Inqilab Logo

মঙ্গলবার, ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ০৩ বৈশাখ ১৪৩১, ০৬ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

ওরা বাংলাদেশের মানচিত্র মুছতে চেয়েছিল : প্রধানমন্ত্রী

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ২৪ এপ্রিল, ২০১৯, ৮:৩৬ পিএম

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট জাতির ইতিহাসে কলঙ্কিত একটি দিন। এদিন বুলেটের নির্মম আঘাতে আমার বাবা সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি স্বাধীনতার মহান স্থপতি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সপরিবারে শহীদ হন। আমি ওইদিন হারিয়েছি আমার মমতাময়ী মা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিবকে। আমার তিন ভাই শেখ জামাল, শেখ কামাল এবং ১০ বছরের শিশু শেখ রাসেলসহ আমার দুই ভাইয়ের স্ত্রী ঘাতকের বুলেটের আঘাতে নির্মমভাবে শাহাদাৎ বরণ করেন।’

বুধবার জাতীয় সংসদে সাংসদ আনোয়ার হোসেন খানের (লক্ষ্মীপুর-১) লিখিত প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী এসব বলেন। তিনি বলেন, ১৯৭৫ সালের ৩ নভেম্বর জেলখানায় হত্যা করা হয় জাতীয় চার নেতাকে। ইতিহাসের সেই খলনায়করা শুধু বঙ্গবন্ধুকে নয়, হত্যা করতে চেয়েছিল পৃথিবার বুকে লাল সবুজের অহংকার নিয়ে প্রতিষ্ঠিত এ রাষ্ট্রকেও। চিরতরে মুছে দিতে চেয়েছিল এ দেশের মানচিত্রও।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলা ও জেল হত্যা মামলার বিচার সম্পন্ন হয়েছে। শুধুমাত্র এ ঘৃণ্য কাজে প্রত্যক্ষভাবে জড়িতরাই নয়, সহায়তাকারী ও ষড়যন্ত্রকারীদের খুঁজে বের করে বিচারের মুখোমুখি করতে আমরা বদ্ধপরিকর।

তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ চতুর্থবার সরকার গঠন করার পর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে হত্যার পূর্বে যড়যন্ত্রের ব্যাপারে অনেক তথ্য পায়। এসব তথ্য থেকে দেখা যায়, পরোক্ষভাবে দেশি-বেদেশি কিছু লোক ও সংস্থা বঙ্গবন্ধুকে হত্যার ষড়যন্ত্রে লিপ্ত ছিল। তাই এ নির্মম হত্যাকাণ্ডের ব্যাপারে অন্যান্য পরিকল্পনাকারীদের চিহ্নিত করার জন্য একটি কমিশন গঠনের বিষয়টি সরকার সক্রিয়ভাবে বিবেচনা করছে।

তিনি আরও বলেন, খুনি খন্দকার মোশতাক আহমেদ ১৯৭৫ সালের ২৬ সেপ্টেম্বর ইনডেমনিটি অধ্যাদেশ জারি করে। পরবর্তীতে বঙ্গবন্ধু হত্যার ষড়যন্ত্রকারীদের মধ্যে অন্যতম জেনারেল জিয়াউর রহমান অবৈধভাবে ক্ষমতায় থাকাকালীন এসব খুনিদের বিভিন্ন বৈদেশিক মিশনে চাকরি দিয়ে পুরস্কৃত করে। এরপর জেনারেল এরশাদ ও বিএনপি’র নেতৃত্বাধীন জোট সরকার ক্ষমতায় থাকাকালীন ইনডেমনিটি অধ্যাদেশ বহাল রেখে এসব আত্মস্বীকৃত খুনিদের রাজনৈতিকভাবে প্রতিষ্ঠিত করার অপচেষ্টা অব্যাহত রাখে।

শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ ১৯৯৬ সালের সাধারণ নির্বাচনে সংখ্যাগরিষ্ঠতা লাভ করে। সরকার গঠন করার পর আওয়ামী লীগ সরকার ইনডেমনিটি অধ্যাদেশ বাতিল করে বঙ্গবন্ধুর হত্যাকারীদের বিচার কার্যক্রম শুরু করে। একইসঙ্গে শুরু করা হয় জাতীয় চার নেতার জেলখানার অভ্যন্তরে নির্মম হত্যাকাণ্ডের বিচার। কোনো বিশেষ আইনে অথবা কোনো বিশেষ আদালতে তাদের বিচার করা হয়নি। সম্পূর্ণ নিরপেক্ষভাবে প্রচলিত আইনে হত্যাকারীদের বিচারের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়। বিচার প্রক্রিয়া সম্পন্ন এবং আপিল শুনানি শেষে হত্যাকারীদের সাজা ইতোমধ্যে কার্যকর করা হয়েছে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলার কয়েকজন আসামি জেল হত্যা মামলারও আসামি। জেল হত্যা মামলার রায় ঘোষণা হওয়ার আগে বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলার রায় ঘোষিত এবং আপিলসহ বিচার কার্যক্রম সম্পন্ন হওয়ায় মামলায় আদালতের রায় অনুযায়ী ৫ জন খুনির দণ্ডাদেশ কার্যকর করা হয়েছে। বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলায় মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হওয়া ৫ জন আসামির মধ্যে জেল হত্যা মামলায় মৃত্যুদণ্ড প্রাপ্ত ৪ জন আসামি রয়েছে।

তিনি বলেন, যেসব খুনি বিভিন্ন দেশে পালিয়ে আছে বা আশ্রয় গ্রহণ করে আছে তাদেরকে দেশে ফিরিয়ে আনার সব প্রচেষ্টা অব্যাহত আছে। এ সংক্রান্ত একটি আন্তঃমন্ত্রণালয় কমিটিতে আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এবং স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সম্মিলিতভাবে কাজ করছে। এখনও যেসব খুনি বিভিন্ন দেশে পালিয়ে এবং আশ্রয় গ্রহণ করে আছে তাদেরকে দেশে ফিরিয়ে আনার বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন। পলাতক আসামি নুর চৌধুরী কিভাবে কানাডায় বসবাস করছেন সে সম্পর্কে তথ্য দিতে কানাডা সরকারকে বাধ্য করতে ফেডারেল কোর্ট অব জাস্টিস-এর আদালতে আবেদন করা হয়েছে।

তিনি আরও বলেন, গত ২৫ মার্চ এ বিষয়ে আদালতে শুনানি সম্পন্ন হয়েছে। শুনানি শেষে বিষয়টি আদালতের সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় রয়েছে। পলাতক আসামি রাশেদ চৌধুরীকে আমেরিকা থেকে ফিরিয়ে আনতে কূটনৈতিক পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে। মার্কিন বিচার বিভাগের দ্বারস্থ হতে আইনগত বিষয়ে পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য সেখানে আইনজীবী নিয়োগ দেয়া হয়েছে। এ ছাড়া, অন্যান্য পলাতক আসামিদের ফিরিয়ে আনতে টাস্কফোর্স কাজ করছে।’ পলাতক আসামিদের গ্রেফতারে ইন্টারপোলের মাধ্যমে রেড অ্যালার্ট জারি করা হয়েছে বলেও জানান প্রধানমন্ত্রী।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: প্রধানমন্ত্রী


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ