Inqilab Logo

শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

চীনা নৌবাহিনীর উৎসবে ভারতের অংশগ্রহণ

দিল্লি আর বেইজিংয়ের মধ্যে কি উষ্ণ স্রোত বইছে?

ইনকিলাব ডেস্ক : | প্রকাশের সময় : ৩ মে, ২০১৯, ১২:১০ এএম

চীনের পিপলস লিবারেশান আর্মি নেভির ৭০তম বার্ষিকী উদযাপন উপলক্ষ্যে গত মাসে যে ইন্টারন্যাশনাল ফ্লিট রিভিউয়ের আয়োজন করা হয়েছিল, সেখানে ভারতের দুটো যুদ্ধজাহাজ আইএনএস কোলকাতা এবং আইএনএস শক্তি অংশ নিয়েছিল। এর মধ্য দিয়ে দুই দেশের মধ্যে সম্পর্কের উন্নতির একটা ইঙ্গিত পাওয়া গেছে।
ভারতীয় নৌবাহিনীর এমন সময় চীনা মহড়ায় অংশ নিলো, যখন দেশটির পররাষ্ট্র সচিব বিজয় গোখলে চীনা পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও স্টেট কাউন্সিলর ওয়াং ই’র সাথে নিয়মিত আলোচনার জন্য বেইজিং সফর করছিলেন। আবার এদিকে, গত সপ্তাহে উহানে ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এবং চীনা প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের মধ্যে অনুষ্ঠিত অনানুষ্ঠানিক সম্মেলনের এক বছর প‚র্তি হলো।
ভারত-চীন সম্পর্কে সা¤প্রতিককালে যে ব্যাপক উত্তেজনা দেখা গেছে, সেটার সাথে এইসব ঘটনাপ্রবাহের কোন মিল নেই।
বছরের শুরুর দিকে জাতিসংঘের ১২৬৭ আল-কায়েদা স্যাঙ্কশান্স কমিটিতে জয়শ-ই মোহাম্মদ নেতা মাসুদ আজহারকে সন্ত্রাসী হিসেবে তালিকাভুক্তির ভারতীয় প্রচেষ্টাকে আটকে দেয় চীন। ভারত নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরে গেলো ফেব্রুয়ারি মাসে সন্ত্রাসী হামলার জন্য দায় স্বীকার করেছে জয়শ-ই মোহাম্মদ। ওই হামলায় ভারতীয় আধাসামরিক বাহিনীর কয়েক ডজন সেনা নিহত হয় এবং ফলশ্রুতিতে পাকিস্তানের ভেতরে কথিত জঙ্গি আস্তানায় বিমান হামলা চালায় ভারত।
বেইজিংয়ের উচ্চাকাক্সক্ষী বেল্ট অ্যান্ড রোড অবকাঠামো পরিকল্পনাও নয়াদিল্লীর অস্বস্তির আরেকটি কারণ। ভারত ২০১৭ সালের উদ্বোধনী ফোরামে অংশ নেয়া থেকে বিরত ছিল এবং এবারও দ্বিতীয় ফোরামে তারা অংশ নেয়নি।
উল্টা ভারত চার দেশের যৌথ ফোরাম কোয়াডে অংশ নিয়েছে, যেখানে জাপান, যুক্তরাষ্ট্র ও অস্ট্রেলিয়াও রয়েছে। বেইজিং বিষয়টিকে ঠিক সহজভাবে নেয়নি। তবে, ভারত তার চীন সম্পর্কের নতুন গতিপথ ঠিক করতে চাচ্ছে বলে মনে হচ্ছে।
মোদি বর্তমানে সাধারণ নির্বাচন নিয়ে ব্যস্ত আছেন। কিন্তু ভারতে পরবর্তী সরকার যারা গঠন করবেন, তাদের কাছে পররাষ্ট্র নীতির একটা বড় চ্যালেঞ্জ হবে চীনের সাথে লেনদেনের নীতিমালা ঠিক করা।
দুই দেশের মধ্যে বিনিময় বাড়ানোর কারণেই হয়তো এটা হয়েছে। ২০১৪ সালের সেপ্টেম্বরে ভারত সফর করেন প্রেসিডেন্ট শি। এমনকি গুজরাটে মোদির বাড়িতেও যান তিনি। মোদির শপথ নেয়ার পরপরই ওই সফর করেছিলেন শি।
নয়াদিল্লীকে তাদের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি বাড়াতে হবে এবং সেটাই আঞ্চলিক স্থিতিশীলতার ক্ষেত্রে তাদের অগ্রাধিকার ঠিক করে দেবে। তাদের বিভিন্ন ইস্যুতে বেইজিংয়ের সহায়তাও প্রয়োজন – নিউক্লিয়ার সাপ্লায়ার্স গ্রুপে সদস্যপদ লাভ এবং ভারত-বিদ্বেষী জঙ্গিদেরকে দেয়া পাকিস্তানের সহায়তা কমিয়ে আনা।
তাছাড়া ইরানের তেল আমদানির জন্য যুক্তরাষ্ট্র ভারতকে যে ছাড় দিয়েছিল, সেটাও বাতিল করা হয়েছে। ফলে অন্য দেশগুলোর সাথে সম্পর্ক রক্ষার ক্ষেত্রে নয়াদিল্লীর জন্য এটা কিছুটা সমস্যা তৈরি করবে।
এটা নিশ্চিত যে, ভারত চাইবে না পাকিস্তান আর চীন একে অপরের আরও ঘনিষ্ঠ হোক, বা নিজেদেরকে ‘সব সময়ের বন্ধু’ বিবেচনা করুক – যেটা তাদের মধ্যে এখনই রয়েছে।
চীনের নিজস্ব বিবেচনা রয়েছে। তারা ভারত ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ককে স্বাগত জানাবে না। তবে বেইজিং এটাও বোঝে যে ভারত চীনা পণ্যের জন্য একটা বড় বাজার। ফলে মাসুদ আজহারের মতো ইস্যুগুলো নিয়ে তারা পুনর্বিবেচনা করতে পারে।
অন্যান্য আঞ্চলিক ফ্যাক্টরগুলোও চীন ও ভারতের মধ্যে সহযোগিতা বৃদ্ধির ক্ষেত্রে ভ‚মিকা রেখেছে। ২৩ এপ্রিলের ফ্লিট রিভিউ অনুষ্ঠানে জাপানও তাদের একটি যুদ্ধজাহাজ - ম্যারিটাইম সেল্ফ-ডিফেন্স ফোর্স ডেস্ট্রয়ার- পাঠিয়েছিল। ২০১১ সালের ডিসেম্বরের পর এই প্রথম কোন জাহাজ সেখানে পাঠালো জাপান। অস্ট্রেলিয়াও মহড়ায় অংশ নিয়েছিল এবং সেখানে গাইডেড মিসাইল ফ্রিগেট – এইচএমএএস মেলবোর্ন পাঠিয়েছিল।
বিভিন্ন ইস্যুতে ভিন্নমত থাকা সত্বেও বেইজিং ও নয়াদিল্লী তাদের সহযোগিতার জায়গাগুলোতে মনোযোগ দেয়ার চেষ্টা করছে। এটা তাদেরকে শুধু দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে নয়, বরং অন্যান্য দেশের সাথে সম্পর্কের ক্ষেত্রেও সুবিধা দেবে। সূত্র : সাউথ এশিয়ান মনিটর।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: চীনা নৌবাহিনীর উৎসব
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ