Inqilab Logo

বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ০৫ বৈশাখ ১৪৩১, ০৮ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

সবার আগে নিরাপদ ও ঝুঁকিমুক্ত জীবন নিশ্চিত করতে হবে

সরদার সিরাজ | প্রকাশের সময় : ২১ এপ্রিল, ২০১৯, ১২:০৬ এএম

কতিপয় মন্ত্রী, এমপি ও নেতা প্রায়ই বলেন, বাংলাদেশ সিঙ্গাপুর-থাইল্যান্ডের মতো উন্নত হয়েছে। কেউ কেউ আর একটু আগ বাড়িয়ে বলেন, বাংলাদেশ আমেরিকার মতো উন্নতির কাছাকাছি পৌঁছে গেছে। কিন্তু বর্ণিত দেশের উন্নতির সাথে আমাদের দেশের খাত-ভিত্তিক উন্নতির তুলনা করলেই দেখা যাবে পার্থক্য কত? নিশ্চয় আকাশ-পাতাল। কেননা, আমেরিকার কথা বাদ দিয়ে শুধুমাত্র সিঙ্গাপুরের উন্নতির সাথে বাংলাদেশের উন্নতির তুলনা করলে বলতে হয়, সিঙ্গাপুরের যে গভীর সমুদ্র বন্দর আছে, সেরূপ একটি গভীর সমুদ্র বন্দর নিজস্ব অর্থে তৈরি করা সম্ভব কি-না। কারণ, এর ব্যয় এক লাখ কোটি টাকা উপরে হবে। অবশ্য সোনাদিয়ায় একটি গভীর সমুদ্র বন্দর নির্মাণ করার সুযোগ সৃষ্টি হয়েছিল প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সর্বশেষ চীন সফরকালে। তখন চীন উক্ত বন্দর নির্মাণ করে দিতে এবং সমুদয় অর্থ ঋণ হিসেবে দিতে সম্মত হয়েছিল। এ নিয়ে একটি সমঝোতা চুক্তিও হয়েছিল। কিন্তু পরবর্তীতে তা কার্যকর হয়নি। জনশ্রুতি আছে, ভারতের চাপে পড়ে উক্ত সিদ্ধান্ত থেকে সরে এসে পায়রা বন্দর নির্মাণ করা হচ্ছে! অবশ্য সম্প্রতি আবার সোনাদিয়া গভীর সমুদ্র বন্দর নির্মাণের কথা শোনা যাচ্ছে। তবে তা বাস্তবায়ন না হওয়া পর্যন্ত বিশ্বাস নেই। যা’হোক, ধনী হতে কিংবা ধনী দেশে পরিণত হতে দেশের সব মানুষই আগ্রহী। তবে তার আগে দেশের সব মানুষের জীবন নিরাপদ করা আবশ্যক। বিভিন্ন কারণে তাদের জীবন ‘চরম অনিরাপদ’ হয়ে পড়েছে। যেমন: বায়ু দূষণ, পানি দূষণ, পরিবেশ দূষণ ইত্যাদিতে জীবন মারাত্মক হুমকির মুখে পড়েছে। যা থেকে দেশবাসীকে রক্ষা করা অপরিহার্য। কারণ, দি স্টেট অব গ্লোবাল এয়ার রিপোর্ট ২০১৯ মতে, বাংলাদেশের শতভাগ মানুষই মাত্রাতিরিক্ত দূষিত বায়ুতে বসবাস করছে। এজন্য ২০১৭ সালে ১ দশমিক ২৩ লাখ মানুষের মৃত্যু হয়েছে। ওই প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, বায়ু দূষণে মৃত্যুতে বিশ্বে বাংলাদেশ পঞ্চম। গ্রিনপিস ও এয়ার ভিজ্যুয়াল এর ‘বিশ্ব বাতাসের মান প্রতিবেদন-২০১৮’ শীর্ষক প্রতিবেদন মতে, ‘বিশ্বে বায়ু দূষণে বাংলাদেশের অবস্থান শীর্ষে। তবে রাজধানী হিসেব করলে ঢাকার অবস্থান দ্বিতীয়তে। আর শহরের হিসেবে ঢাকা আছে ১৭ নম্বরে। আরেক খবরে জানা গেছে, বাংলাদেশে প্রতিবছর যত মানুষ মারা যায়, তার এক চতুর্থাংশ মারা যায় বায়ু দূষণের কারণে। দেশের পানি দূষণের চিত্রও প্রায় অনুরূপ। এমনকি ওয়াসার পানিও দূষিত বলে টিআইবি জানিয়েছে। এসব নানা দূষণের কারণে দেশের অসংখ্য মানুষের শরীরে নানা জটিল ব্যাধি সৃষ্টি হচ্ছে এবং অনেকেই অকালে মারা যাচ্ছে, যা অপমৃত্যু। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সর্বশেষ প্রতিবেদন মতে, দেশে দিন দিন অসংক্রামক রোগে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বাড়ছে, মারাও যাচ্ছে। এখন ৬৭ ভাগ মৃত্যু হচ্ছে অসংক্রামক রোগে। এটাও অপমৃত্যু। এসব অপমৃত্যু থেকে মানুষকে রক্ষা করতে হবে। অপরদিকে, সম্প্রতি এমন দিন নেই, যেদিন দেশের কোথাও না কোথাও আগুন লেগে ব্যাপক জানমালের ক্ষতি না হচ্ছে। সর্বশেষ ঢাকার যাত্রাবাড়ীতে মাদরাসায় ও মালিবাগে কাঁচাবাজারে আগুন লেগে ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। এর আগে ঢাকার বনানীর এফ আর ভবনে, পুরাতন ঢাকার চকবাজারের চুড়িহাট্টায় ব্যাপক প্রাণহানি ঘটেছে। সারাদেশে প্রতিদিনই অসংখ্য ছোট-খাট অগ্নিকাণ্ড ঘটছে। অগ্নিকাণ্ড নিয়ে মানুষের মধ্যে মহা-আতংক সৃষ্টি হয়েছে। এই আগুনের প্রধান কারণ হচ্ছে, নির্মিত বাড়ি ও স্থাপনাগুলো বিধি মোতাবেক নির্মাণ করা হয়নি। ফলে ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে। ঢাকায় যার পরিমাণ মোট বিল্ডিংয়ের ৬০% বলে বিশেষজ্ঞদের অভিমত। এ ছাড়া, আবাসিক এলাকায় বহু রাসায়নিক দ্রব্য রাখা এবং বাণিজ্যিক কর্মকাণ্ড চালানো তো রয়েছেই। এতে করেও নানা দুর্ঘটনা ঘটছে। রাজউক এসব চিহ্নিত করার জন্য ২৪টি বিশেষ টিম গঠন করে কাজ করছে। এ কার্যক্রম শেষ পর্যন্ত বাস্তবায়ন হবে কি-না বলা কঠিন। কারণ, আমরা একটি দুর্ঘটনায় অনেক প্রাণহানির পর তা নিয়ে হৈচৈ শুরু করে দেই, কিন্তু কয়েকদিন পর তার আর কোনো খবর থাকে না। নিমতলীর ঘটনা তার জ্বলন্ত প্রমাণ। যা’হোক, ঢাকার মতো সারাদেশেই অসংখ্য বিল্ডিং ও স্থাপনা বিল্ডিং কোড মোতাবেক হয়নি। ফলে সেগুলো ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে। তাই প্রায় বিল্ডিং ধসে ব্যাপক ক্ষতি হচ্ছে। বিবিসির তথ্য মতে, বাংলাদেশে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সংখ্যা প্রায় ৩৬ হাজার। তন্মধ্যে প্রায় ১০ হাজার বিল্ডিং ঝুঁকিপূর্ণ। প্রায়ই এসব বিল্ডিং ভেঙ্গে কিংবা পলেস্তারা খসে পড়ে শিক্ষার্থীরা আহত-নিহত হচ্ছে। এই খবরের প্রমাণ- চলতি মাসের প্রথম সপ্তাহে বরগুনার তালতলী উপজেলায় ক্লাস চলাকালে একটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ছাদের পলেস্তারা খসে পড়ে তৃতীয় শ্রেণির এক শিক্ষার্থীর মৃত্যু হয়েছে। এরূপ ঘটনা একই সময়ে অন্য এক স্থানেও ঘটেছে। ফলে সরকারি প্রাথমিক স্কুলের শিক্ষার্থী ও শিক্ষকরা স্কুল চলাকালে আতংকের মধ্যে থাকে। সারাদেশে চিহ্নিত চরম ঝুঁকিপূর্ণ ও ঝুঁকিপূর্ণ ইমারত রয়েছে বহু। বহুদিন আগে এসবকে ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করা হলেও তা ভেঙ্গে ফেলা হয়নি। ভেঙ্গে আধুনিক আবাসন গড়ে তোলার বহু প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছে। কিন্তু তা বাস্তবায়ন হয়নি! তাই ঝুঁকিপূর্ণ আবাসেই লোকজন বসবাস করছে। এই অবস্থায় দেশে বড় রকমের ভূমিকম্প হলে কল্পনাতীত ক্ষতি হতে পারে বলে অনেকের মধ্যে আশংকা বিরাজ করছে। এ অবস্থা যাতে সৃষ্টি না হয়, সে জন্য অতি দ্রুত দেশের সব বিল্ডিং বা স্থাপনাকে ঝুঁকিমুক্ত করার কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করে মানুষের জীবনকে নিরাপদ করা অপরিহার্য।

ঢাকায় অনুষ্ঠিত পবা এবং আয়োডিন ও লবণ রিসার্চ সেন্টার আয়োজিত এক সভায় বক্তারা বলেছেন, দেশের প্রায় ৬ কোটি মানুষ আয়োডিন স্বল্পতার শিকার। আর ৩ কোটি মানুষ জানে না যে, তারা আয়োডিন ঘাটতির শিকার হয়ে স্বল্প বুদ্ধি ও শিখন ক্ষমতা কমে যাওয়াসহ নানা জটিল রোগে ভুগছে। গবেষকরা বলেছেন, এদেশের মাটি আয়োডিন ঘাটতি অঞ্চল হিসেবে চিহ্নিত হওয়ায় মাছ, মাংস, দুধ, ডিম ও শাক-সবজিতে আয়োডিন থাকার সম্ভাবনা নেই। ফলে ঘাটতি পূরণের জন্য একমাত্র আয়োডিন-যুক্ত লবণ গ্রহণের উপর নির্ভর করতে হচ্ছে। লবণে আয়োডিন মিশানোর জন্য কেজি প্রতি ২০/২৫ টাকা অতিরিক্ত দাম নিলেও সঠিক পরিমাণে আয়োডিন দেওয়া হচ্ছে না। এই বিষয়ে নীতিমালা থাকা সত্তে¡ও সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলো সঠিকভাবে তদারকি না করার ফলে স্বাস্থ্যগত সমস্যা ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। অথচ এই সংকট দূর করা কঠিন নয়, ২/১ মাসের মধ্যেই দূর করা সম্ভব এবং তা সরকারের বিনা ব্যয়েই। যেমন: যেসব লবণ কোম্পানির লবণে প্রয়োজনীয় আয়োডিন নেই, তার মালিককে ধরে উপযুক্ত ব্যবস্থার আওতায় আনা হলেই এবং সরকারি অফিসের সংশ্লিষ্ট লোকদের বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি প্রদান করা হলেই ভবিষ্যতে আর কেউ এরূপ অপকর্ম করার সাহস পাবে না। তবুও এই অতি সহজ কাজটি হচ্ছে না। শুধুমাত্র কাজ না করেই বসে বসে আমরা স্বপ্ন দেখছি সিঙ্গাপুর, থাইল্যান্ড আর আমেরিকার মতো উন্নত দেশ হওয়ার। আমরা নতুন এক স্বপ্ন দেখা শুরু করেছি, সেটা হচ্ছে, সব গ্রামকে শহর বানাবো। কিন্তু সব শহর যে বস্তিতে পরিণত হয়ে বসবাসের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে, সেদিকে কোনো নজর নেই। যেমন: রাজধানী ঢাকাবাসীর এক তৃতীয়াংশ থাকে বস্তিতে। এছাড়া, আন্তর্জাতিক এক সংস্থার জরিপ মতে, ঢাকা বসবাসের অনুপযোগীর দিকে দিয়ে বিশ্বে দ্বিতীয়। এই অবস্থা কয়েক বছর যাবৎই চলছে। তাই তিলোত্তমা ঢাকা গড়ার ঘোষণা বহুবার দেওয়া হয়েছে। কিন্তু তিলোত্তমা তো দূরে থাক, ভয়াবহ যানজটের যন্ত্রণায় ঘর থেকে বের হওয়া দূরূহ হয়েছে। আর একটু বৃষ্টি হলেই তো নৌকায় চলাচল ছাড়া গত্যন্তর থাকে না। একই অবস্থা চট্টগ্রামসহ বেশিরভাগ শহরেরই। তাই শহরকে আগে আধুনিক শহর হিসেবে গড়ে তোলা আবশ্যক। অতঃপর গ্রামকে শহর বানানো দরকার। নতুবা আম-ছালা সবই যেতে পারে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ও ইউনিসেফের স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্রে পানি-স্যানিটেশন-পরিচ্ছন্নতার সুবিধাসংক্রান্ত বৈশ্বিক ভিত্তি প্রতিবেদন ২০১৯ মতে, বাংলাদেশের হাসপাতাল ও স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলোতে সুপেয় পানি, স্যানিটেশন এবং পরিচ্ছন্নতার যথেষ্ট ঘাটতি আছে। এসব প্রতিষ্ঠানের বর্জ্য ব্যবস্থাপনাও সঠিকভাবে হয় না। হাসপাতালে সুপেয় পানি সরবরাহের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ বৈশ্বিক, এমনকি দক্ষিণ এশিয়ার গড় মানের চেয়ে পিছিয়ে। আর স্যানিটেশনে কিছু অগ্রগতি থাকলেও হাসপাতাল ও কমিউনিটি ক্লিনিকগুলোতে স্যানিটেশনের অবস্থা আশানুরূপ নয়। হাসপাতালে পরিচ্ছন্নতার ক্ষেত্রেও পিছিয়ে বাংলাদেশ। এই দূরাবস্থা সৃষ্টি হয়েছে শুধুমাত্র তদারকির অভাবে। কারণ, প্রত্যেক হাসপাতালেই প্রয়োজনীয় ক্লিনার ও পানি সরবরাহের ব্যবস্থা আছে। কিন্তু ক্লিনাররা ঠিকমতো কাজ করে না। আবার তা তদারকি করার মতো জনবল থাকা সত্তে¡ও তদারকি করা হয় না। ফলে ভয়াবহ সংকট সৃষ্টি হয়েছে। অথচ এই সংকট দূর করা অতি সহজ। দু’একটি হাসপাতালের সংশ্লিষ্ট তদারককারীকে দায়িত্বে অবহেলার জন্য সোজা ডিসমিস করা হলেই কয়েক দিনের মধ্যেই সব হাসপাতালের পরিচ্ছন্নতার চিত্র পাল্টে যাবে। এ ক্ষেত্রে আর একটি সহজ উপায় হচ্ছে পরিচ্ছন্নতার বিষয়টি আউটসোর্সিংয়ের মাধ্যমে করা। এটা প্রাইভেট সেক্টরে করা হয়েছে। তাই সেখানকার পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার মান অনেক এগিয়ে। অপরদিকে, পত্রিকান্তরে প্রকাশ, চিকিৎসা ব্যয় মেটাতে গিয়ে বাংলাদেশে প্রতিবছর প্রায় ৪০ লাখ মানুষ দারিদ্র্যসীমার নিচে নেমে যায়। ২০১৮ সালের সরকারি হিসাব মতে, বাংলাদেশে স্বাস্থ্য খাতে ব্যক্তির নিজের ব্যয় ৬৭%, সরকারের ২৩%, বাকি দাতা ও অন্যরা ব্যয় করে ১০%। প্রতিবেশী দেশগুলোর মধ্যে ব্যক্তির নিজস্ব ব্যয় বাংলাদেশে সবচেয়ে বেশি। বাংলাদেশে জনপ্রতি স্বাস্থ্যসেবার জন্য সরকারিভাবে ৩৭ ডলার বরাদ্দ করা হয়েছে। কিন্তু প্রয়োজন ৮৫-১১২ ডলার। অপরদিকে, জনপ্রতি স্বাস্থ্যসেবার জন্য ভারতে ৬১ ডলার, থাইল্যান্ডে ২৮৫ ডলার, মালয়েশিয়ায় ৪১০ ডলার, নেপালে ৩৬ ডলার ও পাকিস্তানে ৩৯ ডলার ব্যয় করা হয়। এছাড়া, হাসপাতালগুলোতে জনবল এবং সচল যন্ত্রপাতির ঘাটতিও অনেক। অন্যদিকে, বেশিরভাগ ডাক্তারের মান খারাপ। তাই সামর্থবানরা বিদেশে চিকিৎসা করায়। বিশ্বব্যাংকের ‘ওয়ার্ল্ড ডেভেলপমেন্ট রিপোর্ট ২০১৮: লার্নিং টু রিয়ালাইজ এডুকেশনস প্রমিজ’ শীর্ষক প্রতিবেদন মতে, উচ্চশিক্ষায় ১৬০টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান ১৩৭তম। বাংলাদেশে প্রাক-প্রাথমিক থেকে মাধ্যমিক শেষ করা পর্যন্ত বাংলাদেশের শিক্ষার্থীদের স্কুল সময় ১১ বছর। কিন্তু বাংলাদেশের শিশুরা ১১ বছরে যা শিখছে, অন্য দেশের শিশুরা মাত্র সাড়ে ছয় বছরেই তা শিখছে।
দেশে ধর্ষণ তো মহামারি আকার ধারণ করেছে। নুসরাতের লোমহর্ষক ঘটনায় দেশের সব নারীরা আতংকিত হয়ে পড়েছে। দল-মত, ধর্ম নির্বিশেষ সব শ্রেণির মানুষ প্রতিবাদমুখর হয়েছে। তবুও এর ন্যায় বিচার হবে কি-না তা নিয়ে জনমনে সন্দেহ আছে। কারণ, তনু, মিতু, ইয়াসমিন এবং সাংবাদিক সাগর-রুনি ইত্যাদি হত্যার ক্ষেত্রেও এরূপ প্রতিবাদ দেখা গেছে, কিন্তু শেষ পর্যন্ত তা ফলপ্রসূ হয়নি। সেসব আজ কালের গহ্বরে হারিয়ে গেছে! পক্ষান্তরে খুন, নিখোঁজ, অপহরণ, ভেজাল, পাচার, দুর্নীতি, মাদক ইত্যাদির ক্ষেত্রেও সর্বকালের রেকর্ড ভঙ্গ করেছে। এসব নিয়েও জনজীবনে আতংক বিরাজ করছে। বহুদিন যাবত এসব অপরাধীর ঠিকমতো শাস্তি না হওয়ার কারণে এই ভয়াবহ পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে। এ থেকে পরিত্রাণের একমাত্র উপায়- আইনগত কঠোর শাসন এবং তা অতি নিরপেক্ষভাবে। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য যে, বিশ্বব্যাংকের ‘প্রভাটি অ্যান্ড শেয়ার প্রসপারিটি -২০১৮’ শীর্ষক প্রতিবেদন মতে, সবচেয়ে বেশি হত-দরিদ্র মানুষ আছে, এমন ১০টি দেশের তালিকায় বাংলাদেশ পঞ্চম। ক্রয়ক্ষমতার সমতা অনুসারে যাদের দৈনিক আয় ১.৯০ ডলারের কম, তাঁরা আন্তর্জাতিক দারিদ্র্য-রেখা হিসেবে হত-দরিদ্র। বাংলাদেশে অতি-গরিব মানুষের সংখ্যা ৮.৬২ কোটি, যা মোট জনসংখ্যার ৫২.৯%। অর্থাৎ টেকসইভাবে গরিবি হটাতে বাংলাদেশের প্রায় ৬.২১ কোটি মানুষকে দ্রুত দৈনিক ৩.২ ডলার আয় করতে হবে (নিম্ন মধ্যম আয়ের দেশের মানুষকে দারিদ্র্যসীমার ওপরে উঠতে হলে দৈনিক কমপক্ষে ৩.২ পিপিপি ডলার আয় করতে হয়। বাংলাদেশ এখন নিম্ন মধ্যম আয়ের দেশ)। এই বিশাল জনগোষ্ঠি এখন ঝুঁকিতে আছে। তাদের মধ্যে নীরব দূর্ভিক্ষ চলছে বলে অনেকের অভিমত! যা’হোক, নানা কারণে দেশবাসীর জীবন অনিরাপদ হয়ে উঠেছে। তাই ধনী দেশগুলোর মতো উন্নতির বুলি না আউড়িয়ে যে অবস্থা আছে, তাতেই মানুষের জীবনকে নিরাপদ করা জরুরি। তারপর ধনী দেশগুলোর মতো উন্নতি করার চেষ্টা করা। স্মরণীয় যে, জীবন ধারণের জন্য আগে শুধুমাত্র ভাত-রুটি-পানি দরকার। তারপর প্রুটিন, আমিষ ইত্যাদি। কিন্তু ভাত-রুটি-পানির নিশ্চয়তা যদি কারও না থাকে, তাহলে তার কাছে ঘি’র স্বাদের গল্প বলা হলে তা ভালো লাগে না, তিতা লাগে। তদ্রুপ উন্নত জীবনের আকাক্সক্ষা সব মানুষেরই। কিন্তু তার আগে প্রয়োজন নিরাপদ জীবন। জীবনই যদি না বাঁচে, তাহলে উন্নতি দিয়ে কী হবে?
লেখক: সাংবাদিক ও কলামিস্ট



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: সবার আগে নিরাপদ
আরও পড়ুন