগড়ার এক পর্যায়ে আপন ভাইকে ছুরিকাঘাত করে হত্যা করেছে ছোট ভাই। বুধবার রাতে এ খুনের ঘটনার পর বৃহস্পতিবার বিকেলে আদালতে দেওয়া স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে এমন তথ্য দিয়েছেন আসামি ছোট ভাই মোহাম্মদ মুন্না (২৫)। মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মো. শফি উদ্দিনের আদালতে মোহাম্মদ মুন্না স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন। এর আগে নগরীর হালিশহর এলাকা থেকে মোহাম্মদ মুন্নাকে গ্রেফতার করে চান্দগাঁও থানা পুলিশ।
চান্দগাঁও থানাধীন খড়মপাড়া ওসমান হাজীর বাড়িতে মুন্নার ছুরিকাঘাতে নিহত হন তার ভাই মোহাম্মদ সাজু (২৮)। তারা ওই এলাকার ছিদ্দিক আহমদের ছেলে। মামলার তদন্ত কর্মকর্তা এসআই মো. আমির হোসেন বলেন, জবানবন্দিতে মুন্না জানিয়েছে- মুন্নার ১০ পিস ইয়াবা সাজুর কাছে ছিল। সাজুর কাছে ইয়াবাগুলো ফেরত চায় মুন্না। কিন্তু সাজু ইয়াবাগুলো সেবন করে ফেলে। এ নিয়ে তাদের মধ্যে কথা কাটাকাটি হয়। এ সময় মুন্না তার কাছে থাকা টিপ ছুরি দিয়ে সাজুকে আঘাত করে। পুলিশ জানায়, সাজু ও মুন্না দুই ভাই-ই মাদকাসক্ত ও বিক্রেতা। মূলত মাদক নিয়ে হত্যাকান্ড ঘটে।
নগরীতে বন্ধুর ছুরিকাঘাতে বন্ধু আর সন্তানের হাতে পিতা খুনের ঘটনাও ঘটেছে। পহেলা বৈশাখের দিন নগরীর কাজির দেউড়িতে মাদকাসক্ত সন্তান রবিন বড়–য়া খোকনের ছুরিকাঘাতে খুন হন পিতা রঞ্জন বড়–য়া। মীরসরাইতে কোদালের কোপে স্ত্রীকে খুনের ঘটনায় গ্রেফতার হয়েছেন স্বামী। নগরীর হামজারবাগে বৃহস্পতিবার দিনদপুরে বন্ধুর ছুরিকাঘাতে খুন হন প্রাইভেট কার চালক শাহাদাত হোসেন মৃধা। এ ঘটনায় তার খুনি বন্ধু ফরহাদকে মাত্র কয়েক ঘণ্টার মধ্যে পুলিশে ধরিয়ে দেন তার মা। খুনের পর কর্ণফুলী থানার চরপাথরঘাটায় পালিয়ে যায় ফরহাদ। সেখান থেকে মা ফাতেমা রহমান ময়নাকে ফোন করে আশ্রয় চায় সে। আশ্রয় দেয়ার বদলে উল্টো পুলিশে খবর দিয়ে পুত্রকে ধরিয়ে দেন আওয়ামী লীগের এ নেত্রী।
তুচ্ছ ঘটনায়ও লাশ পড়ছে। কথা কাটাকাটির জেরে মঙ্গলবার রাতে চন্দনাইশের এলাহাবাদে কুপিয়ে হত্যা করা হয় রফিকুল ইসলাম নামে এক পিকআপ চালককে। আগের দিন অপর এক চালকের সাথে তুচ্ছ ঘটনা নিয়ে তার কথা কাটাকাটি হয়। এর জেরে এ হত্যাকান্ড ঘটেছে বলে জানিয়েছে পুলিশ। তার আগে বাঁশখালীতে আবুল কালাম নামে এক যুবককে গুলি করে হত্যা করা হয়। পুলিশ জানায়, এলাকায় প্রভাব বিস্তারের ঘটনায় এ খুনের ঘটনা ঘটে। নগরীর বক্সির হাটে এক স্বর্ণের কারিগরকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়। এ ঘটনায় এখনও কোন কুলকিনারা করতে পারেনি পুলিশ।
হঠাৎ খুনোখুনিতে কিছুটা দুশ্চিতায় পুলিশ কর্মকর্তারাও। তবে মহানগর ও জেলা পুলিশের কর্মকর্তারা বলছেন, প্রতিটি ঘটনায় পুলিশ খুনিদের গ্রেফতারে সক্রিয় রয়েছে। আলোচিত কয়েকটি খুনের ঘটনায় আসামীরা ধরাও পড়েছে। বাকি আসামিদের ধরতে অভিযান চলছে। ফটিকছড়ি উপজেলার ভূজপুর থানার হারুয়ালছড়ি মহানগর গ্রামে প্রবাসীর স্ত্রী মামণি দেকে খুনের ঘটনায় জড়িত দুই আসামিকে গ্রেফতার করে রিমান্ডে নেয়া হয়েছে। থানার ওসি শেখ মোঃ আবদুল্লাহ বলেন, তারা দুজনেই খুনের দায় স্বীকার করেছে। ইতোমধ্যে তাদের কাছ থেকে খুনের আলামতও সংগ্রহ করা হয়েছে। সাক্ষীরা তাদের দুজনকে শনাক্তও করেছে। দ্রুত মামলার তদন্ত শেষ করা হবে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: খুন

৩১ জানুয়ারি, ২০২৩

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ