Inqilab Logo

শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

দর কষাকষির দৃষ্টান্ত আ.লীগের, বিএনপির নয় -রিজভী

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ২৩ এপ্রিল, ২০১৯, ১২:২১ পিএম

বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, অগণতান্ত্রিক সরকারের সাথে দরকষাকষি ও দেন-দরবারের ঐতিহ্য আওয়ামী লীগের আছে, বিএনপি’র নয়। আওয়ামী লীগের এক নেতা বলেছেন-খালেদা জিয়ার মুক্তি নিয়ে দরকষাকষি বাজে দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে। আওয়ামী লীগের আরেক নেতা বলেছেন-৩০ এপ্রিলের মধ্যে জানা যাবে বিএনপি থাকবে কি থাকবে না। তিনি আওয়ামী নেতাদের উদ্দেশ্যে বলেন, বেগম খালেদা জিয়া আপোষহীন নেত্রী হিসেবেই জনগণের নিকট প্রতিষ্ঠিত। সুতরাং তিনি কখনোই কোন অন্যায়ের কাছে মাথানত করেননি, কোন স্বৈরাচারের কাছেই আত্মসমর্পণ করেননি। দরকষাকষির দৃষ্টান্ত কার আছে সেটি আওয়ামী নেতারা নিজেরাই জানেন, আর না জানলে আপনাদের নেত্রীকে জিজ্ঞেস করুন। মঙ্গলবার (২৩ এপ্রিল) দুপুরে নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।
রুহুল কবির রিজভী বলেন, এরশাদের নির্বাচনে যে যাবে সে জাতীয় বেঈমান হবে বলে আপনার (আওয়ামী লীগ) নেত্রী দরকষাকষি করে সেই নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেছিলেন। জাতীয় বেঈমানের মুকুট তিনি নিজেই নিজের মাথায় পরে ক্ষমতার হালুয়া-মোরব্বার ভাগ পেয়েছিলেন। কিভাবে একটি অবৈধ ও অসাংবিধানিক ফখরুদ্দিন-মঈনুদ্দিন সরকারের সঙ্গে দরকষাকষি করে ক্ষমতায় এসেছিলেন সেটিও নিশ্চয়ই আপনি ভুলে যাননি। অগণতান্ত্রিক সরকারের সাথে দরকষাকষি ও দেন-দরবারের ঐতিহ্য আওয়ামী লীগের, বিএনপি’র নয়।
তিনি বলেন, রাষ্ট্রশক্তিকে ব্যবহার করে নির্দোষ বেগম খালেদা জিয়াকে যেভাবে বন্দী করে রাখা হয়েছে সেটিই ইতিহাসে কলঙ্কজনক অধ্যায় হিসেবে দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে। আজ গণতন্ত্র ও গণতন্ত্রের প্রতীক দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া শেখ হাসিনার কারাগারে বন্দী। দেশের প্রতিটি মানুষ জানে এবং বিশ্বাস করে খালেদা জিয়া নির্দোষ। দেশ থেকে আইনের শাসনকে সমাহিত করে পুলিশী শাসন কায়েম করা হয়েছে। আর এই অবৈধ ক্ষমতা টিকিয়ে রাখার জন্য ভিন্ন মত প্রকাশের স্বাধীনতার পক্ষের শক্তির আশা-ভরসার প্রতীক দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে আটকে রেখে ক্ষমতা চিরস্থায়ী করা যাবে না।
বর্তমানে সমাজে নৈরাজ্যকর পরিস্থিতি ইতিহাসে সর্বকালের সকল রেকর্ড ভঙ্গ করেছে অভিযোগ করে বিএনপির এই নেতা বলেন, স্কুল-কলেজ-মাদ্রাসা-বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী, গার্মেন্টস শ্রমিক, বাসের যাত্রী, গৃহবধু, মা-বোনসহ সমাজে এখন আর কেউ নিরাপদ নয়। ম্যান্ডেটবিহীন সরকারের কারনে বর্তমানে সামাজিক ভায়োলেন্স এতো তীব্র হয়েছে যে, বাংলাদেশ থেকে ‘সোশ্যাল ফ্রেব্রিক’ ভেঙ্গে গেছে। রাজনীতিকে তাড়িয়ে দেয়া হয়েছে নির্বাসনে। এই বিভৎস সামাজিক নৈরাজ্য ভোটারবিহীন সরকার, মধ্যরাতের সরকার, একদলীয় সরকার ও জবাবদিহিহীন সরকারের সর্বব্যাপী গুম-খুন-গুপ্তহত্যা-নির্বিচারের মামলা ও গ্রেফতারের কারণেই বিস্তার লাভ করেছে। কারণ সমাজবিরোধীরা সরকারী দলের আনুকুল্যে মানুষের সহায়-সম্পত্তি দখলের ধারাবাহিকতায় নারীদেরকেও দখলে নিতে মরিয়া হয়ে উঠেছে। আইন শৃঙ্খলা বাহিনী নীরব, অথবা এদের মদদদাতা হিসেবে কাজ করছে, অথবা নিজেরাই অপকর্মে মেতে উঠেছে। গোটা রাষ্ট্রকাঠামোই এখন ধ্বসে পড়ার উপক্রম হয়েছে। প্রতিদিন নৈরাজ্যের এই কাহিনী গণমাধ্যমে প্রকাশ পাচ্ছে হেডলাইন হয়ে। আর এজন্য দায়ী অবৈধ মিডনাইট সরকার।
বর্তমানে সারাদেশে ক্ষমতাসীন দলের নেতাকর্মীরা ধর্ষণ-নারী নির্যাতন-খুন-দখল ও গুমের উৎসবে মেতে উঠেছে অভিযোগ করে রিজভী বলেন, দেশে চরম অস্থিরতা বিরাজ করছে। বিনা ভোটের সরকার কোন কিছু নিয়ন্ত্রণ করতে পারছে না। সব কিছু এখন তাদের নিয়ন্ত্রণের বাইরে। জনগণের ভোটে নির্বাচিত না হওয়ায় জনগণের প্রতি তাদের কোন দায়বদ্ধতা নেই। সোনাগাজীর নুসরাতকে নিপীড়ণ চালিয়ে তার মুখ বন্ধ করতে গায়ে আগুন দিয়ে বর্বর কায়দায় হত্যার ঘটনায় সেখানকার আওয়ামী লীগের মিডনাইট এমপি, আওয়ামী সভাপতি থেকে শুরু করে বড় বড় নেতারা জড়িত। তাদের সাথে সহযোগিতা করেছে এসপি থেকে থানার ওসি পর্যন্ত। ফলে তাদের এমপি-নেতা ও পুলিশ প্রশাসনকে জনরোষ থেকে বাঁচানোর জন্য এই ঘটনা ধামাচাপা দেয়ার চেষ্টা করছে সরকার। সোনাগাজীর ঘটনার মতোই ক্ষমতাসীন দলের বেপরোয়া নেতা-কর্মীরা গোটা দেশকে ধর্ষণ উপত্যকায় পরিণত করেছে। নারীর প্রতি সহিংসতা এখন ইতিহাসে সর্বকালের সর্ব রেকর্ড ছাড়িয়ে গেছে। নারী নিপীড়ণ ও খুন তাদের অভ্যাসে পরিণত হয়েছে। ৭২-৭৫ এর চাইতেও এখন দেশের অবস্থা ভয়াবহ। প্রতিদিন একটির পর একটি লোম শিউরে ওঠার মতো ঘটনা ঘটলেও গণবিচ্ছিন্ন এই সরকারের কোন বিকার নেই। এভাবে দেশ চলতে পারেনা। এইসব অপকর্ম করে নির্বিঘ্ন থাকার জন্য জনগণের প্রতিবাদী কন্ঠস্বর, আপোষহীন দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে মিথ্যা মামলায় জোর করে বন্দী রেখে বিনা চিকিৎসায় প্রাণনাশের চেষ্টা চলছে। তাঁকে পিজি হাসপাতালে রাখা হলেও উপযুক্ত চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে না। শেখ হাসিনার নির্দেশ মতোই তাকে কষ্ট দেয়া হচ্ছে। অবিলম্বে দেশনেত্রীকে মুক্তি দিতে হবে। জামিনে প্রতিবন্ধকতা করা চলবে না। তিনি মুক্তি পেয়ে নিজের পছন্দমতো হাসপাতালে চিকিৎসা নিবেন। একদলীয় হানাদারী শাসনের অন্ধকার দুর করে আলোর প্রত্যাশায় দেশনেত্রীর মুক্তির প্রহর গুণছে এদেশের জনগণ।
বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব বলেন, বিএনপি জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য ও সাবেক প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবর সিলেট কেন্দ্রীয় কারাগারে বর্তমানে ভীষণ অসুস্থ। কয়েক দিন আগে তাকে চিকিৎসার জন্য সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেয়া হলেও যথাযথ চিকিৎসা না দিয়ে পুনরায় কারাগারে ফেরত পাঠানো হয়। তিনি গুরুতর অসুস্থ হলেও চিকিৎসা না দিয়ে জেলখানায় ফিরিয়ে নেয়া চরম অমানবিকতা ছাড়া আর কিছুই নয়। আমি অবিলম্বে শারীরিকভাবে চরম অসুস্থ লুৎফুজ্জামান বাবরকে চিকিৎসা দেয়ার জোর দাবি জানাচ্ছি।
তিনি বলেন, রাষ্ট্রীয় গভীর ষড়যন্ত্রের শিকার যুবদল সাধারণ সম্পাদক সুলতান সালাউদ্দিন টুকু। প্রায় ২০০টি মামলায় সুপ্রীম কোর্ট থেকে জামিন লাভের পরও কারাগার থেকে মুক্তি পাচ্ছে না সুলতান সালাউদ্দিন টুকু। ইতোমধ্যে আপিল বিভাগ ১৪টি মামলার জামিন বাতিল করেছেন এবং প্রতিদিনই নতুন নতুন মামলায় তাকে জড়ানো হচ্ছে। তার শারীরিক অবস্থার চরম অবনতি হয়েছে। ২৫ কেজি ওজন কমে গেছে। এক বছর থেকে মিথ্যা মামলায় কারারুদ্ধ সুলতান সালাউদ্দিন টুক চরম অসুস্থ হলেও তাকে চিকিৎসা দেয়ার কোন উদ্যোগ গ্রহণ করেনি কারাকর্তৃপক্ষ।
তিনি আবারও বেগম খালেদা জিয়াসহ সৈয়দ মেহেদী আহমেদ রুমি,
এ্যাড: শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাস, হাবিব উন নবী খান সোহেল, লায়ন আসলাম চৌধুরী, ফজলুল হক মিলন, মীর সরফত আলী সপু, অধ্যক্ষ সোহরাব উদ্দিন, সুলতান সালাহ উদ্দিন টুকু, শহিদুল ইসলাম বাবুল, শেখ রবিউল ইসলাম রবি, শেখ মোহাম্মদ শামীম, হযরত আলী, মিয়া নুর উদ্দিন অপু, ইসাহাক সরকার এবং দেশব্যাপী হাজার হাজার বিএনপি এবং এর অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীদের নি:শর্ত মুক্তি দাবি করেন।
সংবাদ সম্মেলনে ইস্টার সানডের প্রার্থনার সময় শ্রীলঙ্কায় তিনটি গির্জা ও তিনটি পাঁচতারা হোটেলে একযোগে বোমা হামলার জঘন্য, নিষ্ঠুর এবং পাশবিক ঘটনায় বিএনপির পক্ষ থেকে গভীর দুঃখ ও শোক প্রকাশ করেন রুহুল কবির রিজভী



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: রিজভী

৭ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ