Inqilab Logo

শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

তামাকের আগ্রাসনে কৃষি উৎপাদন হ্রাস

চকরিয়ায় স্বাস্থ্যঝুঁকিতে মানুষ

কক্সবাজার থেকে জাকের উল্লাহ চকোরী | প্রকাশের সময় : ২১ এপ্রিল, ২০১৯, ১২:০৬ এএম

তামাকের আগ্রাসনে কক্সবাজারের চকরিয়ায় কমে গেছে কৃষি ফসল-সবজির উৎপাদন। তামাক চাষ থেকে রক্ষা পাচ্ছে না ঘর, ভিটে, পাহাড়ি ঝিরি, নদীর চরও। এমনকি বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের একশ ফুটের মধ্যেই হচ্ছে তামাক চাষ। সাথে পাড়া মহল্লার বসতির ভেতর ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের নিকটে তন্দুর নির্মাণ করে তামাক শোধন করার ফলে পরিবেশ বিপন্ন হওয়ার পথে। নানা রোগে আক্রান্ত হচ্ছে শিক্ষার্থীসহ নানা বয়সী নারী পুরুষ। বিভিন্ন সময়ে তামাক চাষ রোধে আন্দোলেন করলেও তা কোন কাজেই আসেনি।
তেমনিভাবে উপজেলার বরইতলী ইউনিয়নের একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের তিন পাশে তামাক ক্ষেত ও ১০০ ফুট দূরে একটি তামাক চুল্লি নির্মাণ করা হয়েছে। এ কারণে বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের পড়াশোনায় ব্যাঘাত ঘটছে। এ ছাড়াও তামাক চাষ ও তামাক পুড়ানোর কারণে আশপাশের লোকজন আছেন স্বাস্থ্য-ঝুঁকিতে।
চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কের বানিয়ারছড়া থেকে দুই কিলোমিটার পশ্চিমে দক্ষিণ বরইতলী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের অবস্থান। দক্ষিণ বরইতলী, ফতেহ আলী সিকদার পাড়া, সোনাইছড়ি ছড়ার পূর্বকূল, মিয়াজীপাড়া, বানিয়ারছড়া ও হিন্দুপাড়ার ৪১৯ জন ছাত্র-ছাত্রী এই বিদ্যালয়ে পড়ছে। ১৯৭২ সালে প্রতিষ্ঠিত বিদ্যালয়টিতে শিক্ষক রয়েছেন নয়জন।
দক্ষিণ বরইতলী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ছাত্রী তামান্না নুসরাত, আব্দুল করিম, সাইদুল আমিন জানায়, তামাকের চুলায় যখন আগুন দেয়া হয়, তখন চুলা থেকে ঝাঁজালো ধোঁয়া বের হয়। এ সময় চোখ জ্বালা করে ও মাথা ঘোরায়। চুলায় আগুন দেয়ার ঘণ্টা খানেকের মধ্যে উৎকট দুর্গন্ধ বের হয়। এ সময় ক্লাস করতে খুব কষ্ট হয়।
সরেজমিনে দেখা যায়, বানিয়ারছড়া থেকে দুই কিলোমিটার পশ্চিমে দক্ষিণ বরইতলী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ঢোকার সড়কটির দুই পাশে তামাক খেত ও সড়কটির পশ্চিমপাশে তামাকচুল্লি। চুল্লির ধোঁয়া বাতাসে বিদ্যালয়ের দিকে নিয়ে যাচ্ছে। এতে কালো ধোঁয়ার উৎকট গন্ধ ভেসে আসছে।
স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. মোহাম্মদ ছাবের বলেন, বসতির মধ্যে তন্দুর নির্মাণ করে তামাক শোধনের ফলে নির্গত উড়ন্ত নিকোটিন শ্বাস-প্রশ্বাসে ঢুকে এলার্জি, চর্ম, ভাইরাস, হাঁপানিসহ নানা রোগে আক্রান্ত হয় মানুষ। বিশেষ করে শিশু ও বয়স্করা রোগাক্রান্ত হচ্ছে বেশী।
দক্ষিণ বরইতলী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক নুরুল আমিন বলেন, ‘বিষয়টি সম্পর্কে চকরিয়ায় দায়িত্ব পালনকারী কয়েকজন ইউএনওকে বলেছি। তাঁরা আশ্বাসও দিয়েছিলেন, কিন্তু কোনো ফল হয়নি।’
ফেব্রæয়ারি থেকে এপ্রিল পর্যন্ত চুল্লিতে তামাক পুড়ানো হয়। জানতে চাইলে বরইতলী ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) জালাল আহমদ বলেন, বিদ্যালয়ের ১০০ ফুটের মধ্যে তামাকচুল্লি করাটা গর্হিত কাজ। চুল্লিটি শিক্ষার্থীদের চরম স্বাস্থ্য-ঝুঁকিতে ফেলেছে। বিষয়টি আমি উপজেলা আইনশৃঙ্খলা ও সমন্বয় সভায় তুলে ধরব।
চকরিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) নূরুদ্দীন মুহাম্মদ শিবলী নোমান বলেন, ‘তামাক চুল্লি থেকে গ্যাস নির্গত হওয়ায় বিদ্যালয়ের শিক্ষার পরিবেশ নষ্ট হচ্ছে। এমন অভিযোগ আমার কাছে এসেছে। আমি বন আইনে ব্যবস্থা নেব।’
অনুরূপভাবে উপজেলার সুরাজপুর মানিকপুর, বমুবিলছড়ি, কাকারা, ফাঁশিয়াখালী, বরইতলী, হারবাং, লক্ষ্যারচর, কৈয়ারবিল, ডুলাহাজারা, চিরিঙ্গা ইউনিয়নের সিংহভাগ ধান-সবজির জমিতে হচ্ছে তামাক চাষ। এসব ইউনিয়নের প্রতিটি পাড়ায় বিভিন্ন ঘরের ভিটেতেও তন্দুরে শোধন করা হচ্ছে তামাক। ফলে এসব এলাকার লক্ষাধিক মানুষ এখন নানা রোগে অক্রান্ত হয়ে পড়েছে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ