Inqilab Logo

শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

হকির নির্বাচন : সাঈদের ঐতিহাসিক জয়

জাহেদ খোকন | প্রকাশের সময় : ২৯ এপ্রিল, ২০১৯, ৯:১৪ পিএম | আপডেট : ১১:২৫ পিএম, ২৯ এপ্রিল, ২০১৯

বাংলাদেশ হকি ফেডারেশনের (বাহফে) বহুল আলোচিত নির্বাচনে ‘বাঁচাও হকি’ শ্লোগানে রশিদ-সাঈদ পরিষদের সাধারণ সম্পাদক পদপ্রার্থী আলহাজ্ব একেএম মমিনুল হক সাঈদ ঐতিহাসিক জয় পেয়েছেন। তিনি বাংলাদেশ হকির জীবন্ত কিংবদন্তী জাতীয় দলের সাবেক তারকা খেলোয়াড় ও বাহফে’র সর্বশেষ অ্যাডহক কমিটির সাধারণ সম্পাদক আব্দুস সাদেককে ১১ ভোটে হারিয়ে নির্বাচিত হন। সোমবার ধানমন্ডিস্থ সুলতানা কামাল জাতীয় মহিলা ক্রীড়া কমপ্লেক্সে দীর্ঘ ১৩ বছর পর বাহফে’র নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। সকাল ১০টা থেকে বিকেলে ৩টা পর্যন্ত স্বতঃস্ফুর্তভাবে ৮৪ জন কাউন্সিলর নিজেদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করেন। নির্বাচনে সাজেদ-সাদেক পরিষদের বিপক্ষে পূর্ণ প্যানেলে বিজয়ী না হলেও গুরুত্বপুর্ন পদগুলি নিজেদের দখলে নেন রশিদ-সাঈদরা। সাধারণ সম্পাদক পদে সাঈদ পান ৪৭ ভোট। বিপরীতে সাদেকের ভাগ্যে জুটে ৩৬ ভোট। বাকি একটি ভোট বাতিল হয়ে যায়।
বাহফে নির্বাচনের প্রায় ১৫ ঘন্টা আগে ভোটকেন্দ্র পরিবর্তন করে জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের (এনএসসি) নির্বাচন কমিশন যে বিতর্কের জন্ম দিয়েছিল রশিদ-সাঈদের বিজয়ে তা যেন আনন্দের বারতা নিয়ে আসে। এটা বলার অপেক্ষা রাখেনা ভোটকেন্দ্র পরির্বতনের কারণে নির্বাচনে গুরুত্বপূর্ণ পদগুলোতে সাজেদ-সাদেক পরিষদ জয়ী হলে তা অবশ্যই প্রশ্নবিদ্ধ হতো। কিন্তু আর হয়নি, একযুগেরও বেশী সময় পর কাউন্সিলররা নিজেদের পছন্দের সংগঠকদের বেছে নিয়ে হকি উন্নয়নে একধাপ এগিয়ে গেলেন। ভোট পড়েছে শতভাগ।
এই নির্বাচনকে ঘিরে সোমবার সকাল থেকেই রশিদ-সাঈদ পরিষদের সমর্থকদের পদচারণায় মুখরিত ছিল মহিলা ক্রীড়া কমপ্লেক্সের বাইরের রাস্তা। তবে ভোট শুরুর প্রায় দু’ঘন্টা পরও সাজেদ-সাদেক পরিষদের কেউ উপস্থিত না হওয়ায় কিছুটা থতথমে পরিবেশ বিরাজ করছিলো ভোটকেন্দ্রে।
নির্ধারিত সময়েই শুরু হয় ভোটগ্রহণ। এর সোয়া ২ ঘন্টা পর নিজ পক্ষের প্রার্থীদের সঙ্গে নিয়ে কেন্দ্রে প্রবেশ করেন সাজেদ-সাদেক পরিষদের সাধারণ সম্পাদক পদপ্রার্থী আবদুস সাদেক। ভোটকেন্দ্রে তাকে অভ্যথর্না জানান একেএম মমিনুল হক সাঈদ। সম্পর্কে সাঈদের চাচা হন সাদেক। দু’জনে একে অপরের হাত ধরেই কেন্দ্রে প্রবেশ করেন ভোট দিতে। ভোটদান শেষে পাশাপাশি দাঁড়িয়ে সাংবাদিকদের সামনে নিজেদের প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন সাদেক ও সাঈদ।
সাদেক বলেন, ‘অনেক দিন পর হকিতে ভোটের লড়াই হচ্ছে। নির্বাচনে একদল জিতবে আরেক দল হারবে। আমি চাইবো যারা জিতবে তারা যেন সবাইকে নিয়েই দেশের হকি উন্নয়নে কাজ করেন। আমি জিতলে সবার সহযোগিতা নিয়ে কাজ করবো। হারলেও সবার সঙ্গে থাকবো হকি উন্নয়নে কাজ করতে।’
সাঈদ বলেন, ‘আমি ভোটারদের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। জয়ের ব্যাপারেও আশাবাদী। জিতলে চাচা’কে (সাদেক) নিজের সঙ্গেই রাখবো, আর হারলে চাচা’র সঙ্গে থাকবো। সব কিছুই হবে দেশের হকি উন্নয়নের স্বার্থে। জয় পেলে চাচার দীর্ঘ অভিজ্ঞতা কাজে লাগাবো। তার মেধা ও অভিজ্ঞতা দেশের হকি উন্নয়নের জন্য জরুরী।’
২৮ পদের ভোটযুদ্ধে রশিদ-সাঈদ পরিষদ সাধারণ সম্পাদক পদ ছাড়াও এক নম্বর সহ-সভাপতি, একটি যুগ্ন-সম্পাদক, কোষাধক্ষ্য ও ৭টি সদস্য পদে জয়ী হয়েছে। অন্যদিকে সাজেদ-সাদেক পরিষদ পাঁচ সহ-সভাপতির চারটিই জিতে নিয়েছে। তারা একটি যুগ্ন-সম্পাদক সহ ১২টি সদস্য পদ পেয়েছে।
ঐতিহাসিক জয়ের পর হকি ফেডারেশনের নতুন সাধারণ সম্পাদক সাঈদ তার পরিষদ থেকে নব-নির্বাচিত সহ-সভাপতি আব্দুর রশিদ শিকদারকে জড়িয়ে ধরে আনন্দে কেঁদে ফেলেন। পরে তিনি মিডিয়াকে বলেন,‘সবাইকে সঙ্গে নিয়েই দেশের হকি উন্নয়নে কাজ করবো। হকিকে এগিয়ে নিতে যা যা প্রয়োজন তার সবই করবো সম্মিলিতভাবে। আমাকে ভোট দিয়ে নির্বাচিত করার জন্য সবার প্রতি কৃতজ্ঞ। নির্বাচনে সত্যিই গণতন্ত্রের জয় হয়েছে।’
সহ-সভাপতি পদে পাঁচ জনের মধ্যে রশিদ-সাঈদ পরিষদের আবদুর রশিদ শিকদার সর্বোচ্চ ৫৮ ভোট পেয়ে প্রথম হন। বাকি ৪ জন সাজেদ-সাদেক পরিষদের সাজেদ এ এ আদেল ৪৯, ড. মাহফুজুর রহমান ৪৪, জাকি আহম্মেদ ৪৪ ও মোহাম্মদ ইউসুফ আলী ৪০ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হন।
যুগ্ম-সম্পাদক পদে সাজেদ-সাদেক পরিষদের মোহাম্মদ ইউসুফ ৬৯ ও রশিদ-সাঈদ পরিষদের কামরুল ইসলাম কিসমত ৪৫ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হয়েছেন। কোষাধ্যক্ষ পদে রশিদ-সাঈদ পরিষদের হাজী মো: হুমায়ুন ৪৪-৪০ ভোটে হারিয়েছেন সাজেদ-সাদেক পরিষদের কাজী মইনুজ্জামান পিলাকে। এছাড়া ১৯ পদে নির্বাচিতরা হলেন- সাজেদ-সাদেক পরিষদের মোসাদ্দেক হোসেন চৌধুরী পাপ্পু (৮০), মো:আলমগীর আলম (৭৪), তৌফিকুর রহমান রতন (৬৮), জাহিদ হোসেন রাজু (৬২), টুটুল কুমার নাগ (৪৯), মাহবুব মোর্শেদ আলম লেবু (৪৮), তারেক এ আদেল (৪৮), হারুন অর-রশিদ রিংকু (৪৭), মামুনুর রশিদ (৪৭), মো: ফয়সাল আহসান উল্লাহ (৪৭) জহিরুল ইসলাম মিতুল (৪৬), ও জাফরুল আহসান (৪৫) এবং রশিদ-সাঈদ পরিষদের সাফায়াত হোসেন (৫১), বদরুল ইসলাম দিপু (৪৯), তারিকুজ্জামান (৪৯), খাজা তাহের লতিফ মুন্না (৪৮), জামিল আবদুন নাসের (৪৭), শহিদ উল্লাহ টিটু (৪৬) ও রফিকুল ইসলাম কামাল (৪৫)।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ