Inqilab Logo

শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

ফটিকছড়ির রামগড় চা বাগান বন্ধ ঘোষণা, শ্রমিক অসন্তোষ চরমে

ফটিকছড়ি সংবাদদাতা | প্রকাশের সময় : ২০ এপ্রিল, ২০১৯, ৯:১৩ পিএম

বংশ পরস্পরায় শ্রমিকদের ভোগদখলীয় জমি কেড়ে নেয়া, চা সম্প্রসারণের পরিবর্তে মৎস্য চাষে ঝুঁকে পড়া এবং চা উৎপাদন বন্ধ ঘোষণার প্রতিবাদে ফটিকছড়ির রামগড় চা বাগানে শ্রমিক অসন্তোষ চরমে পৌঁছেছে। বাগান খুলে দেয়ার দাবীতে শ্রমিকরা বিক্ষোভ শুরু করেছে। রামগড় চা বাগানের পঞ্চায়েত নেতৃবৃন্দ ও সাধারণ চা শ্রমিকেরা গতকাল শনিবার (২০ এপ্রিল) বেলা ১১টায় বিক্ষোভ মিছিল ও প্রতিবাদ সমাবেশ করে চা কারখানার সামনে আয়োজিত বিক্ষোভ সমাবেশ থেকে শ্রমিক নেতৃবৃন্দ মালিক কর্তৃপক্ষকে অমানবিক এবং অন্যায় মূলক এ সিদ্ধান্ত থেকে ফিরে আসার আহবান জানিয়েছে। শ্রমিক নেতারা বৃহত্তর কর্মসূচী ঘোষণার হুশিয়ারি দিয়েছে।
জানা যায়, ইতোপূর্বে নেয়া মালিক পক্ষের বাগান বন্ধের ঘোষণা প্রত্যাহারের আহ্বান জানিয়ে সহস্রারাধিক নারী-পুরুষ চা শ্রমিক প্রধান কারখানার সামনে থেকে বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে পাঁচ নম্বর লেন, গার্ডপাড়া, বাগানবাজার হয়ে পুনরায় কারখানার সামনে পৌঁছে সমাবেশে মিলিত হয়। এতে বক্তব্য দেন, বাগান পঞ্চায়েত কমিটির সভাপতি মদন রাজগড়, সাধারণ সম্পাদক বিপ্লব মুন্ডা, চট্টগ্রাম ভ্যালি সভাপতি নিরঞ্জন নাথ, সাধারণ সম্পাদক যতন কর্মকার, সাবেক সভাপতি অধিক লাল দে, সাবেক সাধারণ সম্পাদক মিন্টু দে, সাবেক ভ্যালি সাধারণ সম্পাদক পরিমল দে, পঞ্চায়েত সদস্য হিরা ত্রিপুরা, বাসিকী উরাং, শিল্পী রাণী প্রমুখ।

বক্তারা বলেন, বাজার টিলা ত্রিপুরা পাড়া সংলগ্ন দেড় শতাধিক একর জমিতে সপ্তাহখানেক আগে বাঁধ দিয়ে মৎস্য চাষ প্রজেক্ট করার উদ্যোগ নেয় বাগান কর্তৃপক্ষ। এতে বাগানের শ্রমিকদের চাষযোগ্য জমি কমে যাবে। বাধা দিলে মালিকপক্ষ একগুঁেয়মি করে সম্পূর্ণ একতরফাভাবে শ্রমিকদের সঙ্গে কোন ধরণের আলাপ-আলোচনা ছাড়াই চা বাগান বন্ধ ঘোষনা করে। শ্রমিকদের কাজের গোড়া থেকে ফেরৎ পাঠায়। এতে নিরীহ চা শ্রমিকেরা অনাহারে- অর্ধাহারে দিনাতিপাত করছে।
বাগান পঞ্চায়েত সভাপতি মদন রাজগড় ও সাধারণ সম্পাদক বিপ্লব মুন্ডা জানান, চা বাগানে মৎস্য চাষ প্রকল্প কিংবা নারিকেল বাগান করার বিষয়ে চা-শ্রম আইনে বিধি-নিষেধ আছে। কিন্তু আইনের তোয়াক্কা না করে এ বাগানে বিশাল মাছের প্রজেক্ট ও নারিকেল বাগান করা হয়েছে। বাণিজ্যিক ভাবে কোটি টাকার মাছ এখান থেকে চট্টগ্রাম শহরে চালান হয়। তারপরও নতুনভাবে আরো মৎস্য প্রজেক্ট করতে চায় বাগান মালিক নাদের খান। কিন্তু এতে বাগানের নিরীহ শ্রমিকেরা ব্যাপক ক্ষতির সম্মুখীন হবে। এর প্রতিবাদ করায় মামলা ও পুলিশী ভয় দেখিয়ে শ্রমিকদের নিবৃত্ত করতে চায় কর্তৃপক্ষ।

চট্টগ্রাম ভ্যালি সভাপতি নিরঞ্জন নাথ ও সাধারণ সম্পাদক যতন কর্মকার বলেন, বাগানে বর্তমানে ৮ শতাধিক শ্রমিক কাজ করে। এদের পরিবার-পরিজনসহ ৫ সহ¯্রাধিক মানুষের ন্যায্য অধিকারকে পাশ কাটিয়ে বাগান বন্ধ রেখে নতুন ষড়যন্ত্রে মেতে উঠেছে মালিক পক্ষ। অচিরেই বাগান খুলে দেয়া না হলে বৃহত্তর কর্মসূচী ঘোষনা করা হবে বলে তারা হুশিয়ারী দেন।

এ ব্যাপারে বাগানের সিনিয়র ম্যানেজার জাহাঙ্গীর আলম বলেন, বাগান সম্প্রসারণের কাজ হাতে নিলে শ্রমিকেরা বাধা দেয়। প্রতিবছর ক্রমান্নয়ে বাগান বাড়ানোর আইন আছে। কিন্তু শ্রমিকেরা এটা মানছে না। মৎস্য চাষের বিষয়টি অস্বীকার করে তিনি বলেন, বর্ষায় ফেনী নদীর পানিতে বাগানের প্রায় ২০ শতাংশ নীচু ভূমি তলিয়ে যায়। এ কারণে পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থা করতে চাইলে নেতাদের প্ররোচনায় শ্রমিকরা উৎপাদন ও কাজ বন্ধ করে বেআইনীভাবে ধর্মঘট এবং কর্মকর্তার অফিস ভাংচুর করে। শ্রমিকদের কাজ করতে বললে ধর্মঘট চালু রাখায় নিরাপত্তার স্বার্থে বাগান সম্পূণরূপে বন্ধ করে দেয়া হয়।
উল্লেখ্য- শত বছরেরও বেশি পুরোনো রামগড় চা বাগানটি মালিক-শ্রমিক দ্বন্দ্বে গত ১৮ এপ্রিল থেকে বন্ধের নোটিশ টাঙ্গিয়ে দেয় কর্তৃপক্ষ। এতে শ্রমিকরা বিক্ষোব্ধ হয়ে সভা-সমাবেশসহ নানা কর্মসূচী অব্যাহত রেখেছে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: বন্ধ ঘোষণা


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ