Inqilab Logo

শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৭ বৈশাখ ১৪৩১, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

বিদ্রোহীদের পদচারণায় কোণঠাসা আ.লীগ মনোনীত প্রার্থীরা কেশবপুরের ১১ ইউনিয়ন

প্রকাশের সময় : ২৫ মে, ২০১৬, ১২:০০ এএম

রেবা রহমান, যশোর থেকে

আগামী ২৮ মে যশোরের কেশবপুর উপজেলার ১১টি ইউনিয়ন পরিষদে নির্বাচন। নানা শঙ্কায় রয়েছেন ভোটাররা। আ.লীগ প্রার্থী ও আ.লীগের বিদ্রোহী প্রার্থীরা মুখোমুখি। মনোয়নের ক্ষেত্রে পছন্দ-অপছন্দের পাল্লা ভারি হওয়ায় নির্বাচনে বিদ্রোহী প্রার্থীদের দাপটে বেড়েছে বহুগুণে। বিদ্রোহীদের দল থেকে বহিষ্কার করেও থামানো যাচ্ছে না। পরিস্থিতি এমন যে, আওয়ামী লীগের দলীয় প্রার্থীরাই কার্যত কোণঠাসা হয়ে পড়েছে। প্রায় প্রতিদিনই কোনো না কোনো ইউনিয়নে আওয়ামী লীগ দলীয় ও বিদ্রোহী প্রার্থীদের মধ্যে হামলা, সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। অভিযোগ উঠেছে, প্রভাবশালী নেতারা বিদ্রোহীদের পক্ষ নিয়ে নৌকার বিপক্ষে মাঠে রয়েছেন। ‘বিদ্রোহী প্রার্থীরা জিতবে’ জেলা আইনশৃঙ্খলা কমিটির সভায় এমন মন্তব্যও করেছেন জেলা আ’লীগ সভাপতি। যদিও ১১ ইউনিয়নের বিদ্রোহী ১২ প্রার্থীকে দল থেকে বহিষ্কার করেছে জেলা আওয়ামী লীগ। এসব কারণে আওয়ামী লীগের তৃণমূল পর্যায়ের নেতাকর্মীরা ঘরের মধ্যে ঘর হওয়ায় রীতিমতো আতঙ্কে রয়েছেন। স্থানীয় সূত্র জানায়, উপজেলার ১১টি ইউনিয়নে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। এখানকার ১১টি ইউনিয়নে নৌকার ১১ জন প্রার্থীর বাইরে ১৫ জন আ’লীগ নেতা বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। ১নং ত্রিমোহিনী ইউনিয়নে চেয়ারম্যান পদে আ’লীগ মনোনীত আনিছুর রহমান ও বিদ্রোহী লতিফুল কবির মনি মাঠে রয়েছেন। ২নং সাগরদাঁড়ি ইউনিয়নে উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মোস্তাফিজুল ইসলাম মুক্ত আওয়ামী লীগের ও বিদ্রোহী শাহাদাৎ হোসেন প্রতিদ্বন্দ্বিতায় রয়েছেন। ৩নং মজিদপুর ইউনিয়নে লড়াইয়ে রয়েছেন আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী মজিদপুর ইউনিয়ন আ’লীগের সাধারণ সম্পাদক গাজী গোলাম সরোয়ার এবং বিদ্রোহী হিসেবে রয়েছেন সাবেক চেয়ারম্যান শহিদুল ইসলাম ও মাওলানা আব্দুল হালিম। ৪ নং বিদ্যানন্দকাটি ইউনিয়নে আ’লীগ মনোনীত ইব্রাহিম হোসেন ও বিদ্রোহী আমজাদ হোসেন মুখোমুখি অবস্থানে রয়েছেন। ৫নং মঙ্গলকোট ইউনিয়নে আব্দুল কাদের বিশ্বাস নৌকার ও বর্তমান চেয়ারম্যান মনোয়ার হোসেন নৌকার বিদ্রোহী প্রার্থী হয়েছেন। ৬নং কেশবপুর সদর ইউনিয়নে শাহাদাৎ হোসেন আওয়ামী লীগের এবং আফসার উদ্দিন গাজী বিদ্রোহী প্রার্থীর অবস্থানে রয়েছেন। ৭নং পাঁজিয়া ইউনিয়নে বিএনপির পাঁজিয়া আ’লীগের সভাপতি শফিকুল ইসলাম মুকুল নৌকার ও ইয়ার মাহমুদ বিদ্রোহী প্রার্থী হয়েছেন। ৮নং সুফলাকাটি আ’লীগ মনোনীত আব্দুস সামাদ সরদার ও এসএম মহব্বত হোসেন, আজাহারুল ইসলাম ও রুহুল আমিন বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে মাঠে রয়েছেন। ৯নং গৌরিঘোনা ইউনিয়নে ইউনিয়ন আ’লীগের সাধারণ সম্পাদক হাবিবুর রহমান হাবিব ও বিদ্রোহী এসএম সিদ্দিকুর রহমান প্রতিদ্বন্দ্বিতায় রয়েছেন। ১০নং সাতবাড়িয়া ইউনিয়নে শামছুদ্দীন আ’লীগের ও মশিয়ার রহমান দফাদার বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে মাঠে রয়েছেন। ১১নং হাসানপুর ইউনিয়নে শহীদুজ্জামান শাহীন নৌকার এবং নৌকার বিপক্ষে আ’লীগের বিদ্রোহী আলতাফ হোসেন ও অধ্যাপক আব্দুর রাজ্জাক। স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের অভিযোগ, উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নে প্রতিদিনই আওয়ামী লীগ মনোনীত ও বিদ্রোহী প্রার্থীর কর্মী-সমর্থকদের মধ্যে হামলা-পাল্টা হামলা, প্রার্থীর অফিস, মোটরসাইকেল ভাঙচুরের ঘটনা ঘটে চলছে। ইতোমধ্যে উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নে অন্তত শতাধিক নেতাকর্মী আহত হয়েছেন। মঙ্গলকোট ইউনিয়নে আ’লীগ ও বিদ্রোহী প্রার্থীর সমর্থকদের সংঘর্ষে ২৪ জন আহত হয়েছেন। সাগরদাঁড়ি ও কেশবপুর সদর ইউনিয়নে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। ১২ মে রাতে গৌরীঘোনা ইউনিয়নে আওয়ামী লীগের হাবিবুর রহমান ও বিদ্রোহী সিদ্দিকুর রহমানের কর্মী-সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষে ২৫ কর্মী আহত হয়। এ সময় আ’লীগ মনোনীত প্রার্থীর কার্যালয় ভাঙচুরের ঘটনা ঘটে। পরদিন হাসানপুর ইউনিয়নে সংঘর্ষে অন্তত ১৫ নেতাকর্মী আহত হয়। সর্বশেষ গত রোববার রাতে সাতবাড়িয়া ইউনিয়নে আওয়ামী লীগ সমর্থিত চেয়ারম্যান প্রার্থী শামছুদ্দিন দফাদারের নির্বাচনী কার্যালয় ভাঙচুর করে জ্বালিয়ে দিয়েছে সন্ত্রাসীরা। এছাড়া মজিদপুর, ত্রিমোহিনীসহ আরও কয়েকটি ইউনিয়নে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এসব ঘটনায় থানায় অভিযোগ দায়েরের হিড়িক পড়েছে। ফলে সাধারণ ভোটারদের দেখা দিয়েছে চরম আতঙ্ক। গৌরিঘোনা ইউনিয়নে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী ইউনিয়ন আ’লীগের সাধারণ সম্পাদক হাবিবুর রহমান হাবিব জানিয়েছেন, এই ইউনিয়নে বিদ্রোহী প্রার্থী সিদ্দিকুর রহমান সন্ত্রাসী বাহিনী নিয়ে সংখ্যালঘু ভোটারদের নানাভাবে হুমকি-ধামকি দিয়ে নির্বাচনী পরিবেশ নষ্ট করছেন। ইতোপূর্বে তার বাহিনী নৌকা প্রতীকের অফিসও ভাঙচুর করেছে। তবে বিদ্রোহী প্রার্থী এসএম সিদ্দিকুর রহমান দাবি করেছেন, প্রাথমিক তালিকায় তার নাম থাকলেও অনিয়ম ও টাকার কারণে তিনি নৌকা প্রতীক বঞ্চিত হয়েছেন। তারপরও ইউনিয়নবাসীকে সাথে নিয়ে তিনি নির্বাচনী মাঠে রয়েছেন। ইউনিয়নে নৌকা প্রতীকের অফিসে হামলা বা সংখ্যালঘুদের হুমকির বিষয়টি অস্বীকার করে তিনি বলেছেন, তার কোনো লোক এধরনের ঘটনায় জড়িত নয়। আরেক বিদ্রোহী প্রার্থী কেশবপুর সদর ইউনিয়নে আফসার উদ্দিন গাজী জানান, স্থানীয়ভাবে তাকে একক প্রার্থী হিসেবে নির্ধারণ করা হয়। কিন্তু দশ লাখ টাকায় মনোনয়ন কেনাবেচা হওয়ায় উল্টে যায়। তাই নাগরিক সমাজের দোয়া নিয়ে তিনি ভোটে দাঁড়িয়েছেন। কেশবপুরের নির্বাচনের ব্যাপারে যশোরের পুলিশ সুপার মো. আনিসুর রহমান সাংবাদিকদের জানান, শান্তিপূর্ণ নির্বাচন অনুষ্ঠানে বদ্ধপরিকর প্রশাসন। ইতোমধ্যে নির্বাচনী এলাকা সন্ত্রাসবিরোধী অভিযান চলছে। বহিরাগত সন্ত্রাসী নিয়ন্ত্রণে কঠোর অবস্থান রয়েছে তাদের। প্রশাসন প্রভাবমুক্ত হয়েই কাজ করছে বলে তিনি দাবি করেন।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: বিদ্রোহীদের পদচারণায় কোণঠাসা আ.লীগ মনোনীত প্রার্থীরা কেশবপুরের ১১ ইউনিয়ন
আরও পড়ুন
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ